Skip to main content

Full text of "Syed Mujtaba Alir Shrestha Galpa Ed. 1st"

See other formats


০5লস্ব্ীদ স্যুভ্ভন্বা ব্যানলীল্ল 


শ্রেঠ গল 





ৰাকৃ-সাহিত্য প্রাইভেট লিমিটেড 


৩৩.কলেজ রে।॥ কাঁলকাতা-১ 


প্রথম লংস্করণ--অগ্রহায়ণ, ১৩৬১ 


প্রকাশক £ 

শরীন্বপনকৃমার মুখোপাধ্ার 
বাক্‌-সাহিত্য প্রাইভেট লিমিটেড 
৩৩, কলেজ রে, 

কলিকাতা-৯ 


মুদ্রাকর £ 

শীতলচন্দ্র রায় 
তারকেশ্বর প্রেস 

৬, শিবু বিশ্বাস লেন 
কলিকাত।-৬ 


প্রচ্ছদ-শিল্পী £ 
শ্ীকানাই,পাল 


সূচীপত্র 


বিষয় 
শোশাজল 
পাদটীক। 
বেঁচে থাকে। সদি কাশি: 
মণি ' 

নোন। মিঠা - 
গাজ। 

্রিমু্তি 
হীরে।' 

স্মব' 

কর্নেল 
নবাব-জাদী - 
বিষের বিষ - 
চাচা-কাহিনী ' 


২১ 
৩১ 
৪৬ 
৬০ 
৭৯ 
৮৯ 
৯৯৬ 
১০৯ 
১১৯ 
১৩৮ 
১৫৭ 
১৫৯ 


এই জেখকের অন্যান্য বই £ 
পঞ্চজন্ত্র 

ময়ুরকণ্ 

অবিশ্বাহ্ 

জলে ডাঙায় 

চতুর 

দেশেবিদেশে 

চাচাকাহিনী 

শবনম্‌ 

হন্বমধুর 

ভবঘুরে ও অন্যান্ত 

বন্ছবি চিত্র 

শ্রেষ্ঠ রম্যরচনা 

ধুপছায়! 

ট্রনিমেম পছন্দসই 

পছন্দলই 

সৈয়দ মজতব1। আজীশীর রচনা বজীদ 


পরম শ্রছেয়। 
শ্রীযুক্তা রাধারাণী মুখোপাধ্যায়ের 
করক মলে-_ 


প্রকাশকেন নিবোদনন 


সৈয়দ মুজতবা আলী মাহেবের গল্প শ্রেষ্ঠ না নিকষ্ট মে বিচারের ভার 
আমাদের উপর নয়, কিন্তু আশ! করি কোনে পাঠকই অস্বীকার করবেন 
না যে, তার গল্পের বিষয়বস্তু অতি বিচিত্র ; নানা দেশ। নানা ধর্ম, নান! 
মমাজ সম্বন্ধে তার যে বাক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে তারই কিয়দংশ তিনি তার 
ছোটগল্প 'প্রতিবিদ্বিত করেছেন । 
এই মঞ্চয়ন প্রস্তুত করার সময় তাই আমরা সবসময় শ্রেষ্ঠত্বের দিকে দৃষ্টি 
না রেখে বৈচিত্র্যের দিকটাই দেখেছি বেশী! 
নিবেদক 
্রীস্বপনকুমার মুখোপাধ্যায় 


॥নোনাজল ॥ 


সেই গোয়ালন্দ-টাদপুরী জাহাজ । ত্রিশ বসর ধরে এব সঙ্গে আমার 
চেনাশোনা । চোখ বন্ধ করে দিলেও হাতড়ে হাতড়ে ঠিক বের করতে 
পারব, কোথায় জলের কল, কোথায় চা-খিলির দোকান, মুরগির খাঁচাগুলে। 
রাখ। হয় কোন্‌ জায়গায়। অথচ আমি জাহাজের খালাসী নয়_অবরের- 
সবরের যাত্রী মাত্র । 

ত্রিশ বংসর পরিচয়ের আমার আর-সবই বদলে গিয়েছে, বদলায় নি 
শুধু ডিসপ্যাচ স্টীমারের দল। জাহাজের ও-জাহাজের ডেকে- 
কেবিনে কিছু কিছু কফেরফার সব সময়ই ছিল, এখনও আছে, কিন্তু সব কটা 
জাহাজের গন্ধটি হুর 'একই | কি রকম ভেজাভেজা, (সীদা-সৌদা, আর 
যে-গন্ধটি আর সব-কিছু ছাপিয়ে ওঠে, সেটা মুরগি-কারি রান্নার । আমার 
প্রায়ই মনে হয়েছে, সমস্ত জাহাজটাই যেন একটা আস্ত মুরগি, তারই 
পেটের ভেতর থেকে যেন ভারই কারি রান্না আরম্ভ হয়েছে । এ-গন্ধ 
তাই টাদপুর, নারায়ণগঞ্জ, গোয়ালন্দ, যে কোন স্টেশনে পৌঁছনো। মাত্রই 
পাওয়। যায়। পুরনে। দিনের রূপরুসগন্ধস্পর্ণ সবই বুয়েছে? শুধু লক্ষ্য 
করলুম ভিড় আগের চেয়ে কম। 

দ্বপ্রহরে পরিপাটা আহারাদি করে ডেকচেয়ারে শুয়ে দূরদিগন্তের 
দিকে তাকিয়ে ছিলুম। কবিত্ব আমার আসে না, তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য 
আমার চোখে ধরা পড়ে না, যতক্ষণ না রবি ঠাকুর চোখে সেটা আঙুল 
দিয়ে দেখিয়ে দেন। তাই আমি টাদের আলোর চেপে পছন্দ করি 
গ্রামোফোনের বাক্স | পোর্টেবলটা আনব আনব করছি, এমন সময় 
চোখে পড়ল একখান মরধিত। “দেশ? পত্রিকা । মালিক না আসা পধস্ত 
তিনি যদি পরহস্থে কিঞ্িৎ '্রষ্ঠা'ও হয়ে যান, তা হলেও তার 'ম্বামী' 
বিশেষ বিরক্ত হবেন না নিশ্চয়ই । 

পদ” ছল্রনাম নিয়ে এক নৃতন লেখক খালালীদের সম্বন্ধে একটি 

৪ 

সৈ-মু-আ- শরেষ্টগপ্প-_-১ 


দূরদ-স্তর! লেখা ছেড়েছে। ছোকরার পেটে এলেম আছে, নইলে 
অতখানি কথা গুছিয়ে লিখল কি করে, আর এত সব কেচ্ছা-কাহিনীই ৰা 
যোগাড় করল কোথা থেকে? আমি তো একখান! ছুটির আরঙ্জি 
লিখতে গেলেই হিমশিঘ্ন খেয়ে যাই । কিন্তু লোকট!। যা সব লিখেছে, 
এব কি সবই সত্যি? এত বড় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে খালাসীরা 
লড়াই দেয় না কেন। হু"! এ আবার একটা কথা হল! সিলেট 
নোয়াখালির আনাড়ীর! দেবে ঘুঘু ইংরেজের সঙ্গে লড়াই__আমিও যেমন ! 

জাহাজের মেজো সারেঙের আজ বোধ হয় ছুটি। সিক্ষের লুি, 
চিকনের কুর্তা আর মুগ্লার কাজ-করা কিস্তিটুপি পরে ডেকের ওপর টহল 
দিযে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে আবার আমার দিকে আড়নয়নে তাকাচ্ছেও । 
ডিসপ্যাচের পু'টি ও মানওয়ারির তিমি দুই-ই মাছ-_একেই জিজ্ঞাসা 
করা যাক না কেন, “কূপ? দর্শন করেছে কতটুকু আর কল্পনায় বুনেছে 
কতখানি । 

একটুখানি গল খাক'র দিয়ে শুধালুম, “ও সারেঙ লাহে জাহাজ লেট 
যাচ্ছে না তো £ 

লোকটা উত্তর দিয়ে সৰিনয়ে বললে, আমাকে “আপনি” বলবেন ন। 
সাহেব । আমি আপনাকে ছু-একবারের বেশী দেখি নি কিন্ত আপনার 
আনবা সাহেব, বড় ভাই সাহেবের এ-গরিবকে মেহেরবানি করেন ।? 

খুশী হয়ে বললুম, “তোমার বাঁড়ি কোথায় ? বোস-_না? তার ফুরসত 
নেই ?? 

ধপ করে ডেকেব্র উপন্ন বসে পড়ল। 

আমি বললুম, “সে কী? একটা টুল নিয়ে এস। এসব আর 
আজকাল-_? কথাটি শেষ করলুম না, সারেউও টুল আনল না1। তারপর 
আলাপ-পরিচয় হল। গ্যাশের লোক-_স্থখ হঃখের কথা অবশ্যই ৰাদ 
পড়ল না । শেষটায় মোওক! পেয়ে 'রূপদর্শা-দর্শন' তাকে আগাগোড়া 
পড়ে শোনালুম | সে গভীর মনোযোগ দিয়ে তার জাতভাই চাষার। ষে 
রকম পু থিপড়। শোনে, নে রকম আগাগোড়। শুনল, তারপর খুব লম্ব 
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 


১৩ 


আল্লাতালার উদ্দেশ্তটে এক হাত কপালে ঠেকিয়ে বললে; 'ইনসাফের 
( ন্ায়ধর্মের ) কথ। তুললেন, হুজুর, কিন্তু এ-ছুনিয়ায় ইনসাফ কোথায় ? 
আর বে-ইনসাফি তো৷ তারাই করছে বেশী, যাদের খুদ! ধনদৌলত 
দিয়েছেন বিস্তর | থুর্দাতালাই কার জন্যে কি ইনসাফ রাখেন, তাই বা 
বুঝিয়ে বলবে কে? আপনি সমীরুদ্দীকে চিনতেন, বু বছর আমেরিকায় 
কাটিয়েছিল, অনেক টাকা কামিয়েছিল ?' 

আমেরিকার কথায় মনে পড়ল। “চৌতলি পরগণায় বাড়ি, না, যেন 
ওই দিকেই কোন্থানে 

সারেউ বললে, “আমারই গ। ধলাইছড়ার লোক । বিদেশে সেথা 
টাকা কামিয়েছিল, ওরকম কামিয়েছে অল্প সোকই | আমরা খিদিরপুরে 
সইন (১8) করে জাহাজের কামে ঢুকেছিলাম--একই দিন একই সঙ্গে । 

আমি শুধালাম, “কি হল তার ? আমার ঠিক মনে পড়ছে না। 

সারেঙ বললে--শুন্ুন-_ 

'যে-লেখাটি হুজুর পড়ে শোনালেন, তার সৰ কথাই অতিশয় হক। 
কিন্তু জাহাজের কাজে, বিশেষ করে গোড়ার দিকে যেকী জান-মারা . 
খাটুনি তার খবর কেউ কখনও দিতে পারছে না, ঘষে সে-জাহান্নামের 
ভিতর দিয়ে কখনও যায় নি; বয়লারের পাশে দাড়িয়ে যে-লোকটা 
ঘণ্টার পর ঘণ্ট। ধরে কয়ল ঢালে, তার লবাঙ্গ দিয়ে কি রকম ঘাম ঝরে 
দেখেছেন- এই জাহাজেই, যার ছু দিক খোলা, পদ্মার জোর বাতাসের 
বেশ'খানিকটা যেখানে স্বছন্দে আনাগোনা করতে পারে । এ তো 
বেহেশত । আর দরিয়ার জাহাজের গর্ভের নীচে যেখানে এঞ্জিন-ঘর, 
তার সব দিক বন্ধ তাতে কখনও হাওয়া-বাতাস ঢোকে না। সেই দশ- 
বারো-চৌদ্দ হাজার টনী ডাঙর ডাঙর জাহাজের বয়লারের আকারটা 
কত বড় হয় এবং সেই কারণে গরমিটার বহর কতখানি, সেকি বাইরের 
থেকে কখনও অনুমান কর। যায়? খাল বিল নদীর খোল! হাওয়ার বাচ্চা 
আমরা-_হঠাৎ 'একদিন দেখি, সেই জাহান্নামের মাঝখানে কালো-কালো 
বিরাট-বিরাট শয়তানের মত কলকজজা, লোহালকড়ের মুখোমুখি । 

'পয়ল! পয়ল! কামে নেলে সবাই ভিরমি যায়। তাদের তখন উপরে 


৯১ 


টেনে জলের কলের নীচে শুইয়ে দেওয়া হয়, হু'শ ফিরলে পর মুঠো মুঠো 
সন গেলানো হয়, গায়েরণঘাম দিয়ে সব"মুন “বেরিয়ে যায় বলে মানুষ তখন 
আর বাঁচতে পারে ন।। 

“কিংবা দেখবেন কয়ল ঢেলে যাচ্ছে বয়লারে ঠিক ঠিক, হঠাৎ কথা 
নেই বার্তা নেই। বেলচা ফেলে ছুটে চলেছে সি'ড়ির পর সিড়ি বেয়ে, 
খোল। ডেক থেকে সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়বে বলে। অসহা গরমে মাথা 
বিগড়ে গিয়েছে, জাহাজী বুলিতে একেই বলে “এমখ”__ 

আমি শুধালুম, “একেই কি ইংরেজীতে বলে এমাকৃ (812)00%) ? কিন্তু 
তখন তো মানুষ খুন করে ! 

সারেঙ বললে, “জী হা । তখন বাধা দিতে গেলে হাতের কাছে যা 
পায়, তাই দিয়ে খুন করতে আসে । তারপর একটু থেমে সারেউ বললে; 
আমাদের সরুলেরই হু-একবার হয়েছে, আরু-সবাই জাবড়ে ধরে জলে 
চুবিয়ে আমাদের ঠাণ্ডা করেছে-_ শুধুসমীরুদ্দী কখ খনো৷ একবারের তরেও 
কাতর হয় নি। তাকে আপনি দেখেছেন সায়েব? বাং মছের মত ছিল 
তার শরীর) অথচ হাত দিয়ে টিপলে মনে হত কচ্ছপের খোল । জাহাজের 
চীন। বাবুচির ওজন ছিল তিন মণের কাছাকাছি--তাকে সে থাবড়া মেরে 
বসিয়ে দিতে পারত । লাঠি খেলে খেলে তার হাতে জমে ছিল বাঘের 
থাবার তাগদ। কিন্তু সে যে ভিরমি যায় নি, “এমথ” হয় নি তার কারণ 
তার শরীরের জোর নয়-_দিলের হিম্মং__সে মন বেঁধেছিল, ষে করেই 
হোক পয়স1 সে কামাবেই কামাবে, ভিরমি গেলে চলবে না, বিমারি 
পাকড়ানো সথং মান ॥) 

সারেঙ বললে, “কী বেহদ তকলীফে জান পানি হয়ে যে কুলুম শহর 
পৌছলাম-_ 

আমি শুধালুম, “সে আবার কোথায় ?? 

বললে, বাংলায় যারে লঙ্কা কর ।' 

আমি বললুম। “ও কলম্তো | 

'জী। আমাদের উচ্চারণ তো! আপনাদের মত ঠিক হয় না। আমরা 
বলি কুলুম শহর। সেখানে ডাগায় বেড়াবার জন্য আমাদের নামতে দিল 


১২ 


বটে, কিন্তু যারা পয়ল। বার জাহাজে বেরিয়েছে। তাদের উপর কড়া নজর 
বলাখা হয়, পাছে জাহাজের অগা কষ্ট এড়াবার জন্ডে পালিয়ে যায়। 
'সমীরুদ্দী বন্দরে নামলেই না । বললে, নামলেই তো বাজে খরচ। | 
আর সে-কথ। ঠিকও বটে হুজুর, খালাসীর। কাচা পয়স। বন্দরে যা! ওড়ায় ! 
যে জীবনে কখনও পাঁচ টাকার নোট দেখে নি, আধুলির বেশী কামায় নি, 
তার হাতে পনেরো টাকা ! সে তখন কাগের বাচ্চা কেনে । 

“আমর পেট ভরে যা-খুশি তাই থেলাম । বিশেষ করে শাকসবঞ্জি। 
জাহাজে থালালীদের কপালে ও-জিনিস কম। নেই বললেও হয়--দেশে 
যার ছড়াছড়ি। 

তারপর কুলুম থকে আদন বন্দর |; 

আমার আর ইংরিজী “এইড.ন্‌" বলার দরকার হল ন1। 

তারপর লাল-দরিয়! পেরিয়ে নুপোর খার়ি-_ছু দিকে ধু-ধু মরুভূমি, 
বালু আর বালু; মাঝখানে ছোট্র একটা খাল ।' 

বুঝলুম “নুসোর খাড়ি? মানে স্থয়েজ কানাল। 

“তারপর পুর্পই ? সেখানে খালের শেষ। বাড়িয়! ব্দর। আমর! 
শাক-সবজি থেতে নামলাম সেখানে | বঝান্ুরা গেল খারাপ জায়গায় ।? 

পোর্ট সঈদের গণিকালয় যে বিশ্ববিখ্যাত, দেখলুম, সারেডের পে! সে- 
খবরটি রাখে । 

পুর্পই থেকে মার্স ই, মার্সঈই থেকে হামবুর-হামবুর জর্ধনির মুলুকে ।? 

ততক্ষণে সিলেটী উচ্চারণে বিদেশী শব্দ কি ধ্বনি নেয়, তার খানিকটা 
আন্দাজ হয়ে গিয়েছে তাই বুঝলুম, মারসেইলজ, হামবুর্গের কথা হচ্ছে। 
আর এটাও লক্ষ্য করলুম যে, সারেঙ বন্দরগুলোর নাম সোজা ফরাসী- 
'জর্মন থেকে শুনে শিখেছে, তারা যে-রকম উচ্চারণ করে, ইংরিজীর বিকৃত 
উচ্চারণের মারফত নয়। 

সারে বললে, “হামবুরে সব মাল নেমে গেল । সেখান থেকে আবার 
মাল গাদাই করে আমরা দরিয়া পাড়ি দিয়ে গিয়ে পৌছলাম মুউক 
বন্দরে-_মিরিকিন মুলুকে । 

নয়া ঝুনা কোন খালাসীকেই ছুউক বন্দরে নামতে দেয় না। বড় 


১৩ 


কড়াকড়ি সেখানে । আর হবেই বা না কেন? মিরিকিন মুলুক সোনার 
দেশ। আমাদের মত চাষাভৃষাও সেখানে মাসে পাঁচ-সাত শো 
টাকা কামাতে পারে। আমাদের চেয়েও কালা, একদম মিশকালা 
আদমীও সেখানে তার চেয়েও বেশী কামায়। খালাসীদের নামতে দিলে 
সব কটা ভেগে গিয়ে তামাম মুলুকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণ ভরে টাকা 
কামাবে। তাতে নাকি মিরিকন মজুরদের জবর লোকসান হয়। তাই 
আমরা হয়ে রইলাম জাহাজে বন্দী। 

'চুউক পৌছবার তিন দিন আগে থেকে সমীরুদ্দীর করল শক্ত পেটের 
অস্থুখ । আমরা আর পাঁচজন ব্যামোর ভান করে হামেশাই কাজে 
ফাকি দেবার চেষ্টা করতাম, কিন্তু সমীরুদ্দী এক ঘণ্টার তরেও কোন 
প্রকারের গাফিলি করে নি বলে ডাক্তার তাকে শুয়ে থাকবার হুকুম 
দিলে। 

'নুউক পৌছবার দিন সন্ধেবেলা সমীরুদ্দী আমাকে ডেকে পাঠিয়ে 
কসম কিরে খাইয়ে কানে কানে বললে সে জাহাজ থেকে পালাবে। 
তারপর কি কৌশলে সে পাড়ে পৌছবে, তার ব্যবস্থা সে আমায় ভাল 
করে বুঝিয়ে বললে । 

বিশ্বাস করবেন না সাহেব, কি রকম নিখুঁত ব্যবস্থা সে কত ভেবে 
তৈরি করোছিল। কলকাতার চোরা-বাজার থেকে সে কিনে এনেছিল 
একট! খাস নীল রঙের সুট, শর্ট, টাইকলার। জুতা, মোজ] | 

“আমাকে সাহায্য করতে হল শুধু একটা পেতলের ডেকচি যোগাড় 
করে দিয়ে। সন্ধ্যার অন্ধকারে সমীরুদ্দী সাতারের জাঙিয়া পরে নামল 
জাহাজের উলটো ধার দিয়ে খোল। সমুদ্রের দিকে । ডেকচির ভিতরে 
তার স্ুট জুত। মোজ। আর একধান। তোয়ালে । বুক দিয়ে সেই ডেকচি 
ঠেলে ঠেলে বেশ খানিকট। চক্কর দিয়ে সে প্রায় আধ মাইল দূরে গিয়ে 
উঠবে ডাঙায়। পাড়ে উঠে, তোয়ালে দিয়ে গা মুছে, জাঙিয়া ডেগচি 
জলে ডুবিয়ে দিয়ে সে শিস দিতে দিতে চলে যাবে শহরের ভিতর । 
সেখানে আমাদেরই এক দিলেটী ভাইকে সে খবর দিয়ে রেখেছিল হামবুর 
থেকে। পুলিসের খোজাখু'জি শেষ না৷ হওয়া প্স্ত সেখানে সে গা-ঢাকা। 


১৪ 


দিয়ে থাকবে কয়েকদিন, তারপর দাড়িগৌফ কামিয়ে চলে যাবে মুউক থেকে 
বহুদূরে, যেখানে সিলেটীরা কাচ পয়স। কামায়। পালিয়ে ডাঙায় উঠতে 
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার যে কোনও ভয় ছিল না! ত1 নয়, কিন্তু একবার 
সুটটি পরে রাস্তায় নামতে পারলে পুলিশ দেখলেও ভাববে, সে নুউক- 
বাসিন্দা, সমুদ্রপারে এসেছিল হাওয়। খেতে । 

“পেলেনটা ঠিক উতরে গেল, সায়েব। সমীরুদ্দীর জন্ত খোজ, খোঁজ, 
রব উঠল পরের দিন দুপুরবেলা । ততক্ষণে চিড়িয়। যে শুধু উড় গিয়া ত৷ 
নয়। সে বনের ভিতর বিলকুল উধাও | একদম না-পাস্তা। বরঞ্চ বনের 
ভিতর পাখিকে পেলেও পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সুউক শহরের ভিতর 
সমীরুদ্দীকে খুঁজে পাবে কোন্‌ পুলিশের গৌসাই ? 

গল্প বলায় ক্ষান্ত নিয়ে সারে গেল জোহরের নমাজ পড়তে । কিরে 
এসে ভূমিকা না করেই সারে বললে, “তারপর হুজুর, মামি পুরো সাত 
বছর জাহাজে কাটাই। ছু-াচবার থিদিরপুরে নেমেছি বটে, কিন্তু দেশে 
যাবার আর ফুরসত হয়ে উঠে নি। আর কী-ইবা হত গিয়ে, বাপ-মা 
মরে গিয়েছে, বউ-বিবিও তখন ছিল না। যতদিন বেঁচে ছিল, বাপকে 
মাঝে মাঝে টাকা পাঠাতাম-_বুড়া শেষের ক বছর সুখেই কাটিয়েছে-_ 
খু্দাতালার শুকুর-_বুড়ী নাকি আমার জন্য কাদত। তা হুজুর, দরিয়ার 
অধৈ নোন। পানি যাকে কাতর করতে পারে না, বাড়ির ছু ফৌটা নোন। 
জল তার আর কী করতে পারে বলুন ! 

বঙ্গল বটে হক কথা, তবু সারেঙের চোখেও এক ফোঁটা নোন। জল 
দেখ! দিল। 

সারেঙ বললে, যাক সে কথা । এ সাত বছর মাঝে মাঝে এর মুখ 
থেকে ওর মুখ থেকে খবর কিংবা গুজব, যাই বলুন, শুনেছি, সমীরুদ্দী 
বত পয়স| কামিয়েছে, দেশেও নাকি টাকা পাঠায়, তবে যে আস্তানা 
গেড়ে বসেছে মিরিকিন মুল্লুকে, দেশে ফেরার কোন মতলব নেই। তাই 
নিয়ে আমি আফসোস করি নি, কারণ খুদাতালা যে কার জন্ত কোন্‌ 
মূলুকে দানাপানি বাখেন, তার হদিস বাতলাৰে কে? 

'তারপর কল-ঘন্ৰ, £তলে-পিছুল, মেঝেতে আছাড় খেয়ে ভেঙে গেল 


আমার পায়ের হাড্ডি। বড়জাহাজের কাম ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে 
এসে ঢুকলাম ডিসপ্যাচের কামে । এ-জাছাজে আসার ছু দিন পরে, 
একদিন খুব ভোরবেলা, কজরের নমাজের ওজু করতে যাচ্ছি এমন সময় 
তাজ্জব মেনে দেখি, ডেকে বসে রয়েছে সমীরুদ্দী! বুকে জাবড়ে ধরে 
তাকে বললাম, “ভাই দমীরুদ্দী 1 এক লহমায় আমারু মনে পড়ে গেল, 
'সমীরুদ্দীকে এককালে আমি আপন ভাইয়ের মতন কতই ন। প্যার 
করেছি। 

কিন্ত তাকে হঠাৎ দেখতে পাওয়ার চেয়েও বেশী তাজ্জব লাগল 
আমার, সে আমার কোনও প্যারে সাড়া দিল না৷ বলে । গাঙের দিকে 
মুখ করে পাথরের পুতুলের মত বসে রইল সে। শুধালাম, তোর দেশে 
ফেরার খবর তো আমি পাই নি। আবার এ জাহাজে করে চলেছিস 
তুই কোথায়? কলকাতা? কেন? দেশে মন টিকল না? 

“কোন কথা কয় না । ফকির দরবেশের মত বসে রইল ঠায়, তাকিয়ে 
'রইল বাইরের দিকে, যেন আমাকে দেখতেই পায় নি। 

বুঝলাম কিছু একট! হয়েছে । তখনকার মত তাকে আর কথা 
কওয়াবার চেষ্টা ন! করে, ঠেলেঠুলে কোন গতিকে তাকে নিয়ে গেলাম 
আমার কেবিনে । নাশতার পেলেট সামনে ধরলাম আগ্া। ভাঙ। ও পরট 
দিয়ে সাজিয়ে--ওই থেতে নদে বড় ভালবাসত- কিচ্ছু মুখে 
দিতে চায় না। তবু জোর করে গেলালাম, বাচ্চাহারা মাকে মানুষ 
যেরকম মুখে খাবার ঠেসে দেয়, কিন্তু ুজুর) পরের জন্য অনেক কিছু করা 
যায়, জানতক কুরবানি দিয়ে তাকে বাচানে। যায়, কিন্তু পরের জন্য খাবার 
গিলি কি করে ? 

“সেদিন ছুপুরবেলা! তাকে কিছুতেই গোয়ালন্দে নামতে দিলাম ন1। 
আমার হুজুর, মনে পড়ে গেল বহু বৎলরের পুরনো কথা-_মুউক বন্দরেও 
আমাদের যখন নামতে দেয় নি, তখন সমীরুদ্দী সেখানেই গায়েব হয়েছিল । 

“রাত্রের অন্ধকারে সমীরুদ্দীর মুখ ফুটল। 

হঠাৎ নিজের থেকেই বলতে আরস্ত করল, কি ঘটেছে ।” 

লারেঙ দম নেবার জন্ত ন। অন্ত কোন কারণে খানিকক্ষণ চুপ করে 


১৬ 


রইল বুঝতে পারলুম না। আমিও কোন খোচা দিলুম না । বললে, 
“তার সে ছুঃখের কাহিনী ঠিক ঠিক বলি কি করে সাহেব? এখনও মনে 
আছে, কেবিনের ঘোরঘুট্টি অন্ধকান্সে মে আমাকে সব কিছু বলেছিল। 
এক-একটা কথা যেন সে অন্ধকার ফুটো করে আমার কানে এসে 
বিদ্ধেছিল, আর অতি অল্প কথায়ই সে সব-কিছু সেরে দিয়েছিল | 

“সাত বছরে সে প্রায় বিশ হাজার টাক] পাঠিয়েছিল দেশে তার ছোট 
ভাইকে । বিশ হাজার টাক! কতখানি হয়, তা আমি জানি নে, একসঙ্গে 
কখনও চোখে দেখি নি-_ 

আমি বললুম, “আমিও জানি নে, আমিও দেখি নি।? 

“তবেই বুঝুন হুজুর) সে-টাকা কামাতে হলে কট। জান কুরবানি দিতে 
হয়। 

“প্রথম পাচ শো টাকা পাঠিয়ে ভাইকে লিখলে, মহাজনের টাক! 
শোধ দিয়ে বাড়ি ছাড়াতে । তার পরের হাজার দেড়েক বাড়ির পাশের 
পতিত জমি কেনার জন্যে । তারপর আরও অনেক টাক দিঘি খোদাবার 
জন্যঃ তারপর আরও বনুত টাক! শন্ুরী ঢঙে পাকা চুনকাম করা। 
দেওয়াল-ওল। টাইলের চারখানা বড় ঘরের জন্য, আরও টাক। ধানের 
জমি, বলদ, গাই, গোয়ালঘর, মরাই, বাড়ির পিছনে মেয়েদের পুকুর, এসৰ 
করার জন্য এবং সর্বশেষে হাজার পাঁচেক টাক! উডি-ঘরের উল্টোদিকে 
দিঘির এপারে পাক মসজিদ বানাবার জন্য । 

“সাত বচ্ছর ধরে সমীরুত্দী মিরিকিন মুলুকে অন্ুনের মত থেটে ছু 
শিফট আড়াই শিফটে গতর খাটিয়ে জান পানি করে পয়সা কামিয়েছে, 
তার প্রত্যেকটি কড়ি হালালের রোজগার) আর আপন খাই-খরচার জন্য 
সে যা পয়ন। খরচা করেছে, তা দিয়ে মিরিকিন মুল্লুকের ভিখারীরও দিন 
গুজরান হয় না। 

£সৰ পয়সা! মে ঢেলে দিয়েছে বাড়ি বানাবার জন্য, জমি কেনার অন্য। 
মির্িকিন ষুলুকের মানুষ যে-রকম চাষবাসের খামার করে, আর 
ভদ্রলোকের মত ফ্যাশনের বাড়িতে থাকে) সে দেশে ফিরে সেই রকম 
করবে বলে। 


১৭ 


“ওদিকে ভাই প্রতি চিঠিতে লিখেছে, এটা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে-করে 
করে যেদিন সে খবর পেল মসজিদ তৈরী শেষ হয়েছে, সেদিন রূওয়ান। 
দিল দেশের দিকে | নুউক বন্দরে জাহাজে কাজ পায় আনাড়ী কাল। 
আদমীও বিনা তকলিফে। তার উপর সমীরুদ্দী হরেক রকম কারখানার 
কাজ করে করে কলকব্জা এমনি ভাল শিখে গিয়েছিল যে, তারই 
সার্টিফিকেটের জোরে জাহাজে আব্নামের চাকরি করে ফিরল খিদিরপুর। 
সন্ধের সময় জাহাজ থেকে নেমে সোজ! চলে গেল শেয়ালদা! সেখানে 
প্লাটফর্মে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরে চাগী। মেল ধরে, শ্রীমঙ্গল স্টেশনে 
পৌছল রাত তিনটেয়। সেখান থেকে হেঁটে রওয়ান। দিল ধলাইছড়ার 
দিকে-_আট মাইল রাস্তা, ভোর হতে না হতেই বাড়ি পৌছে যাবে । 

রাস্তা থেকে পোয়াটাক মাইল ধানখেত, তারপর ধলাইছড়। গ্রাম । 
আলের উপর দিয়ে গ্রামে পৌঁছতে হয়। 

“বিহনের আলে! ফোটবার সঙ্গে সঙ্গে সমীরুদ্দী পৌছল ধানখেতের 
মাঝখানে । 

“মসজিদের একটা উচু মিনার থাকার কথা ছিল--কারণ মসজিদের 
নকশাট। সমীরুদ্দীকে করে দিয়েছিলেন এক মিশরী ইঞ্জিনিয়ার, আর 
হুজুরও মিশর মুলল,কে বহুকাল কাটিয়েছেন, তাদের মসজিদে মিনারের 
বাহার হুজুর দেখেছেন। আমাদের চেয়ে ঢের বেশী। 

'কত দূর-দরাজ থেকে সে মিনার দেখা যায়, সে আপনি জানেন, 
আমিও জানি, সমীরুদ্দী জানে । 

'মিনার না দেখতে পেয়ে সমীরুদ্দী আশ্চর্য হয়ে গেল। তারপর ক্রমে 
ক্রমে এগিয়ে দেখি-_ কোথায় দিঘি, কোথায় টাইলের টডিঘর !) 

আমি আশ্চর্য হয়ে শুধালাম, সে কি কথা 1) 

সারেঙ যেন আমার প্রশ্ন শুনতেই পায় নি। আচ্ছনের মত বলে 
ষেতে লাগল, “কিচ্ছু না, সেই পুরনে। ভাঙা খড়ের ঘর, আরও পুরনে। 
হয়ে গিয়েছে । যেদিন সে বাড়ি ছেড়েছিল সেদিন ঘরটা ছিল চারটা 
বাশের ঠেকনায় খাড়া, আজ দেখে ছটা ঠেকনা। তবে কি ছোট ভাই 
বাড়ি-ঘরদোর গায়ের অন্ত দিকে বানিয়েছে? কই, তা হলে তে! নিশ্চয়ই 


১৮ 


সে-কথা কোন-না-কোন চিঠিতে লিখত | এমন সময় দেখে গায়ের বাদিত 
মোল্লা | মোল্লাজী আমাদের সবাইকে বড্ড প্য্ঠর করেন । সমীরুদ্দীকে 
আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। 

প্রথমটায় তিনিও কিছু বলতে চান নি। পরে সমীরুদ্দীর চাপে পড়ে 
সেই ধানখেতের মধ্যিধানে তাকে খবরট। দিলেন । তার ভাই সব টাক। 
ফুঁকে দিয়েছে। গোড়ার দিকে শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া) মৌলবীবাজারে, 
শেষের দিকে কলকাতায়-_ ঘোড়া, মেয়েমামুষ আরও কত কী! 

আমি থাকতে না পেরে বললুম। “বল কি সারেড ! এ-বকম ঘা মানুষ 
কি সইতে পারে? কিন্তু বল দিকিনি, গায়ের কেউ তাকে চিঠি লিখে 
খবরট দিলে না কেন ? 

সারেঙ বললে, “তারাই বা জানবে কি করে, সমীরুদ্দী কেন টাকা. 
পাঠাচ্ছে। সমীরুদ্দীর ভাই ওদের বলেছে, বড় ভাই বিদেশে লাখ লাখ ' 
টাকা কামায়। আমাকে ফুত্তিফাত্তির জন্য তারই কিছুটা পাঠায়। 
সমীরুদ্দীর চিঠিও সে কাউকে দিয়ে পড়ায় নি-_সমীরুদ্দী নিজে আমারই 
মত লিখতে পড়তে জানে না, কিন্তু হারামজাদ। ভাইটাকে পাঠশালায় 
পাঠিয়ে লেখাপড়া শিখিয়েছিল। তবু মোল্লাজী আর গায়ের পাচজন তার 
টাক। ওড়াবার বহর দেখে তাকে বাড়ি-ঘরদোর বাধতে, জমি-খামার 
কিনতে উপদেশ দিয়েছিলেন । সে নাকি উত্তরে বলেছিল, বড় ভাই বিয়ে 
শাদি করে, মিরিকিনি মুলুকে গেরস্থালী পেতেছে, এদেশে আর ফিরবে 
না। আর যদি ফেরেই বা, সঙ্গে নিয়ে আসবে লাখ টাকা, তিন দিনের 
ভিতর দশখান। বাড় হাকিয়ে দেবে ।, 

আমি বললুম উঃ! কী পাষণ্ড! তারপর ? 

সান্ে বললে, “সমীরুদ্দী আর গায়ের ভিতর ঢোকে নি। সেই 
ধানখেত পেকে উঠে ফিরে গেল আবার শ্রীমঙ্গল স্টেশনে । সমীরুদ্দী 
আমাকে ৰলেনি কিন্তু মোল্লাজী নিশ্চয়ই তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে 
যাবার জন্য গীড়াপীড়ি করেছিলেন, কিন্তু সে ফেরে নি। শুধু বলেছিল 
যেখান থেকে এসেছে, সেখানেই আবার ফিরে যাচ্ছে । 

“কলকাতার গাড়ি সেই রাত আটটায়। মোল্লাজী আর গায়ের 


১৯১ 


মুরুববীর! তার ভাইকে নিয়ে এলেন স্টেশনে-টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল 
বলে সে সেদিন গাঁয়েই ছি । সমীরুদ্দীর ছু পা জড়িয়ে ধরে সে মাপ 
চেয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে । আরও পাঁচজন বঙ্গলেন, বাড়ি 
চল্‌, ফের মিরিকিন যাবি তে। যাবি, কিন্তু এতদিন পর দেশে এসেছিস, 
ছদিন জিরিয়ে যা" 

আমি বঙলুম। 'রাস্কেলটা কোন মুখ নিয়ে ভায়েয় কাছে এল সারেঙ ?) 

সারেউ বললে, “আমিও তাই পুছি। কিন্তু জানেন সায়েব, সমীরুদ্দী 
কিকরলে? ভাইকে লাি মারলে না, কিছু না, শুধু বললে, সে বাড়ি 
ফিরে যাবে না।, 

তার পরদিন ্োরবেল। এই জাহাজে তার সঙ্গে দেখা। আপনাকে 
তো! বলেছি, শা-বন্দরের বারুণীর পুতুলের মত চুপ করে বসে । 

দম নিয়ে সারেঙ বললে, অতি অল্প কথায় সমীরুদ্দী আমাকে সব-কিছু 
বলেছিল । কিন্তু হুজুর, শেষটায় সে আপন মনে বিড়বিড় করে বলেছিল, 
তার মানে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি! তবে কথাঞ্চলো আমার 
স্পষ্ট মনে আছে । মে বলেছিল, :ভিখিরী স্বপ্নে দেখে, মে বডলোক হয়ে 
গিয়েছে, তারপর ঘুম ভাঙতেই সে দেখে সে আবার সেই পুরনো 
হুনিয়ার়। আমি দেশে টাকা পাঠিয়ে বাড়িঘরদোর বানিয়ে হয়েছিলাম 
বড়লোক, সেই ছুনিয়া যখন ভেঙে গেল তখন আমি গেলাম কোথায় ? 

বাস্তব ঘটন! ন! হয়ে ষদি শুধু গল্প হত, স্বপ্ন হত; তবে এইখানেই শেষ 
করা যেত। কিন্তু আমি যখন যা শুনেছি তাই লিখছি তথন সারেঙের 
বাদবাকি কাহিনী না বললে অন্যায় হবে। 

সারেঙ বললে, “চৌদ্দ বছর হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমার সর্বক্ষণ মনে হয় 
যেন কাল সাঝে সমীরুদ্দী আমার কেবিনের অন্ধকারে তার ছাতির খুন 
ঝরিয়েছিল। 

“কিন্ত ওই যে ইনসাফ বললেন ন। হুজুর; তার পাত্বা দেবেকে? 
“সমীরুদ্দী মিন্িকিন মুলুকে ফিরে 'গিয়ে দশ বছরে আবার তিরিশ 
হাজার টাক! কামায়। এবারে আর ভাইকে টাকা পাঠায় নি। সেই 
ধন নিয়ে খন দেশে ফিরছিল তথন জাহাজে মার! যায়| ত্রিসংসারে 


২৩ 


তার আর কেউ ছিল না! বলে টাকাটা পৌঁছল নেই ভাইয়েব্র কাছে 
আবার সে টাকাটা ওড়াল। 
ইনসাফ কোথায় ? 


॥ পাদটীকা৷ ॥ 


গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশের 

টোলগুলে। মড়ক লেগে প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়। পাঠান-মোগল 
আমলে যে ছুর্দেব ঘটেনি ইংরাজ রাজত্বে সেটা প্রায় আমাদেরই চোখের 
সামনে ঘটল। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে দেশের কর্তাব্যক্তিরা ছেলে- 
ভাইপোকে টোলে ন] পাঠিয়ে ইংরেজি ইস্কুলে পাঠাতে আরম্ভ করলেন । 
চতুর্দিকে ইংরেজি শিক্ষার জয়-জয়কার পড়ে গেল-__সেই ডামাভোলে - 
টোল মরল, আর বিস্তর কাব্যতীর্ঘথ বেদাস্তবাগীশ ন। খেয়ে মার। গেলেন । 

এবং তার চেয়েও হৃদয়বিদারক হল তাদের অবস্থা যারা কোনে 
গতিকে সংস্কৃত ব৷ বাঙলার শিক্ষক হয়ে হাই স্কুলগুলোতে স্থান পেলেন । 
এদের আপন আপন বিষয়ে অর্থাৎ কাব্য, অলঙ্কার, দর্শন ইত্যাদিতে 
এদের পাণ্ডিত্য ছিল অন্তান্থ শিক্ষকদের তুলনায় অনেক বেশী কিন্তু সম্মান 
এবং পারিশ্রমিক এরা পেতেন সবচেয়ে কম। শুনেছি কোনে! কোনো 
স্কুলে পণ্ডিতের মাইনে চাপরাশীর চেয়েও কম ছিল। 

আমাদের পণ্ডিতমশাই তর্কালঙ্কার ন৷ কাব্যৰিশারদ ছিলেন আমাৰ 
আর ঠিক মনে নেই কিন্ত এ কথা মনে আছে যে পণ্ডিতসমাজে তার 
খ্যাতি ছিল প্রচুর এবং তার পিতৃপিতামহ চতুর্দশ পুরুষ শুধু যে ভারতীয় 
সংস্কৃষ্ির একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন তা নয়; তারা কথনে। পরান্ন ভক্ষণ 
করেননি-_-পালপরব শ্রান্ধনিমন্ত্রণে পাত পাড়ার তো৷ কথাই ওঠে না| 

বাঙলা ভাষার প্রতি পণ্ডিতমশাইয়ের ছিল অবিচল, অকৃত্রিম 
অশ্রদ্ধা-_ ঘৃণা বললেও হয়ত বাড়িয়ে বল! হয় না। বাঙলাতে যেটুকু 
খাটি সংস্কৃত বস্ত আছে তিনি মাত্র সেইটুকু পড়াতে রাজী হতেন-__অর্থাৎ 
কৃত ত।দ্ধত, সদ্ধি এবং সমাস। তাও বাঙল! মাস 'না। আমি একদিন 


২১ 


বাঙল। রচনায় “দোলা-লাগা; “পাখী-জাগা? উদ্ধৃত করেছিলুম বলে তিনি 
আমার দিকে দোয়াত ছুণড়ে মেরেছিলেন। ক্রিকেট ভাল খেলা-_-সে 
দিন কাজে লেগে গিয়েছিল । এবং তার পর মুহুর্তেই বি পূর্বক, আ' পূর্বক, 
আৰ ধাতু কে উত্তর দিয়ে সংস্কৃত ব্যান্রকে ঘায়েল করতে পেরেছিলুম বলে 
তিনি আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, “এই দণ্ডেই তুই স্কুল ছেড়ে চতুষ্পাঠীতে 
যা। সেখানে তোর সত্য বিদ্যা হবে ।? 

কিন্তু পণ্ডিতমশাই যত না পড়াতেন, ভার চেয়ে বকতেন ঢের বেশী 
এবং বিলের উপর পা ছ'খান৷ তুলে দিয়ে ঘুমুতেন সব চেয়ে বেশী । বেশ 
নাক ভাকিয়ে। এবং হেভমাস্টারকে একদম পরোয়া না করে। কারণ 
হেডমাস্টার তার কাছে ছেলেবেলায় সংস্কৃত পড়েছিলেন এবং তিনি যে 
লেখাপড়ায় সর্বাঙগনিন্দনীয় হস্তীমূর্খ ছিলেন সে কথাটি পণ্ডিতমশাই 
বারম্বার অহরহ সর্বত্র উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতেন ! আমর। সে কাহিনী শুনে 
বিমলানন্দ উপভ্ভোগ করতুম' আর পণ্ডিতমশাইকে খুশী করবার পন্থা 
বাড়ন্ত হলে এ বিষয়টি নূতন করে উত্থাপন। করতুম । 

আমাকে পণ্ডিতমশাই একটু বেশী নেহ করতেন । ভার কারণ 
বি্তাসাগরী বাঙলা লেখা ছিঙ্গ আমার বাই 7 “দোলা-লাগাঁ, পাখী জাগা”ই 
আমান বর্ণাশ্রম ধর্ম পালনে একমাত্র গোমাংস ভক্ষণ | পণ্ডিতমশাই যে 
আমাকে সবচেয়ে বেশী ন্েহ করতেন তান প্রমাণ তিনি দিতেন আমার 
উপর অহরহ নানাপ্রকার কটুকাটব্য বর্ণ করে। “অনার্য, 'শাখামুগ” 
'দ্রাবিডসম্তৃত” কথাগুলো! ব্যবহার না করে তিনি আমাকে সাধারণতঃ 
সম্বোধন করতেন না ১ তা। ছাড়। এমন সব অশ্লীল কথ। বলতেন যে তার 
সঙ্গে তুলন। দেবার মত জিনিস আমি দেশবিদেশে কোথাও শুনিনি । তৰে 
একথাও স্বীকার করতে হবে যে পণ্ডিতমশাই শ্লীল অশ্লীল উভয় বস্তুই 
একই স্থরে একই পরিমাণে ঝেড়ে যেতেন, সম্পূর্ণ অচেতন, বীতরাগ এবং 
লাভালাভের আশা ব1 ভয় না করে! এবং তার অশ্লীলতা মাঞজজিত ন! 
হলেও অত্যন্ত বিদগ্ধরূপেই দেখ। দিত বলে আমি বছ অভিজ্ঞতার পর 
এখনে! মনস্থির ঠকরতে পারিনি যে, সেগুলে৷ শুনতে পেয়ে আমার লাভ না 
ক্ষতি, কোনটা বেশী হয়েছে। 


৮৬২ 


পণ্ডিতমহাশয়ের বর্ণ ছিল শ্যাম । তিন মাসে একদিন দাড়ি গৌফ 
কামাতেন এবং পরতেন হাটু-জোক। ধুতি । দেহের উত্তমার্ধে একথান৷ 
দড়ি প্যাচানে। থাকতো।--অজ্ঞের! বলত সেটা নাকি দড়ি নয়। চাদর । 
ক্লাসে ঢুকেই তিনি সেই দড়িখানা৷ টেবিলের উপর রাখতেন, আমাদের 
দিকে রোষকষায়িত লোচনে তাকাতেন, আমাদের বিদ্যালয়ে না এসে যে 
চাষ করতে যাওয়াটা সমধিক সমীচীন সে কথাট। দ্বিসহত্রবারের মত স্মরণ 
করিয়ে দিতে দিতে পা ছ'খান। টেবিলের উপর লম্বমান করতেন । 
তারপর যে কোনে! একট অজুহাত ধরে আমাদের এক চোট বকে নিয়ে 
ঘুমিয়ে পড়তেন । নিতান্ত যেদিন কোনো অজুহাতই পেতেন না 
ধর্মসাক্ষী সে-কন্ুর আমাদের নয়__সেদিন হচারটে কৃৎ-তদ্ধিত সম্বন্ধে 
আপন মনে কিন্তু বেশ জোর গলার--আলোচনা করে উপসংহারে 
বলতেন, “কিন্ত এই মূর্খদের বিদ্াদান করবার প্রচেষ্টা বন্ধ্যাগমনের মত. 
নিক্ষল নয় কি? তারপর কথনো৷ আপন গতাম্তব চতুষ্পাঠীর কথা স্মরণ 
করে বিড়বিড় করে বিশ্বত্রক্মাণ্তকে অভিশাপ দিতেন, কথনে। দীর্ঘশ্বাস 
ফেলে টানাপাখার দিকে একদৃষ্টে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘুমিয়ে 
পড়তেন। 

শুনেছি, ঝণ্থেদে আছে, যমপত্বী যমী যখন বযমের মৃত্যুতে অত্যন্ত 
শোকাতুরা হয়ে পড়েন তখন দেবতার! তাকে কোনো প্রকারে সাস্তবন! 
না দিতে পেরে শেষটায় তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আমার 
বিশ্বাম পণ্ডিতমশায়ের টোল কেড়ে নিয়ে দেবতারা তাকে নাস্তবন। দেবার 
জন্য অহরহ ঘ্বুম পাড়িয়ে দিতেন। কারণ এরকম দিনযামিনী সায়ংপ্রাতঃ 
শিশিরধসন্তে বেঞ্চি-চৌকিতে যত্রতত্র অকাতরে ঘুমিয়ে পড়তে পারাট! 
' দেবতার দান-_-এ কথা অস্বীকার করার জো নেই। 

বহু বৎসর হয়ে গিয়েছে, সেই ইস্কুলের সামনে সুরমা নদী দিয়ে অনেক 
জল বয়ে গিয়েছে কিন্ত আজো বখন তার কথা ব্যাকরণ সম্পর্কে মনে পড়ে 
তখন তার যে ছবিটি আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেটি তার জাগ্রত 
অবস্থার নর; সে ছবিতে দেখি, টেবিলের উপন্ হ'পা-তোলা, মাথা 
একদিকে ঝুলে পড়া টিকিতে দোল। £লাগ। কাষ্ঠাসন শরশব্যায় শায়িত 


২৩ 


ভারতীয় এঁতিহোর শেষ কুমার ভীম্মদেষ। কিন্তু ছিঃ) আবার 'দোলা- 
লাগা? সমাস ব্যবহার করে পণ্ডিতমশায়ের প্রেতাত্মাকে ব্যথিত করি কেন ?' 

সে-সময়ে আসামের চীপ-কমিশনার ছিলেন এন. ভি. বীটনন্‌ বেল্‌। 
সাহেবটির মাথায় একটু ছিট ছিল। প্রথম পরিচয়ে তিনি সবাইকে বুঝিয়ে 
বলতেন যে তার নাম, আসলে 'নন্দহলাল বাজায় ঘণ্টা | এন. ডি'তে 
হয় নন্দছুলালগ আর বীটসন্‌ বেল্‌ অর্থ “বাজায় ঘণ্টা”-_-ছয়ে মিলে হয় 
'নন্দহুলাল বাজায় ঘণ্টা; । 

সেই নন্দহুলাল এসে উপস্থিত হলেন আমাদের শহরে । 

ক্লাসের জ্যাঠ। ছেলে ছিল পন্মলোচন। সেই একদিন খবর দিল লাট' 
সাহেব আসছেন স্কুল পরিদর্শন করতে-__পদ্মর ভগ্নিপতি লাটের টুর ক্লার্ক 
ন। কি; সে তার কাছ থেকে পাকা খবর পেয়েছে। 

লাটের ইন্কুল আগমন অবিমিশ্র আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নয়। একদিক 
দিয়ে যেমন বলা নেই, কওয়! নেই, হঠাৎ কন্থুর বিনা-কন্ুরে লাট আসার 
উত্তেজনায় খিটখিটে মাস্টারদের কাছ থেকে কপালে কিলটা চড়টা আছে, 
অন্ঠদিকে তেমনি লাট চলে যাওয়ার পর তিন দিনের ছুটি। 

হেডমাস্টারমশায়ের মেজাজ যখন সক্কলের প্রাণ ভাজ ভাজা করে 
ছাই বানিয়ে ফেলার উপক্রম করেছে এমন সময় খবর পাওয়৷ গেল, 
শুকুরবার দিন হুজুর আসবেন। 

ইস্কুল শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে আমরা সেদিন হাজিরা দিলুম | 
হেডমাস্টার ইস্কুলের সর্বত্র চফিবাজীর মতন তুর্ক-নাচন নাচছেন। ষে: 
দিকে তাকাই সে দিকেই হেডমাস্টার | নিশ্চয়ই তার অনেকগুলো যমজ 
ভাই আছেন, আর ইস্কুল সামলাবার জন্য সেদিন সব ক'জনকে রিকুইজিশন, 
করে নিয়ে এসেছেন। 

পল্মলোচন বললে, “কমন-রুমে গিয়ে মজাটা দেখে আয় । 

“কেন, কি হয়েছে ?, 

“দেখেই আর না ছাই।” 

পদ্ম আর বা করে করুক কথনে। বাদি খবর বিলোয় না । হেড- 
মাস্টারের চড়ের ভয় না মেনে কমন-রুমের কাছে গিয়ে জানল! দিয়ে 


২৪ 


দেখি; অবাক কাণ্ড ! আমাদের পণ্ডিত মশাই একটা লম্বা-হাতা আন্কোরা 
নৃতন হলদে রঙের গেঞ্জি পরে বসে আছেন আর বাদ বাকি মাস্টারর! 
কলরব করে সে-গেঞ্জিটার প্রশংন। করছেন। নানা মুনি নানা গুণ কীর্তন 
করছেন ; কেউ বলছেন পণ্ডিতমশাই কি বিচক্ষণ লোক, বেজায় সস্তায় 
দাও মেরেছে (গাঁজা, পগ্ডিতমশায়ের সাংসারিক বুদ্ধি একরত্তি ছিল না), 
কেউ বলছেন আহা, যা মানিয়েছে (হাতী। পণ্ডিতমশাইকে সার্কাসের 
সঙের মত দেখাচ্ছিল ), কেউ বলছেন, যা ফিট করেছে (মরে যাই, গেজির 
আবার ফিট অফিট কি?)। শেষটায় পণ্ডিতমশায়ের ইয়ার মৌলবী 
সায়েব দাড়ি ছুলিয়ে বললেন, 'বুঝলে ভশ্চাচ, এ রকম উম্দা গেঞ্জি ভ্রেফ 
হ'খান। তৈরী হয়েছিল, তার-ই একটা কিনেছিল পঞ্চম জর্জ, আর ছুলরাট৷ 
কিনলে তুমি। এ ছুটে বানাতে গিয়ে কোম্পানী দেউলে হয়ে গিয়েছে, 
আর কারে! কপালে এ রকম গেঞ্জি নেই ।? 

চাপরাশী নিত্যানন্দ দূর থেকে ইশারায় জানাল, “বাবু আসছেন ।' 

তিন লক্ষে ক্লাসে ফিরে গেলুম । 

সেকেগ্ড পিরিয়ভে বাঙল। । পগ্ডিতমশাই আসতেই আমর মবাই-_ 
ত্রিশ গাল হেসে গেঞিটার দিকে তাকিয়ে রইলুম | ইতিমধ্যে রেবতী খবর 
দিল যে শাস্ত্রে সেলাই-করা৷ কাপড় পর বারণ বলে পণগ্ডিতমশাই পাঞ্জাবী 
শার্ট পরেন না; কিন্তু লাট সায়েব আমছেন, শুধু গায়ে ইস্কুল আসা চলবে 
না, তাই গঞ্জে পরে এসেছেন । গেঞ্জি বোনা জিনিস, সেলাই-করা কাপড়ের 
পাপ থেকে পণ্ডিতমশাই কৌশলে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। 

গেঞ্জি দেখে আমরা এতই মুগ্ধ যে পণ্ডিতমশায়ের গালাগাল। বোয়াল- 
চোখ নব কিছুর জন্তই আমরা তখন তৈরী কিন্তু কেন জানিনে তিনি তার 
রুটিন মাফিক কিছুই করলেন না। বকলেন না, চোখ লাল করলেন 
না, লাট আসছেন কাজেই টেবিলে ঠ্যাং তোলার কথাও উঠতে পারে 
না। তিনি চেয়ারের উপর অত্যন্ত বিরম বদনে বসে রইলেন। 

পল্পলোচনের ভর ভয় কম। আহ্লাদে ফেটে গিয়ে বলল, 'পণ্ডিতমশাই। 
গেঞ্জিট কঙ্িয়ে কিনলেন ? আশ্চর্ধ পগ্ডিতমশাই খ্যাক খযাক করে 
উঠলেন না, নিজর্খব কণ্ঠে বললেন, "পাচ সিকে । 


২৫ 
সৈ-ম-আ1---শ্রেষঠগল্প--২ 


আধ মিনিট বেতে না যেতেই পণ্ডিতমশাই ছ'হাত দিয়ে ক্ষণে হেথায় 
চুলকান ক্ষণে হোথায় চুলকান। পিঠের অসম্ভব অসম্ভব জায়গায় কথনো! 
ডান হাত, কখনে। বা হাত দিয়ে চুলকানোর চেষ্টা করেন, কখনে! মুখ 
বিকৃত করে গেঞ্জির ভিতর হাত চালান করে পাগলের মত এখানে 
ওখানে খ্যাস খ্যাস করে খামচান। 

একে তো৷ জীবন-ভর উত্তমাঙ্গে কিছু পরেননি, তার উপর গেপ্রি) সেও 
আবার 'একদম নৃতন কোর! গেঞ্জি। 

বাচ্চা ঘোড়ার পিঠে পয়ল। জিন লাগালে সে যে-রকম আকাশের 
দিকে ছু'পা তুলে তড়পায়, শেষটার় পণ্ডিতমশায়ের সেই অবস্থা হল। 
কখনো করুণ কণ্ঠে অস্ফুট আর্তনাদ করেন, 'রাধামাধব, এ কী গবব-যস্তণ,। 
কখনে। এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে; টাত কিড়মিড় খেয়ে 
আত্মসম্বরণ করার চেষ্টা করেন-__লাট সায়েবের সামনে তে। সর্বাঙ্গ জচড়ানে! 
বাবে না। 

শেষটায় থাকতে ন। পেরে আমি উঠে বললুম) 'পপ্ডিতমশাই, আপনি 
গ্রেঞ্জিটা খুলে ফেলুন। লাট সায়েব এলে আমি .জানল। ' দিয়ে দেখতে 
পাব। তখন ন! হয় ফের পরে নেবেন।' 

বললেন, “ওরে জড়ভরত, গবব-যন্তণাট! খুলছি নে, পরার অভ্যেস হয়ে 
যাবার জন্য ।' আমি হাত জোড় করে বললুম, “একদিনে অভোস হবে ন৷ 
পণ্ডিতমশাই, ওটা আপনি খুলে ফেলুন ।? 

আসলে পণ্ডিতমশাইয়ের মতলব ছিল গেঞ্জিটা খুলে ফেলারই; শুধু 
আমাদের কারে। কাছ থেকে একটু মরাল সাপোর্টের অপেক্ষায় এতক্ষণ 
বসেছিলেন | তবু সন্দেহ-ভরা চোখে বললেন, তুই তো একটা আস্ত: 
মর্কট__শেষটায় আমাকে ভোবাৰি ন। তো? তুই বদি ভ'শিয়ার ন। করিস, 
আর লাট যদি এসে পড়েন? 

আমি ইহলোক পরলোক সর্বলোক তুলে দিব্যি, কিরে; কসম খেলুম। 

পণ্তিতমশাই গেঞ্জিট! খুলে টেবিলের উপর ক্বেখে সেটার দিকে যে দৃষ্টি 
হানলেন, তীর টিকিটি কেউ কেটে ফেললেও তিনি তার দিকে এর চেয়ে 
বেশী ঘ্বণ। মািক্পে তাকাতে পারতেন, না। তারপর লুগ্তদেহট। ফিতে 


১৬ 


পাওয়ার আনন্দে প্রাণভরে সর্বাঙ্গ খামচালেন। বুক পিঠ ততক্ষণে বেগ.নি 
রঙের আজিতে ভণ্ভি হয়ে গিয়েছে। 

এর পর আর কোনে! বিপদ ঘটল না। পণ্ডিতমশাই থেকে থেকে 
রাধামাধৰকে স্মরণ করলেন, আমি জানল! দিয়ে তাকিয়ে রইলুম, আর 
সবাই গেঞ্জিটার নাম; ধাম, কোন দোকানে কেনা, সম্ভ। না আক্রা) তাই 
নিয়ে আলোচনা করল। 

আমি সময় মত ওয়ানিং দিলুম | পণ্ডিতমশাই আবার তার “গবব- 
বস্তণা টা; উত্তমাঙ্গে মেখে নিলেন । 

লাট এলেন; নঙ্গে ডেপুটি কমিশনার, ভাইরেকটর, ইনসপেকটর, 
হেভমাস্টার, নি ভ্যানন্দ_ আদ্র লাট সায়েবের এডিসি ফেডিসি নাকি সব 
বারান্দায় জটল! পাকিয়ে দাড়িয়ে রইল | হ্যালো! পানভিটও বলে সায়েৰ 
হাত বাড়ালেন। রাজসম্মান পেয়ে পণ্ডিতমশায়ের সর্ব যন্ত্রণা লাঘব হল। 
বার বার ঝুঁকে ঝুঁকে সায়েবকে সেলাম করলেন__-এই অনাদূত পণ্ডিত 
শ্রেণী সামান্যতম গতান্থুগতিক সম্মান পেলেও যে কি রকম বিগলিত হতেন 
তা তাদের সে-সময়কার চেহার। না৷ দেখলে অনুমান করার উপায় নেই । 

হেডমাস্টার পণ্ডিতমশায়ের কৃৎতদ্ধিতের বাই জানতেন; তাই 
নির্ভয়ে ব্যাকরণের সর্বোচ্চ নভঃস্থলে উড্ডীয়মান হয়ে “বিহঙ্গ' শবের 
তত্বানুসন্ধান করলেন । আমর। জন দশেক এক সঙ্গে চেঁচিয়ে বললুম; 
বিহায়ল পূর্বক গম ধাতু খ'। লাট সায়েব হেসে বললেন, “ওয়ান এট 
এ টাইম, প্লীজ । লাট সায়েব আমাদের বলল প্লীজ” এ কী কাণ্ড! 
তখন আবার আর কেউ বা কাড়ে না। হেডমাস্টার শুধালেন 'বিহঙ্' 
আমরা চুপ” তখনো প্লীজের ধকল কাটেনি । শেষটায় ব্যাকরণে নিরেট 
পাঠা বতেটা! আমাদের উত্তর আগে শুনে নিয়েছিল বলে র্লাসে নয়, দেশে 
শাম করে ফেলল- আমর! ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলুম । 

শাট সায়েব ততক্ষণে হেডমাস্টারের সঙ্গে 'প্ডিত' শবের মূল নিয়ে 
₹যরেজিতে আলোচন! জুড়ে দিয়েছেন । হেভমাস্টাক্প কি বলেছিলেন 
দানিনে, তবে “রবীন্দ্রনাথ নাকি পণ্ডিতদের ধর্মে জয়শীলতার প্রতি বিভ্রপ 
চকে বলেছিলেন, যাক সব কিছু পণ্ড হযে গিয়েছে সেই পণ্ডিত ! 


২৭ 


ইংরেজ শাসনের ফলে আমাদের পণ্ডিতদের সর্বনাশ, সর্বন্থ পগ্ডের 
ইতিহাস হয়ত রবীন্দ্রনাথ জানতেন না) না! হলে ব্যঙ্গ করার পূর্বে হয়ত 
একটু ভেবে দেখতেন। 

সে কথ! থাক । লাট সায়েব চলে গিয়েছেন; যাবার পূর্বে পণ্ডিতমশায়ের 
দিকে একখানা মোলায়েম নড. করাতে তিনি গর্ধে চৌচির হয়ে ফেটে 
যাবার উপক্রম । আনন্দের অতিশয্যে নূতন গেঞ্জির চুলকুনির কথা পর্যস্ত 
ভুলে গিয়েছেন । আমরা ছ" তিনবার স্মরণ করিয়ে দেবার পর গেঞ্জিট 
তার শ্রীঅঙ্গ থেকে ভিগ্রেডেভ হল । 

তিন দিন ছুটির পর ফের বাঙলা ক্লাস বসেছে। পঞ্ডিতমশাই টেবিলের 
উপর পা! তুলে দিয়ে ঘুমুচ্ছেন, না শুধু চোখবন্ধ করে আছেন ঠিক ঠাহর 
হয়নি বলে তখনো গোলমাল আরম্ভ হয়নি । 

কারে! দিকে না তাকিয়েই পণ্তিতমশাই হঠাৎ ভরা মেঘের ডাক 
ছেড়ে বললেন, “ওরে ও শাখামুগ ! 

নীল যাহার ক তিনি নীলক্__যোগর্ঢার্থে শিব। শাখাতে যে 
মুগ বিচরণ করে সে শাখাম্বগ, অর্থাৎ বাদর-_ক্লাসবঢার্থে আমি । উত্তর 
দিলুম। “আজ্ঞে |" 

পণ্ডিতমশাই শুধালেন, “লাট সায়েবের সঙ্গে কে কে এসেছিল বল 
তো রে।' 

আমি সম্পূর্ণ ফিরিস্তি দিলুম | চাপরাশী নিত্যানন্দকেও বাদ দিলুম 
না। 
বললেন, হল না। আর কে ছিল? বললুম “এ যে বললুম, এক 
গাদ। এডিসি না৷ প্রাইভেট সেক্রেটারী ন। আর কিছু সঙ্গে ছিলেন। তার! 
তো ক্লাসে ঢোকেন নি? । 

পণ্ডিতমশাই ভরা মেঘের গুরু গুরু ভাক আরো! গম্ভীর করে শুধালেন। 
«এক কথা বাহান্ন বার বলছিস কেন রে মূঢ? আমি কালা না তোর মত 
অলম্ুষ ?' 

আমি কাতর হয়ে বললুম, আর তো কেউ ছিল না পণ্ডিতমশাই, 
জিজ্ঞেস করুন. না পদ্মলোচনকে, সে তে! সবাইকে চেনে ? 


২৮ 


পণ্ডিতমশাই হঠাৎ চোখ মেলে আমার দিকে দাত মুখ খিচিয়ে 
বললেন, “ও£ উনি আবার লেখক হবেন। চোখে দেখতে পাসনে, কানা, 
পিবান্ধ।_রাত্র্ন্ধ হলেও না হয় বুঝতুম। কেন? লাট সায়েবের 
কুকুরটাকে দেখতে পাসনি ? এই পর্যবেক্ষণ শক্তি নিয়ে 

আমি তাড়াতাড়ি বললুম; “হী? হী, দেখেছি | ওতো! এক সেকেণ্ডের 
তরে ক্লাসে ঢুকেছিল।? 

পণ্ডিতমশাই বললেন, “মর্কট এবং সারমেয় কদাচ একগৃহে অবস্থান 
করেনা। সেকথাযাক। কুকুরটার কি বৈশিষ্ট্য ছিল বল তো ?' 

ভাগ্যিন মনে পড়ল । বললুম, আজ্ঞে, একটা ঠ্যাং কম ছিল বলে 
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছিল |? 

ছু” বলে পণ্ডিতমশাই আবার চোখ বন্ধ করলেন । 

অনেকক্ষণ পর বললেন, 'শোন'। শুক্রবার দিন ছুটির পর কাজ ছিল 
বলে অনেক দেরীতে ঘাটে গিয়ে দেখি আমার নৌকার মাঝি এক 
অপরিচিতের সঙ্গে আলাপ করছে । লোকটা! মুসলমান, মাথায় কিন্তিটুপী। 
আমাকে অনেক সেলাম টেলাম করে পরিচয় দিল। সে আমাদের গ্রামের 
মিম্বর উল্লার শালা; লাট সায়েবের আরদালি, সায়েবের সঙ্গে এখানে 
এসেছে, আজকের দিনট! ছুটি নিয়েছে তার দিদিকে দেখতে যাবে বলে । 
ঘাটে আর নৌকা নেই। আমি যদি মেহেরবানি করে একটু স্থান দিই। 

পণ্ডিতমশায়ের বাড়ি নদীর ওপারে, বেশ খানিকটে উজ্জিয়ে। তাই 
তিনি বর্ষাকালে নৌকোনপ যাতায়াত করতেন আর সকলকে অকাতরে 
লিফউ. দিতেন । 

পণ্ডিতমশায় বললেন, “লোকটার সঙ্গে কথাবার্তা হল। লাট সায়েবের 
সব খবর জানে, তোর মত কান! নয়, সব জিনিস দেখে, নব কথা মনে 
রাখে । লাট সায়েবের কুকুরটার একটা ঠ্যাংকি করে ট্রেনের চাকায় 
কাটা বায় সে-খবরটাও বেশ গুছিয়ে বলল ।' 

তারপর পণ্ডিতমশাই ফের অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর আপন 
মনে আস্তে আন্তে বললেন, “আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধ! মাতা, তিন কন্ত1) বিধবা 
পিসি, দাদী একুনে আমরা আটজন।।' 


৯ 


তারপর হুঠাৎ কথা ঘুরিয়ে ফেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মদন- 
মোহন কি রকম আক শেখায় রে ?, 
মদনমোহনবাবু আমাদের অস্কের মাস্টার_পণ্ডিতমশায়ের ছাত্র ॥ 
বললুম, “ভালই পড়ান ।' 
পণ্ডিতমশাই বললেন, “বেশ বেশ ! তবে শোন । মিম্বর উল্লার শালা 
বলল, লাট সায়েবের কুত্তাটার পিছনে মাসে পণ্চাত্তর টাক খরচা হয়। 
এইবার দেখি, কি রকম আঁক শিখেছিল। বলতো! দেখি, যদি একটা 
কুকুরের পেছনে মাসে প'চান্তর টাক। খরচ হয়, আর সে কুকুরের তিনটে 
ঠ্যাং হয় তবে ফি ঠ্যাঙের জন্য কত খরচ হয় ?? 
আমি ভয় করছিলুম পণ্ডিতমশাই একটা মারাত্মক রকমের আক কষতে 
দেৰেন। আরাম বোধ করে তাড়াতাড়ি বললুম; “আজ্ঞে, পণ্চিশ টাকা।" 
পণ্ডিতমশাই বললেন, “সাধু, সাধু! 
তারপর বললেন, উত্তম প্রস্তাব । অপিচ আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, 
তিন কন্যা; বিধবা পিসি, দাসী একুনে আটজন । আমাদের সকলের 
জীবনধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা । এখন বল তো দেখি, 
তৰে বুঝি তোর পেটে কত বিছ্ধে, এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট সায়েবের 
কুকুরের কটা ঠ্যাঙের সমান ? 
আমি হতবাক্‌। 
'বল না1।' 
আমি মাথা নীচু করে বসে ঝইলুম | শুধু আমি না? সমস্ত ক্লাস নিস্তব। 
পণ্ডিতমশাই হুঙ্কার দিয়ে বললেন, 'উত্তর দে? 
মূর্খের মত একবার পগ্ডিতমশান্পের মুখের দিকে মিটমিটিয়ে 
তাকিয়েছিলুম । দেখি, সে মুখ লজ্জা; তিক্ততা? ঘ্বণায় বিকৃত হয়ে 
গিয়েছে । 
ক্লাসের সব ছেলে বুধতে পেরেছে-_কেউ বাদ যায়নি-_-পণ্ডিতমশাই 
আত্ম-অবমাননার কি নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাথছেনঃ আমাদের সাক্ষী 
রেখে। 
পণ্ডিতমশাই যেন উত্তরের প্রতীক্ষায় বসেই আছেন। সেই জগদ্দল 


৩০ 


নিস্তবতা ভেঙে কতক্ষণ পরে ক্লাস শেষের ঘণ্টা বেজেছিল আমার হিসেৰ 
নেই। 
এই নিস্তন্ধতার নিপীড়নম্্রতি আমার মন থেকে কখনো! মুছে যাবে না ।' 
নিস্তব্ধতা হিরম্ময়' 49119159 45 &০161)? যে মূর্খ বলেছে তাকে ধেন 
মরার পূর্বে একবার একলা-একলি পাই। 


॥ বেঁচে থাকো সা কাশি ॥ 

ভর়ঙ্কর সর্দি হয়েছে । নাক দিয়ে যা জল বেরচ্ছে তা সামলানো! 
রুমালের কর্ম নয়। ডবল সাইজ বিছানার চাদর নিয়ে আগুনের কাছে 
বসেছি । হাচছি আর নাক ঝাড়ছি, নাক ঝাড়ছি আর হাচছি। বিছানার 
চাদরের অর্ধেকখান! হয়ে এসেছে, এখন বেছে বেছে শুকনে। জায়গা বের 
করতে হচ্ছে | শীতের দেশ, দোর. জানল! বন্ধ, কিচ্ছু খোলার উপায় নেই! 
জানালা খুললে মনে হয় গৌরীশঙ্করের চুড়োটি যেন হিমালয় ত্যাগ করে 
আমার ঘরে নাক গলাবার তালে আছেন। 

জানি, একই রুমালে বারবার নাক ঝাড়লে সর্দি বেড়েই চলে, কিন্ত 
উপায় কি? দেশে হলে রকে বসে বাইরে গলা বাড়িয়ে দিয়ে সশবে 
নাক ঝাড়তুম, এ নোংরামির হাত থেকে রক্ষা তো৷ পেতুমই, নাকটাও 
কাপড়ের ঘষায় ছড়ে যেতো ন|। 

হঠাৎ মনে পড়ল পরশু দিন এক ডাক্তারের সঙ্গে অপেন্াতে আলাপ 
হয়েছে । ভাকর্সাইটে ভাক্তার-_ম্যুনিক শহরে নাম করতে পারাটা 
চাঁটিখান। কথা নয়। যদিও জানি ডাক্তার করবে কচু, কারণ জর্মন 
ভাষাতেই প্রবাদ আছে, “ওমুধ খেলে সর্দি সারে সাভ দিনে না খেলে এক 
সপ্তায় । 

তবু গেলুম তার বাড়ি। আমার চেহারা দেখেই তিনি বুঝতে 
পারলেন ব্যাপারটা কি। আমি শুধালুম, সির ওষুধ আছে? আপনার 
প্রথম? এবং খুব সম্ভব শেষ ভারতীয় রোগীর একটা ব্যবস্থা করে দিন! 
আমার এক নাক দিয়ে বেরচ্ছে রাইন, অন্ত নাক দিয়ে ওভার ।' 


৩১ 


ডাক্তার যদিও জর্মন তবু হাত ছু'খানি আকাশের দিকে তুলে ধরলেন 
করাসিস্‌ কায়দায় । বললেন, 'অবাক করলেন, স্যর ! সর্দির ওষুধ নেই ! 
কত চান? সপ্ির ওষুধ হয় হাজারে। রকমের |, 

বলে আমাকে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে খুললেন লাল কেল্লার সদর 
দরজা পরিমাণ এক আলমারি । চৌকো) গোল, কোমর-মোটা) পেউ- 
ভারী বাহান্ন রকমের বোতল-শিশিতে ভতি। নানা রঙের লেবেল আর 
সেগুলোর.উপর লেখা রয়েছে বিকট বিকট সব লাতিন নাম । 

এবারে খানদানী ভিয়েনীজ. কায়দায় কোমরে হু'ভাজ হয়ে বাও করে 
বাহাতটা পেটের উপর রেখে ভান হাত দিয়ে তলোয়ার চালানোর 
কায়দায় দেরাজের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবধি দেখিয়ে বললেন, 
“বেছে নিন, মহারাজ ( কথাট! জর্মন ভাষায় চালু আছে); সব সদির 
দাওয়াই ।' 

আমি সন্দিগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকালুম | ডাক্তার মুখব্যাদন করে 
পরিতোষের ঈষৎ হাস্ত দিয়ে গালের ছুটি টোল খোলতাই করে দিয়েছেন 
_-হা? টা লেগে গিয়েছে ছু'কানের ডগার়। 

একটা ওষুধের কটমটে লাতিন নাম অতি কষ্টে উচ্চারণ করে বললুম, 
“এর মানে তো জানিনে 1, 

সদয় হাসি হেসে বললেন, “আমিও জানিনে, তবে এটুকু জানি, 
“ঠাকুরম! মার্কা কচু-খেচু মেশানে! দিশী দাওয়াই মাত্রেরই লম্বা! লম্বা লাতিন 
নাম হয়।' 

আমি শুধালুম, “খেলে সর্দি সারে ?. 

বললেন, “গলায় একটু আরাম বোধ হয়, নাকের নুড়ম্ুড়িটা হয়ত 
একটু আধটু কমে | আমি কখনো পরখ করে দেখিনি। সব পেটেন্ট 
“ওষুধ-_-নমুন। হিসেবে বিন। পয়সায় পাওয়া । তবে স্দি সারে না, এ কথা 
'জানি।' 
আমি শুধালুম, “তবে যে বললেন সির ওষুধ আছে ?? 
বললেন, 'এখনে! বলছি আছে কিন্তু স্দি সারে সে কথা তো বলিনি । 
বুঝলুম, জর্মনি কান্ট হেগেলের দেশ। বললুম “অঃ 


৩২ 


ফিসফিস করে ভাক্তার বললেন, আরেকটা তত্বকথা এই বেল! শিখে 
নিন। যে ব্যামোর দেখবেন সাতান্ন রকমের ওষুধ, বুঝে নেবেন, সে” 
ব্যামো! ওষুধে সারে না, 

ততক্ষণে আবার আমি হচ্ছে! হাচ্ছো। আরস্ত করে দিয়েছি । নাকচোখ 
দিয়ে এবার 'রাইন-ওডার না এবারে পদ্মা-মেঘনা। ডাক্তার ডজন ছুই 
কাগজের রুমাল আর একট। ওয়েস্ট-পেপার বাস্কেট আমার দিকে এগিয়ে 
দিলেন। 

ধাককাটা সামলে উঠে প্রাণভরে জর্সন সর্দিকে অভিমম্পাত দিলুম । 

দেখি, ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছেন। 

আমার মুখে হয়ত একটু বিরক্তি ফুটে উঠেছিল । বললেন, 'সর্দিকাশির 
গুণও আছে ।' 

আমি বললুম। “কচু, হাতী, ঘণ্টা 1” 

বললেন, “তর্জমা করে বলুন |? 

আমি বললুম, “কচুর? লাতিন নাম জানিনে ; 'হাতী? হল “এলেফাণ্ট? 
আর “ঘণ্টা? মানে 'গ্লকে?।? 

“মানে ?? 

“আর বুঝে দরকার নেই; এগুলে। কট্বাক্য |" 

আকাশ পানে হানি যুগলতুরু বললেন, “অদ্ভুত ভাষা ! হাতি আর 
ঘণ্টা গালাগালি হয় কি করে ! একট! গল্প শুনবেন ? সঙ্গে গরম ব্র্যাণ্ডি? 

আমি বললুম; 'প্রথমটাই চলুক | মিকৃস্‌ করা ভালে। নয়। 

ডাক্তার বললেন, আমি ডাক্তারি শিখেছি বালিনে। বছর তিনেক 
প্র্যাকটিস করার পর একদিন গিয়েছি স্টেশনে, বন্ধুকে বিদেয় দিতে | 
ফেরার সময় স্টেশন-রেস্তোবায় টুকেছি একটা ব্রাপ্ডি খাব বলে ! 

ঢুকেই থমকে ধ্াড়ালুম। দেখি, এক কোণে এক অপরূপ সুন্দরী । 
অত্যন্ত সাদ] সিদে বেশভূৃষা)__গন্বীব বললেও চলে-_আর তাই বোধ হয় 
সৌন্দর্যটা পেেছে তার চরম খোলতাই। নর্থ সী দেখেছেন? তবে 
বুঝতেন হব-হুব সন্ধ্যায় তার জল কি রকম নীল হয়--তারই মত সুন্দরীর 
চোখ। দক্ষিণ ইটালীতে কখনো গিয়েছেন? না? তবে বুঝতেন 


৩৩ 


সেখানে সোনালি রোদে রূপালী প্রজাপতির কি রাগিনী। ভারই মত 
তার বড চুল। ভানয়ুব নদী দেখেছেন? না? তাহলে আমার সৰ 
বর্ণনাই বৃথা ।' 

আমি বললুম, “বলে যান, রসগ্রহণে আমার কণামাত্র অন্ুবিধে হচ্ছে ন1।। 

'না, থাক। ওরকম বেয়ারিং পোস্টের বর্ণনা দিতে আমার মন মানে 
না। আমরা ভাক্তার-বদ্ধি মানুষ, ভাষা! বাবদে মুখ্য-নুখ্য[। অনেক 
মেহনত করে যে একটি মাত্র বর্ণনা কজায় এনেছি সেইটেও যদ্দি ন। 
বোঝেন তবে আমার শোকট। কোথায় রাখি বলুন তো 1” 

কাতর হয়ে ৰললুম, “নিরাশ করবেন ন1।' 

“তবে চলুক ত্রিলেগেড, রেস। ভানয়ুৰ নদীর শাস্ত-প্রশাস্ত ভাবথান! 
তার মুখের উপর। অথচ জানেন; ভানয়ুব অগভীর নদী নয়। আর 
ডানয়ুবের উৎপত্তিস্থল দেখেছেন? না। তাহলে বুঝতেন সেথানে তন্বী 
ডানয়ুব যে রকম লাজুক মেয়ের মত এ'কে বেঁকে আপন শরীর ঢাকতে 
ব্যস্ত। এ-মেয়ের মুখে তেমনি ছড়ানো রয়েছে লজ্জার কেমন যেন একটা 
আকুর্বাকু ভাৰ। 

“এই লজ্জ। ভাবটার উপরই আমি বিশেষ করে জোর দিতে চাই। 
আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, লঙ্জা-শরম বলতে আমরা 1 কিছু বুঝি 
নে সব মধ্যযুগের পুরনো গল্প থেকে । বেয়াত্রিচে দাস্তেকে দেখে লাজুক 
হাসি হেসেছিলেন-- আমরা তাই নিয়ে কল্পনার জাল বুনি। আজকের 
দিনে এসব তো। আর বাপিন শহরে পাওয়। বাস না । মধ্যযুগের নাইটদের 
শিভালনি গেছে আর যাবার সময় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে মেয়েদের মুখ থেকে 
সব লজ্জা সব ব্রীড়া | 

কিন্ত আপনাদের দেশে নিশ্চয়ই এখনো। এই মধুর জিনিসটি দেখতে 
পাওয়! যায়, আর তার চেয়েও নিশ্চয়, আপনাদের দেশের লোক এখনে 
অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে ।, 

“তাই আপনি বিশ্বাস করবেন, কিন্ত আমি নিজে এখনো ঠিক করতে 
পারিনি, কি করে যে আমার তথন মনে হ'ল এ-মেয়েকে না পেলে আমান 
চলবে না । 


৩৪ 


হাসলেন না যে? তার থেকেই বুঝলুম, আপনি ওকীবহাল, আপর্নি 
আমাকে বিশ্বাস করতে পেরেছেন ; কিন্তু জর্মনরা আমার এ-অবস্থার কথা 
শুনে হালে । আর হাসবেই বানা কেন? চেনু। নেই, শোনা নেই, 
বিষ্ভাবুদ্ধিতে মেয়েটা হয়ত অফিসবয়ের চেয়েও আকাট, হয়ত মাতালদের 
আড্ডায় বিয়ার বিক্রি করে পয়স। কামায়, কিম্বা! এও তো হতে পারে ষে 
তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে । এ-সব কোনে। কিছুর তত্ব-তাবাশ না করে 
এক ঝটকায় মনস্থির করে ফেলা; এ-মেয়ে না হলে আমার চলবে না! 
আমি কি খামখেয়ালির চেঙ্গিসধান না হাজারে! প্রেমের ডন্‌ জুয়ান? 

“ভাবছি আর মাথার চুল ছি'ড়ছি-_-কোন্‌ অজুহাতে কোন অছিলায়্ 
এর সঙ্গে আলাপ করা যায়। 

“কিছুতেই কোনে। হদীস পাচ্ছিনে' আমাদের মাঝখানে ভিনখান। মাত্র 
ছোট্ট টেবিলের যে উত্বাল সমুদ্র সেটা পেরিয়ে গর কাছে পৌছই কি 
প্রকারে। প্রবাদ আছে, প্রেমে পড়লে বোকা ন।কি বুদ্ধিমান হয়ে যায়__- 
প্রিয়াকে পাওয়ার জন্ত তখন ভার কন্দিফিকির আর আবিফার কৌশল 
দেখে পাঁচজনের তাক লেগে যায়, আর বুদ্ধিমান নাকি প্রেমে পড়লে হয়ে 
বায় একদম গবেট-_এমন সব কাণ্ড তখন করে বসে যে দশজন তাজ্জব 
না মেনে যায় না, এ লোকটা এ-সব পাগলামি করছে কি করে ! 

"এ জীবনে সেই সেদিন আমি প্রথম আবিষ্কার করলুম যে আমি 
বুদ্ধিমান। কারণ পূর্ণ একঘণ্টা ধরে ভেবেও আমি সামান্যতম কৌশল 
আবিষ্কার করতে পারুলুম না, আলাপ করি কোন্‌ কায়দায়। কিন্তু এহেন 
হাদয়াভিরাম তত্ব আবিষ্কার করেও মন কিছুমাত্র উল্লসিত হল না । তখন 
বরঞ্চ বোকা বনতে পারলেই হয়ত কোনে! একটা কৌশল বেরিয়ে যেত। 

'ফ্রলাইন উঠে াড়ালেন। কি আর করি। পিছুনিলুম। তিনি 
গিয়ে উঠলেন ম্যুনিকের গাড়িতে । আমিও ছুটে গিয়ে টিকিট কাটলুম 
ম্যুনিকের। কিন্তু এসে দেখি সে কামন্নার আটটা সীটই ভতি হয়ে 
গিয়েছে । আরে প্রমাণ হয়ে গেল, আমি বুদ্ধিমান, কারণ এ কথা সবাই 
জানে, বুদ্ধিমানকে . ভগবান সাহায্য করলে এ-পৃথিবীতে বোকাদের আর 
বাচতে হত না । আমি ভগবানের কাছ থেকে কোনে! সাহায্য পেলুম না । 


৩৫ 


আমি বললুম, “ভগবানকে দোষ দিচ্ছেন কেন ? “এতো কন্দর্প ঠাকুরে। 
ডিপার্টমেন্ট ।? 

বললেন, 'ভাতেই বা কি লাভ? তিনি তো অন্ধ। মেয়েটাবে 
বানিয়ে দিয়েছেন তারই মত অন্ধ। এই যে আমি একটা এতব 
আযাপলো। আমার দিকে একবারের তরে ফিরেও তাকালো না । ওঙবে 
'ডেকে হবে 

আমি বললুম “কচু? হাতী, ঘণ্টা ।ঃ 

এবার ভাক্তার বাঙলা! কটুকাটব্যের কদর বুঝলেন । বললেন৷ 
'আহা-হা-হা। তারপর জর্সন উচ্চারণে বললেন, 'কশু হাট, গণ্টা! খাস! 
গালাগাল ।; 

আমি বললুম, “কামরাতে আটজনের সীট ছিল তো বয়েই গেল। 
প্রবাসে নিয়ম নাস্তি। আপনি কোনে। গতিকে ধাকাধাক্কি করে-_”' 

বললেন, “তাজ্জব করলেন। একি আপনার ইওিয়ান ট্রেন, না 
সাইবেরিয়াগামী প্রিজনার-ভ্যান ! চেকার পঞ্জপাঠ কামরা থেকে বের 
করে দেবে না? 

“দাড়িয়ে রইলুম বাইরের করিডরে ঠায় । দেখি, মেয়েটি যদি খানা- 
কামরায় যায়। স্টেশনে তো খেয়েছে শুধু কফি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা 
কাটল, কত লোক কত কামর] থেকে উঠলে! নামলো! কিন্ত আমার 
ন্ব্গপুবী থেকে কোনো--(কটুবাক্য)_ নামলে না। সব ব্যাটা নিশ্চয়ই 
'যাচ্ছে ম্যুনিক । আর কোথাও যেতে পারে না? ম্যুনিক কি পরিস্থান না 
ম্যুনিকের ফুট-পাথ সোন] দিয়ে গড়া? অবাক করলে এই ইডিয়টগুলো | 

প্রেমে পড়লে নাকি ক্ষুধাতৃষ্ণা লোপ পায়। একবেলার জন্য হয়ত 
পার । আমি লঞ্চ খাইনি, ওদিকে ডিনারের সময় হয়ে গিয়েছে__আমার 
পেটের ভিতর স্থলুধ্বনি জেগে উঠেছে । এমন সময় মা-মেরির করুণা 
হুল। মেয়েটি চলল খানা-কামরার দিকে | আমি চললুম ঠিক পিছনে 
পিছনে । আহা, যদি একটা হোঁচট খেয়ে আমার উপর পড়ে যায়। হত্তোর, 
তারও উপায় নেই-উচু হিলের জুতো! হুলে গাড়ির কীপুনিতে পড়ে 
যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে- এ পরেছে ক্রেপসোল্। 


৩৬ 


ঠিক পিছনে পিছনে গিয়ে খানা-কামরায় ঢুকলুম। ওয়েটারটা 
'বলে স্বামীন্দ্রী | ন! হলে তরুণ তরুণী একরকম মুখ গুমসো। করে খানা- 
'মরায় ঢুকবে কেন? বসালো নিয়ে একই টেবিলে- মুখোমুখি । হে ম! 
রী, নত্রদাম গির্জেয় তোমার জন্ত আমি একশস্টা মোমবাতি মানত 
রুলুম | দয়া করো? মা একট। কিছু ফিকির বাংলাও আলাপ করবার । 

'বুদ্ধিমান, বুদ্ধিমান, কোনো সন্দেহ নেই আমি বুদ্ধিমান । কোনে। 
ককিরই জুউটলে! ন1, অথচ মেয়েটি বে আছে আমার থেকে হ'হাত দূরে 
বং মুখোমুখি ! ছা'হাত না হক্সে হ'লক্ষ যোজনও হতে পারত-_কোনে। 
গারাক হ'ত না। | 

'জানাল। দিয়ে এক ঝটকা কয়লার গ্রঁড়ো এসে টেবিলের উপর 
ড়ল। মেয়েটি তূরু কুচকে দেদিকে তাকাতেই আমি ঝটিতি জানাল। 
দ্ধ করতে গিয়ে করে ফেললুম আরেক কাণ্ড। ঠাস করে জানালাটা 
[ড় আঙ্লের উপর পড়ে সেটাকে দিল থেংলে । ফিনকি দিয়ে রক্ত। 

“মা-মেরীর অসীম দয় কাণ্ডটা যে ঘটলে! | মেয়েটি তড়াক করে লাফ 
দয়ে উঠে বলল, “দাড়ান আমি ব্যাণ্ডেজ নিয়ে আসছি।” 

“আমি নিজে ডাক্তার, বিবেচন। করুন অবস্থাটা । রুমাল দিয়ে চেপে 
রলুম আঙ্লটাকে। মেয়েটি ছুটে নিয়ে এল কামরা থেকে কার্ট এডের 
ব্যাণ্ডেজ। তারপর আঙ্লটার তদারকি করল শাস্ত্-সম্মত ভাক্তারি 
পদ্ধতিতে |. বুঝলুম মেডিকেল কলেজে পড়ে। বানু ডাক্তার ফাস্ট 
এডের ব্যাণ্ডেজ বয়ে বেড়ায় না আর আনাড়ি লোক এরকম ব্যাণ্ডেজ 
বাধতে পারে না। | 

“আমি তো? 'না, না” “আপনি কেন মিছে মিছে? ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, "উঃ 
বড্ড লাগছে) “এতেই. হবে।” ব্যস ব্যস? করেই যাচ্ছি আর সেই লিলির মত 
সাদা হাতের পরশ পাচ্ছি। সে কি রকম মখমলের হাত জানেন! 
বলছি; আপনি কখনে। রাইনল্যাণ্ড গিয়েছেন? না? থাক, ভুলেই 
গিয়েছিলুম, প্রতিজ্ঞ! করেছি, আপনাকে কোনে বর্ণন। দেব না| 

(প্রথম পরশে সর্বাঙগে বিদ্যুৎ খেলে যায়, বলে না? বড় খাঁটি কথা । 
আমি ডাক্তার মাসুষ, আমার হাতে কোনো প্রকারের স্পর্শকাতরতা 


৩৭ 


থাকার কথা নর তবু আমার বে কী অবস্থাটা হয়েছিল আপনাকে সেট 
বোঝাই কী করে ?-মেয়েটি বোধ হয় টের পেয়েছিল, কারণ একবার 
চকিতের তরে ব্যাণ্ডেজ বাধা বন্ধ করে আমার দিকে মাথা তুলে 
তাকিয়েছিল। 

“তাতে ছিল বিশ্ব, প্রশ্ন এবং হয়ত বা একটুখানি, অতি সামান্য খুশীর 
ঝিলিমিলি । তবে কি আমার হাতের স্পর্শ? কোন্‌ সাহসে এ-বিশ্বাস 
মনের কোণে ঠাই দিই, বলুন । 

আমি গুন্‌ গুন করে বললুম। 

“জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না, 
হায় ভীরু প্রেম হায় রে 1)? 

ডাক্তার বললেন, খাসা মেলভি তো । মানেটাও বলুন । 

বললুম, “আফটার ইউ । আপনি গল্পটা শেষ করুন । 

বললেন, গল্প নয়, স্যর, জীবনমরণের কথা হুচ্ছে।' 

আমি শুধালুম, 'কেন্ সেপ্টিকের ভয় ছিল নাকি ? 

রাগের ভাব করে বললেন, “ইয়োরোপে এসে আপনার কি দব রূসকস 
শুকিয়ে গিয়েছে? আমাকে হেনেছে প্রেমের বাণ আর আপনি বলছেন 
আর্টি-সেপ্টিক আন । 

আমি বললুম অপরাধ নেবেন না, 

বললেন, “তার পর আমি সুযোগ পেয়ে আরম্ভ করলুম নান! রকমের 
কথ। কইতে | গোল গোল। আমি ষেপরিচয় করার জন্য জান-কবুল 
সেটা ঢেকে চেপে । সঙ্গে সঙ্গে কখনো নুনট! এগিয়ে দি; কখনো৷ ক্রুয়েটটা 
সরিয়ে নি কখনো! ব। বলি, “মাছটা খাপা ভেজেছে, আপনি একটা খান 
না; ওহে খানসামা, এদিকে-_, ইত্যাদি । 

“কত্ে কৰে সুন্দরীর মনটা! একটু মোলায়েম করতে পেরেছি বলে মনে 
একটু ক্ষীণ আশার সঞ্চার হল। 

'মেয়েটি লাজুক বটে কিন্তু ভারী ভদ্র। আমার ভ্যাজর ভ্যাঞ্জর কান 
পেতে শুনলো, ছ'একবার ব্লাশ করলো, সে ধা! গোলাপি--আপনি কখনো 
না থাক। 


৩৮ 


কিস্ত খেল মাজ্র একটি অমলেউ আর ছৃ্লাইস রুটি | নিশ্চয়ই গন্ীব। 
ণ আশাটার গায়ে একটু গত্তি লাগল । এমন সময ডাক্তারের 
শসিস্টাপ্ট এসে জানালো! রুগী এসেছে। ডাক্তার বললেন, “এখখুনি 
[সছি 1” 

ফিরে এগে কোনে ভূমিকা না৷ দিয়েই বললেন, "ম্যুনিকে নাবলুম এক 
ঘ্। এমন ভান করে কেটে পড়লুম যাতে মেয়েটি মনে করে আমি 
[ন থেকে মাল নামাতে গেলুম । যখন “গুড. ৰাই' বলে হাত বাড়ালুম 
ধন সে একবার আমার দিকে তাকিয়েছিল। প্রেমে পড়লে নাকি মানুষের 
ধা! গঞজ্জায়_-হবেও বা, কিন্তু এ-কথা নিশ্চয় জানি মানুষ তখন চোখে 
ধ এমন সব নূতন ভাষা পড়তে পারে যার জন্য কোনো৷ শব্দরূপ 
স্থ করতে হয় না। তবে সে পড়াতে ভুল থাকে বিস্তর, কাকতালীয় 
গার | 

“আমি দেখলুম, লেখ। রয়েছে “বিষাদ কিন্তু পড়লুম; “এই কি শেষ? ?” 

আমিও অবাক হয়ে শুধালুম, “বালিন থেকে য্যুনিক অবধি হামল! 
র স্টেশনে খেই ছেড়ে দিলেন ? 

ডাক্তারদের বাক। হাসি হেসে বললেন, আদপেই না। কিন্তু কি আর 
কার পিছু নিয়ে? “মডিকেল কলেজে পড়ে, ওতেই ব্যস্‌। 

“সেদিনই গেলুম মেডিকেল কলেজের রেস্তোরায় | লঞ্চ খেতে নিশ্চয়ই 
মবে। এবারে মেয়েটি আর লজ্জ। দিসে মনের ভাব ঢাকতে পারল 
| আমাকে দেখা মাত্র আপন অজানতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে 
ত বাড়ালো । সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত মুখে যে খুশী ছাড়য়ে পড়ল তা দেখে 
মার মনে আর কোনো সন্দেহ রইল না, ভগবান মাঝে মাঝে 
₹্মানকেও সাহায্য করেন । 

“ততক্ষণে মেয়েটি তার আপন-হারা আচরণটাকে সামলে নিয়েছে 
'লঙ্দা এপে আবার সমস্ত মুখ ঢেকে ফেলেছে ।। 

ডাক্তার খানিকক্ষণ ভেবে নিয়ে বললেন, “এখানেই যদি শেষ কর 
ত তবে মন্দ হত ন। কিন্তু সধি-কাশির তো তা হলে কোনে। হিলে হয় 
| তাই কমিয্সে-লমিয়ে ভাড়াতাড়ি শেষ কৰে দি।” 


৩৯ 


আমি বললুম, “কমাবেন না। ভালটা একটু দ্রুত করে দিন। 
আমাদের দেশের ওস্তাদর! প্রথম খানিকটে গান করেন বিঙ্রম্থিত একতালে। 
শেষ করেন দ্রুত তেতালে |” 

ডাক্তার বললেন, “হখিনী মেয়ে, বাপ-মা নেই! এক খাগ্ডার 
পিসির বাড়ীতে মানুষ হয়েছে। ছ'যুঠো, খেতে দেয় পড়তে 
দেয়, ব্যস্। কলেজের ফীজটি পর্যন্ত বেচারী যোগাড় করে মাস্টানী 
করে। 

“তাতে আমার কিছু বলার নেই কিন্তু আমার ঘোরতর আপত্তি 
এভাকে বুড়ী এমনি নজরবন্দ করে রেখেছে যে, চকিতা৷ হুরিণীর মত 
সমস্তক্ষণ সে ডাইনে বীয়ে তাকায়, এ বুঝি পিসি দেখে ফেললে, সে 
পরপুরুষের সঙ্গে কথা কইছে । আমি তোবিদ্রোহ করে বললুম “একি 
বুখারার হারেম, ন। তৃকার পাশার জেনান। 1 এ অত্যাচার আমি কিছুতেই 
সইব ন1।” - এভ। শুধু আমার হাত ধরে বলে? 'ললীজ, প্লীজ, তুমি একটু 
বরদাস্ত করে নাও; আমি তোমাকে হারাতে চাইনে । এর বেশী সে 
ককৃখনো কিছু বলেনি। 

“এই মোকামে পৌছতে আমার লেগেছিল ঝাড়া একটি মাস। 
বিবেচনা করন। সাত দিন লেগেছিল প্রেম নিব্দেন করতে । 
পনরো। দিন লেগেছিল হাতখানি ছু'তে | তাৰে। এক সপ্তাহ পরে সে 
আমায় বললে কেন সে এমন ভয়ে ভয়ে ভাইনে বায়ে তাকায় । 

থিয়েটার সিনেম। মাথায় থাকুন, আমার সঙ্গে রাস্তায় পর্যস্ত বেরতে 
রাজী হয় না--পাছে পিসি দেখে ফেলে । আমি একদিন থাকতে না৷ পেরে 
বললুম তোমার পিসির কুইনটুপ্লেট আছে নাকি যে তারা ম্যুনিকের সৰু 
স্ট্যাটেজিক পয়েন্টে দাড়িয়ে তোমার উপর নজর রাখছে? উত্তরে শুধু 
কাতর ন্বরে বলে, '্লীজ। প্লাজ । 

যাকিছু আলাপ পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা আত্মীয়তা সব এ কলেঙ্- 
রেস্তোরা বসে। সেখানে ভিড় সািন-টিনের ভিতর মাছের মত। 
চেয়ারে চেয়ারে ঠাসাঠাসি কিন্তু তার হাতে যে হাতখানা রাখব তারও 
উপায় নেই। কেউ বদি দেখে ফেলে । আমি বললুম। 


৪০ 


'সমুখে রয়েছে সুধা পারাবার 
নাগাল ন1 পায় তবু আখি তার 
কেমনে সরাব কুহেলিকার এই বাধ। রে ।” 

ডাক্তার বললেন, “মানে বলুন ॥ 

আমি ব্লুম, “মাপ যাইয়ে, পরে বলবো |) 

ডাক্তার বললেন, সেই ভিডের মাঝখানে, কিম্বা করিভবে দায়ে 
দাড়িষে আলাপচারি। করিভরে কথ। কওয়! যায় প্রাণ খুলে, কিন্তু তবু 
আমি রেস্তোরার ভিডই পছন্দ করতুম বেশী, কারণ সেখানে দৈবাৎ। কচিৎ 
কখনো! এভ। তার ছোট্র জুতোটি দিয়ে আমার পায়ের উপর দিত চাপ।' 

“তার মাধুর্য আপনাকে কি করে বোঝাই? এভাকে পরে নিবিডতর 
করে টিনেছি কিন্তু সেই পায়ের চাপ যে আমাকে কত কথা বলেছে, কত 
আশ্বাস দিয়েছে সেটা কি করে বোঝাই € 

'হয়ত তার চেনা কোনো এক ছোকরা ই্ভেণ্ট এসে হাসিষুখে তাকে 
দুটি কথ বললে । অত্যন্ত হার্মলেস্‌, আমি কিন্তু হিংসেয় জরজর | টেবিলের 
উপর রাখা আমার হাত হটে! কাপতে আরম্ভ করছে, আমি আর নিজেকে 
সামলাতে পারছিনে_ 

“এমন সময় সেই পায়ের মৃহ চাপ। 

সব সংশয়ের অবদান, সব হুঃখ অন্তর্ধান 1; 

ডাক্তার বললেন, “তাই আমার ছঃখ আর বেদনার অবধি রইল ন1। 
'এই বিরাট ম্যুনিক শহরে লক্ষ লক্ষ নরনারী নিভৃতে মন্রে ভার নামাচ্ছে। 
নিষ্ঠুর সংসারে লড়বার শক্তি একে অন্যের সঙ্গ সুখ স্পর্শসুখ থেকে মাহরণ 
করে নিচ্ছে, আর আমি তারই মাঝখানে এমন কিছুই করে উঠতে 
পারছিনে যাতে করে এভাকে অন্তত একবারের মত কাছে টেনে আনতে 
পারি। 

“শেষটায় আর সইতে ন। পেরে একদিন এভাকে কিছু না বলে ফিরে 
গেলুম বালিন। সেখান থেকে লিখে জানালুম, “ওরকম কাছে থেকে না 
পাওয়ার ছুঃখ আমার পক্ষে সহ্য কর! অসম্ভব হয়ে উঠেছে- আমার নার্ডস 
একদম গেছে । তোমার কাছ থেকে ব্দায় নিয়ে আনা আমার কিছুতেই 


৪১ 
স-ম-আ-_ শ্রেষ্ঠগল্প-_-৩ 


হয়ে উঠত না_-তোমার মুখের কাতর ছৰি আমার চলে আসার সব শক্তি 
নষ্ট করে ফেলত? 1” 

আমি বললুম, 'আপনি তো দারুণ লোক, মশাই। তবে, হী। 
আপনাদের নীচশেই বলেছেন, কড়া না হলে প্রেম মেলে না? 

ডাক্তার বললেন, "ঠিক উল্টো। কড়া হতে পারলে আমি ম্যুনিক থেকে 
পালাতুম নী । পলায়ন জিনিসট। কি বীরের লক্ষণ ? তা সে কথ। থাক । 

টিত্বর -পলুম সঙ্গে সঙ্গেই । সে চিঠিটি আমি এতবার পড়েছি যে 
তার ফুলস্টপ কম] পর্যন্ত আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছে । এবং তার চেয়েও 
বড় কথা? সে চিঠিটির বক্তব্য আমার কাছে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্ত ঠেকলো।' 

আপনাদের দেশে অবিশ্বীস্ত বলে কোনে! জিনিস নেই_-ভিথিরিকে 
মাথার তুঃল নিয়ে আপনাদের দেশে হাতী হামেশাই ব্রাজা বানায় । কিন্ত 
জর্মনিতে তো সে রকম এঁতিহ্য নেই । চিঠিতে লেখা ছিল-_ 

“বেশী লিখব না_-আমারও গ্রলহ্য হয়ে উঠেছে । তাই স্থির করেছি, 
তোমার ইস্ছামত তোমায় আমার একবার নিভৃতে দেখ! হবে । তারপর 
বিদায়। যতদিন পিসি আছেন ততদিন আমি আর কোনে। পন্থা খুঁজে 
পাচ্ছিনে। তুমি আসছে বুধবার দিন আমাদের বাড়ীর সামনে ফুটপাতে 
অপেক্ষা করো । আ.ম তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে আসব ।”) 

' ডাক্তার বললেন, বিশ্বাস হয় আপনার ? যে মেয়ে পিসির ভঙ্ষে 
আমার সঙ্গে কলেজ রেস্তোরণার বাইরে পর্যন্ত ষেতে রাজী হত না, সে 
আমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে আপন ঘরে ?) 

আমি বললুম, পীরিতি-সায়রে ডোবার পূর্বে যে রাধা সাপের ছবিমাত্র 
দেখেই অজ্ঞান হতেন সেই রাধাই অভিসারে যাওয়ার সময় আপন হাত 
দিয়ে পথের পাশের সাপের ফণ। চেপে ধরেছেন পাছে সাপের মাথার 
মণির আলোকে কেউ তাকে দেখে ফেলে ।” 

ডাক্তার বললেন, “ভাই বটে। তবে কি না আমি রাধার প্রেমকাহিনী 
কখনে। পড়িনি । সে কথা থাক। 

“আমি ম্যুনিক পৌছলুম বুধবার দিন সন্ধের দিকে। কয়লার গু'ড়োয় 
সর্বাঙ্গ ঢেকে গিয়েছিল বলে ঢুকলুম একটা পাবলিক বাথে স্নান করতে। 


৪২ 


[বে বসে সর্বশরীর ডলাই-মলাই করে আর গরম জলে সেদ্ধ হয়ে 
চংডিটার মত লাল হয়ে যখন বেরলুম তখন আর হাতে বেশী সময় নেই । 
সথচ টাব থেকে ও রকম হুট করে ঠাণ্ডায় বেরলে যে সঙ্গে সঙ্গে ঝাপ. 
বে সর্দি হয় সেকথাওজানি। চানটা ন৷ করলেও যে হত সে তত্বটা 
ঝতে পারলুম রাস্তায় বেরিয়ে কিন্ত তখন আর আফসোন করে কোনে 
পয়দা নেই । সেই ভিপেম্বরের শীতে চললুম এভার বাড়ির দিকে-__মা- 
মরির উপর ভরস] করে, যে এ যাত্রায় সর্দিট। নাও হতে পারে |? 

আমি বললুম “আমরা বাঙলায় বলি, “ছুগ-গা। বলে ঝুলে পড়লুম? ) 

ডাক্তার বললেন, “সাড়ে এগারোটার সময় গিয়ে দাড়ালুম এভার 
ডির সামনের বাস্তায়। টেম্পারেচার তখন শৃন্তেরও নিচে-_আপনাদের 
াগল। ফারন্হাইটের হিসেবে বত্রিশের ঢের নিচে ! রাস্তায় এক ফুট 
রফ। আকাশ মেখাছন্ন, আর আমার চতুর্দিকে যে হিম ঘনাতে লাগলো 
ঢার সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলতে পারি আমাকে যেন কেউ একট বিরাট 
কজিডেরের ভিতর তালাবন্ধ করে রেখে দিল। 

'তিন মিনিট যেতে না যেতে নামল মুষলধারে- বৃষ্টি নয়__স্দি। সঙ্গে 
জে ডাইনামাইট ফাটার হাচি__হাচ্চোহাচ্চো, হাচ্চো। আপনার 
[াজকের স্দি তার তুলনায় নস্তি, অর্থাৎ নম্তির খোঁচায় নামানো! আড়াই 
টাটা জল । ইচি আর জল, জল আর হাচি। 

“কি করি, কি করি ভাবছি, এমন সময় এভ। এসে নিঃশবে আমার 
1ত ধরলো)_বরফের গু'ড়োর উপর পায়ের শব্দ শোন যায় না। তার 
পর সে পরেছে সেই ক্রেপ-মোলের জুতো _বেচারীর মাত্র এ এক 
দ্াড়াই সম্বল ! 

“কোনে। কথা না বলে আমাকে নিয়ে চলল তার সঙ্গে। ফ্লাটের 
রজ! খুলে, করিডরের খানিকটে পেরিয়েই তার কামর | নিঃশবে 
মাকে সে ঢুকিয়ে দরজায় খিল দিয়ে মাথা নিচু করে আমার সামনে 
ডিয়ে রইল । 

'এভার গোলাপি মুখ ডাচ পনিরের মত হলদে, টুকটুকে লাল 
চাট ছুটি ব্লু ভানয়ুবের মত ঘন বেগুনি-নীল--ভঙ়ে। উত্তেজনায় । 


৪৩ 


'আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল আবার আমার সেই ভাইনামাইট ফাটানো 
হাচ্চো, হাচ্চে। 

“এভা আমাকে ধরে নিয়ে আমার মাথ। গুঁজে দিল বিছানায়। মাথার 
উপর চাপালে! বালিশ আর সব ক'খানা লেপ কম্বল। বুঝতে পারলুম 
কেন, পাশের ঘরে পিমি যদি শুনতে পান তবেই হয়েছে । আমি প্রাণপণ 
হাচি চাপবার চেষ্টা করছি আর লেপ-কম্বলের ভিতর বম্‌শেল্‌ ফাটাচ্ছি। 

“কতক্ষণ এ রকম কেটেছিল বলতে পারব না। হাচির শব্দ 
কিছুতেই থামছে না। এভ। শুধু কম্বল চাপাচ্ছে, আমার দম বন্ধ 
হবার উপক্রম কিন্ত নিবিড় পুলকে বার বার আমার সর্বশরীর শিহরিত 
হচ্ছে-_-এভার হাতের চাপ পেয়ে। 

“এমন সময় দরজায় ধাকা আর নানীকণ্ঠের তীব্র চিৎকার, 'দরজ। 
খাল।। 

“পিসি! 

'আর লুকিয়ে থেকে লাভ নেই । আমি লেপের ভিতর থেকে বেরুলুম | 
এভা! ভয়ে ভিরমি গিয়েছে, খাটের উপর নেতিয়ে পড়েছে । 

“আমি দরজা খুলে দিলুম | সাক্ষাৎ শকুনির মত বীভৎস এক বুড়ী ঘরে 
ঢুকে আমার দিকে না তাকিয়েই এভাকে বললো, কোল সকালেই তুই 
এ-বাড়ি ছাড়বি?। 

'সঙ্গে সঙ্গে আর কি সব বকুনি দিয়েছিল, “ঘেন্ন। কেলেঙ্কারি, “শোবার 
ঘরে পরপুরুষ » রাস্তার মেয়ের ব্যাভার। এই সব, সে আমার আর মনে 
নেই। বুড়ী আমার দিকে তাকায় না, গালের উপর গাল চড়ছে যেন ছ' 
গজী পিয়ানোর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবধি কেউ গাঙ্গুল 
চালাচ্ছে। 

'আমি আর থাকতে পারলুম না। বুড়ীর ছই বাহু ছু হাত দিয়ে 
চেপে ধরে বললুম, 

“আমার নাম পেটার সেল্বাখ। বালিনে ডাক্তারি করি। ভদ্রঘরের 
ছেলে! আপনার ভাইঝিকে বিয়ে করতে চাই? 1, 

ডাক্তার বললেন, 'মা-মেরি সাক্ষী আমি এভাবে বিয়ে করার প্রস্তাৰ 


৪8৪8 


এতদিন করিনি পাছে সে 'না' বলে বসে। আমি অপেক্ষা করছিলুম 
পরিচয়টা ঘনাবার জন্য । বিয়ের প্রস্তাবটা আমার মুখ দিয়ে যে তখন কি 
করে বেরিয়ে গেল আমি মাজও বুঝে উঠতে পারিনি । 

পিসি আমার দিকে হাবার মত তাকালো--এক বিঘৎ চওড়া হা! 
করে। পাকা ছু'মিনিট তার লেগেছিল ব্যাপারটা বুঝতে । তারপর 
ফুটে উঠল মুখের উপর খুশীর পয়লা ঝলক ! সেট দেখতে আরো বাভৎস! 
মুখের কুচকানো? এৰড়ো-থেবড়ে। গাল, ভাঙা-চোবা নাক-মুখ-ঠোট যেন 
আরো বিকৃত হয়ে গেল । 

“আমাকে জড়িয়ে ধরে স্থি যেন বললে ঠিক বুঝতে পারলুম না। 
তারপর হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছুটল করিডরের দিকে । চিৎকার 
করে কাকে যেন ডাকছে! 

“এভা তখনো অচৈতন্য 1 

বুড়ী ফিরে 'এল বুড়োকে নিয়ে । বুড়ো ব্যাপারটা বুঝে নিয়েছে চট 
করে। ভার চেহারার খুশীর পিছনে দেখলুম সেই ভীত ভাব-__-এভার 
মুখে যেট। অষ্টপ্রহর লেপা থাকে। বুঝলুম। পিসির দাপটে এ বাড়ির 
সকলেরই কণ্ঠশ্বাস। 

“মনে হল বুড়ে। খুশী হয়েছে, 'এভা৷ যে এ বাড়ির অত্যাচার থেকে 
নিষ্কৃতি পেয়েছে তার জন্য | হায়, তার তো! নিষ্কৃতি নেই ।" 

ডাক্তার বললেন; “সেই ছুপুর রাতে ওয়াইন এল শ্যাম্পেন এল । 
হোটেল থেকে সমেজ. কটলেট্‌ এল। হৈহৈরৈরৈ। এভা সম্থিতে 
ফিরেছে । বুড়ো শ্যাম্পেন টানছে জলের মত। বুড়ী এক গেলালেই টং। 
আমাকে জড়িয়ে শুধু কাদে আর এভার বাপের কথা স্মরণ করে বলে' ভাই 
বেঁচে থাকলে আজ সে কী খুশীটাই না হ'ত। 

'আর এভা? আমাকে একবার শুধু কানে কানে বলল, 'জীবনে এই 
প্রথম শ্যাম্পেন খাচ্ছি। তুমি আমার উপর একটু নজর রেখো? ।' 

ডাক্তার উৎসাহিত হয়ে আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় 
আস্তে আস্তে দরজ। খুলে ঘরে ঢুকলেন এক সুন্দরী- হা, সুন্দরী বটে। 

এক লহ্‌মায় আমি নর্থ সীর ঘন নীল জল, দক্ষিণ ইটালির সোনালি 


৪৫ 


রোদে রূপালি প্রজাপতি; ডানয়ুবের শাস্ত-প্রশাস্ত ছবিঃ সেই ডানয়ুবেরই 
লজ্জাশীল দেহচ্ছন্দ, রাইনল্যাণ্ডের শ্যামলিয়া মোহনীয়! ইন্দ্রজাল সব কিছুই 
দেখতে পেলুম ! 
আর সে কী লাজুক হাসি হেসে আমার দিকে তিনি হাত বাড়ালেন 
আমি মাথ নীচু করে ফরাসিস কায়দায় তার চম্পক করাঙ্গুলি-প্রান্ে 
ওষ্ঠ স্পর্শ করে মনে মনে বললুম। | 
“বেচে থাকে। সদ্দি-কাশি 
চিরজীবী হয়ে তুমি |? 


॥ মণি । 


কান্যের উপেক্ষিতা'য় ভারতের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের কবিগুর 
বালীকির বিরুদ্ধে অনুযোগ করেছেন, তিনি তার কাব্যে উমিলার প্রতি 
অবিচার করেছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে এ-কথাও বলেছেন, রসন্থষ্টিতে 
তাবং নারক-নায়িকাকে সমান সন্মান অধিকার্‌ দেওয়া সম্ভবপর নয় । 
তবু তে উ্নিলার উল্লেখ রামায়ণে আছে। কিন্ত রামচন্দ্র আর 
সীতাদেবীর কি আরও বহু অনুচর সথ৷ বান্ধবী পরিচারিকা ছিলেন না 
যাদের উল্লেখ আদ্দিকবি আদপেই করেন নি? তাদের জীবনে সুখ-হুঃং 
ৎসব-ব্যপন বিরহ-বেদনা মিলনানন্দ সব-কিছুই ছিল; এতৎসত্বেও আদি. 
কবি তাদের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেন নি। তিনি তো কিছু নিছক 
কাল্পনিক চরিব্রন্থষ্টি করেন নি, নির্ভেজাল? রূপকথাতে যে-রকম হয়। তিনি 
তো! লিখেছিলেন ইতিহাস, অবশ্য বদের গামলায় চুবিয়ে নিয়ে, বাটিৰ 
প্রক্রিয়ায় । হলই বা। তাই বলেকি শেষমেশ ওইসব অভাগাদে। 
জ্যান্ত পৌত। হল না? 
জানিনে, আদ্িকবিকে এ-ফরিয়াদ জানালে তিনি কি উত্তর দিতেন। 
যে চক্দ্রবৈষ্ঠ শ্রীরামচন্দ্রের নখ-চুল কেটে দিত, যে শুরুবৈদ্য মা-জনন 
জনকতনয়ার দুকুল-কাচুলি কেচে দিত, তারা যদি কবিসমীপে নিবেদ' 
করত, তাদেরই বা তিনি ভুলে গেলেন কেন? উসিলার মত নিদে' 


৪৬ 


তাদের নামোল্লেখ করলেই তো তার! অজরামর হয়ে যেত, তবে তিনি 
কি উত্তর দিতেন ? 

অত দুরে যাই কেন? কবিগুরু শ্রীরবীন্দ্রনাথকে যদি জিজ্ঞেন কর! 
হত, বিনয় এবং ললিতার মত ছটি অত্যুত্তম চরিত্রস্থ্থি করার পর- হায়, 
বাংলায় সচ্চরিত্র কী হুর্লণভ-_-তিনি সে-ছুজনকে পথমধ্যে গুমখুন করলেন 
কেন তা হলে তিনি কি উত্তর দিতেন ? 

আমি বালীকি নই, ববীন্দ্রনাথও নই । এমন কি আমার আপন 
গ্রামের প্রধান লেখক নই! আম'র গ্রামের গুকুরুল্ল। এবং পাগল! মাধাই 
যে-সব ভাটিয়ালি রচে গিয়েছে, আমার বূচন। তাদের সামনে লজ্জায় 
ঘোমটা টানে । মাধাইয়েক একটি ভাটিয়ালির ভূলে-যাওয়। আত্তর। আমি 
তিরিশ বছর ধরে চেষ্টা করেও পূরণ করতে পারি নি। মাধাই ও আমি 
একই পাঠশালাতে একই শ্রেণীতে পড়েছি। মাধাই ফি বচ্ছর ফেল 
মারত, আমি ফার্স্ট হতুম । 

তাই, বিশেষ করে তাই, মোক্ষম মনঃস্থির করেছি, আমি আমার 
স্থজনে যাদের প্রতি স্বেচ্ছায় অনিচ্ছায় অবজ্ঞ। প্রকাশ করেছি তাদের 
প্রত্যেককে জ্যান্তগোর থেকে খুঁড়ে তুলে প্রাণবন্ত করব । অর্থাৎ অর্ধমৃত 
করব। কারণ) আমি শক্তমান লেখক নই। অগ্ভাবধি বণিত আমার 
তাবৎচরিত্রই জীবন্মত। অতএব এ'রাও অমৃত না হয়ে আম্বত হবেন। 
কিন্ত আমি তে নিষ্কৃতি পাব আমার জন্মপাপ থেকে । 

আ[ম যখন কাবুলে ছিলুম তখন সেখানকার ব্রিটিশ লগেশনের সঙ্গে 
আমার কণামাত্র হৃগ্যত। হয় শি) “দশে-বিদেশে' ধার! পড়েছেন তার সে- 
কথ। হয়তে স্মরণ করতে পারবেন। তবে লিগেশনের একজন প্রধান 
কর্মচারীর সঙ্গে আমার অত্যন্ত হাক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ইনি 
পেশাওয়ারের খানদানী বাসিন্দা । অতিশয় খান পাঠান। এঁর চতুর্দশ 
পুরুষের কেউ কখনও আপন গোির বাইরে বিয়ে-শাদি করেন নি। ইনি 
পেশাওয়ারের পুলিস ইনস্পেকটব আহম্মদ আলীর অগ্রজ । নাম শেখ 
মহবুব আলী। ব্রিটিশ লিগেশনে তিনি ছিলেন ওরিয়েন্টাল সেক্রেটারি । 

এ'র মত বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ কূটনৈতিক আমি অষ্টকুলাচল সপ্তসমুদ্ 


৪৭ 


পরিক্রম! করেও দেখতে পাই নি। আমার বিশ্বাস, পাঠান যে সরল প্রকৃতি 
ধরে সে কথাট৷ মিথ্যা নয়, কিন্ত এইনব সরঙ্গ পাঠানদের যারা সর্দার হন, 
যেমন মনে করুন ইগ্লাইয়ের ফকীর ইংরেজীতে বলে ফকীর অব ইপি (7001) 
তাদের মত ধুরন্ধর ইহসংসারে খুঁজে পাওয়৷ দৃক্ষর। শেখ মহবুব আলীই 
বলতেন, “পাঠানর। হয় গাড়? নয় ঘড়েল । মাঝখানে কিছু নেই। পিগমিজ 
আযাণ্ড জাইণ্টস্‌। নে! নর্মেল্স্‌। অধ্যাপক বগদানফ এবং বেনওয়ার সঙ্গে 
তার প্রচুর হৃগ্ভতা ছিল। বগদানফ গত হয়েছেন। বেনওয়া আছেন। 
সথষ্টিকর্তা তাকে শতায়ু দিন, তাকে জিজ্ঞেস করলেই মহবুব আলীর বুদ্ধিমত্ত! 
সম্বন্ধে সত্যালত্য জানতে পারবেন । 

মহবুব আলী বিলক্ষণ জানতেন লিগেশনের ইংরেজ কর্তাদের সঙ্গে 
আমার অহি-নকুল সম্পর্ক । ওদিকে তিনি যদিও ইংরেজের সেবা! করতেন, 
তবু ভিতরে ভিতরে ওদের তিনি দিল্জান্‌ দিয়ে করতেন ঘেন্না, গৃণা? নয় 
ঘেন্না । এটা অবশ্ট আমার নিছক অনুমান। মহবুব আলীর মত 
ঝাণ্ড চাণক্য বাক্য ৰা আচরণে সেটা প্রকাশ করবেন, সে চিন্তাও 
বরাহভক্ষণনম মহাপাপ । বোধ হয় প্রধানত এই কারণেই তিনি আমাকে 
অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তছপরি আমি আহমদ আঙ্গীর বন্ধু। এবং 
সর্বশেষ সত্য, আম বহুদূরদেশাগত রোগাপটকা? নিবান্ধব ছুনিয়াদারি- 
বাবদে-বেকুব বাঙালী । এমত অবস্থায় আপনি ভগবানের শরণ না নিয়ে 
পাঠানের শরণ নিলেই বিবেচকের কর্ম করবেন। তবে এ-কথাও বলব, 
আমি তার শরণ পিই নি। তিনিই আমাকে অনুজরূপে তার হৃদয়ে গ্রহণ 
করেছিলেন । 

সে-কথা থাক । আমি আজ্গ তার জীবণী লিখতে বসি নি। আমি 
লিখতে বসেছি, তার স্ত্রীর পরিচারিক। সম্বন্ধে । উন্নামিক পাঠক বিরক্ত হয়ে 
আমার বাকী লেখাটুকু পড়বেন নাঃ সে-কথা আমি জানি; কিন্ত তার 
চেয়েও মোক্ষম জানি, আমি যে গুণীজনের মজলিসে দৈবেসৈবে মুখ খোলার 
অনুমতি পাই। তাদের পৌনে ষোল আনা সহ্ৃদয় সদাশয় জন। 
তাদের অকৃপণ হৃদয় জন্মদাসী রাজরাণী সবাইকে আদন দিতে 
লানে। 


৪৮ 


আমার সঙ্গে মহবুব আলীর হ্ৃগ্ভতা হওয়ার কয়েকদিন পর 
আমার ভৃত্য এবং সখ। আব্ছুর রহমান আমাকে য। জানালে তার 
সারাংশ এই £-- 

মহবুব আলীর পরিবার এবং অন্য এক পরিবারের ছুশমনী-লড়াই ক্ষান্ত 
দেবার জন্য একদা স্থিরীকৃত হয়, ছুই পরিথার যেন বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ 
হয়। মহবুব আলী এ-পরিবারের বড় ছেলে । তাই তাকেই বিয়ে করতে 
হল অন্য পরিবারের বড় মেয়েকে । নবদম্পতি গোড়ার দিকে স্থথেই 
ছিলেন। ইতিমধ্যে বল। নেই কওয়। নেই হঠাৎ মহবুৰ আলীর এক অতি 
দূর চাচাতে ভাই তার শ্বশুর-পরিবারের ততোধিক দূর এক মামাতো 
ভাইকে খুন করে। ফলে মহবুব আলীর স্ত্রী পিতুগণের আদেশানুযায়ী 
স্বামিগৃহ বর্জন করে পিত্রালয়ে চলে যান। 

আবছুর রহমানের কাহিনী অনুযায়ী এ-ঘটন। ঘটেছিল বছর দশেক 
পূর্বে । বলতে গেলে এই অবধি মহবুব আলী অকৃতদার । অধুনা অবস্থার 
পরিবর্তন হয়েছে । তিনি শীঘ্রই হিন্দুস্থান থেকে বিয়ে করে অন্য বিৰি 
নিয়ে আসছেন। 

সুহৃদ সম্বন্ধে তার অপরোক্ষ আলোচনা কর! অসঙ্গত, তা সে ভূতোর 
সঙ্গেই হক আর পিতৃব্যের সঙ্গেই হক-_এই আমার বিশ্বাম। কিন্তু 
আব্ছুর রহমান যখন একবান্ন কথ বলতে আরম্ভ করে তখন তাকে 
ঠেকানে। অসাধ্য ব্যাপার । 


শেষটায় আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলুম, “তোমার এসব বলার কি 
দরকার ? আমারই বা এসব জেনে কি হবে? তিনি তো। আমাকে এসৰ 
কিছু বলেন নি?; 

আবছুর রহমান বললে, তান কেন বলেন নি সে-কথা আমি কি করে 
জানব? (পরে মহ্বুব আলির কাছে শুনেছিলুম, ছঃখের কথ! নাকি বন্ধু 
বন্ধুকে বলে না) তবে আপনার তে। জান। উচিত |, আলোচন! এখানেই 
সমাপ্ত হয়। 

রাত্রে আমার গায়ে লেপকম্থল জড়িয়ে দেবার সময় আবছুর রহমান 
বলেছিল, “শেখ মহবুব আলি খান বড় ভাল লোক ।' 


৪৯ 


আবছুর রহুমান সার্টিফিকেট দেবার সময় রবীন্দ্রনাথের পদাহ্ক অনুসরণ 
করে না। এ-কথ! বলে রাখ। ভাল । 

শেখ মহুবুৰ আলীর বাসাতে আমি সময় পেলেই যেতুম। তার বাসাটি 
লিগেশনের প্রত্যন্ত-প্রদেশে অবস্থিত ছিল বলে ইংরেজের ছায়৷ ন৷ মাড়িয়ে 
সেখানে পৌছানো! যেত। তিনি দফতরে থাকলে তার ছেলেবেলাকার 
বন্ধু এবং চাকর গফুর খান তাঁকে খবর দিতে যেত। আমি ততক্ষণে ড্রইং 
রুমে বসে আগুন পোয়াতুম, আর বাবুচর্থকে সবিস্তর বয়ান দিতুম কোন্‌ 
কোন্‌ বস্ত খাওয়া আমার বাসন । 

শেখ গফুর ফিরে এসেই আমার পায়ের কাছে বসে ভাঙা ভাঙা ভর্দ, 
ফাসী-পাঞ্জাবী-পশতুতে মিশিয়ে গল্প জুড়ে দিত। পাঠানদের ভিতর 
জাতিভেদ নেই। শেখ গফুর আর শেখ মহবুব আলী খান প্রতু-ভূত্য হলে ও 
তাদের সম্পর্ক ছিল সধ্যের। তাই গফুর আমার সঙ্গে গল্প করাট। তার 
কর্তব্য বলে মনে করত; আমি ভদ্রসস্তান, তার সঙ্গে গল্প করে আমি 
যে তাকে “আপ্যায়িত' করছি. সে-কথা তাকে বললে সে নিশ্চয়ই আশ্চর্য 
হত। আবছুর রহমান এবং গফুরে সে সৌহার্দ্য ছিল, মে-কথা বল! বাহুল্য । 

সচরাচর মহবুৰ আলীর ডরইং-রুম খোলাই থাকত । 

আবছুর রহমান রচিত মহবুব আলীর "পারিবারিক প্রবন্ধ শোনার 
কয়েকদিন পর তার বাড়িতে গিয়ে ডইং-রুমের দরজায় ধাক! দিয়ে দেখি, 
সেট! ভিতর থেকে বন্ধ। দরজায় হাণ্ডেলের কাছে তখন দেখি বিজলির 
বোতাম, কলিং বেল। একটুখানি আশ্চর্য হয়ে ভাবলুম, মহবুব আলী 
আবার কবে থেকে পর্দানশীন হলেন, তার গৃহে তো মাতা নেহু, 
অপ্রিয়বাদিনী ভার্ষা পর্যন্ত নেই, তার গৃহ তে। অরণ্যসম। অরণ্যকে 
ছিউকিনি দিয়ে বন্ধ করার কা কন্য প্রয়োজন? দিলুম বোতাম টিপে, সঙ্গে 
সঙ্গে ভাকলুম, “ভাই গফুর !? 

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজ। খুলে গেল । ভেবেছিলুম দেখব গোটা গাট্রা 
গল-কম্বল দাড়ি সম্বলিত বেঁটে গফুর মুহম্মদ খান। দেখে-_হকচকিয়ে 
গেলুম- দেখি, দীর্ঘ এবং তন্বঙ্গী একটি মেয়ে। পরনে শিলওয়ার আর 
হাটু পর্যন্ত নেমে-আসা লম্ব! কুর্তা । ওড়ন। দিয়ে মাথায় আধেক ঘোমটা | 


৫০ 


শ্যামা | এবং মে অতি মধুর শ্যামবর্ণ। পেশাওয়ার কাবুলে মানুষের 
রঙ হয় ফরসা, কিংব। রোদে-পোড়া বাদামী । এ-মেয়ের রঙ সেই শ্যাম, 
যেটি পর্দানশীন বাঙালী মেয়ের হয় । ভার কী তুলনা আছে? 

বলতে সময় লাগল । কিন্ত প্রথম দিন তাকে দেখেছিলুম এক লহমার 
তরে এবং আমি তাকে ভাল করে দেখবার পূর্বেই সে দিয়েছিল ভিতরপানে 
ছুট। তখন লক্ষ্য করেছিলুম সেও আধ লহমার ওরে; গুরুগামিনী রমণীর 
যে যে স্থলে বিধাতা সৌন্দর্য পু্ধীভূত করে দেন, তর্বঙ্গীর দেহে তার 
কিছুমাত্র কার্পণ্য করেন নি; বরঞ্চ বলব তিনি অজন্তাব্ন চিত্রকরের মত 
একটু যেন বাড়াবাড়ি করেছেন । অথচ ব্যস পনের-যোল হয় কি-ন। হয়। 
তবে কি বিধাত। মানুষের আক। ছৰি দেখে তার স্থির সৌন্দর্য 
বাড়ান? 

তা সে বাকগে । তখন কি আর তত করে খুঁটিয়ে খু'টিয়ে দেখেছিলুম, 
না, ওই বিষয়ে চিন্তাই করেছিলুম | 

আমি আগুনের কাছে গিয়ে বসলুম ; খানিক পরে মহবুব আলী 
এলেন । পাশে বসে ডাক দিলেন, “ম-অ-অ-অ-ণি-- 

মণি দোরের আড়ালে দাড়ালে, ছুজনাতে পশতু ভাষায় কথাবার্তা হল। 
আমি তার একবর্ণও বুঝতে পারলুম না । মহুবুব আলী আমাকে বললেন, 
'মোট। রান্না এখনও বাবুচীই করে, কিন্ত মণির হাতে তৈরী নাশতা ন! 
হলে আমার বিবির চলে না। মণ বললে, আপনি কী খেতে ভালবাসেন 
সে ইতিমধ্যে জেনে নিয়েছে এবং তৈরী করেছে । ভালই হল। ও বড় 
তেজী মেয়ে। যাকে অপছন্দ করে তার রুটিতে হয়তে। সে'কে। বিষ দেবে? 

দাঁব। খেলতে বসলুম এবং যথারীতি হারলুম। খেলার মাঝখানে মণি 
এসে অন্ত টেবিলে নাশতা সাজালে। 

সমর নিয়েছে বটে কিন্তু রেঁধেছে ভাল । মমলেটের রঙটি সর্বাঙ্গে 
সোনালী হুলদে। এখানে বাদামী, সেখানে হলদে, ওখানে সাদা নয়। 
তভে-কোণ। পরোটাও তৈরি করেছে যেন টিক্ষয়ার সেটক্কয়ার দিয়ে । ভিতরে 
ভাজে ভাজে কোন জায়গায় কাচাও নয়। 

খাওয়! শেষ হলে আমি বললুম, “আধ ঘণ্টাটাক বসি। সেঁকো বিষ 


৫১ 


দিয়েছে কি না তার ফলাফল দেখে যাই। মনি ধাড়িয়ে ছিল। সে 
মহবুব আলীর মুখের দিকে তাকাল । তিনি পশতুতে অনুবাদ করলেন। 
মণি 'যাঃ কিংবা ওই ধরনের কিছু বলে চলে গেল। 

ভবিষ্যৎ দেখতে পেলে তখন ওই কীচা রসিকতাটুকুও করতুম না। 

ইতিমধ্যে মহবুব আমার বাড়িতে একবার এসেছিলেন বলে আমি 
তার বাড়ি গেলুম দিন পনের পরে। এবারে বাইরের বোতামে চাপ 
দেওয়। মাত্রই খুট করে দরজ। খুলে গেল। 

মণি ন্মামাকে দেখে নিঃসক্কোচে পশতু ভাষায় কিচির মিচর করে 
উঠল। কিছুতেই থামতে চায় না । আমি একবার সামান্য স্থঘোগ পেয়ে 
বললুম। 'পশতু, তারপর বা! হাত উপরের দিকে তুলে ভরতনাট্যম্‌ কায়দায় 
পদ্মফুল ফোটাবার মুদ্রা দেখিয়ে বোঝাবার চেষ্ট। করলুম “ডডনং " অর্থাৎ 
আমি পশতু বুঝি নে। কিন্তুকেবা শোনে কার কথা! ভরতনাট্যমে 
আমি যদি হই খুচরে। কারবারী, মণির বেসাতি দেখলুম পাইকিরী লাটের। 
ডান হাত দিক্সে এক অদৃশ্য ঝাঁট! নিয়ে আকাশের বেশ খানিকটা! বঝাঁট 
দেবার যুত্র। দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলে, “কুছ পরওয়া নহী। কিন্তু শুধু মুদ্রা 
দিয়ে তো আর বেশীক্ষণ কথাবার্ত! চালানে। যায় না। তা হলে মানুষ 
ভাষার স্থষ্টি না করে শুধু নেচে কুদে ও মুদ্রা দেখিয়ে শঙ্করদর্শনের 
আলোচনা চালাত একে অন্যকে এটম বম্‌ বানাবার কৌশল শেখাত। 

ইতিমধ্যে গফুর এসে আমার পায়ের কাছে কার্পেটের উপর বসে 
জানালে মহবুব আলী শহরে গেছেন, ফিরতে দেরি হবে। তবে পই পই 
করে বলে গিয়েছেন, 'গমাকে যেন আটকে রাখ হয় । মণি ততক্ষণে 
রান্নাঘরে চ'ল গিয়েছে। 

গফুর তার মণিবের সঙ্গে যেরকম খোলা-দিলে গল্প জমায়, আমার 
সামনে সেই ভাবেই টজির-নাজির কতল করতে আর্ত করল । আশ কথা- 
পাশকথা সেরে শুধালে, 'মণিকে আপনার কি রকম লাগে? 

আল্লা জানেন, মৌল। আলীর দোহাই, আমি স্নব নই। দাসী 
পরিচারিক৷ সম্বন্ধে আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচন। করতে আমার কণামাত্র 
আপত্তি নেই। আমার সেবক আবদুর রহমানের সঙ্গে আমার ঘে ভাবের 


৫২ 


আদান-প্রদান রঙগ-রমিকতা। চলত, সে-রকম ধারা আমি ব্ছ “শিক্ষিত? 
'খানদানী' লোকের সঙ্গে করতে রাজী নই | কিন্তু এখানে তো ব্যাপারট! 
ততখানি সরল নয় । তাই একটু বিরক্তির সরে বললুম, “আমার লাগা- 
না-লাগার কিআছে? 

গফুর আমার উত্তর শুনে হতবুদ্ধ হয়ে গেল। খানিকক্ষণ পরে সামলে 
নিয়ে বললে, এ আপনি কি বলছেন ! আপিন শেখ মহবুব আলীর দোস্ত। 
তার ইঞ্টকুটু, গো্টীপরিবার, পাঠান-পথতুনের চেয়ে আপনাকে উনি ঢের 
ঢের বেশী ভালবাসেন। আর আপনি যে-ভাবে কথ! বললেন, তাতে মনে 
হল ওর পরিবারের জন্য আপনার যেন কোন দরদ নেই | আজ যদি মণির 
বিয়ের সম্বন্ধ আসে তবে কি মহবুব আলী আপনার সঙ্গে ওই বাবদে সল৷ 
পরামর্শ না |নয়ে থাকতে পারবেন ? ূ 

আমি শুধালুম, এসেছে নাকি ? সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে বললুম থুড়ি; 
ভুল করলুম্ন, এতখানি ওংস্ুক্য দেখানে৷ উচিত হয় নি। 'শাদির পয়ল! 
রাতে বেড়াল মারবে) এ যে ছুসর1 রাত খতম হবার উপক্রম । 

আমার ভাবাস্তর্ন লক্ষ্য না করেই গফুর সোতসাহে ৰললে, গণ্ডায় 
গপণ্ডায় | স্ুবে পেশাওয়ার-কোহাট, বন্ন-ডেরাইসমাইল থান, ইস্তেক জম্মু 
জলন্ধর থেকে ।__লিগেশনের সব কট৷ পাঠান চাপরাসী-দফতনী কেরাণী- 
খাজাঞ্চী মণিকে শাদী করতে চায় ।? 

আমি জানতুম, পাঠানদের আপন গোষ্ঠীর ভিতর জাতবিচার নেই। 
কিন্তু সেট! ছিল থিয়োরেটিকল জানা, এখন দেখলুম সেটা কী রকম 
মারাত্মক প্র্যাকটিকল! লিগেশনের খাজাঞ্চী মেলের লোকও পরিচারিকা 
মণিকে বিয়ে করতে চায় ! 

ইতিমধ্যে মণি হু-তিনবার ঘরে এসে অগ্নিবাণ হেনে গফুরের দিকে 
তাকিয়েছে। ভাষ। না জেনেও বুঝতে পেরেছে, ওর সম্বন্ধেই কথাবার্ত 
হচ্ছে। আমি গতিক সুবিধের নয় দেখে বললুম। “থাক-থাক্‌।' 

মণি আমার জন্য এক অজান। পেশওয়ারী কাবাব বানিয়েছে । ভারি 
মোলায়েম । দেখে মনে হয় কাচা? কিন্তু হাত দিয়ে মুখের কাছে তুলতে 
না তুলতেই বুর বুর করে ঝরে পড়ে । আমি আগের থেকেই হা করে 


৫৩ 


ছিলুম ; মুখে কিছু পৌঁছল না দেখে, মণি খিলখিল করে হেসে উঠল । 
ওড়ন। দিয়ে মুখ ঢেকে ভিতরের দরজ। দিয়ে অস্তর্ধান করল। 
মহবুব আলী এলেন। দাবার ফাকে বললেন, “মণিকে নিয়ে বড় 
বিপদে পড়েছি ।; 
আমি বললুম, “কিস্তি সামলান।? ঘোড়া উঠে, নৌকা ঘোড়ার ডবল 
কিস্তি ।? 
মহবুৰ আলী বললেন, “মণিকে নিয়ে ঝড় বিপদে পড়েছি । 
আমি বললুম, হ্যা আমিও বিপদে পড়েছি। আবহুর রহমান বলছিল 
এখন থেকে সবাইকে রাস্তায় দেরেশী পরে বেরুতে হবে । দরজীর দোকানে 
ভিড় লেগেছে । কি করি, বলুন তো?" 
ততক্ষণ খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে । আমি যথারীতি হেরে গিয়েছি । 
পূর্বেই বলেছি? মহবুৰ আলী চাণক্যন্ত চাণক্য । তাই এটাও জানেন, 
কখন সাফসফ! খোলাখুলি কথা! কইতে হয়। বললেন, “মণিকে বিয়ে 
করার জন্ত সব কট। পাঠান আমার দারে পনন। দিচ্ছে । ওদিকে মণি বলে, 
সে কাউকে বিয়ে করতে চায় না। কেন? আমার বিবি বললেন, সে 
কি-_, 
অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললুম “ব্যস্‌ ব্যস্‌।' 
মহবুৰ আলী আমার উদ্মার জন্য তৈরী ছিলেন | আমার ছৃখানা হাত 
ধরে বললেন, 'দোস্ত। আমি জানি, এটা সম্পূর্ণ অসম্ভব । আপনি সৈয়দ- 
বংশের ছেলে । আপনাবা পাঠান-মোগলেও বিয়ে শাদি করেন না। যদিও 
“কুরান-হুদিসের রায় যে-কোন মুললমান যে-কোনও মুললমানীকে বিয়ে 
করতে পারে । হক কথা । কিন্তু লোকাচার দেশাচারও আছে । সেগুলো 
মানতে হয়। আজ যদি আপনি আমার বোন কিংবা শালীকে বিয়ে করে 
দেশে ফেরেন তবে আমি কোনও রকম ছুশ্চিন্তা করব না। কিন্তু মণিকে 
বোঝাই কী করে, আপনার সঙ্গে তার বিয়ে সম্পুর্ণ অসম্ভব । সে ছেলেবেলা 
থেকে দেখেছে যে-কোনও মেয়ের সঙ্গে যেকোনও ছেলের বিয়ে হয়| তা 
যে শুধু পাঠানদের ভিতরেই, সে কি করে জানবে বলুন ? বাইরের সংসারে 
যে অন্ত ব্যবস্থা, কি করে বুঝবে বলুন 1 


৫8 


আমি আরও বিরক্ত হয়ে বললুম, “আঃ! কী এক স্টর্ম-ইন-এ টি-পট! 
তিলকে তাল ! আপনার বাড়ির মেয়ে কাকে বিয়ে করতে চায়) না-করতে 
চায় তাতে আমার কি ? 

মহবুব আলী শান্ত কণ্ঠে বললেন; "হ্যা, আপনার তাতে কি? 

আবছুর রহমানের উপদেশ স্মরণে এল । বললুম, “ন। না, আপনি 
আমাকে এতথানি হ্ৃদয়হীন মনে করবেন ন।। কিন্তু ভেবে দেখুন, আমাকে 
যেখানে জড়িয়ে ফেল! হয়েছে, এবং যেস্থলে আমার হাতে কোনও সমাধান 
নেই, সেখানে আমি উপদেশই বা দিই কি প্রকারে ? 

কাবুলে এপিডেমিক সর্দিকাদি দেখা দিল। ঝাড়। দশ দিন ঘরে বন্ধ 
থাকতে হল । পেরে উঠে শুনি, মহবুব আলী আমার চেয়েও বে-এক্তেয়ার। 
ভেবেছিলুম কিছুদিন ও-পাড়! মানড়াব না। তবু যেতে হয়। 

এৰারে মণি দরজ। খুলেই যা পশতুর তুবড়িবাজ্ি বিভন-বিশপ ফল.স্‌ 
চালালে, তার সামনে আমি একদম হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে রইলুম । কুমারী 
পার্বতী কামা পতিনিন্দ! শুনে ন যযৌ ন তস্ছৌ হয়েছিলেন আমি উলটো 
অবস্থায় । ফল কিন্ত একই। 

লক্ষ্য করলুম, মণ্িকে ভয়ঙ্কর রোগ! দেখাচ্ছে । ফার্পাঁতে শুধালুয। 
সর্দি হয়েছিল নাকি? মণি একবর্ণ ফাস বোঝে না। খলখল করে 
হেসে বাড়ির ভেতর চলে গেল। 

মহবুব আলী এলেন লাঠিতে ভর করে। ঠাণ্ডা দেশের সর্দি, 
যাবার বেল। মানুষকে অর্ধমূত করে দিয়ে যায়| বিশেষ করে যাদের চি 
নিয়ে কারবার । 

আমি জানতুম ওই কথাই উঠবে, যদিও আশা করেছিলুম্, নাও উঠতে 
পারে। মণির উত্তেজনা থেকে অব্য আমেজ করেছিলুম, আরও কিছু 
একটা হয়েছে । 

বললেন, “ওই যে আমাদের ছোকর। চাপরাসী মাহমুদ জান, রাসকেল 
বা ইডিয়ট কী বলব! সে-ই ঘটিয়েছে কাগ্ুখান। । আপনি যখন দিন 
নাতেক এলেন ন। তখন ওই মাহমুদ মণিকে একটা খাসা আরব্য উপন্যাস 
শানালে। রাসকেলটা গল্প বানাতে আস্ত পাঠান। সে মণিকে বললে, 


৫৫ 


“বাদশ। আমানউল্লা খান সৈয়দ সাহেৰকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন? এদেশে 
বিয়ে না করে দামড়ার মত ঘুরে বেড়ানে। অত্যন্ত অনুচিত। লোকনিন্দ। 
হয়, বিশেষ করে আপনি যখন শিক্ষক! তারপর সৈয়দ সায়েবের হাত 
ধরে তাকে নিয়ে গেলেন তার মেয়ে-ইস্কুলে। সেখানে হু শো মেয়েকে 
ড় করিয়ে দিয়ে হুকুম দিলেন, বেছে নাও । সৈয়দ সায়েক আর কা 
করেন! শাহানশাবাদশ।রু হুঞ্জম । ন1 মানলে গর্দান। আর মেয়েগুলোই 
বাকি কমখাপন্ুরভ! সৈয়দ সায়েব্ঁবিয়ে করে মশগুল। তাই এ দিকে 
আসার ফুরসত তার আর কই” ?” 

আমি জীবনে ওই একবারই গীতা বণিত নিষষম্প প্রদীপশিখাবৎ | 

মহবুব অলী বলন্দেন, “মণি তো চাৎকার করে কান্নাকাটি জুড়ে দিল । 
তারপর শয্য। নিল, ড্রইং-রুমের দরজার গোড়ায় । একটানা রোজার 
উপবাস । বাত্রেও খায় না 

আমি শুধালুম, “মণি বিশ্বাস করলে ওই গাঁজাখুরি ? 

“কেন করবে না? মণি মাঝে মাঝে মোটরে করে আমার বিবির সঙ্গে 
শহরে যায়। পথে পড়ে মেয়ে-স্কুল। দেখেছে, মেয়েগুলোর বরফের মত 
ফরদ। রঙ, বেদানার মত ট্যাবাট্যাবা লাল গাল, ধনুকের মত ভুরু. 

আমি বললুম, “থাক্‌ থাক্‌। আপনাকে আর কবিত্ব করতে হবে না। 
কিন্ত আমি তো পছন্দ করি শ্যামবর্ণ__ 

এইবার মহবুৰ আলীর মুখে ফুটল মধুর হাঁসি। ্যাকরাগলা, আবদেরে- 
আবদেরে সুরে বললেন? “তাহলে মণিকে ডেকে সেই সুলমাচার শু'নয়ে 
দি? এবং এটাও বলব কি যে, আপনি মণিকে কাবুলী মেয়েদের চেয়ে বেশী 
থাপন্ুরত বলে মনে করেন ? 

আমি তো রেগে উউ ; চীৎকার করে বললুম, বলুন, “বলুন, বিশ্ব-ন্ুদ্ধকে 
বলুন আমার কি আপত্তি? মণি যখন বিশ্বাস করে আমার বিয়ে হয়ে 
গিয়েছে, তখন তো। আপনার সব সমস্ত! সমাধান হয়ে গিয়েছে ।? 

মহবুব আলী হাসলেন, আরও মধুর হাদি। আমার গা জলে গেল। 

অমিয় ছানিয়। বললেন, “ওই তে আপনার ভূল। তাই যদি হত 
তবে আপনাকে দেখামাত্রেই মণি হালির বন্া জাগাল কেন? চিৎকার 


৫৬ 


করে তখন কী বলেছে, শুনেছেন? না, আপনি পশতু বোঝেন না। 
বলেছে “ঙর হাতে 'মেহদীর দাগ নেই, উনি বিয়ে করেন নি” 1১ ” 

আমি চুপ। শেষটায় কাতর কণ্ঠে শুধালুম, “মেহদীর দাগ ছাড়া কি 
কখনও বিয়ে হয় না ?? 

মহুবুব আলী বললেন, 'বোঝান গিয়ে মণিকে । আপনাকে কত বার 
বলেছি। ও পাঠান-মেয়ে ও বোঝে পাঠানদের কার়দাকান্থুন। ও শ্বাস- 
প্রশ্বান নেয় পাঠান-জগতে | বিশ্বভুবনের খবর রাখে ন1।' 

আমি শুধালুম। আপনাকে গতবারে দেখেছিলুম, এ-ব্যাপার নিয়ে 
অত্যন্ত হুশ্চিষ্তাগ্রস্ত | সেটা হটাৎ কেটে গেল কি প্রকারে? আমার তো 
মনে হচ্ছে জিনিষটে আরও প্যাচালো! হয়ে যাচ্ছে । 

তিনি বললেন, পাঠান-মেয়ের। সচরাচর বাপ-চাচার আদেশমত নাক- 
কান বুজে বিয়ে করে। কিন্তু হঠাৎ কখনও যদি পাঠান-মেয়ে কাউকে 


ভালবেসে ফেলে তখন সে আগুনে হাঁত না দেওয়াই ভাল । ব্যাপারটার : 


গুরুত্ব গোড়ার দিকে আমি বুঝতে পারি নি; তাই তার একটা সমাধান 
খুঁজছিলুম। এখন নিরাশ হয়ে ভয় মেনে বসে আছি।? 

আমি আর কি বলব? অত্যন্ত চিন্তিত মনে বাড়ি ফিরলুম | 

সমস্যার কয়লাল! করে দিল বাচ্চায়ে সকাও কাবুল আক্রমণ করে। 
আমি থাকি শহরের মাঝখানে, ব্রিটিশ লিগেশন শহরের বাইরে মাইল 
দেড়েক দূরে | বাচ্চ! এসেছে সেদিক থেকেই এবং থান! গেড়েছে লিগেশন 
আর শহরের মাঝথানে । লিগেশন আর শহর একে অন্য থেকে সম্পুর্ণ 
বিচ্ছিন্ন । সেখানে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। 

কয়েকদিন পরে বাচ্চা হটে গেল। তখন ব্রিটিশ প্লেন এসে বিদেশী 
মেয়েদের পেশাওয়ার নিয়ে যেতে লাগল । খবর পেয়েই ছুটে গেলুম 
আমার বন্ধু মৌলানা জিয়াউদ্দীনের স্ত্রীর জন্য একটা সীট যোগাড় করতে । 

মহবুব আলীর কলিং-বেল টেপা মাত্রই এবারে দরজ। খুলল না । তখন 
হ্যাণ্ডেল ঘোরাতে ই দরজ। খুলে গেল। 

খানিকক্ষণ পরে মহবুব আলী এলেন। মুখ বিষ । কোন ভূমিকা 
ন। দিগেই বললেন, “কাবুল নিরাপদ স্থান নয় বলে লিগেশনের সব 


৫৭ 
সৈ-মু-আ- শেষ্টগঞ্স-_ও 


সখ 


মেয়েদের পেশাওয়ারে পাঠিয়ে দেওয়। হয়েছে । আমার স্ত্রী চলে গিয়েছেন। 
মণিও গেছে।' 

আমি বলতে চাইপুম, “ভালই হল” কিন্তু বলতে পারলুম না। 

তারপর বললেন, আগনাকে বলে কি হখেঃ তবু বলি। বে কদিন 
শহর লিগেশন থেকে বিচ্ছিম ছিল সে কিন এখানে অনেক রকম গুজব 
পৌছত, কেউ বলত কাবুলে লুটতরাজ আরম্ভ হয়ে গেছে, কেউ বলত 
বিদেশীদের সব খুন করে ফেলা হয়েছে । আর মণি ছুটোছুটি করেছে, 
এ-চাপরাসী থেকে ও-চাপরাসীর কাছে, এ-আরদালীর কাছ থেকে ও- 
আরদালীর কাছে। টাক! দিয়ে লোভ পর্যন্ত দেখিয়েছে, আপনার কুশল 
সংবাদ নিয়ে আসবার জন্যে । 

আমি চুপ। 

তারপর যখন সে জানতে পারলে তাকেও আমার স্ত্রীর সঙ্গে 
পেশাওয়ার চলে যেতে হবে তখন এক বিপর্যয় কাণ্ড করে তুললে । 
কান্নাকাটি জুড়ে দিয়ে বললে, সে কিছুতেই দেশে ফিরে যাবে না। এক 
রকম গায়ের জোরে তাকে প্লেনে তুলে দিতে হল । 

আমি কিছু বলি নি। 

কাবুলে অনেক কষ্ট সওয়ার পর একদিন খবর পেলুম, আ্যারোপেনে 
জিয়াউদ্দীন ও আমার জন্ত জায়গ। হয়েছে । আগের রাত্রে মহবুব আলী 
আমাকে “গুডজনি বভইয়াজ' জানাতে এলেন। বিদায়ের সময় আমাকে 
একটা মোটা খাম দিয়ে বললেন, *আপনি পেশাওয়ারে পৌছে আমার 
শ্বশুর-বাড়ি গিয়ে মণিকে খবর দেবেন | মণি এলে তার হাতে খামট। দিয়ে 
বলবেন-__-এটা! মহবুর আলীর স্ত্রীর হাতে দিয়ে? | 

আমি বললুম, “মামি তো পশতু বলতে পারি নে।' 

তিনি কথ! কটি উর্দ হরফে লিখে বার তিনেক আমাকে দিয়ে পড়িয়ে 
নিলেন। 

আযারোপ্লেনে বসে পরের দিন অনেক চিন্তা করেছিলুম । কি চিন্ত। 


করেছিলুম, সে-কথ দয়। করে জিজ্ঞেদ করবেন না। 
পেশা ওয়ার পৌছেই গেলুম মহবুব আলীর শ্বশুর-বাড়ি। বৈঠকখানায় 


৫৮ 


ঢুকে দেখি, ছুই মুরুববীস্থানীয় বৃদ্ধ বসে আছেন। আমি মহবুব আলীর 
কুশল সংবাদ জানিয়ে তাদের অনুরোধ জানালুম, মশিকে একটু খবর দিতে। 
ভদ্রলোকের! একটু চমকে উঠলেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সামলে নিয়ে 
বললেন, “খবর দিচ্ছি । প্রা চমকে উঠলেন কেন । তবে কি এবাড়ির 
মেয়ের! বৈঠকখানায় আসে না? ত৷ হলে মহবুব আলীর সেটা বোঝা 
উচিত ছিল। 

মণি এল । আমাকে দেখে অন্দরের দোরের গোড়ায় স্তম্ভিত হয়ে 
াড়াল। মুখে কথ! নেই। মুরুববীদের দিকে একবার তাকালে । তারা 
তখন অন্য দিকে ঘাড় কিরিয়ে নিয়েছেন। মণি মৃছু কণ্ঠে একটি শব 
শোধালে, “সলামত ?' কথাট! ফাপাঁ। হয়তো পশতৃতেও চলে । অর্থ, 'কুশল ?) 

আমি ঘাড় নাড়িয়ে বললুম, "হ্যা ।? 

তারপর তাবু কাছে গিয়ে খামট। দিয়ে সেই শেখ। বুলিতে পশতুতে 
বললুম, “এটা মহুবুব আলীর স্ত্রীর হাতে দিয়ে! ।) মণির মুখ খুশিতে ভরে 
উঠল । হয! বলল সে-ভাষ! না জেনেও বুঝতে পারলুম, সে বলছে, “পশতু 
তা হলে শিখেছেন ?” 

আমি ছুঃখ দেখিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে 'না? জান।লুম | 

মণি ভিতরে চলে গেল। 

আমি উঠি-উঠি করছিলুম, এমন সময় চাকর এসে বললে কিছু খেয়ে 
যেতে । পাঠানের বাড়িতে না খেয়ে চলে যাওয়1 বড় বেয়াদৰি। 

মনি টেবিলে খাবার সাজিয়ে দোরের আড়ালে দাড়াল । 

একটিও কথ! বলল ন1। 

বাড়ি থেকে বেরবার সময় একবার পিছনের দিকে তাকালুম, মণিকে 
শেষ:সেলাম জানাবার.জন্য । কোথাও দেখতে পেলুম না । 

টাঙ্গাতে উঠে উলটে দিকে মুখ করে বসতেই নজর গেল দোতলার 
বারান্দার দিকে । দেখি মণি দাড়িয়ে । মাথায় ওড়না নেই। আর ছু 
চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে, লম্বা লম্বা! ধারা বয়ে। 

টাঙ্গ। মোড নিল। 

সেই রাত্রে দেশের ট্রেন ধরলুম। 

৫৯ 


॥ নোনামিঠা ॥ 


ব্যারোমিটার দেখে, কাগজ-পত্র ঘেটে জান! যায়, লাল-দরিয়া এমন 
কিছু গরম জায়গা নয়। জেকবাবাদ পেশাওয়ার দুরে থাক, ধার] পাটনা- 
গয়ার গরম ভোগ করেছেন তারা আবহাওয়া-দপ্তরে তৈরী লাল-দরিয়ার 
জন্ম-কুগুলী দেখে বিচলিত তো হবেনই না, বর্ণ ঈষং মৃদু হস্)ও করবেন। 
আর উন্নামিক পর্যটক হলে হয়তো প্রশ্ন করেই বনবেন, 'হালক৷ 
আলজ্টারটার দরকার হবে না তো 1) 

তবে প্রতিবারেই আমার মনে হয়েছে, লাল দরিয়া আমাকে যেন পার্ক 
সার্কাসের হোটেলে খোলা আগ্চনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শিক-কাবাব ঝলনাচ্ছে। 
তুল বললুম ; মনে হয়েছে; যেন হাঁড়িতে ফেলে ঢাকনা লেই দিয়ে সেঁটে 
আমাকে দম-পুথতে'র রান্না বা 'পুটপক" করেছে। ফুটবলীদের যে রক: 
'বগি-টিম? হয়। লাল-দরিয়। আমার “বগি-সী। 

সমস্ত দিনট! কাটাই জাহাজের বৈঠকখানায় হাপাতে হাঁপাতে আয 
বরফভরতি গেলাসটা কপালে ঘাড়ে নাকে ঘষে ঘষে আর রাতের তিনটে 
যামই কাটাই রকে অর্থাৎ ডেকে, তারা গুনে গুনে। আমার বিশ্বাস 
ভগবান লাল-দরিয়া গড়েছেন চতুর্থ ভূতকে বাদ দিয়ে। ওর সমুদ্রে যদি 
কখনও হাওয়া বয় তবে নিশ্চয়ই কিম্ভূতই বলতে হবে। 

তাই সে রাত্রে ব্যাপার আমার কিন্তুত বলেই মনে হল। 

ডেক চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছিলুম | ঠিক ঘুম নয়, তন্দ্রা । এমন সম 
ক।নে এল) সেই লাল-দরিয়ায়। দেশ থেকে বছুদূরের সেই পাত সমুদ্রের এব 
সমুদ্রে- সিলেটের বাঙাল ভাষা! স্বপ্নই হবে। জানতুম। সে-জাহাে 
আমি ছাড়া আর কোনও সিলেটি ছিল না। এ রকম মরমিয়া স্বরে মা' 
রাতে, কে কাকে “ভাই, হি কথা যদি তুলচস'-_বলতে যায়? খেয়াল 
পোলাও চাখতে, আকাশকুনুম শু কতে, স্বপ্নের গান শুনতে, কোনও খর! 
নেই; তাই ভাবলুম চোখ বন্ধ করে স্বপ্নটা আরও.কিছুক্ষণ ধরে দেখি। 


৩৫ 


কিন্ত ওই তো স্বপ্নের একটিমাত্র দোষ । ঠিক যখন মনে হবে, বেশ 
মে আসছে, ঠিক তখনই ঘুমটি যাবে ভেঙে । এস্থলেও পে আইনের 
ব্যত্যয় হল না। চোখ খুলে দেখি, সামনে_-আমার দ্বিকে পিছন ফিরে 
হুজন খালাসী চাপা গলায় কথ। বলছে । 

বেচারীরা! রাত বারোটার পর এদের অনুমতি আছে ডেকে 
আসবার | তাও দল বেঁধে নয়। বাকি দিনের অসহ্য গরম তাদের কাটাতে 
হয় জাহাজের পেটের ভিতরে । 

সিলেট-নোয়াখালির লোক যে পৃথিবীর সর্বত্রই জাহাজে খালালীর 
কাজ করে দে-কথ! আমার অজান। ছিল না। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল; 
তারা কাজ করে মাল-জাহাজেই; এই ফরাসী যাত্রী-জাহাজে রাত্রি 
দ্বিপ্রহরে, তাও আবার নোয়াখালি-চাউগায়ের নয়, একদম খাঁটি আমার 
আপন দেশ সিলেটের লোকের সঙ্গে দেখ হয়ে যাবে তার সম্ভাবনা স্বপ্নই 
বেশী, বাস্তবে কম। 

এর] কথা বলছিল খুবই কম। যেটুকু শুনতে পেলুম। তার থেকে 
কিন্ত এ-কথাট৷ স্পষ্ট বোঝা! গেল, এদের একজন এই প্রথম জাহাজের 
কামে ঢুকেছে এবং দেশের ঘরবাড়ির অন্ত তার মন বড্ড উতলা হয়ে 
গিয়েছে । তার সঙ্গী পুরনে! লোক ; নতুন বউকে যে-রকম বাপের বাড়ির 
দাসী সাস্তন। দেয়, এর কথার ধরন অনেকটা সেই রকমের । 

আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছিলুঘ! শেষটায় যখন দেখলুম। ওরা উঠি- 
উঠি করছে তখন আমি কোনও প্রকারের ভূমিকা না করেই হঠাৎ অতি 
খাটি দিলেটাতে জিজ্ঞেস করলুম, “তোমাদের বাড়ি সিলেটের কোন্‌ গ্রামে ? 

সিলেটের খালাসীর! ছনিয়ার তাবৎ দরিয়ায় মাছের মত কিলবিল করে 
এ-সত্য সবাই জানে, কিন্তু তার চেয়ে ঢের সত্য--দিলেটের ভদ্রসন্তান 
পারতপক্ষে কখনও বিদেশ যায় না । তাই লাল-দরিয়ার মাঝখানে সিলেটা 
শুনে আমার মনে হয়েছিল, ওটা স্বপ্ন ; সেইখানে সিলেটী ভদ্রসস্তান দেখে 
ওদের মনে হল আজ মহাপ্রলয় (কিয়ামতের দিন) উপস্থিত। শাস্ত্রে 
আছে, ওই দিনই আমাদের সকলের সকলের দেখ হবে একই জায়গায় । 
ভূত দেখলেও মানুষ অতথানি লাফ দেয় না। হ্জন যে-ভাবৰে একই 


৬১ 


তালে-লয়ে লাফ দিল তা দেখে মনে হল ওর! যেন ওই কর্মটি বহুদিন ধরে 
মহড়া দিয়ে দিয়ে আসছে । 

উভয় পক্ষ কথব্চিৎ শাস্ত হওয়ার পর আমি 'সিগারেট-কেস খুলে ওদের 
সামনে ধরলুম। ছুজনেই একসঙ্গে কানে হাত দিয়ে জিভ কাটল। 
আমাকে তারা চেনে না বটে--আমি দেশ ছেড়েছি ছেলেবেলায়-_তবে 
আমার কথ! তার শুনেছে এবং আমার বাপঠাকুরদার পায়ের ধুলো তার। 
বিস্তর নিয়েছে, খুদাতালার বেহদ্‌ মেহেরবানি, আজ তারা আমার দর্শন 
পেল, আমার মামনে ওসব তওবা, তওবা ইত্যাদি । আমার দৃঢ় বিশ্বাস, 
আমাদের দেশের চাষা ইয়োরোপীয় চাষার চেয়ে ঢের বেশী ভদ্র । 

খালাসী-জীবনের কষ্ট এবং আর-পাঁচট। স্-ছুঃখের কথাও হল। হুঃখের 
কথাই পনের আনা তিন পয়ল1। বাকি এক পয়স1 সুখ অর্থাৎ মাইনেটা!; 
সেই এক পয়সাই পচাত্তর টাক । ওই দিয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়াবে, জমি-জম! 
কিনবে। 

শেষটায় শেষ প্রশ্ন শুধালুম, “আহারাদি ?, রাত তখন ঘনিয়ে এসেছে। 

বললে, “ওই ত আসল ছ্‌ঃথ, হুজুর । আমি তো তবু পুরনে। লোক। 
পাউরুর্টি আমার গলায় গিট বাধে না। কিন্তু এই ছেলেটার জান 
পাস্তাভাতে পৌতা। পাস্তাভাত! ভাতেরই নেই খোঁজ, ও চায় 
পান্তাভাত ! মূলে নেই ঘর পুব দিকে তিন দোর। 21? 

আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, “সে কি কথা! আমি তো শুনেছি, আর 
কিছু না হোক? তোমাদের ভাল-ছাত প্রচুর খেতে দেয়। জাহাজের কাম 
করে কেউ তো! কখনও রোগ! হয়ে দেশে ফেরে নি।' 

বললে, ঠিকই শুনেছেন, সায়েব। কিন্তু ব্যাপার হয়েছে কি, কোনও 
কোনও বন্দরে এখন চাল মাগংগি। সারে আমাদের রুটি খাইয়ে চাল 
জমাচ্ছে ওই সব বন্দরে লুকিয়ে চাল বিক্রি করবে! সারেঙ দেশের 
জাতভাই কিনা, না! হলে অন্ন মারার কৌশল জানবে কি করে ? 

আমি বললুম, 'নালিশ ফরিয়াদ কর নি? 

বললে, 'কে বোঝে কার বুলি? এদের ভাষ! কিজানি “ফিঞ্চ” ন! 
কী, সারেউই একটুখানি বলতে পারে। ইংরিজী হলেও না হয় আমাদের 


৬ 


ুরুববীদদের কেউ কেউ ওপরওয়ালাদের জানাতে পারতেন। ওই তো 
ারেঙের কল! ধন্ঠি জাহাক্স? ব্যাটার! শুনেছি কোলা ব্যাঙ ধরে ধরে 
নায়। সেলাম সায়েব, আজ উঠি। দেরি হয়ে গিয়েছে। আপনার কথ 
শুনে জানটা-_- 

আমি বললুম “ব্যস্‌ ব্যস্।? 

মাঝরাতের স্বপ্ন আর শেষরাতের ঘটন। মানুষ নাকি নহজেই ভুলে 
ঘায়। আমার আবার চমতকার স্মৃতিশক্তি__সব কথাই ভূলে যাই। তাই 
ভাতের কেচ্ছ। মনে পড়ল, ছপুরবেল। লাঞ্চের সময় রাইস-কারি দেখে । 

জাহাজট৷ ফরাসিস ফরামিসে ভতি। আমলে এট ইণ্ডে।চীশ থেকে 
করাসী সেপাই লক্কর লাদাই করে ফ্রান্স যাবার মুখে পণ্ডিচেরিতে একটা 
মেরে যায়। প্যাসেঞ্জার মাত্রই পল্টনের লোক। আমকা গুটিকয়েক 
ভারতীয়ই উউকে। মাল। খানা-টেবিলে আমার পাঁশে বসও একটি 
ছোকর! স্ু-লিয়োতৎনা-অর্থাৎ সাবশলটার্ন। আমার নিতান্ত নিজস্ব 
মৌলিক করাসিসে তাকে রাত্রের ঘটনাটি গল্পচ্ছলে নিবেদন করলুম । 

শুনে তে৷ দে মহা উত্তেজিত । আমি অবাক! ছুরি কাটা টেবিলে 
রেখে। মিলিটাক্নী গলায় ঝাজ লাগিয়ে বলতে শুরু করলে? “এ ভারি অন্তায়। 
অত্যন্ত অর্বচার, ইন্ুই-"অন-হার্অব-_ফাতাস্তিক-_ফেনটাসটিক | 
আরও কত কী! 

আমি বললুম, “রোম রোদ । তাত গরম হচ্ছ কেন? এ অবিচার 
তে ছুনিয়ায় স্ত্রই হচ্ছে । এই যে তুমি ইন্দোচীন থেকে ফিরছ, সেখানে 
কোন্‌ ড্যানিয়েল গিরি করতে গিরেছিলে। মো গার্সে? (বাছা) । ওসব কথা 
ধাক্‌, ছুটি খাও ।। 

ছোকরাটির সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল বলেই কথাটা বলবার সাহস 
ইয়েছিল। বন্নঞ্চ ইংরেজকে এ-সব কথ। বলবেন) ফরাসিসকে বললে, 
হাতাহাতি বোতল-ফাটাফাটির সম্তাবনাই বেশি । 

চুপ মেরে একটু ভেবে বললে, হঃ। কিন্তু এ স্থলে তো দোষী 
তোমারই জাতভাই ইগ্ডয়ান সারেও !) 

আমি বিষম খেয়ে বললুম “ওই য.ঘ1 ! 


৬৩ 


পৃধিবীতে এমন কোন দেশ এখনও দেখলুম না যেখানে মানুষ সুযোগ 
পেলে ছুপুরবেল। ঘুমোয় না । তবু কেন বাঙালীর ধারণ যে, সে-ই এ 
ধনের একমাত্র অধিকারী তা এখনও বুঝে উঠতে পারি নি। আপন আপন 
ভেক-চেয়ারে শুয়ে, চোখে ফেটা মেরে আর পাঁচটি ফরাসিসের সঙ্গে 
কোরসে ওই কর্মটি সবেমাত্র সমাধান করেছি, এমন সময় উর্দি-পরা এক 
নে1-অফ্িদার আমার সামনে এসে অতিশয় সৌজন্সহকারে অবনতমস্তকে 
যেন প্রকাশ্ঠে আত্মচিন্তা করলেন, “আমি কি মসিয়ে! অমুকের সঙ্গে আলাপ 
করার আনন্দ লাভ করছি ?' 

আমি তৎক্ষণাৎ দাড়িয়ে উঠে, আরও অবনত মস্তকে বললুম। 'আদপেই 
না। শ্লাঘ! সম্পূর্ণ আমারই ।" 

অফিসার বললেন, “মসিয়ো ল্য কমাধা-_ক্জাহাজের কাণ্তান সায়েব-_ 
মসিয়োকে__আমাকে-_ তার সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দাভিবাদন জানিয়ে প্রার্থনা 
করছেন যে, তিনি ঘদি মপিয়োর উপস্থিতি পান, তবে উল্লমিত হবেন ।' 

পাপাত্বা আমি। ভয়ে আতকে উঠলুম। আবার কী অপকর্ম করে 

ফেলেছ যে, মসিয়ো ল্য কমাদা আমার জন্য হুলিয়৷ জারী করেছেন ! 
শুকনে। মুখে, ঢোক গিলে বললুম, “সে-ই হবে আমার এ-জীবনের সবচেয়ে 
বড় সম্মান! আমি আপনার পধপ্রদর্শনের জগ্ঠ ব্যাকুল ।” 

মসিয়ো ল্য কম্যদা যদ্দিও যাত্রী-জাহাজের কাপ্তান। তবু দেখলুম তার 
ঠোটের উপর ভাসছে আর-একখানি জাহাজ এবং সেট! সর্ধপ্রকার বিনয় 
এবং স্ততি-স্তোকবাক্যে টেটন্ুর লাদাই। ভদ্রতার মানওয়ারী বললেও 
অতুযুক্তি হয় না! তবে মোদ্দা কথা যা বললেন তার অর্থ, আমার মত 
বহুভাষী পণ্ডিত ত্রিভুবনে আর হয় না, এমন কি প্যারিসেও হয় না। 

এত বড় একটা! মারাত্মক ভ্রমাত্মক তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন 
এই প্রশ্নটি জিজ্ছেন করুব করব করছি এমন সময় তার কথার তোড় থেকেই 
বেরিয়ে গেল; তিনি তিন শে! তিরনববুই বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে এই 
প্রথম একটি মহাপগ্ডিত আবিষ্কার করেছেন, যিনি তার খালালীদের কিচির- 
মিচিরের একট! অর্থ বের করতে পারেন । যাক; নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। 
তা হলে আমার মত আরও বছ লক্ষ পণ্ডিত দিলেট জেলায় আছেন। 


৬৪ 


তারপর তিনি অনুরোধ করলেন, আমি যদি দর করে তার খালাসীদের 
অমন্তপ্টির কারণটি 'খোলদা করে বর্ণনা করি, তবে তিনি বড় 
উপকৃত হন। আমি তাই করলুম। তখন সেই খালাসীদের আর 
সারেঙের ভাক পড়ল। তারা কুরবানির পাঁঠার মত কীপতে কাপতে 
উপস্থিত হল। 

কাণ্তান আর জজ ভিন্ন শ্রেণীর প্রাণী। সাক্ষীর বয়ন কত, সেই 
আলোচনায় জজের! হেসে খেলে সাতটি দিন কাটিয়ে দেন; কাপ্তানর। 
দেখলুম, তিন মিনিটেই ফীসীর হুকুম দিতে পারেন । মপিয়ে! ল্য কমাদা 
অতি শান্ত কণ্ঠে এবং প্রাপ্ল ফরাসীতে সারেঙকে বুঝিয়ে দিলেন; ভবিষ্যতে 
তিনি য্দি আর কখনও এ-রকম কেলেঙ্কারির খবর পান, তবে তিনি একটি 


মাত্র বাক্যব্যয় না করে সারেঙকে সমুদ্রের জলে ফেলে তার উপর জাহাজের 
প্রপেলারটি চালিয়ে দেবেন। 


যাক। বাঁচা গেল। মরবে তো মরবে সারেউঙটা | 

পানির পীর বদর সায়েব। তার কৃপায় রক্ষা পেয়ে 'বদর বদর বলে 
কেবিনে ফিরলুম । 

খানিকক্ষণ পরে চীনা কেবিন-বয় তার নিজন্য ফরাসীতে বলে গেল, 
খালাসীরা আমাকে অনুরোধ জানিয়েছে আজ যেন আমি মেহেরবানি করে 
কেবিনে বসে তাদের পাঠানো 'ডাল-ভাত? খাই । 

গোয়ালন্দী জাহাজের মামুলী রাইস-কারী খেয়েই আপনারা আ-হা- 
হাঁ করেন, সেই জাহাজের বাবুচারা যখন কোর্মা-কালিয়া পাঠায়, তখন 
কী অবস্থা হয়? নাঃ, বলব না। ছ-একবার ভোজনের বর্ণনা করার 
ফলে শহরে আমার বদনাম রটে গিয়েছে, আমি পেটুক এবং বিশ্বনিন্কুক | 
আমি শুধু অন্যের রন্ধনের নিন্দা করতেই জানি। আমার ভয়ঙ্কর রাগ 
হয়েছে । ভামা-তুলসী স্পর্শ করেও এই শপথ করলুম _ না, থাক্‌, আপনার 
বাড়িতে আমার মাবোনদের আমি একটি লাস্ট চান্স দিলুম। 

কাণ্তান সায়েব আমার কাছে "চিরকৃতজ্ঞ' হয়ে আছেন। খালাসীর। 
'তাই এখন নির্ভয়ে খাবার নিয়ে আমার কেবিনে আসে। 

এমনি করে জাহাজের শেষ রাত্রি উপস্থিত হল। সে-রাত্রে 


৬৫ 


খালাণীদের তৈরি গ্যালা-ব্যানকুয়েট খেয়ে যখন বাক্কে এ-পাশ ও-পাশ 
করছি, এমন সময় খালাসীদের মুরুববীটি আমার পায়ের কাছটায় পাটাতনে 
বসে হাতজোড় করে বললে, "হুজুর; একটি নিবেদন আছে ।” 

মোগলাই খানা খেয়ে তখন তবিয়ৎ বেজায় খুশ ! মোগলাই কেই 
ফরমান জারি করলুম, “নির্ভয়ে কও ।” 

বললে, হুজুর, ইট! পরগনার ঢেউপাশ! গায়ের নাম শুনেছেন? 

আমি বললুম, 'আলবং? মনু গাঙ্গের পারে । 

বললে, 'আহা, হুজুর সব জানেন ।? 

মনে মনে বললুম। হায়, শুধু কাণ্তান আর খালাসীরাই বুঝতে পারল 
আমি কত বড় বিষ্যেপাগর ! বার! বুঝতে পারলে আজ আমার পাওন। 
দারদের ভয় ঘুচে যেত তারা বুঝল না। 

বললে; “সেই গ্রামের করীম মুহম্মদের কথাই গাপনাকে বলতে এসেছি; 
হুজুর । 'করীম ব্যাট। মহ। পাষাণ্ড চোদ্দ বছর ধরে মার্ঁই (মার্সলেস ) 
বন্দরে পড়ে আছে। ওাদক বুড়ী মা কেঁদে কেঁদে চোখ ছটি কান। করে 
ফেলেছে, কত খবর পাঠিয়েছে হা-_কিছুতেই দেশে ফিরবে ন।| চিঠিপত্র 
কিছু হল না দেখে আমব। বন্দক়ে নেমে তার বাড়ি গিয়েছিলাম, তাকে 
বোঝাবার জন্য । ব্যাটার বউ এক বেউখেকী; এমন তাড়া লাগালে যে, 
আমরা পাচজন মন্দা মানুষ প্রাণ বাঁচিয়ে পালাবার পথ পাই নে। তবে 
শুনেছি মেয়েমানুষটা প্রথম প্রথম নাকি তার ভাতারের দেশের লোককে 
আদর-কদর কর্ত। যবে থেকে বুঝেছে, আমর। তাকে ভাঙচি দিয়ে 
দেশে ফিরিয়ে ।নয়ে যাবার তালে আছি? সেই থেকে মারমুখো খাগ্ডার হয়ে 
আছে। 

আমি বললুম। “তোমর। পাঁচজন লেঠেল যে কর্মটি করতে পারলে না, 
আমি মেইটে পারব? আমাকে কি গাম! পাহলওয়ান ঠাউরেছ ? 

বললে, 'না। হুজুর আপনাকে কিছু বলবে না। আপনি সুট টাই পরে 
গেলে ভাববে আপনি এসেছেন অন্য কাজে । আমাদের লুঙ্গি আর চেহারা! 
দেখেই তে! বেটী টের পেয়ে যায়, আমরা তার ভাতারের জাত-ভাই। 
আপনি হুজুর, মেহেরবানি করে “না” বলবেন না, আপনার যে কতখানি 


৬৬ 


দয়ার শরীর সে-কথ। দেবাক খালাসী জানে বলেই আমাকে তার! 
পাঠিয়েছে। আপনার জন্যই আজ আমর! ভাত-_-” 

আমি বললুম। 'ব্যস্‌, ব্যস্‌, হয়েছে হয়েছে । কাপ্তান পাকড়ে নিয়ে 
শুধাল বলেই তো সব কথা বলতে হল । না হলে আমার দায় পড়েছিঙ্গ |" 

বললে, “তওবা, তওবা! | শুনলেও গুন হয়। তা! হুজুর, আপনি 
দয়! করে আর “না” বলবেন না । আমি বুড়ীর হয়ে আপনার পায়ে ধরছি।' 

বলে সত্য-সত্যই আমার প ছুটে। জড়িয়ে ধরুল। আমি হাহা কর 
কি, কর কি? বলে পা! ছটো ছাড়ালুম । 

ওরা আমাকে যা কোর্মাপোলাও খাইয়েছে তার বদলে এ-কাজটুকু 
না৷ করে দিলে অত্যন্ত নেমকহারামি হয় । ওদিকে আবার এক ফরাসিনী 
দজ্জাল ! ঝাঁটা কিংবা ভাঙা ছাত1 নয়, পিস্তল হাতে নিয়ে তাড়া 
লাগানোই ওদের স্বভাব | 

কোন মূর্খ বেরয় দেশতভ্রমণে | কত না বাহান্ন রকমের যতসব বিদ্কুটে। 
খুদার খামোখা! গেরো! | 

বন্দরে নেমে দেখি, পরদিন ভোরের আগে বালিন যাবার সোজ। ট্রেন 
নেই। ফাঁকি দিয়ে গেরোট! কাটাব তারও উপায় আর রইল না। ছুজন 
খালানী নেমেছিল সঙ্গে _ঢেউপাশার নাগরের বাড়ি দেখিয়ে দেবে বলে। 
তাদের পরনে লুি, গায়ে রঙিন শার্ট, মাথায় খেজুর-পাতার টুপি, পায়ে 
বুট, আর গলায় লাল কন্র্টার। ওই কন্ফর্টারটি না থাকলে ওদের 
পোশাকী সঙ্জাটি সম্পূর্ণ হয় না বাঙালীর যে-রকম রেশমী উড্ভুনি। 

দুই ভুজুরে আমাকে হুজুর? 'হুজুর' করতে করতে নিয়ে গেল বন্দরের 
এক সাঁবার্বে। সেখানে দূরের থেকে সন্তর্পণে ছোট্ট একটি ফুটফুটে বাড়ি 
দেখিয়ে দিয়েই তারা হাওয়। হয়ে গেলেন । আমি প্রমাদ গুনতে গুনতে 
এগলুম | পানির গীর বদর সায়েবকে এখন আর স্মরণ করে কোনও লাভ 
নেই। তাই সেখদরবনের ভাঙার বাঘের পীর গাজী সাহেবের নাম মনে 
মনে জপতে লাগলুম-_যাচ্ছি তো৷ বাঘিনীরই সঙ্গে মোলাকাত করতে । 

বেশ জোরেই বোতাম টিপলুম-_-চোরের মায়ের বড় গল।। 

কে বলে খাগ্ডার ? দরজ। খুলে একটি ত্রিশ-বন্রিশ বছরের অতিশয় 


৬৭ 


নিরীহ-চেহারার গে-বেচাত্রী যুবতী এসে আমার সামনে দ্লাড়াল। গা” 
বেচারী বললুম তার কারণ আমাদের দেশটা! গরুর । আললে কিন্ত ওদের 
দেশের তুলন। দিয়ে বলতে হয়, “মেরি হ্যাভ এ লিটজ্‌ ল্যামএর ভেড়াটি 
ঘেন মেরির রূপ নিয়ে এসে দাড়াল । ওদিকে আমি তৈরী ছিলুম পিস্তল 
মেশিনগান, হ্যাণ্ড গ্রেনেডের জন্য । সামলে নিয়ে জাহাজে যে চোস্ত 
ফরামিস আদব-কায়দার তালিম পেয়েছিলুগ, তারই অনুকরণে মাথা নিচু 
করে বললুম, “আমি কি মাদাম মা-ও-মের ( মুহ্মদের ফরাসী উচ্চারণ ) 
সঙ্গে আলাপ করে আনন্দ লাভ করছি? ইচ্ছে করেই কোন্‌ দিশী লোক 
সেট৷ উল্লেখ করলুম না । ফরসীর! চীনা ভারতীয় এবং আরবীদের মধ্যে 
'তফাত করতে পারেন না। আমরা যে-রকম চীনা, জাপানী এবং বম 
সবাইকে একই রূপে দেখি । 

চেহারা দেখে বুঝলুম মাদার গুবলেট করে ফেলেছেন ! বললেন, 
'আত্রে (প্রবেশ করুন ), মসিয়ো |! 

ভরসা পেয়ে বললুম, “মসিয়ে! মাওমের সঙ্গে দেখা হতে পারে কি ?? 

“অবশ্য ।? 

ডইংরুমে ঢুকে দেখি, শেখ করীম মুহন্মদ উত্তম ফরাসী সুটি পরে 
টেবিলের উপর রকমারি নকৃশার কাপড়ের ছোট ছোট টুকরোর দিকে 
একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। 

আমি করাপীতেই বললুম। আমি মাদ্রাজ থেকে এসেছি, কাল বালিন 
চলে যাব। ভাবলুম। আপনাদের সঙ্গে দেখ করেই যাই।' সে যে ভারতীয় 
এবং তার ঠিকানা! জানলুম কি করে সে-কথা ইচ্ছা করেই তুললুম না। 

ভাঙা ভাঙা ফরানীতে অভ্যর্থনা জানাল । 

আমি ইচ্ছে করেই মাদামের সঙ্গে কথাবার্ত। জুড়ে দিলুম | মার্পেলেস 
যে কী স্ন্দর বন্দর, কত রকম-বেরকমের রেস্তোর”, হোটেল, কত জাত- 
বেজাতের লোক কত শত রকমের বেশভৃষ। পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আরও 
কত কী! 

ইতিমধ্যে একটি ছেলে আর মেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে ঘরে ঢুকেই 
আমাকে দেখে থমকে দাড়াল। 


৬৮ 


কী মুন্দর চেহারা | আমাদের করিম মুহম্মদ কিছু নটবরটী নন, তার 

ৰ্উও করাসী দেশের আর-পাঁচটা মেয়ের মত, কিন্তু বাচ্চা! ছুটির চেহারায় 
কী অপূর্ব লাবণ্য ! কে বউবে এর! খাটি স্প্যানিশ নয়? সে দেশের 
চিত্রকরদের অয়েল পে্টিঙে আমি এ-রকম দেবশিশুর ছবি দেখেছি। ইচ্ছে 
করে, কোলে নিয়ে চুমো থাই। কিন্তু আশ্চর্য লাগল, পূর্বেই বলেছি, 
বাপের চেহারা তো বাংলা দেশের আর-পাচজন হাল-চাষের শেখের যা 
হয় তা-ই, মায়ের চেহারাও সাধারণ ফরাসিনীর মত। তিন আর তিনে 
তা হলে সব সময় ছয় হয় না । দশও হতে পারে-_-ইনফিনিটি অর্থাৎ 
পরিপূর্ণতাও হতে পারে। প্রেমের ফল তাহলে অস্কশান্ত্রে আইন 
মানে না। 

মাদাম ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ইনি তোদের বাবার দেশের 
লোক । ছেলেটি তৎক্ষণাৎ আমার কাছে এসে গ! ্রেষে দাড়াল । আমি ' 
আদর করতেই বলে উঠল, “ল্যাদ, সেত্য প্যাই-ঈ ফাতাস্তিক নেস্পা ?ঃ 
__অর্থা ভারতবর্ষ ফেনটাসটিক দেশ, সে-দেশের অনেক ছৰি সে দেখেছে, 
ভারি ইচ্ছে সেখানে যায় কিন্তু বাব! রাজী হয় নাতুমি অকৃল্‌ (কাকা), 
আমাকে নিয়ে চলো» ওই ধরণের আরও কত কী? 

আমি আবার প্রমাদ গুনলুম। কথাটা যে-দিকে মোড় নিচ্ছে ভাতে 
না মাদাম পিস্তল বের করে! 

অমুমান করতে কষ্ট হল না, আলোচনাট। মাদামের পক্ষেও অপ্রিয়। 
তিনি শুধালেন, 'মদিয়োর রুচি কিসে? চা কফি, শোকোল। ( কোকো), 
কিংবা 

আমি ব্ললুম “অনেক ধন্যবাদ ।? 

তবু শেষটায় কফি বানাতে উঠে গেলেন। 

সঙ্গে সঙ্গে করীম মুহম্মদ উঠে দীড়িয়ে সিলেটী কায়দায় পা ছুয়ে 
সেলাম করতে গেল। বুঝলুম, ওর চোখ ঠিক ধরতে পেরেছে । আমি 
দিলিটীতেই বজ্লুম, "থাক্‌ থাক্‌। 

যে ভাবে তাকাল তার থেকে বুঝতে পারলুম।, সে আমার পায়ের 
ধুলো নিতে যাচ্ছে না, সে পায়ের ধুলো নিচ্ছে তার দেশের মুঝববীদের 


৬৯ 


ধার ভিতর রয়েছেন আমার পিতৃ-পিতামহও, সে তার মাথা ঠেকাচ্ছে 
দেশের মাটির ধুলোয়, তার মায়ের পায়ের ধুলোন্ন। আমি তখন বারণ 
করবার কে? আমার কী দম্ভ! সেকি আমার পায়ের ধুলে নিচ্ছে? 

শুধু একটি কথা জিজ্বেন করলে, হুজুর কোন্‌ হোটেলে উঠেছেন ? 
আমি নাম বললুম। স্টেশনের কাছেই। 

আমি বললুম “বোস। সে আপত্তি জানাল না। তারপর হছজ্জনেই 
আড়ষ্ট হয়ে বসে রইলুম | কার মুখে কোনও কথা নেই। 

এমন সময়ে মেয়েটি কাছে এসে দাড়াল । আমি তার গালে চুমে! 
থেয়ে বললুষ। 'মধু | 

বাপ হেসে বললে, “এবারে জন্মদিনে ওকে যখন জিজ্ঞেদ করলাম ও 
কি সওগাত চায়, তথন চাইলে ইগ্ডিয়ান বর। আমাদের দেশের মেয়ের! 
বিয়ের কথ! পাড়লেই ঘেমে ওঠে ।' 

তার গলায় ঈষৎ অনুরাগের আভাস পেয়ে আমি বললুম) “মনে মনে 
নিশ্চয়ই পুলকিত হয়। আর আসলে তে! এসব বাড়ির, দেশের দশের 
আবহাওয়ার কথা । এরা পেটের অস্তথুথের কথা বলতে লজ্জা পায়, আমর 
তো৷ পাই নে।? 

ইতিমধ্যে কফি এল | মাদাম বললেন, “মেয়ের নাম সারা (9819, 
ইংরাজীতে 9৪191) )) ছেলেটির নাম রোম1। বাপ বললে, “আমলে 
রহমান । বুঝলুম লোকটার বুদ্ধি আছে। “দারা, নাম মুসলমান 
মেয়েদেরও হয়। আর রহমানের উচ্চারণ ফরাসীতে মোটামুটি রোমাই। 

বেচারী মাদাম । কফির সঙ্গে দিলে ছুনিয়ার ষঘত রকমের কেক, 
পেসটি, গাতে।, ব্রিয়োশ, ক্রোয়ার্স৷ ৷ বুঝলুম; পাড়ার দোকানের যাবতীয় 
চায়ের আ'নুষঙ্গিক বৌটিয়ে কিনে আনিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য, পেঁয়াজের 
ফুলুরিও | মাদাম বললে, “ম মারি-ইল লেজ এন। আমার স্বামী 
এগুলো ভালোবাসেন । 

ছেলেটি চেঁচিয়ে বললে, “মোয়। ওলি, মামি আমিও মা। 

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বললে; “মোয়। ওসি, মনোকল'__ 
আমিও চাচা। 


আমি আর সইতে পারলুম না। কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি সে সম্বন্ধে 
আমি সমস্তক্ষণ সচেতন ছিলুম । বোমার ভারত যাওয়ার ইচ্ছে, সারার 
ভারতীয় বরের কামনা! এসৰ আমায় যথেষ্ট কাবু করে এনেছিল, কিন্ত 
ফ্রান্সের পের! সের! মিষ্টির কাছে ফুলুরির প্রশংদা-_-এ কোন্‌ দেশের রক্ত 
চেঁচিয়ে উঠে আমাকে একেবারে অভিভূত করে দিলে । 

আমি দাড়িয়ে উঠে বললুম, “আজ তবে আমি। বালিনের টিকিট 
আমার এখনও কাটা হয় নি। সেটা শেষ না করে মনে শাস্তি পাচ্ছি নে।' 

সবাই চেঁচামেচি করতে লাগল । ছেলেটা বললে, কিন্তু “আপনি তে৷ 
এখনও আমাদের আলবাম দেখেন নি।' বলেই কারও তোর়াক! ন! 
করে আলবাম এনে পাতার পর পাত উল্টে যেতে লাগল । “এই ত 
বাজান (বাব14+ জান, সিলেটাতে বাজান ) কী অদ্ভুত বেশে এদেশে 
নেমেছিলেন, এটার নাম লুঙ্গি, না বাজান ? কিন্তু ভারি সুন্দর, আমায় 
একটা দেবে, আক্ল্‌-_চাচ1 ? বাবারটা আমার হয় না, ( মাদাম বললেন, 
চুপ? ছেলেটা বললে “পার্ট, অর্থাৎ বেআদবি মাফ কর ) এটা মা, বিয়ের 
আগে, ক্যাল্‌ এ জলি, কী সুন্দর-__ 

ওঃ! 

গুষ্টিন্নদ্দ মামাকে ট্রাম-টাসিনাসে পৌছে দিতে এল । পৃথিবীর সর্বত্রই 
সর্ধমহল্লা থেকে অন্তত একটা ট্রাম যায়-_বিনা চেঞ্জে_২স্টশন অবধি | 
বিদেশীকে সেই ট্রামে বসিয়ে দিলেই হল । মাদাম কিন্ত তবু পই পই করে 
কণাকৃটরকে বোঝালেন, আমাকে যেন ঠিক স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। 
'মসিয়ো এ ( ত.) এত্রাজের গ্রেঞঙজার, বিদেশী, (তারপর ফিস করে) 
করাসী বলতে পারেন না-_» 

মনে মনে বড় আরাম বোধ করলুম। যাক্‌, তবু একটি বুদ্ধিমতী 
পাওয়! গেল। যে আমার ফরাসী বিদ্ের চৌহদ্দি ধরতে পেরেছে । 

মাদাম, কাচ্চাবাচ্চারা চেঁচালে। “ও বূভোয়ার ।' 

করীম মুহম্মদ বললে, সেলাম সায়েব ।? 

আহারাদির পর হোটেলের লাউগ্জে বসে উপরে ঘুমুতে যাব-যাচ্ছি 
.করছি) এমন সময় করীম মুহম্মদ এসে উপস্থিত। পরনে লুঙ্গি কন্র্টার | 


৭১ 


ইয়োরোপের কোনও হোটেলে ঢুকে আপনি যি লাউঞ্জে জুতো 
খুলতে আরম্ভ করেন, তবে ম্যানেজার পুলিশ কিংবা আম্বুলেন্স ডাকবে ! 
ভাববে, আপনি ক্ষেপে গেছেন। এ-তত্বটি নিশ্চয়ই করীমের জানা ; তাই 
তার সাহম দেখে অবাক মানলুম | বরঞ্চ আমিই ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি 
ভাকে বারণ করলুম। কিন্তু তারপর বিপদ, সে চেয়ারে বসতে চায় না। 
বুঝতে পারলুম, পরিবারের বাইরে এসে করীম ঢেউপাশার “কেবীম্যা? হয়ে 
গিয়েছে । জুতো পরবে ন1 চেয়ারে বলবে না, কথায় কথায় কদম্বোস্__” 
পদচুন্বন--করতে চায়। 

বিরক্ত হয়ে বললুম, “এ কী আপদ |? 

লজ্জ। পেয়ে বললে, হুজুরের বোধ হয় অস্বস্তি বোধ হচ্ছে সকলের 
সামনে আমার সঙ্গে কথা বলতে! তা হলে দয়া করে, আপনার 
কামরায় 

আমি উন্ম। প্রকাশ করে বললুম, আদপেই না। এবং এ অবস্থায় 
শ্রীহট্টের প্রত্যেক সুসস্তান যা বলে থাকে, সেটাও জুড়ে দিলুম, 'আমি কি 
এ ঘরে “মাগনা” বসেছি, না, এদের জমিদারির প্রজা ! কিন্তু তুমি এ-রকম 
করছ কেন? তুমি কি আমার কেনা গোলাম নাকি? চল উপরে ।' 

সেখানে মেঝেতে বনে একগাল হেসে বললে, কেনা গোল্পাঃ 
নাতে কি? আমার চাচাতো ভাই আছমত ছিল আপনাদের বাপার 
চাকর। এখনও আমি মাকে যখন টাকা পাঠাই সেটা যায় আপনার 
সাহেবের (পিতার ) নামে । আমি আপনাদের বাসায় গিয়েছি, আপনার 
আম্ম আমাকে চীনের বাসনে খেতে দতেন। আমি আপনাকে চিনি 
হুজুর ! 

আমি শুধালুম; বউকে ফাকি দিয়ে এসেছ 1 

বলল, 'না, হুজুর খেতে বমে বোমার ম। আমাকে আপনার সঙ্গে দেখ 
করতে বললে । আপনাকে যে র্লাত্রে খেতে বলতে পারে নি তার জনে 
হুঃখ করলে । ও সত্যি বললে যে আপনাতে আমাতে বাড়িতে নিরিবিনি 
কথাবার্তা হবে না) তাই আপনাকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করে নি 
আসবার সময় বললে? উনি যা বলেন তাই হবে।” 


৭২ 


আমি শুধালুম, “বউ ন। বললে তুমি আসতে না? 

কিছুমাত্র না ভেবে বললে, “নিশ্চয় আসতুম। তবে ওকে খামকা 
কষ্ট দিতে চাই নে বলে না-বলে আসতুম।' বলে লাজুক বাচ্চাটির মত 
ঘাড় ফেরালে। আমার বড় ভাল লাগল । 

আমি শুধালুম। 'আমি তোমাদের বাড়িতে কি বলতে গিয়েছিলুম 
তোমর। জানলে কি করে? আর আমি শুনেছি, তোমার বউ দেশের 
লোককে তাড়া লাগায়? আমাকে লাগাল না কেন ? 

যেন একটু লজ্জা! পেয়ে বলল, তা একটু-আধটু লাগায় বটে, হুজুর? 
ওর! যে বলে বেড়ায় আমাকে বোমার মা ভেড়া বানিয়ে রেখেছে সে- 
খবরটা ওর কানে পৌছেছে । তাই গেছে সে ভীষণ চটে । আসলে ও 
বড় শাস্তপ্রকৃতির মেয়ে, ঝধগড়া-কাজিয়। কারে কয় আদপেই জানে না। * 

'আর মানুষকে কি কখনও ভেড়া বানানে যায়? কামরূপে না, 
কোনথানেই ন1।? 

“আপনি তা হলে সব-কিছু শুনে বিবেচন। করুন, হুজুর 1, 

“সতেরো বছর বয়সে আমি আর-পাচজন খালাসীর সঙ্গে নামি এই 
বন্দরে । কেন জানি নে হুজুর, হঠাৎ পুলিদ লাগালো ভাড়া । যে যার 
জান নিম্নে যেদিকে পারে দিলে ছুট। আমি ছিটকে পড়লাম শহরের 
এক অজানা কোণে । জাহাজ আর খুঁজে পাই নে।' শীতের রাতে 
খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষটাক় এক পোলের নীচে শুয়ে পড়লাম জিরব 
বলে। ঘখন হু'শ হল তখন দেখি, আমি এক হাসপাতালে শুয়ে । জরে 
সর্বাঙ্গ পুড়ে যাচ্ছে-_দেশে আমার ম্যালেরিয়া হত। তারপর কদিন 
কাটল ছ'শে আর বেছু'শে তার হিসেব আমি রাখতে পারি নি। মাঝে 
মাঝে আবছ। আবছা দেখতে পেতাম, ভাক্তারেবা কি সব বলাবলি করছে । 
সেরে উঠে পরে শুনতে পাই ওদের কেউই কখনও ম্যালেরিয়া! রোগীর: 
কড়। জ্বর দেখে নি বলে সবাই ভড়কে গিয়েছিল। আর জ্বরের ঘোরে 
মাঝে মাঝে দেখতে পেতাম একটি নার্ঁকে! সে আমায় জল খাইয়ে, 
রুমাল দিয়ে ঠোটের ছু দিক মুছে দিত! একদিন শেষরাতে কম্প দিয়ে: 
এল আমার ভীষণ জ্বর । নার্প সব কখান। কম্বল চাপা দিয়ে যখন কম্প; 


৭৩ 
স-মু"আ--শ্রেষ্ঠগল্প__€ 


থামাতে পারল ন। তখন নিজে আমাকে জড়িয়ে ধরে পড়ে রইল । দেশে 
মা যে-রকম জড়িয়ে ধরত ঠিক সেই রকম। তারপর আমি ফের বেছ'শ। 

“কিস্ত এর পর যখন জ্বর ছাড়ল তখন আমি ভাল হুতে লাগলাম। 
শুয়ে শুয়ে দেশের কথ মায়ের কথা ভাবি, আর ওই নার্সটিকে দেখলেই 
আমার জানট! খুশিতে ভরে উঠত । মে মাঝে মাঝে আমান কপালে 
হাত বুলিয়ে দিত আর ওদের ভাষায় প্রতিবারে একই কথা বলত | আমি 
ন। বুঝেও বুঝতাম, বলছে, “ভয় নেই, সেরে উঠবে ।” 

তারপর একদিন ছাড়া পেলাম । সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম বন্দরের দিকে। 
সেখানে এক জাত-ভাইয়ের সঙ্গে দেখা । অন্ত এক জাহাজের--_আমাদের 
জাহাজ্জ তো। কবে ছেড়ে দিয়েছে । নে নৰ কথা শুনে বললে, “ভাগে 
তাগো, এখুনি ভাগে | তোমার নামে হুলিয়। জারি হয়েছে, তূমি জাহাজ 
ছেড়ে পালিয়েছে! | ধরতে পারলেই তোমাকে পুলিস জেলে দেৰে |” 

'কবছর? কেজানে! এক হতে পারে, চোদ্দও হতে পারে। 
আইন-কাঙ্গুন ছজ্কুর আমি তে কিছুই জানি নে।? 

কিন্তু বাই-ই বা কোথাকস? বযে-দিকে তাকাই সে-দিকেই দেখি 
পুলিস 

'খানা-পিনার কথ! তূলব না, ছজুর, সে তখন মাথায় উঠে গিয়েছে। 
কিন্ত রাতটা! কাটাই কোথায় ?? 

“শেষটায় শেষ অগতির গতির কথা মনে পড়ল । হাসপাতাল ছাড়ার 
সময় সেই নার্নটি আমার সঙ্গে শেকহ্যাণ্ড করে দিয়েছিল একখান চিরকুট । 
তখনও জানতাম না, তাতে কী লেখা । বাকে দেখাই সে-ই হাত দিয়ে 
বোঝায়--আরও উত্তর দিকে যাও। শেষটায় একজন লোক আমাকে 
একটা বড় বাড়ির দেউড়ি দেখিয়ে চলে গেল । 

“সেখানে ঘণ্টাতিনেক দাড়িয়ে থাকতে দেখে রোদের পুলিস আমাকে 
সওয়াল করতে লাগল । হাসপাতালে ছু মাস ওদের বুলি শুনে শুনে 
যেটুকু শিখেছিলাম তার থেকে আন্দাজ করতে পারলাম ওদের মনে সন্দেহ 
হয়েছে, আমি কোনে কুমতলবে ওথানে দাড়িয়ে আছি-_-আর হবেই ন৷ 
বা কেন? বুঝলাম, রাশিতে জেল আছেই! মনে মনে বললাম, কা 


৭8 


আর করি, একটা আশ্রয় তো চাই। জেলই কবুল । চাচা! মামু অনেকেই 
তে। লাঠালাঠি করে গেছেন, আমি না হয় না-করেই গেলাম । 

'এমন সময় নেই নার্সটি এসে হাজির। পুলিসকে কি একট৷ সামান্য 
কথা বলে আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেল তার ছোট্ট ফ্ল্যাটে-_পুলিস 
যেভাবে তাকে সেলাম করে রা-টি না কেড়ে চলে গেল তার থেকে 
আন্দেশ। করলাম পাড়ার লোক ওকে মানে। 

আমাকে খেতে দিল গরম হৃধের সঙ্গে কাচা আগা! ফেটে নিয়ে। 
বেছ'শির ওক্তে কি খেয়েছি জানি নে, হুজুর, কিন্তু ছ'শের পর দাওয়াই 
হিসেবেও আমি শরাব খাই নি। তাই “বরাপ্ডি”্টা বাদ দিল। 

রাতে খেতে দিল রুটি আর মাংসের হালকা ঝোল। চারটি ভাতের 
জন্য আমার জান তখন কী আকুলি-বিকুলি করেছিল আপনাকে কখনও 
সমঝাতে পারব না, হুজুর |? 

জাহাজের খালাসীদের স্মরণে আমি মনে মনে বললুম, 'সমঝাতে হবে 
[1 বাইরে ৰললুম, “তারপর ?? 

একটুখানি ভেবে নিয়ে বললে, “সব কথা বলতে গেলে রাত কাবার 
হয়ে বাবে, সায়েব। আর কী-ই বাহবে বলে। ও আমাকে খাওয়ালে 
পালে আশ্রর দিলে-_ বিদেশে বিভূইয়ে যেখানে আমার জেলে গিয়ে ' 
পাথর ভাঙার কথা'-_- 

“এ-সব কথ। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে না বললে কি তার দাম কমে যাবে! 

দাম কমবে না বলেই বলছি হুজুর, স্বজন নার্সের কাম করে-_ 

আমি শুধালুম, “কি নাম বললে ?' 

'একটু লঙ্জ। পেয়ে বললে, 'আমি ওকে সুজন বলে ভাকি-_-ওদের 
ঠাষায় সুঙ্জান। 

বুঝলুম ওট] ফরাসী 90201)06, এবং আর বুঝলুম। যে জাতের লোক 
মাদের দেশে মরমিয়। ভাটিপ্লালী রচেছে তাদেরই একজনের পক্ষে 
“মের এটুকু পরিবর্তন করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর! কিছু কঠিন কর্ম নয় । 
তখানি স্পর্শকাতরতা! এবং কল্পনাশক্তি ওদের আছে । 

আমি শুধালুম। “তারপর কি বলেছিলে ?) 


৭৫ 


বললে; “সুজন নার্সের কাম করে আমাকে যে এক বছর পুষেছিল তখন 
আমি তার বাড়ির কাজ করেছি । বেচাত্ীকে নিজের রান্না নিজেকেই 
করতে হত-_হাসপাতাল থেকে গতর খাটিয়ে ফিরে আসার পর । আমি 
'পাক-রনুই করে রাখতাম । শেষ দিন পর্যন্ত সে আপত্তি করেছে কিন্ত 
আমি কান দিই নি।' 

আমি শুধালুম, “কিন্ত তোমার পাড়ার পুলিস কিছু গোলমাল করলে 
না? 

একটুখানি মাথ! নিচু করে বললে, “অন্য দেশের কথ! জানি নে, হুজুর ৷ 
কিন্ত এখানে মহববতের ব্যাপারে এরা কোন রকম বাগড়া দিতে চায় না৷ 
আর এর! জানত যে, ওর বাড়িতে ওঠার এক মাস পরে ওকে আমি 
বিয়ে করি। 

“কিন্ত হুজুর আমার বড় শরম বোধ হত; এ যে ঘর-জামাই হয়ে 
থাকার চেয়েও খারাপ ! কিন্ত করিই বা কী? 

“আল্লাই পথ দেখিয়ে দিলেন। 

সুজন আমাকে ছুটি-ছাটার দিনে সিনেমা-টিনেমার় নিয়ে যেত। 
একদিন নিয়ে গেল এক মস্তবড় মেলাতে | সেখানে একটা ঘরে দেখি? 
নানা দেশের নানা রকম তাত জড় করে লোকজনকে দেখানে! হচ্ছে 
তাতগুলো! কি করে চালানে! হয়, সেগুলে৷ থেকে কি কি নকৃশার কাপড় 
বেরোয় । তারই ভিতর একটা দেখতে পেলাম, অনেকটা আমাদের 
দেশেরই তাতের মত । 

আমার বাপ-ঠাকুরদা জোলার কাজ করেছে, ফসল ফলিয়েছে, 
দরকার হলে লাঠিও চালিয়েছে! 

“অনেক ইতি-উতি কিন্ত-কিস্ত করে স্থজনকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঠাতের 
দাম কত ?” বুঝতে পারল, ওতে আমার শখ হয়েছে । ভান্নী খুশী হল 
কারণ আমি কখনও কোন জিনিস তার কাছ থেকে চাই নি। বললে, 
ওটা বিক্রির নয়, কিন্তু মিল্্রী দিয়ে আমাকে একটা গড়িয়ে দেবে । 

“ও দেশে ধুতি, শাড়ি, লুঙ্গি গামছা কিনবে কে? আমি বানালাম 
ক্কাফ? কন্কর্টার। দিশী নকৃশায়। প্রথম নকশার আধখানা ফুটভে-না 


৭৬ 


ফুটতেই সুজনের কী আনন্দ! স্কাফ তাত থেকে নামাবার পূরেই সে 
পাড়ার লোক জড় করে বলেছে, আজগুবি এক নৃতন জিনিল দেখাবে 
বলে। সবাই পই পই করে দেখলে, অনেক তারিফ করলে। সুঙ্খরনর 
ডবল আনন্দ, তার স্বামী নিক্ষর্া, ভবঘুরে নয় । একটা হুমুরী, গুণী লোক ।' 

“গোড়ার দিকে পাড়াতে, পরে এখানে-সেখানে বিস্তর স্কার্ফ বিক্রি 
হল। বেশ ত্ব'পয়সা আপতে লাগল । তারপর এখানকার এক তাতীর 
কাছে দেখে এলাম কী করে রেশমের আর পশমের কাজ করতে হয়। 
শেষটায় সুঙ্গন নিয়ে এল আমার জন্য বহুত কেতাবৰ, সেগুলোতে শুধু 
কাশ্মীরী নকৃশা! নয়, আরও বহুত দেশের বহুত রকম-বেরকমের নকশাও 
আছে। তখন যা পয়লা! আসতে লাগল তারপর আর সুজনের চাকরি 
না করলেও চলে । সেই কথ! বলতে সে খুশির সঙ্গে বাজী হল। শুধু 
বললে, য্দি কখনও দরকার হয় তবে আবার হাসপাতালে ফিরে যেতে 
পারবে । রোমশ তখন পেটে । সুজন সংসার সাজাবার জন্য তৈরি । 

“আপনি হয়তো ভাবছেন আমি কেন বুড়ীর কথ! পাড়ছি নে। বলছি, 
হুজুর, রাতও অনেক ঘনিয়ে এসেছে, আপনি আরাম করবেন ।' 

“আপনি বিশ্বাস করবেন না দু-পয়স। হতেই স্বজন বললে, “তামার 
মাকে কিছু পাঠাবে না?” আমি আগের থেকেই বন্দরে ইমানদার লোক 
খুঁজছিলাম | রোমশার মা-ই বললে, ব্যাঙ্ক দিয়েও নাকি দেশে টাকা যায় ।' 

মানে মানে বুড়ীকে টাকা পাঠাই। কখনও পঞ্চাশ কখনও এক 
শেো। ঢেউপাশাতে পঞ্চাশ টাকা অনেক টাক । শুনি, বুড়ী টাক দিয়ে 
গায়ের জন্য জূম্মা-ঘর বানিয়ে দিয়েছে । খেতে পরতে তে। পারছেই 1 

টাকা দিয়ে অনেক কিছুই হয় দেশে বলে “টাকার নাম জয়রাম। 
টাকা হইলে সকল কাম”- কিন্তু হুজুর) টাকা দিয়ে চোখের পানি বন্ধ 
কর। যায় না। এ-কথা আমি খুব ভাল করেই জানি। বুড়ীও বলে 
পাঠিয়েছে, টাকার তার দরকার নেই, আমি যেন দেশে ফিরে যাই ।' 

“আমার মাথায় বাজ পড়ল, সায়েব, যেদিন খবর নিয়ে শুনলাম, দেশে 
ফিরে যাওয়া মোটেই কঠিন নয় । কিন্তু ফিরে আসা অসম্ভব । আমি 
এখন আমার মহল্লার মুরুববীদের একজন । থানার পুলিসের সঙ্গেও 


৭৭ 


আমার বত ভাব-সাব হয়েছে। আমার বাড়িতে প্রায়ই তার! দাওয়াত- 
ফাওয়াত খায়। তার! প্যারিস থেকে পাক খবর আনিয়াছে, ফিরে আসা 
অসস্তব। মুসাফির হয়ে কিংবা খালামী সেজে পালিয়ে এলেও প্যারিসের 
পুলিস এসে ধরে নিয়ে দেশে চালান দেবে। এমন কি; তারা আমাকে 
বারণ করেছে আমি যেন ওই নিযে বেশি নাড়া-চাড়া না করি প্যারিসের 
পুলিস যদি জেনে যায় আমি বিনা পাসপোর্টে এদেশে আছি তাহলে তারা 
আমাকে মহল্লার পুলিসের কদর দেখাবে না। এ দেশ থেকে তাড়িয়ে 
দেবে। আপনি কি বলেন, হুজুর ?, 

ডাহা মিথ্যে বলি কি প্রকারে? আমার বিলক্ষণ জান। ছিল, ফ্রান্স 
চায় টুরিস্ট সে দেশে এসে আপন গাঁটের পয়সা খরচ করুক, কিন্তু ভার 
বেকারির বাজারে কেউ এসে পয়সা কামাক এ-অবস্থাটা সে যে করেই 
হোক রখবে। 

আমি চুপ করে রইলুম দেখে করীম মুহ্মদ মাথ! নীচু করে দীর্ঘনিশ্বাস 
ফেললে । 

অনেকক্ষণ পর মাথা তুলে বললে, রোমার মা! আমার মনের সব 
কথ! জানে | দেশের লোক ভাঙুচি দেয়, আমি ভেড়া বনে গিয়েছি 
এ-কথা বলে--এ-সব শুনে সে তাদের পছন্দ করে না, কিন্ত মাঝে মাঝে 
ভোরের ঘুম ভেঙে গেলে দেখি সেও জেগে আছে । তখন আমার কপালে 
হাত দিয়ে বলে, “তোমার দেশে বদি যেতে ইচ্ছে করে, তবে যাও। 
আমি একাই ৰাচ্চ! ছটোকে সামলাতে পারব।৮ এ-সব আরস্ত হল, ও 
নিজে ম। হওয়ার পরের থেকে | 

“আজ আপনার কথা তুলে বললে, “এ-ভদ্রলোকের শরীরে দয়ামায়া 
আছে। আমার ছেলেমেয়েকে কত আদর করলেন।” আমি বললাম, 
“সুজন, তুই জানিস নে, আমাদের দেশের ভদ্রলোক আমাদের কত 
আপনজজন। এই যে ভদ্রলোক এলেন, এর সায়েব ( পিত1 ) আমার 
বাবাকে “পুতী” ( ছেলে ) ৰলে ভাকতেন। এ দেশের ভদ্রলোক তো 
গরিবের সঙ্গে কথা কয় না।” আপনি-ই বলুন, হুজুর 1 

তার “আপনজন?! ওইটুকুই বাকি ছিল! 


৭৮ 


মুজনই আজ বললে, “ঙর কাছে গিয়ে তুমি হুকুম নাও। উনি” 
যা বলেন তাই হবে ।” এইবার আপনি হুকুম দিন, হুজুর |, 

আমি হাত জোড় করে বললুম, "তুমি আমায় মাপ কর।' 

সে আমার পায়ে ধরে বললে, 'আপনার বাপ-দাদা আমার বৰাপ- 
দাদাকে বিপদে-মাপদে সলা দিয়ে হুকুম করে বাঁচিয়েছেন। আজ আপনি 
আমায় হুকুম দিন ।' 

আমি নির্লজ্জের মত পূর্ব-এতিহ্া অস্বীকার করে বললুম, “তুমি আমায় 
মাপ কর।; 

অনেক কান্নাকাটি করল । আমি নীরব। 

শেষরাত্রে আমার পাকে চুমো খেল । আমি বাধ! দিলুম না। বিদায় 
নিয়ে বেরবার সময় দোরের গোড়ায় তার বুক থেকে বেরল; “ইয়া আল্লা ! 


॥ গাঁজা ॥ 


কিংব। গুলও বলতে পারেন । সদাশয় ভারত সরকার যখন আমাকে 
কিছুতেই 'পল্নপ্্রী' 'পদ্মভৃষণ' জাতীয় কোনো উপাধিই দিলেন না, এবং 
শেষ পর্যন্ত “শিশির ভাছুড়ী পেয়েও সেটি বেয়ারিং চিঠির মতো ফেরত 
দিলেন তখন হাজর! রোডের রকৃফেলারর!1 ( অর্থাৎ যারা রকে অন্তত 
এক লক্ষ গুল মেরে লক্ষপতি রকৃফেলার হয়েছেন ) সাড়ম্বরে আমাকে 
'গুলমূগীর? উপাধি দিলেন ! 

হালের কথা | ব্ষার ছদ্মবেশ পরে শরৎ নেমেছেন কলকাতার 
শহরে | বাড়ির আঙিনায় হাটুজল, রাস্তায় কোমর । সেই জল ভেঙে 
ভেঙে ভিজে জগবম্প হয়ে তাবৎ “ফেলাররাাই, উপস্থিত। এসেই 
ৰসলেন টেলিফোনটি মাঝখানে রেখে । তারপর সবাই আপন আপন 
আপিস-আদালত কাঁরখান। শুড়িখানাতে খবর পাঠালেন, “কী ভয়ঙ্কর জল 
দাড়িয়েছে রাস্তায়। বাড়ি থেকে বেরনে সম্পূর্ণ অসম্ভব । নৌকে। ভাড়ার 
চেষ্টা করছি। আপিসে আজ না আসতে পারলে কয়েকটা! ভিজিটার 
ফিরে যাবে। সর্বনাশ হবে| কি করি বলুন তো।, 


৭৯ 


মশাদার এরকম সকরুণ বেদনার গন্ধটালা আপিস-গ্রীতি-এক পূর্বে 
আমি কখনো দেখিনি। রকে আসতে তাকে বুক ভেজাতে হয়েছে, 
এখন তার চোখ ভেজা অথচ তার বাড়ি থেকে যে দিকে আপিস সেদিকে 
যেতে হাটু পর্যস্ত ভেজাতে হয় না। 

আমাদের রকটি সংমিশ্রিত ; অর্থাৎ ছু চারটি চিংড়ি সদস্ত/ও আছেন। 
আবার ফণি-কাকার বয়স ষাট পেরিয়েছে, গুড়গুড়ির বয়স পাঁচ পেরোকপনি। 
এর! মাঝে-মধ্যে থাকলে আমাদের একটু নামলে সুমলে কথ। কইতে হয়। 

মশাদার প্যাচটা দেখে টেটেন মারলে ভবল প্যাচ । অজন সেনকে 
বললে, 'অজনদা, আমার আপিসকে ঝপং করে একটা ফোন্‌ করে দিন 
তো,আমি আপিসে বেরিয়ে গিকেছি। পৌচেছি কিন1।' 

অজনদা আরো! তৈরী মাল। নম্বর পেয়ে খবরটা দিয়ে কি একটা 
শুনে আতকে উঠে বললে, কী বললেন? পেৌঁঁছয়নি? বলেন কি 
মশাই? বড় হুশ্চিন্তায় ফেললেন তো 1) 

নিশ্চিন্ত হওয়! গেল । 

অজনদার নিজের কোনে ভাবন। নেই । তার আপিসে মাত্র একটি 
কল। সেটা সে প্রায়ই আপিস ছাড়ার পূর্বে বে-কল করে আসে । 

এবারে আমরা শান্তমনে সমাহিত চিত্তে কর্তব্য কর্মে মন দিলুম। 

অজন বুঝিয়ে বলে, “আলম অর্থাৎ ছুনিয়। জয় করে পেলেন বাদশ' 
আওরঙ্গজেব এ আলমগীর নাম । সেই ওজনে আপনি গুলমগীর :' 

আমি বললুম 'হাসালি রে হাসালি। এ আর নৃতন কি ানালি? 
প্রথম আমি পরীস্তানে ছিলুম গুল্-ই-বকাওলী, তারপরে লগুনে নেমে 
হলুম ডিউক অব গুলস্টার, তারপর ফ্রান্সে হলুম ছ্ গুল, তারপর 
পাকিস্তানে হলুম গুল মুহম্মদ, এখানে এসে হলুম “গুলজারিলাল নন্দ । 
তা ভালো, ভালো | গুলমগীর | বেশ বেশ। 

বড়দ! উপর থেকে রকে নামেন ক্ধচিংকম্মিন। বললেন, 'ল্যাটে-_ 
ল্যাটে বুঝলে, হে অজন | বড়দার মুখ হামেহাল পানেক্ন পিকে ভতি। 
তারই মহামূল্যবান এক ফৌটা পাছে বরবাদ হয়, দেই ভয়ে তিনি 
আকাশের দিকে মুখ তুলে, স্বর্গের দিকে ঠোট ছুটি সমান্তপ্লাল করে সেই 


৮৪5 


হুটিকে মুখে ভিতরের দিকে বেঁকিয়ে দিয়ে “ত? “দাঁকে “? ড? করে কথা 
বলেন- _অল্পই | 

তার এসব কলকায়দ কর! সত্বেও আমর! তখন পাখা, খবরের কাগজ 
হাতের কাছে বা পাই তাই দিয়ে মুখ ঢাকি। আমি স্বয়ং ছাঁত। ব্যবহার 
করি। 

অজনদ1 বললে, “এবার আপনি আপনার--উপাধি-প্রাপ্তির সন্মানার্থে 
একটি সরেেদ গুল ছাড়ুন তো, চাচা 1” 

মশ। বললে, কিংবা গাজা 1) 

আমি বললুম, “ঘদি ছাড়ি গাজার গুল ?? 

ঘেপ্টু বললে; “চাচাকে নিয়ে তোরা পারবিনে রে, ছেড়ে দে।” ঘেশ্টুর 
পাড়াদত্ত নাম ঘণ্টু। আমি নাম দিয়েছি ঘেপ্টু। যবে থেকে আমার 
চর্মরোগ হয়েছে । ঘেপ্ট চর্মকোগের জাগ্রত দেবী। বিশ্বে না হলে 
চলস্তিক। খুলে দেখুন । 

আমি বললুম, "তবে শোন। কিন্তু তার পূর্বে টেটেনকে সাবধান 
করে দিচ্ছি, সে যেন আমারগাজার গুল নিয়ে কোন সো সিয়ো-পোলিটিকো- 
ইকনমিক স্টাটিস্টিক্‌্স্‌ সঞ্চয় না করে । সে আজ কাল এ নিয়ে মেতেছে। 

টেটেন নানাবটি কেস পড়ছিল । বললে, 'আপনি কিস্ম্ুটি জানেন 
ন। চাচা। আপনার জান! নেই, এ সংসারে মিথ্যাবাদী আছে এবং তার 
চেয়ে বড় মিথ্যাবাদীও আছে এবং সর্বশেষে স্টাটিস্টিশিয়ানদের কথ। 
ভুলবেন না। ওদের মাল নিয়েই তে। সরকার গুল মারে । নিত্যি নিতা-__. 
কাগজে দেখতে পান ন। 1? আমি আপনার দোরে যাৰ কেন ? 

“তবে শোন। নিশ্চিন্ত হয়ে বলি।? 

পার্টিশনের বছর খানেক পরের কথা। আমার মেজদা ওতর 
বাংলার কোথায় যেন কি একট। ডাঙর নোকরি করে । তার সঙ্গে দেখা । 
আমরা এখন ছুই তিম্ন ভিন্ন স্বাধীন দেশের অধিবাসী | কিন্তু আমাদের 
ভিতর কোনে! ঝগড়া-কাজিয়! নেই । এই আ্যাদ্দিন বাদে'নেহরুজী আর 
আইয়ুব খান সায়েব সেটা বুঝতে পেরে আমাদের শুভ-বুদ্ধি এক্রেয়ার 
করেছেন। তা সেযাকগে। 


৮৯ 


হিন্দুস্থানের বিস্তর দরদ-ভরা! তত্বতাবাশ করে মেজদা শুধলে; 
“তোদের দেশে গাজার কি পরিস্থিতি ?, 

আমি একগাল হেসে বললুম, “স্বরাজ পেয়ে বাড়তির দিকে ।” 

মেজদ! আশ্চর্য হয়ে শুধালে, “সে কিরে ? কোথায় পাচ্ছিস? আমি 
তে। চালান দিতে পারছিনে |” 

আমিও অবাক । শেষটায় বোঝা গেল দাদ ছিলিম মেয়ে শিবনেত্র 
হওয়ার সত্যিকার গাঁজার কথ। বলছে । আমি কি করে জানবো 1? আমি 
পাষণ্ড বটি-__দাদ] ধর্মভীরু, সদাচারী লোক। 

দাদা বললে, “শোন ।” 

পার্টিশনের ফলে মেল। অচিস্তিত প্রশ্ন, নান। ঝামেল। মাথ! চাড়। দিয়ে 
খাড়। হয়ে উঠলে। এবং তাব্সই সর্বপ্রধান হয়ে উঠে ফ্লাড়ালে। গণ্ভিকা-সমস্যা | 

গাজার এত গুণ আমি জানতুম না। শুনতে পেলুম; স্বয়ং জাহালীর 
বাদশ। নাকি গাঁজা খেয়ে উভয়ার্থে অচৈতন্ত হয়েছিলেন । সেটা নাকি 
তুজ.ক-ই-জাহাগীরীতে আছে । গাঁজা ছাড়েন শেষটায় তিনি মনের হুঃখে। 
এর দাম অতি শস্তা বলে সেটা পোষায় না রাজা-বাদশাদের রাজসিক 
জাত্যভিমানে। সে কথা যাক্‌। 

অ"মার এলাকায় পৃথিবীর বৃহত্তম গাজার চাষ এবং গুদোম | ভারতে 
গাজার চাষ প্রায় নেই। আমি এসব তত্ব জানতুম না_-সমস্ত জীবন 
কাটিয়েছি আসামে, বরঞ্চ চায়ের খবর কিছুটা রাখি । এসব গুহা রহস্তের 
খবর দিয়ে গাজা ফার্মের ম্যানেজার আমাকে একদিন হঃনংবাদ দিলে, 
সে ক্ছরের গাঁজ। গুদোমে পচে বরবাদ হব হব করছে। ইগ্ডয়াতে 
চালান দেবার উপায় নেই-_অথচ সেখানেই তার প্রধান চাহিদা । 

আমি শুধালুম, “কেন? তুমি নিজে খাও না বলে অন্য লোকেও 
খাবে না? এতো বড়জুলুম!” 

দাদ বললে, “কী জ্বালা? আমি শ্্রীঘর বাদ পছন্দ করিনে; তাই 
বলে আমি জেল তুলে দিয়েছি নাকি 1? সাধে কি বলি তুই একটি চাইল্ড 
প্রতিজি-_-ওয়াগ্ডার চাইল্ড- চল্লিশ বছরে তোর যা জ্ঞান-গম্যি হল, 
আল্লার কুদরতে পাচ বছর বয়সেই সেটা তৃই অর্জন করে নিয়েছিলি।” 


৮২ 


আমি চটে গিয়ে বললুম। “আর তুমি বিষ্াল্লিশে 1৮ দাদ! আমার 
চেয়ে ছ'বছরের বড়। 

দাদা বললে, “তোর রসবোধ নেই। ঠাণ্ডা হ।” 

রকফেলারদের দিকে তাকিয়ে বললুম, “এসব মাইনর বর্ডার ইন্সিডেপ্ট 
আমাদের ভিতরে কালে-কশ্মিনে হয়, কিন্ত মিটমাট হয়ে যায় “আকাশ- 
বাণী, 'ঢক্কা-ডিংভমে? পৌঁছবার পূর্বেই 1 

অজনদ] শুধোলে, 'টক্কা-ভিংভম্ট1 কি চাচা ? 

£ডিংডন্? মানে জগঝম্প। বিরাট ঢাক? যার থেকে ইংরিজি “টম্টম্‌! 
“মটমিং শব্দ এসেছে! অর্থাৎ ঢাকার বেতার কেন্দ্র। তারপর শোন, 

দাদা বললে, “তয়হ্কর পরিস্থিতি | ভারতের ষাট হাজার সন্গ্যাসী 
নাকি রাষ্ট্রপতির কাছে সই, হাতের টিপ দিয়ে আবেদন জানিয়েছেন, 
গাজার অভাবে তাদের নানাবিধ কষ্ট হচ্ছে, আত্মচিস্তার ব্যাঘাত হচ্ছে? 

আমি গোশ শা করে বললুম, “দেখো দাদা, পিতা গত হওয়ার পর 
অগ্রজ পিতৃতুল্য। কিন্তু তুমি যদ আমাদের সন্স্যাসীদের নিয়ে মস্কর! 
করো? 

কাধ দিয়ে দাদা বেদনাতুর কে বললে, “দেখ ভাই, তুই কখনো 
দেখেছিস ঘে আমি কাউকে নিয়ে--” 

এবারে আমি বাধ! দিয়ে বললুম “থাক্‌ থাক্‌ | তুমি বলে।।” দাদার 
এঁ গলাটা! আমি বড়ই ডরাই। ওটা দাদ! ব্যবহার করে পঞ্চাশ বছরে 
একবার | দাদার বয়স তখন বিয়লাল্লিশ ৷ 

দাদ] তো৷ আমাকে মাফ করবার জন্য তৈরী । চশমার পরকল। ছুটো। 
পুছে নিয়ে বললে, “পূর্বেই বলেছি, পার্টিশনের ফলে বিস্তর অভাবিতপূর্ব 
সমস্যা দেখ! দিল-_এটা তারই একটা । পার্টিশনের পূর্বে সাস্তাহারের 
গাজ। যেত হরিছ্বারে অক্রেশে, ব্যাঙালোরের বিয়ার আসত ঢাকায় লাফিয়ে 
লাফিয়ে । এখন মধ্যিখানে এসে টাড়ালো এক ছশমন্‌। জিনীভাতে কৰে 
কে আইন করেছিল বিশ্বজনের কল্যাণার্থে_কল্যাণ না কচু-_তার সারমর্ম 
এই; আপন দেশে তুমি সার্বভৌম রাজা, য৷ খুশী করতে পারো যত খুশী 
ততে। আফিঙ ফলিয়ে বিক্রি করতে পারো গাজ। চালাতে পারো- কিন্ত 


৮৩ 


ভুলো না, আপন দেশের চৌহদ্দীর ভিতর। এক্সপোর্ট করতে গেলেই 
চিত্তির। তখন জিনীভার অনুমতি চাই । যেমন মনে কর, ফিনঙ্যাণ্ড জিনীভার 
মারফতে তোদের কাছে চাইলে হু'মণ আফিঙ--ওষুধ বানাবার জন্য । 
জিনীভ। সন্দেহের গোয়েন্দা লাগাবে জানবার জন্যে, সত্যি ওষুধ বানাবার 
জন্য ফিনল্যাণ্ডের অতথানি প্রয়োজন কি না) কিংবা ওরি খানিকটে আক্র। 
দরে বাজারে বিক্রি করে, দেশের লোককে আফিঙখোর বানিয়ে হা'পয়স। 
কামিয়ে নিতে চায়। কারণ কোনো! কোনে দেশ নাকি বিদেশের ওষুধ 
বানানেওলাদের সঙ্গে সড় করে ওষুধের অছিলায় বেশী বেশী হশীশ, 
ককেইন রপ্তানি করে সে সব দেশের ব্ছ লোকের সর্বনাশ করেছে। 
আইনগুলে। আমি পড়ে দেখিনি তাই ঠিকঠিক বলতে পারবো না__ 
নির্যাসটি জানিয়েছিল, গাজা ফার্মের ম্যানেজার । এখন নাকি জিনীভার 
পারমিশন চাই, সেটা পেতে কতদিন লাগবে তার ঠিকঠিকান! নেই; 
কতখানি পাঠানে। যাবে তার স্থিরত৷ নেই। 

ইতিমধ্যে উপস্থিত হুল আরেক সঙ্কট । 

গেল বছরের গাজাতে গুদোম ভতি | এদিকে হাল বছরের গাঁজ। 
ক্ষেতে তৈরী। তুলে গুদোমজাত করতে হবে। নূতন গুদোম এক 
ঝটিকায় তৈরী কর! যায় না-শেষটায় হয়তো জিনীভা কোনে! পারমিট 
দেবে না, কিংব। এত অল্প দেবে যে বেবাক ব্যবসাই গুটোতে হবে । নয় 
গুদোমের কথাই ওঠে না। 

তখন নান। চিন্তা) বু ভাবন1, ততোধিক কর্তুপক্ষকে আলোচনা করে 
স্থির কর! হুল, “গেল বছরের গাঁজা পোড়াও-_” 

আড্ডার কেউই গঞ্জিকা রলিক নয় । তবু সবাই-_-টেটেনদি ছাড়া 
এক কণ্ঠে হায় হায় করে উঠলো । খাই আর না-ই খাই একটা ভালো 
মাল বরবাদ হতে দেখলে কার না দুঃখ হয়? রায়টের সময় পার্ক 
সার্কাসের মদের দোকানে বোতল ভাঙা হচ্ছে দেখে এক টেসম্পারেন্স 
পার্্রীকে পর্যস্ত আমি শোক করতে দেখেছি । 

স্টাটিস্টিশিয়ান টেটেন বললে, “আপনারা! এতে এমন কি নূতন শোক 
পাচ্ছেন? মাঞফ্চিনর। যে হ'দিন অন্তর অন্তর অঢেল গম লিট্রিলি আযাও 


৮৪ 


মেট্ফরিক্রি দরিয়ায় ভাসিয়ে দেয় সে বুঝি জানেন না ? টেটেনই আমাদের 
মধ্যে ইংরিজিতে এম-এ | ওর উচ্চারণ আমাদের বুঝতে কষ্ট হয়। ইস্তক 
ইংরেজেরও | 

সবাই হ্যা হ্যা বলার পর আমি গল্পের খেই ধরে এবং সিগারেট ধরিয়ে 
বললুম। 'তারপর দাদ! বললে, “গুদোমেতে নূতন মাল পোরা হৰে। 
ম্যানেজারকে বললুম, আমি অমুক দিন যাবো, সেদিন পুরনো! মাল 
পোড়ানো হবে । কারণটা তাকে আমি আর বললুম না1। সেই যে-তুই 
জানিস নাকি ?_বড়দা তোকে বলেছেন, তিনি যখন জাপানী বোমার 
সময় ট্রেজারি অফিসার ছিলেন তখন হুকুম এল, জাপানী বোমা পড়লে, 
ব্যাপক বিপদের সম্ভাবনা দেখ! দিলে ট্রেজারির তাবং কারেন্সি নোট 
পুড়িয়ে ফেলবে? তাইজাগ না কোথাকার এক স্ুবুদ্ধিমান একটি মাত্র 
বোমা পড়া মাত্রই সরকারকে খবর দিলে সে সৰ নোট পুড়িয়ে ফেলেছে। 
তারপর ছু'বছর বাদে তাজ্জবকী বাত বাজারে সে সব নোটের দর্শন পাওয়া 
যেতে লাগল। পোড়ায়নি। সরিয়ে ফেলেছিল। আমার তাই ভয়, 
গাজার বেলাও এ যদি না হয়। 

আগে-ভাগে দিনক্ষণ দেখে, অর্থাৎ টুর প্রোগ্রাম যথা-বথস্থানে পাঠিয়ে 
দিয়ে বেরলুম গাজা পোড়াতে 1৮ 

আমি আতংকে উঠে বললুম, “কি বললে ?” 

দাদা ঈষৎ চিস্তা করে বললে “হ্যা, তাতো। বটেই । 'গাজ। পোড়নে' 
কথাটার অর্থ 'গাজ। থাওয়া”ও হয় । তাই শুনেছি, ছোকরা নাতির হাতে 
সিগারেট দেখে যখন ঠাকুরদা গম্ভীর কে তাকে বললেন, “জানিস; 
সিগারেট মানুষের সব চেয়ে বড় শত্রু, সে তখন শাস্তকণ্ঠে উত্তর দিয়েছিল, 
'তাইতে। ওকে পোড়াতে যাচ্ছি ।; 

মোকামে পৌঁছে দেখি বিরাট ভিড়। বিশখান। গায়ের বাছাই 
বাছাই লোক জমায়েত হয়েছেন সেখানে গাজা পোড়ানে। দেখবেন বলে। 
আমি তো অবাক । বাঁশ-পাতা পোড়ানো আর গাঁজা-পাতা পোড়ানোতে 


এমনকি তফাৎ বে ছুনিয়ার লোক হন্দমুদ্দ হয়ে জমায়েত হবে? তা সে 
যাকগে। 


৮৫ 


হুদে! ছদে। গাজ। ওজন করে হিসেৰ মিলিয়ে ভাই ভাই করে মাঠের 
মধ্যিখানে রাখা হল। তারপর চোখের জল মুছতে মুছতে ম্যানেজারই 
মুখাগ্সি করলে । সে-তার জনক- একে দিয়ে তার বৰ পয়স। কামাবার 
কথা ছিল। 

সেদিন বাতাসট। ছিল একটু এলোমেলো । গীজার ধুয়ো ক্ষণে 
এদিক বার, ক্ষণে ওদিক যায় । আর তখন দেখি অবাক কাণ্ড! পাতা 
পোড়াবার সময় যেদিকে ধু'য়ো। যায় মানুষ সেদিক থেকে সরে যায় । আজ 
দেখি উল্টা বাং। জোয়ান-বুড়ে। মেয়েমদ্ধে-স্থ্যা, কয়েকটি মেয়েছেলেও 
ছিল__ছোটে সেদিকে । 

আর সে কী দম নেওয়ার বহর ! সাই সীই শব্দ করে সবাই নাভিকুগুলী 
পর্যস্ত ভরে নিচ্ছে সেই নন্দন-কাননের পারিজাত-পাপড়ি পোড়ানোর 
খুশবাই-__-অন্তত তাদের কাছে তাই। আমার নাকে একবার একটুখানি 
ঢোকাতে আমি তো কেশে অস্থির। আর ওরা ফেলছে কী পরিতৃপ্তির 
নিশ্বাস__“আঃ, আঃ?| কেউ খাড়া হয়ে দাড়িয়ে, কোমরে ছ'হাত রেখে, 
আকাশের দিকে আকর্ণব্যাদন মুখ তুলে নাসা-রন্ধর স্বীত করে নিচ্ছে এক 
একখান] দীর্ঘ দম, আর ছাড়ছে দীর্ঘতর “আ:--1) শব্দ] কেউ বা 
মাটিতে বসে ক্যাবলাকাস্তের মতো মুখ হী করে আন্ত মার্গ দিয়ে যৌগিকধুম 
গ্রহণ প্রশস্ততর মনে করছে। 

হঠাৎ হাওয়া ওলটালো।। তখন পড়িমড়ি হয়ে সবাই ছুটলে 
সেদিকে । আমি ম্যানেজার, সেরেশতাদার ততোধিক পড়িমড়ি হয়ে 
ছুটলুম অন্যদিকে । ছু'একটি চাপরাসী দেখি মনস্থির করতে পারছে না! 
তাদের আমি দোষ দিইনে। 

ভেবে দেখও পৃথিবীতে এ ঘটন! ইতিপূর্বে আর কখনো হয়েছে? গাঁজা 
তো। আর কোথাও কলানেো হয় না। তারই মণ মণ পুড়িপ়ে একচ্ছত্র 
গঞ্জিকাবজ্ঞ। চতুর্দিকে গরীব ছুঃবী বিস্তর । এক ছিলিমের দমে বাজারে 
কিনতে গেলে এদের দম বেরিয়ে যায় । আর এথানে লক্ষ লক্ষ তাওয়। 
পোড়ানে। হচ্ছে আকাশ বাতাস টেটম্ুর করে। হয়ত ধরণীর সুদীর্ঘ 
ইতিহাসে এই শেষ যজ্ঞ। 


আমি তো সায়েন্সের ছাত্র ছিলুম। তোদের কোনে! এক ওপস্ঠাসিক 
বাকি সদর রাস্তায় মদের পিপে ফেটে যাওয়ার বর্ণন। দিয়েছে । আমি 
তার ট্রেলার বাইক্ষোপে দেখেছি । কিছু না। ধুলোখেল! । সেখানে 
বাই করছে মালের জন্য হুটোপুটি একই দিকে । এখানে বিরাউ 
জিরগা-জলসার-জনসমাজ দিক নির্ণপ যন্ত্রের অষ্টকোণ চষে ফেলছে- ধুয়ে! 
যখন যেদিকে যায় সেদিকে | এবং সঙ্গে সঙ্গে উল্টোদিকে ছুটছি আমর। 
কয়েকজন । রবীন্দ্রনাথ নাকি 'জাগ্রত ভগবানকে? ডেকেছিলেন তাকে 
'জনসমাজ-মাঝে' ডেকে নেবার জন্যে | আমি পরিত্রাহি চিৎকার ছাড়ছি, 
অবশ্য মনে মনে_ আল্লাতাল! যেন এই আমামুন্্রাস) এই 'জনলমাক্গ' থেকে “ 
আমাকে তফাত রাখেন ।” 

আমি ততক্ষণে হাসতে হাসতে প্রায় কেঁদে ফেলেছি । দাদা আমার 
গম্ভীর রাশভারী প্রকৃতির লোক, চোখমুখে কোনে। রকম ভাব প্রকাশ 
করে না, অবশ্য দরদী লোক বলে মাঝে মাঝে ঠোটের কোণে মৃদুহান্ 
দেখা যায়--যা-ই হোক, যা-ই থাক, আমার মতো ফাজিল-পঞ্চানন নয়। 
কোটপাতলুন তুক্কি টুপি পরা সেই লোক খনে এদিক খনে ওদিক ধাওয়। 
করছে, টরপির ফুন্না বা ট্যাসেল চৈতনের মতো খাড়া হয়ে এদিক ওদিক 
কম্পমান--এদৃশ্ঠের কল্পনা মাত্রই বাস্তবের বাড়া । 

দাদ। বললে, “তুই তো৷ হানছিল। আমার তখন যা অবস্থা | শেষটায় 
দেখি, মাথাট। ভাজ্জিম্‌ মাজ্ভ্রিম করতে আরস্ত করেছে । এত হুটোপুটি 
সত্বেও ধিলুতে খানিকটে ধুয়ো! ঢুকে গিয়েছে নিশ্চয়ই । তারপর মনে 
হল বেশ কেমন যেন ফুন্তি ফুক্তি লাগছে, কি রকম যেন চিত্বাকাশে উদ্ুক 
উড্ভুক ভাব! তারপর দেখি, ম্যানেজারটা আমার দিকে কি রকম 
বেয়াদবের মতো ফিক করে হাসছে । ওর তা হলে হয়েছে: কিংবা 
আমার | অথব। উভয়ের । 

আর এ-স্থলে থাক! নয়। 

টলটলায়মান, পড়পড়ায়মান হয়ে জীপে উঠলুম। সেও এক গেরে!। 
দেখি, হ-খান। জীপ । ছটোই ধু'য়োটে কিন্তু ছবহু একই রকম | কোনটায় 
উঠি? শেষটায় দেখি আমার পাশে আমারই মতো! কে একজন টাড়িয়ে। 


৮৭ 


হবু আমারই মতো, তার টুপির ফুম্নাটি পর্যস্ত। হুজনাতে ছুই জীপে 


আমি বঙ্গলুম। “হুটে। জীপ না কচু!” 

দাদ| বললে, “বুঝেছি, বুঝেছি, তোকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। 
শান্ত হয়ে শোন। তারপর গাড়ি যায় কখনো! ডাইনে ঢাকা, আর 
কথনে। বায়ে মতিহারী | তবে কি ড্রাইভারটা-_1 সে তে সর্বক্ষণ আমারই 
পিছনে ছিল। তারপর দেখি সেই অন্ত জীপটাও ঢাক। মতিহাত্নী করছে 
একদম পাশে পাশে থেকে । ওম! তারপর দেখি চারটে জীপ। সেও 
না হয় বুঝলুম। কিন্তু তারপর; মোশায়, দে কীকাণ্ড। চারখানাই 
উড়তে আরম্ভ করল ।” 

আমি শুধালুম, “উড়তে ?” 

£হ্যা। উড়তে । জীপটাই তে। ছিল ঠাই টীাড়িয়ে। ধু'য়ো থেয়েছিল 
আমাদের চেয়েও বেশী ।” 

হাওয়ায় উড়তে উড়তে ঘুমিয়ে পড়লুম । এবং শেষ পর্যস্ত বাঙলোনপ 
পৌছলুম। 

ভাগ্যিস বেশী ধু'য়ো মগজে যায়নি । আপন পায়েই ঘরে ঢুকলুম। 

সামনেই দেখি তোর ভাবী। আমার দিকে একদৃষ্টে তাকালেন । 
বাপজস্। তারপর অতি শাস্তকষ্ঠে__কিন্তু কী কাঠিন্য কী দার সে কণ্ঠে 
_শুধালেন। 'আপনি কোথায় গিয়েছিলেন ? আমি কিছু বলিনি ।” 

দাদ! থামলেন । 

আমি আড্ডাকে বললুম, আমার ভাবী সাহেবা অতিশয় পুণ্যশীল 
রমণী, পাঁচ বেক নামাজ পড়েন, নোজ। রাখেন, তসবী টপকান | শমস্ুল- 
উলেমার মেয়ে।”? 

রক শুধালে, “ওটার মানে কি চাচা ?' 

আমি বললুম, 'পণ্ডিত-ভাস্কর ! তোদের মহামহোপাধ্যায়ের অপজিট 
নাম্বার।' 

আমি বললুম, তদনন্তর কি হল জানিনে। বৌদি দাদার হাল থেকে 
কতখানি আমেজ করতে পেরেছিলেন ভাও বলতে পারিনে, কারণ ঠিক 


৮৮ 


সেই সময়ে ভাবী সায়েবা তার স্পিশিলাটি চারপরতী। পরোটা, দেখক্ে 
বজের মতো৷ কঠোর থেতে কুসুমের মতো! মোলায়েম শবভেগ, নিয়ে 
ঢুকলেন। আমরা খেতে পেলুম বটে কিন্তু কাহিনীটি অনাহারে মারা 
গেল। 

মশাদ। বললে, 'বিলকুল্‌ গুল্‌।; 

আমি পরম পক্সিতৃপ্ত সহকারে বললুম; 'সাকুল্যে। তাই না বলেছিলুম; 
গাজার গুল। 

অর্থাৎ গুলের বাজ। গুলম্গ্ীৰ। তোরা আমাকে আজ এ টাইটিলটি 
দিলি না? 


॥ ত্রিযুতি ( চাচা-কাহিনী )। 


বালিন শহরের উল্লাণ্ড স্ট্রিটের উপর ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে 'হিন্দুস্থান হৌস' 
নামে একটি রেস্তোর'! জন্ম নেয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে বাঙালীর যা স্বভাব, 
বেস্তোরার সুদূরতম কোণে একটি আড্ডা বসে যায়। আড্ডার চক্রবতী 
ছিলেন চাচা__বরিশালের থাজা বাঙাল যুসলমান__-আর চেলার। গৌসাই, 
মুখুষ্যে, সরকার, ব্রার এবং চ্যাংড়া গোলাম মৌলা; এই ক'ঞজন। 

চাচার ন্তাওটা শিষ্য গোসাই বললেন, 'বা বলো।,য। কও, চাচ। না থাকলে 
আমাদের আড্ডাট। কিরকম যেন দড়কচ্চা মেরে যায় । তা বলুন, চাচা, 
দেশেন্ না; ছ্যাশের_ খবর ক? কি খেলেন, কি দেখলেন, বেবাক কথা 
খুলে কন।' 

চাচা! বরিশাল গিয়েছিলেন। তিন মাস পরে ফিরে এসেছেন। 
বললেন, 'কি খেলুম ?. কই মাছ-_-এক-একট। ইলিশ মাছের সাইজ ?. 
ইলিশ মাছ--.এক-একটা তিমি মাছের সাইজ; আর তিমি মাছ__ত। 
মে দেখিনি। তবে বোধ হয়, তাৰং বাকরগঞ্জ ডিস্টিক্টাই তারই একটার 
পঠের উপর ভাসছে । এবেরকম সিন্দবাদ তিমির পিঠটাকে চর ভেবে 
ভারই পিঠের উপর রশুই চড়িয়েছিল।” 

বাকি কথ। শেষ হওয়ার পূর্বে সকলের দৃষ্টি চলে গেল দোরের দিকে । 


৮৬৯ 
দ-ম-আ--প্রেষ্ঠগল---৬ 


'ছটি জর্মন চ্যাংড়া একটা চিংড়িকে নিয়ে রেস্তোরণায় ঢুকল। ভারতী 
্া্নার ঝালের দাপটে জর্মনরা সচরাচর হিন্দৃস্থান হৌঁদে আসতো! না। 
পাড়ার জর্মনর1! তো আমাদের লঙ্কা-ফৌড়ন চড়লে পয়ল! বিশ্বযুদ্ধের 
ডিসপোজেলের গ্যাস-মাস্ক পরতো । তবে হ'একজন যে একেবারেই 
আসত ন! তা নয়-_“ইণ্ডিশে রাইস-কুরি' অর্থাৎ ভারতীয় ঝোল-ভাতের 
খুশবাই জর্মনি হাঙ্গেরি সর্বত্রই কিছু কিছু পাওয়া বায়। 

আলতোভাবে ওদের উপর একট। নজর বুলিয়ে নিয়ে আড্ডা! পুনরায় 
চাচার দিকে তাকাল । চাচা বললেন, “খাইছে ! আবাদ সেই ইটারনেল্‌ 
্রায়েসল্‌ ! . 

পাইকিরি বিয়ার থেকে সৃয্যি রায় বললে, “চাচা হব্ুববকতই ট্রায়েক্গল 
দেখেন। এ যেন ঘামের ফোটাতে কুমীর দেখা । ছ্যত্রো নিক্সে কি কেউ 
কথনে। বেরয় না ?? 

ঝ্লায়ের গ্রাম সম্পর্কে ভাগ্নে, সতেরে। বছরের চ্যাংড়া মদস্ত লাজুক 
গোলাম মৌলা শুধালে, “মামু! ছ্/ ত্রো কারে কয় ? 

রায় বললেন, 'পই পই করে বলেছি করাসী শিখতে। তা শিখবিনি। 
ডি, ই ঘ্যঃ টি, আর, ও পিত্রো_পি সাইলেপ্ট। অর্থাৎ+একজন 
“অনাবশ্যক বেশী--0109 (০০77091% | এই মনে কর, তুই যদি তোর 
কিক্'(সেকে-এ কথাটাও বোঝাতে হবে নাকি 1 নিয়ে বেরোস আর 
আমি খোদার-খামোখ। তাদের সঙ্গে জুটে যাই, তবে আমি ত্রো। 
বুঝলি ? 

গোলাম মৌল। মাথ! নিঢু করে সেই বাপিনের শীতে বরাববর লজ্জায় 
ঘামতে লাগলো । 

আড্ডার লউবর লেডি-কিলার পুলিন সরকার মৌলাকে ধমক দিয়ে 
বললে, 'তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেন রে বুড়বকৃ? লজ্জা! পাবেন রায়। ডাগড 
গুল খেলার সময় গুলিকে ভর দেখাস্নি ভাগ্ডাকে না ছোবার জন্ত । তখন 
কি বলিস? “ভাগ্নে বে ছুয়ারে__কোন। কেটে ফাল্দি বা।' বরঞ্চ সৃষি 
রায় যদি তার ম্যাভামকে নিয়ে বেরোন, আর তুই যদি সঙ্গে জুটে যান! 
তবু কিন্তু তুই গ্ভ ত্র! নস্‌। রাধা কেষ্টর কি হন জানিস তো?" 


৯৩ 


গোলাম মৌলা এবারে লজ্জায় জল না হয়ে একেবারে পানি। 

নৌনাই বললেন, “চাচা, আপনি কিন্তু ধেভাবে ঘন ঘন মাথা 
লাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে, আপনি একদম শোয়ার, এ হচ্ছে ছটো- 
না-একটা-মেনীর ব্যাপার । তা! কি কথনে হওয়া যায় ? 

চাচ। বললেন? বায়, যায়ঃ যায়। আকছারই যায়। অবশ্য প্র্যাকৃটিস্‌ 
কলে? 

আড্ড। সমস্বরে বললে 'প্র্যাকৃটিস্‌! 

চাচা বললেন? হ। এবারে দেশে বাবার সময় জাহাজে হয়েছে 1) 

গল্পের গন্ধ পেয়ে আড্ড1 শাসন জমিয়ে বললে? “ছাড়ুন; চাচ। 1! 

চাচা বললেন, :এবার দেখি, জাহাজ ভন্তি ইনুদির পাল। জর্মনি, 
স্টিয়া, চেকোন্নোভাকিয়া থেকে বেঁটাই করে সবাই যাচ্ছে শাংহাই | 
খানে যেতে নাকি 'ভিজার প্রয়োজন হয় না| কিকরে টের পেয়েছে, 
বার হিটলার দাবড়াতে আরম্ভ করলে নেবুকাডনাজারের বেবিলোনিয়ান : 
যাপটিভিটি নয়, এবারে শ্রেফ কচু-কাটার পালা । তাই শাংহাই হয়ে 
ছে ওদের ল্যাণ্ড অব মিলক্‌ এপ্ু হানি, ননীমধুর দেশ । 

আমার ডেক-চেয়ারউ! ছিল নিচের তলা থেকে ওঠার নিড়ির মুখের 
ছে। ডাইনে এক বুড়ে। ইহুদি আর বাঁয়ে এক ফরাপী উকিল। ইহুদী 
চয়েনার লোক, মাতৃভাষ। জর্মন) ফরাসী জানে না। আর ফরালী উকিল 
মন জানে না, সে তে। জানা কথা । ফরাসী ভাষা ছাড়া পৃথিবীতে যে 
ন্ত ভাষা চালু আছেসে তত্ব জাহাজে উঠে সে এই প্রথম আবিষ্কার 
বূলে। এতদিন তার বিশ্বাম ছিল, পৃথিবীর আর সর্বত্র ভাঙী-ভাঙ। 
রামী, পিঞ্জিন ফেঞ্চই চলে-_বিদেশীর! প্যান্রিমে এলে যে রকম টুকিটাকি 
পাপী বলে এ রকম আর কি। 

তিনজন'তে তিনখান। বই পড়ার ভান করে এক একবার সিড়ি দিয়ে 
ঠনে-ওল! নামনে-গলা চিডিয়াগুলোর দিকে তাকাই তারপর বইয়ের 
[কে নজর ফিরিয়ে আপন আপন সুচিন্তিত মস্তবা প্রকাশ করি। 

একটি মধ্যবয়স্কী উঠলেন | জর্সন ইনুদি বললে, “হাল্ব-উন্ট-হাল্ৰ 
অর্থাৎ হাফাহাফি ।' ফরাসী বললে, 'অ প্যো আসিয়েন্_-একটুখানি 


৯১১ 


এনশেণ্ট।' জর্সন আমাকে শুধালে, 'ফ্রেঞ্চি কি বললে 1 আমি অনুবাদ 
করলুম। জর্মন বললে, “চল্লিশ, পয়তাল্লিশ হবে। তা আর এমন বি 
বয়েস- নিষট ভার-_নয় কি? ফরাসী আমাকে শুধালে “ক্য দিতিল-- 
কি বললে ও? উত্তর শুনে বললে, “ম' দিয়ো ইয়াল্লা-_-চল্লিশ আবার 
বয়েস নয় ! একট! কেথীড্রেলের পক্ষে অবশ্য নয় । কিন্তু মেয়েছেলে, ছোঃ। 

এমন সময় হঠাৎ এক নঙ্গে তিনজনার তিনখান। বই ঠাস করে 
আপন আপন উরুতে পড়ে গেল। কোট মার্শালের সময় যে কম দশটা 
বন্দুক এক ঝটকায় গুলি ছোড়ে। কি ব্যাপার? দেখতো ন! ছ্যাখ, 
সিঁড়ি দিয়ে উঠলে! এক তরুণী । 

'সে কী চেহারা । এ রকম রমণী দেখেই ভারতচন্দ্রের মুড ঘুরে বায 
আর মানুষে দেবতাতে ঘুলিয়ে ফেলে বলেছিলেন, “এ 6তাঁ মেয়েঃ মেয়ে 
নয় দেবত। নিশ্চয় ।” 

' ইটালির গোলাপী মার্ধেল দিয়ে কোদা মুখখানি, যেন কাজল দিয়ে 
আকা' ছুটি ভুরুর জোড়া পাখিটি গোলাপী আকাশে ভানা মেলেছে, চোখ 
ছটি সমুদ্রের ফেনার উপর বসানো ছুটি উজ্জ্র্গ নীলমণি, নাকটি যেন 
নন্দলালের জাক। সতী অর্পণার আবক্ররেখ' মুখের সৌন্দর্যকে ছ'ভাগ করে 
দিয়েছে, ঠোট ছুটিতে লেগেছে গোলাপ ফুলের পাপড়িতে যেন প্রথম 
বসন্তের মৃহ পবনের ক্ষীণ শিহরণ । 

চাচা বললেন, 'তা সে যাক্গে। আমার বয়েস হয়েছে । তোদের 
সামনে সব কথা বলতে বাধে। বাধো ঠেকে । কিন্তু সত্যি বলতে কি অপূর্ব 
অপুর | 

দেখেই বোঝা যায়, ইছুদি-_ প্রাচ্য প্রতীচ্য উভয় সৌন্দর্যের অদ্ভুত 
সম্মেলন । 

“জর্গন এবং ফরানী ছজনেই চুপ! 'আন্মো। 

আর সঙ্গে সঙ্গে ছুটি ছোকর! জাহাজের ছু'প্রাস্ত থেকে চুম্বকে টান 
লোহার মত তার গায়ের ছু'দকে যেন সেঁটে গেল। স্পষ্ট বোঝা গেল৷ 
এতক্ষণ ধরে ছু'জনাই তার পদধ্বনির প্রতীক্ষায় ছিল। 

জাহাজে প্রথম হ'একদিন ঠিক আচ যায় না, শেষ পর্যস্ত কার. সঙ্গে 


৯ 


ফার পাকাপাকি দোস্তী হবে। কোন্‌ মদসিয়ো কোন্‌ মাদমোয়াজেলের : 
পাল্লায় পড়বেন, কোন্‌ হ্যার কোন্‌ ফ্রাউ বা ফ্রলাইনের প্রেমে হাবুডুবু 
ঘাবেন। কোন্‌ মিমিস কোন্‌ মিস্টারের সঙ্গে রাত তেরোটা অবধি' 
'খাল। ডেকে গোপন প্রেমালাপ করবেন । এ তিনটির বেল! কিন্তু সবাই 
[ঝে গেল এটা ইটার্নেল ট্রায়েঙ্গেল। আমি অবশ্য গৌসাইয়ের মত 
প্রথমটায় ভাবলুম, হার্মলেস ব্যাপারও হতে পারে। 

মেয়েটা“ফরাসিস, ছেলে ছটোর একটা ' মারাঠা, আরেকটা গুজরাতি 
বেনে। প্যারিন থেকেই নাকি রঙ্গরল আর্ত হয়েছে। বোম্বাই তক্‌ 
ড়াবে। উপস্থিত কিন্তু আমাদের তিনজনারই মনে প্রশ্্ জাগলো, 
মাখেরে জিতবে কে? 

শুনেছি, এহেন অবস্থায় ছজনাই স্পানিয়ার্ড হলে ডুয়েল লড়ে, 
ইতালীয় হলে একজন আত্মহত্যা করে; ইংরেক্গ হলে নাকি একে অন্যকে 
স্তীরভাবে স্টিফ বাও করে ছু'দিকে চলে যায়, ফরাসী হলে নাকি, 
ভাগাভাগি করে নেয়। 

প্রথম ধাক্তাতেই গুজরাতি গেলেন হেরে । মারাঠা চালাকী করে 
ডবল পয়স। খর্চা করে ছুা'খানি ডেক-চেয়ার ভাড়া করে রেখেছিল 
পাশাপাশি । বেনের মাথায় এ বুদ্ধিটা খেললে! না৷ কেন আমরা বুঝে 
টঠতে পারলুম না । 'মারাঠা নটবর সেই'হুরীকে নিয়ে গেল জোড় ডেক- 
চয়ারের দিকে-_স্যর ওয়ালটর “রেলে যে রকম রানী ইলিজাবেথকে 
চাদার উপর আপন জোববা ফেলে দিয়ে হাত ধরে ওপারের পেভমেন্টে 
নয়ে গিয়েছিলেন । 

হ'জন লম্বা! হলেন ছুই ডেক-চেয়ারে । বেনেট। ক্যাবলাকাস্তের মত 
[ামনে দাড়িয়ে খানিকটা কাই-কুঁই করে কেটে পড়লো । 

আমার পাশের ফরাসী বললে, “ইভিয়ট ! জর্মন শুনে বললে “নাইন; 
সাথেরে জিতবে বেনে। এ্্যাপমিবল 1 “বেট? বেট! পাচ 
শলিঙ ? পাঁচ শিলিউ? ?? 

আড্ডার দিকে ভালো কনে একবার তাকিয়ে নিয়ে চাচা! বললেন, 
বিশ্বাস করে! আর নাই করো, আস্তে আস্তে জাহাজের সবাই লেপে গেল 


৪৯৩ 


এই বাজি ধরাধরিতে ! বুকিরও অভাব হুল না। আর সে বেট ৭ 
অদ্ভুত ফ্লাক্চুয়েট করে । কোনোদিন ভোরে এসে দেখি জর্মনটা গুম্‌ হা 
বসে আছে-_-যেন জাহাজ একটা কনসান্ট্রেশন ক্যাম্প-আর করাসী 
উল্লাসে ক্রিং ত্রিং করে পল্‌্ক। নাচ নাচছে। ব্যাপার কি? পাক্কা! খব 
মিলেছে, আমাদের পরীটি কাল রাত দু'টো অবধি মারাঠার সঙ্গে গুজু; 
গুজুর করেছেন । বেনে মনের খেদেই এগারোটাতেই কেবিন নের 
ফরাসী এখন সকলের গায়ে পড়ে থি, টু ওয়ান অফার করছে । সে জিত 
পাবে কুল্লে এক শিলিং হারলে দেবে তিন শিলিং। নাও, বোঝ ঠ্যাল 
আর কোনোদিন ব1! খবর রটে, ৰেনের পো। জাহাজের ক্যান্থি, 
চৌবাচ্চায় হুরীর সঙ্গে ছু'্ঘণ্টা সাঁতার কেটেছে__মারাঠা' জলকে ভী। 
ডরায়। ব্যস, সেদিন বেনের স্টক স্কাই হাই 

ইতিমধ্যে একদিন বেনের বাজার যখন বড্ড ঢিলে যাচ্ছে তখন ঘটতে 
এক নবীন কাণ্ড। হুরী ও মারাঠ। তো বসতো পাশাপাশি কিন্ত লাইনে 
সর্বশেষে নয় বলে হুরীর পাশে বসতো এক অতিশয় গোবেচার1। ছা 
মানুষ নিগ্রো পাদ্রী । সে গিয়ে তার ডেক-চেয়ারের সঙ্গে বেনের ডে 
চেয়ারের বদলাবদলীর প্রস্তাব করেছে । বেনে নাকি উল্লাসে ইয়াল্প। ব্‌ 
আকাশ-ছোয়া লম্ষ মেরেছিল। বেটিঙের বাঞ্জার আবার স্টে 
হয়ে গেল। 

ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠলো) এ বেটিঙের শেষ ফৈপালা হবে কি প্রকারে 
বহু বাক্‌-বিতগ্ডার পর স্থির হলো, যেদিন হ্ুবী মারাঠা কিংবা বেনের সা 
তার কেবিনে ঢুকবেন সেদিন হবে শেষ ফৈসালা । যার সঙ্গে ঢুকবেন তা 
হবে জিত। 

ছ' একক্ন রুচিবাগীশ আপত্তি করেছিলেন কিন্তু ফরাসী উকিল হা 
পা চোখ-মুখ নেড়ে বুঝিয়ে দিল? (১990 ০99, এটা, এটা হচ্ছে একা 
লিগাল ডিসিশন, একটা আইনত গ্যাধ্যত হকের ফৈলালা । ঢলাঢি 
কোনে। কথাই হচ্ছে না।' 

রেসের বাজি তখন চরমে । কখনে! বেনে, কখনো! মারাঠা | দে 
যে চঙ্খোর গল্প বলেছিল, পাঁথকে শুলি মেরে সঙ্গে সঙ্গে শিকা 


৯৪ 


কুকুরকেও দিয়েছে লেলিয়ে । তখন বুলেটে কুকুরে কি রেস্‌-_কভী কুত্তা 
কভী গুলি, কভী গুলি, কভী কুত্তা! । 

এমন সময় আদন বন্দর পেরিয়ে আমরা ঢুকলুম আরব সাগরে আৰ 
সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আঠারে! হাজার উনের জাহাঙ্গকে মারলে মৌন্তুমী 
হাওয়া তার বাইশ হাজারি টনের থাবড়া। জাহাজ উঠলো! নাগর বেনাগর্‌ 
সবাই নিয়ে নাগরদোলায়। আর সঙ্গে সঙ্গে কী সী সিক্নেস! বমি 
আর বমি ! প্রথম ধাক্কাতেই মারাঠ। হল ঘায়েল। রেলিড ধরে পেটের 
নাড়ি-ভূড়ি বের করার চেষ্টা! দিয়ে টলতে টলতে চলে গেল কেবিনে । 
বেনের মুখে শুকনে। হাসি, কিন্তু তিনিও আরাম বোধ করছেন ন|। 
পরদিন সমুদ্রে ধরলো রুত্রতর মৃতি। এবারে হুরী পড়ে রইলেন একা। 
তার মুখও হরচালের মত হুলদে। তারপরের দিন ডেক প্রায় সাফ। 
নিতান্ত বরিশালের পানি-জলের প্রাণী বলে দরাতমুখ থিচিরে কোনো- 
গতিকে আমি টিকে আছি আর কি? খাবার সময়ে পেটে যা যায় সে- 
সব রিটার্ণ টিকিট নিয়ে মোকামে পৌছবার আগেই ফিরিফিরি করছে। 
ছুরী নিতান্ত একা বলে ফরাণী বন্ধু তাকে আদর করে ডেকে এনে 
আমাদের পাশে বসালে। 

সে রাত্রে জাহাজ খেলো ঝড়ের মোক্ষমতম থাবড়া । ফরাসী গায়েব | 
হুরী এই প্রথম ছুটে গিয়ে ধরলো রোলড । আমিও এই যাই কি তেই 
যাই। বু ধরলুম গিয়ে তাকে | হুরী ক্ষীণকণ্ঠে বললে, “কেবিন । আমি 
ধরে ধয়ে কোনোগতিকে তাকে তার কেবিনের. দিকে নিয়ে চললুম। 
হছজনাই টলটলায়মান। আমার কেবিনের সামনে পৌছতেই ঝড়ের 
আরেক ধাক্কায় খুলে গেল আমার কেবিনের দরজ।। ছিটকে পড়লুমন 
ছুজনাই ভিতরে । কিআর করি? তাকে তুলে ধরে প্রথম বিছানায় 
শোয়ালুম। তারপর কেবিন-বয়কে ডেকে ছু'জনাতে মিলে তাকে চ্যাংদোলা 
করে নিয়ে গেলুম তার কেবিনে । বাপজ। 

চাচা থামলেন। একদম প্মে গেলেন । 

আড্ডার সবাই একৰাক্যে শুধালে, তারপর ? 

চাচ। বললেন; “কচু, তারপর আর কি? 


৯৯৫ 


তবু সবাই শুধায়। “তারপর 1, 

চাচ। বললেন; “এ তো বড় গেরো৷ । তোরা কি ক্লাইমেকৃস্‌ বুঝিসনে 1 
আচ্ছা, বলছি । ভোর হতেই 'বোম্বাই পৌছলুম ।॥ ডেকে যাওয়া মাত্রই 
সবাই আমাকে জাবড়ে ধরে কেউ ৰলে ' কন্গ্রাচুলেশন্স্‌ কেউ বলে 
গ্রাতৃলিয়েরে__ছুচ্ছাই। এ-দব কি? কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি বুঝিয়ে বলে না| 

শেষটায় ফরাসী উকিলটা! বলে, 'আ৷ মদিয়ো, কী কেরদানিটাই না 
দেখালে । *ওস্তাদের মার শেষ রাতে । “মহারাষ্ট্র গুজরাত ছু'জনাই হার 
মানলে । “জিতলে বেঙ্গল ! ভিভল্য বাগাল! লং লিভ বেগুল!' 

আমি যতই আপত্তি করি কেউ কোনে। কথা শোনে না। 

আর শুধুকি তাই? ব্যাটার! সবাই আপন আপন বাজির টাকা 
ফেরত পেল-_বেনে কিংব1 মারাঠা কেউ জেতেনি বলে। কিন্তু আমার 
দশ শিলিং শ্রেফ) বেপরোয়া মেরে দিলে । বলে কি না, আমি যখন 
ঘোড়ায় চডে জিতেছি, আমার বাজি ধরার হক নেই। টাকাটা! নাকি 
ভছরূাপ হয়ে বার ।' 

খানিকক্ষণ চুপ থেকে চাচা বললেন, “কিন্ত সেই থেকে আমান চোখ 
বলে দিতে পারে ইটার্নেল ট্রায়েজেল কোথায় ।' 

এমন সময় সেই "ছুই জর্মন ছোকরায় লেগে গেল মারামারি । মেটা 
থামাতে গিয়ে আড্ডা সেদিন ভঙ্গ হল। 


হীরো৷ 


রক শুধালে, “চাচা আপনি 'বীভারজ ডভিজেস্ট' পড়েন ?' 

আমি বললুম। 'না ভাই। ওতে আমার দিল্-চস্দী নেই” 

ঘণ্টুর শব্দতত্বে কোনে! প্রকারের 'দিল্‌-চস্গী' থাকার কথা নয় । তবু 
শুধালে, “চাচা, আপনার মুখে এ শব্দটা একাধিকবার শুনেছি। হালে; 
সিনেমাতেও শবটা একই ফিল্ো বার হ'ত্বিন কানে গেল । মানেটা কি?' 

আমি বললুম, “দিল শব্দটা তো জানিস-_হাদয়। আর কার্সাতে 


৯৩ 


চস্পীদন' শব্দের অর্থ সেঁটে যাওয়া, সেঁটে দেওয়া । অর্থাৎ বুকে বুক 
লাগানো। হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করা । ইংরিজি ইনট্রেস্ট শব্দের ঠিক বাঙল! 
নেই। ফার্সী এবং উ্তে বলে দিল্‌-চস্লী | যেমন গাওনা-বাজনায় আমার" 
খুব দিল্‌-চস্গী আছে, কিন্তু রেসে বিলকুল দিল্-চস্গী নেই । 

মশাদ! বললে, 'আরো। ভালো উদাহরণ £ টাকা ধার নেওয়াতে' 
আমার বিস্তর দিল্‌-চস্লী-_" 

ঘণ্টু বাকিটা পূর্ণ করে দিলে, “কিন্তু ফেরৎ দেওয়াতে বে-দিল্-চস্গী ।" 

আমি বললুম, 'বেদিল্চস্পী আমি কখনো শুনিনি ।' 

টেটেন শুধোলে, “কিন্ত ডিজেস্ট ভাল লাগে না কেন? 

আমি বললুম, “পুরো! এক থাল৷ যেন চাটনি । ফরাপীতে যাকে বলে 
“অরু ভব ছোটে! ছোটে টুকরে! টুকরো। সসিজ, সাডিন, অলিভ-_যা 
থেতে গিয়ে, আসলে কিন্তু হার্টট্রাবলে, মুখুষ্যে জাপানে গত হলেন । শরক্ত 
কামড়াবার মত কিছুই থাকে না-যাকে ফরাসীভে বলে “পিম্বেস্‌ গ্ 
রেজিস্তাস। 'গীদ অব. রেজিস্টেন্স ।' 

টেটেন বললে, “কিন্তু সর্বশেষে ঘে মোটা বইয়ের সারাংশ থাকে ? 

আমি বললুম, “সে যেন গ্লাস-কেসের ভিতরকার ক্ষুদে তাজমহল । 
ওতে যদি সেই আনন্দই পাওয়। ষেত ভবে আসল তাজ দেখতে যেত কে? 

অজনদা! শুধলে, “কিন্ত মশার চোখ যদি আরো ছ'ইঞ্চি ছোট হত 
তাহলে কি কিছু ফের-ফার হত? 

বকের বড়দা কথা কয় কম, কিন্তু কেউ কাউকে ছোবল মারলে মেও 
সরেস মাল ছাড়তে জানে । পানের পিচ বাঁচিয়ে আকাশপানে মুখ ভুলে 
বললে, ভোমার এঁ ভেটকি-বদন দেখার থেকে নিষ্কৃতি পেত 1, 

টেটেন বললে “কী বিপদ ! আমার প্রশ্নটা শুধোবার ফুর্স তই পাচ্ছিনে 
যে! আচ্ছ!, চাচা, এ “আমার পরিচয়ের অবিশ্মরণীয় মানুষ' এ দিরীজের 
লেখাগুলো কি নত্যি, না বানানো ?, 

আমি অনেকক্ষণ মাথা চুলকে বললুম, “মিথ্যা 'আর সত্যে পার্থকা কর! 
বড় কঠিন--বিশেষ করে আর্টে, সাহিত্যে । যেমন মনে কর, তুই একটা 
ল্যাগুস্কেপ পেন্ট কর্ছিস। সেখানে একটা শুকনো থেজুর গাছ তোর 


৯৭ 


পছন্দ না হওয়াতে তুই সেটা তুলে নিয়ে সেখানে একটা কদম গাছ 
লাগালে কেউ কিচ্ছু বলবে না, কিন্ত যদি কারো! ফোটোগ্রাফ তুলতে চাস 
তবে সেখানে কোনে। লিবার্টি নেওয়া! চলবে না। অথচ সেখানেও সমূহ 
ৰিপদ। লেনসটার উপরে হয়তো ময়লা জমেছে, ফিল্মটা হয়ত পুরনো, 
ফোকাসে ভুল হয়ে গেল__ফলে মূলের সঙ্গে মিল রইল কমই। ঠিক 
তেমনি “আমার অবিস্মরণীয় মানুষের? বর্ণনা আমি যখন দিই তথন ভাৰি 
সত্যের সঙ্গে খাপ খাইয়েই সেট। আমি করছি, কিন্তু আমার দৃষ্টিভঙ্গী 
( লেন্স), আমার স্মতিশক্তি ( ফিল্ম্‌__পূর্ণা কিংবা নয়! ঘটনা) যে ঠিক 
ঠিক বর্ণনা দিতে সাহায্য করছে কি করে জানবো? তিন সাধু জন 
আদালতে হলক খেছে তিন রকমের বর্ণনা দেয়-_-সে তো আকছারই 
হচ্ছে । আর যে 'অবিস্মরণীয় চরিত্রের? বর্ণনাটা পড়ে তোর প্রাণট৷ জুড়িয়ে 
গেল। সেই “চরিত্রকে? সেটা পড়ে শোনালে সে হয়তো ঝঁঁটা হাতে তাড়। 
লাগাত। আমার এ রকম একটা চরিত্রের সঙ্গে-_ 

মুকুলদি কিমামের কৌটোট। এগিয়ে দিয়ে বললে, “সেইটেই দয়। করে 
বলুন--এসব আবোল তাবোল বকে কি হবে?” মুকুলদি উত্তম মুভি 
তুলতে জানে, ছবিও অাকতে পারে; তাই এলব থিয়োরিতে তার দিল্‌- 
চসপী নেই। পোষ্ট-ম্টেমে খুনীর কি ইন্ট্রেস্ট ? 

রী নি সী 

'সে আমার প্রথম যৌবনের কথা । দেশে ফিরে বসেছি__রকের ন। 
বাড়ির-_বড়দার বৈঠকখানার বারান্দায় । এমন সময় দেখি, রাস্তার 
উপর দিয়ে দূর থেকে যেন একট! সাক্ষাৎ তালগাছ ঝড়ের বেগে আমার 
দিকে এগিয়ে মাছে । বাড়ির সামনে আসতে দেখি, সে এক অপরূপ 
প্রাণী। নিদেন ছ'ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, তার উপর ভদ্রলোক পরেছেন প্রায় 
এক ফুট উচু তুটুগী। ঝড়ের মত চলার বেগে সেই টুগীর ফুল্না বা 
ট্যাসেল টুপীর উপর চফিবাজির মত চক্কর খাচ্ছে । বারান্দ। থেকে রাস্ত! 
অন্তত দশ গজ দূরে, তবু তার গতি-বেগম্প্ট শোন! যাচ্ছে তার সেই ছু 
ফুট চওড়া বিরাট পুরু লংরুথের পাজামার ঘর্ষণ থেকে । কদম এক এক 
খান। বে দৈর্ঘ্যের ফেলছেন তাতে মনে হয় পাজামার ভিতর বুঝি রণ-পা 


৯৮ 


লুকানো রয়েছে । আচকানটা নেমে এসেছে প্রায় জুতো পর্যস্ত__. 
পাজামার ইঞ্চি চারেক দেখ। যায় কি নাযায়। ইয়া! বিরাট চাপ দাড়িতে 
বুকাকা। তুকাঁ টুপীর নিচের থেকে নেমে এসেছে ঢেউ খেলানে! মিশ 
কালে। ঘন বাবরী চুল--প্রায় গ্রেটা গার্বো লেন্থ। চলার সঙ্গে সঙ্গে 
ডান হাভখান। ছুলছে যেন সার্কাসের লোহার ভাগ্ার ছুলন৷ তাবুর এ 
প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত অবধি । বা বগলে ফুলক্ক্যাপ কাগজের রোল-কর। 
এক বিরাট বোন্দ। ৷ দৃষ্টি সোজ। সমুখ পানে । চলেছেন রাস্তার ঠিক 
মাঝখান দিয়ে । 

সই সাই শব্ধ করে তিনি আমাদের বৈঠকখান। পেরিয়ে গিয়ে মোড 
নিলেন বাবার বৈঠকখানার দিকে । 

পাচ মিনিট যেতে ন। যেতেই বাবার চাপরাশী মহরমদী এসে আমায় 
তলব করলে । 'ফতুয়াটা গায়ে চড়াতে না চড়াতেই দেখি সেই আচকান- 
পাজামা-পর। তালগ।ছ পূর্বের চেয়েও গতিবাড়িয়ে আমাদের বারান্দায় 
এসে হাজির । আমি সালাম করার পূর্বেই আমাকে সালাম করে আসন 
নিলেন শক্ত কাঠের চেয়ারের উপর-_যদিও আমি বেতের চেয়ারখানা 
এগিয়ে দিয়েছিলুম | 

কুশলাদির প্রথম কথাতেই আমি আশ্চর্য হলুম তার গল। শুনে । 
আমি ভেবেছিলুম, তার গল! থেকে প্রতিটি ল্বজে। বেরবে তোপের শব 
নিয়ে, নিদেন পক্ষে বন্দেমাতরমের আওয়াজ ছেড়ে । কোথায় কি? ঠিক 
যেন ওস্তাদ আব্দল করীম খান সাহেবের মধুর কণ্ঠস্বর--এবং সেও এত 
মৃদু যে তৃতীয় বাক্তি শুনতে পাবে না । গলা থেকে মানুষ চিনতে গেলে 
বলতে হবে লোকটি বড়ই নিরীহ । আর দ্বিতীয় জিনিস লক্ষ্য করে আরো 
আশ্চর্য হলুম। এ বিরাট-বপু লোকটার জুতোর নম্বর ছয় হয় কি না হয়| 

বোধ হয় একটুখানি সাহম সঞ্চয় করে বললেন, “দেখুন দেখি, আপনার 
ওয়ালিদ সাহেব ( পিতা ) আমাকে কী বিপদে ফেলেছিলেন। আপনাকে 
ডেকে পাঠালেন, আমার সঙ্গে দেখ। করতে ! তাও কখনে। হয়! আমি 
তো। এক রকম তার ইচ্ছা অমান্য করেই এখানে ছুটে এলুম। শেব পস্ত 
অবশ্য তিনি আপত্তি করেননি ।' 


৯১৯ 


কথা-বার্তায় প্রকাশ পেল তিনি মৌলান! জালাল উদ্দীন রূমীর কাব্য 
মসনবী খানা অনুবাদ করতে আরম্ভ করেছেন। আমার পিতৃদেবকে 
দেখাতে এসেছিলেন । তিনি শুনে বলেছেন, এসব ব্যাপারে নাকি আমার 
দিল্‌-চদপ্রী প্রচুর তাই আমাকে ভেকে পাঠানো হয়েছিল । 

আমি তো! অবাক! বিরাট সে গ্রন্থ। সে আমলে এর ইংরিজি 
অন্থবাদও কেউ বুক বেঁধে করে উঠতে পাবেন নি।; 

মশাদ1] শুধোলে, 'কে যেন তার একটি গল্প “তোতা-কাহিনী' না কি 
যেন অনুবাদ করেছে--তাও গগ্ভে । কিন্তু গল্পটি অপাধারণ সুন্দর | পুরো! 
কাব্য কি এখন ইংরিজিতে পাওয়। যায় ? 

আমি বললুম, “বায়। নিকৃল্সন্‌ না কে যেন দশ না চৌদ্দ বছর থেটে 
করেছে--তাও গগ্যে | 

আর সে কাব্য অনুবাদ কর! কি চারটিখানি কথ! !) 

মশাদা বললে “বড্ড কঠিন নাকি ? 

আমি বললুম, “ঠিক তার উন্টো। অতি সহজ । মিল, ছন্দ, উপমা। 
ধ্বনি এতই সহজ যে অনুবাদে সে সরলতা কিছুতেই আনা যায় নাঁ। এ 
ধরণের বইকেই ইংরিজিতে বল! হয়, ভিসপেয়ার অব্ট্রেন্স লেটার, 

ভ্রলোক তখন বিস্তর ইতি-উতি করার পর বগলের বোন্দাটা 
নামিয়ে, লম্ব। ফুলক্কেপ কাগজ হাত দিয়ে ডলে মোজ! করে নিয়ে পড়তে 
আর্ত করলেন ।' 

ব্ুকফেলারর একবাক্যে শুধোলে, “কি রকম হয়েছিল অন্ুবাদট|?' 

আমাদের রকের এই একট! মস্ত গুণ যে সবাই বড় দরদী। প্রশোর 
স্থরেই বোঝা গেল ভার] কি উত্তর প্রত্যাশ। করছে । 

টেটেনের দিকে তাকিয়ে বললুম, “এখন বুঝলি টেটেন, নত্য-কখন 
কতখানি কঠিন, ভুবঙ্ছ ফোটোগ্রাফ তোলাতে কতখানি কমস্ত।, 

টেটেন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, “একদম রদ্দি বুঝি ?? 

আমি বললুম, “না, এই মাঝারি । বরঞ্চ বলবো, মসনবী অন্ধুবাদ কী 
কঠিন কর্ম জান! ছিল বলে মনে হল, আশাতীত ভালো । আর ছন্দটি 
নিয়েছিলেন রাজসিক, তার দাড়ির চেয়েও লম্বা ;__ 


১০০ 


'কন সদাগর তোতা পাখীটিরে কোনে। ভয় তূমি রেখো না মনে, 
মওগাত আমি নিশ্চয় আনিব খু'জিবে। তাহারে শহরে বনে ।! 


মশা বললে, "তার পর? ? 

'ভদ্রলোক নিজেই বললেন, “অন্ববাদটা আমারই পছন্দসই হয়নি । 
কিন্ত কি জানেন, এটা পড়ে যদি যোগ্যতর ব্যক্তি একখানা উত্তম অনুবাদ 
করে তবেই আমার শ্রম সফল 

এতখানি বিবেচক লোককে উৎসাহ দেবে না কোন পাষণ্ড । আমি" 
বললুম। 'আপনি নির্ভয়ে এগিয়ে যান 1? 

রাত্রিবেল! বাবার কাছে শুনলুম, ভদ্রলোক 'ছ'মাইল দূরে গ্রামে বাস' 
করেন, সেখানকার ম্যারিজ রেজিস্ট্রার, অর্থাৎ কাজী সাহেব । ঝাড। 
পনেরো বছর মুদলমান শান্ত্াদি দিলী (দেওবন্দ), রামপুরে অধ্যয়ন করে 
দেশে ফিরেছেন। ফার্পা এবং উদ্তে উত্তম কবিতা। লিখতে পারেন, কিন্তু 
দিল্‌-চস্গী বাঙলাতে;__যদিও পাঠশালার পর বাঙল। অধায়নের সুযোগ 
তার হয়ে ওঠেনি। 

একটা পান দে ন৷ রে, ও মুকুলদি। 

ভারপর কাজীসাহেৰ মাঝে মধ্যে আসেন, অনুবাদ শুনিয়ে যান। 

আমার মা ওকে খাওয়াতে বড ভালো ৰাসতেন। কি কে 
জানিনে, জানাজানি হয়ে গিয়েছিল, পাছে তার স্ত্রী ভাবেন তিনি একটা 
আস্ত রাক্ষল তাই বাড়িতে খান অল্পই । মা'র হয়ে আমি তাকে গীড়াপীড়ি 
করতুম আর তিনি প্রতিবার খেয়ে উঠে দাড়ির ভিতর দিয়ে ভানুল 
চালাতে চালাতে বলতেন, “এই বাড়িতেই আল্লা আমার দানাপাশ 
রেখেছিল।? 

এর কিছুদিন পরেই আমাদের অঞ্চলে হাহাকার উঠলো । কেঁচুগঞ্জ 
অঞ্চলে খেয়া নৌকো ডুবিতে বিস্তর লোক মারা! গিয়েছে__পরে অবশ 
জান! গিয়েছিল যতট1 ভয় করা হয়েছিল ততট] নয়-_কারণ সিলেট 
পানি-জলের দেশ-সীতারে অক্ষম অল্প লোকই। কিন্তু আসল কথা 
খবরের কাগজে বেরল পরের দিন 7: 


১০১ 


“প্রকাশ, 'মুনশীবাজার গ্রামের “কাজী 'মৌলবী 'শের মুহম্মদ খান এ 
খেয়া নৌক1 ডুবির সময় একটি মণিপুরী 'রমণীকে প্রাণে বাঁচাইয়্াছেন । 
রমণী সম্ভরণে সম্পুর্ণ অক্ষম । কাজী সাহেব সেই রমণীকে অবশ্য মৃত্যুর 
হস্ত হইতে রক্ষা! করিবার জন্য আ্রোতের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় এক ক্রোশ সম্তরণ 
করিয়া! অবশেষে তীরে অবতীর্ণ হয়েন। আরও প্রকাশ মণিপুরী রমণীর 
ওজন প্রায়'আড়াই মণ এবং কাজী সাহেব যখন পারে অবতীর্ণ হইলেন 
তখন তাহার 'ইজ।র-আচকান এমন কি তাহার তুকর্ণ টুপী কিংবা! একটি 
পাছুকাও স্থানচ্যুত হয় নাই ।” 

হাজরা রোডের রক্‌ হুঙ্কার দিয়ে বললে, 'শাবাস ! 

অজনদা বললে, “চাচা, আপনার বর্ণনাতে যা হয়নি, এই ঘটনার 
বিবৃতিতে তা হয়ে গেল-_-এতক্ষণে বুঝলুম, আপনার কাজী সাহেবের 
গতরে কী অন্ুরেরই জোর ছিল ।; 

রকের বড়দা বললেন, 'ল্যাটে বুঝলে হে অজন, ল্যাটে ।' 

আমি বললুম, “খবরট। প্রথম পড়েছিলেন বাবা । তিন আমাদের 
সবাইকে ডেকে সেইটে রসিয়ে পড়লেন। দেখি দেমাকে মাটিতে তার 
পা পড়ছে না__ঙার কাজীকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন । 

ইতিমধ্যে চাপরাশী মহরমদী এসে উপস্থিত । সে বাজারে খবরটা 
শুনে এসেছে । আস্তে আস্তে আমাকে বলে, জানেন, এ মনিপুরী 
ওরংটা কে? আমি বলুম। “না তো? । বললে, "এ যে হাভীর গতর 
ইয়া লাশ বেটি। হাটের দিন আমাদের সামনের রাস্ত। দিয়ে ধামায় করে 
গামছ! বিক্রী করতে যায় ।' 

বাবা, দাদার! আমি সবাই স্তন্তিত। ও রমণীর বর্ণনা দেওয়া আমার 
শক্তির বাইরে । বোন্দা বোন্দা, পিগু পিগু, ধামা ধামা শেফ চধি দিয়ে 
তৈরী সে রমণীর দেহ। মাথায় ধামা। সর্বাঙ্গ ৭লথল করছে আর ঘোর 
শীতকালেও 'সর্বদেহ থেকে গলগল করে ঘাম ঝরছে। হাপাচ্ছে আর 
এগোচ্ছে, গাছ-তলায় বসে জিরোচ্ছে আর হাঁপাচ্ছে। প্রতিদিন চবির 
গোল! বেড়েই যাচ্ছে এবং শেষের দিকে ওর ঠেলায় তার মুখ আর চোখ- 
ছুটে। প্রায় দেখাই যেত না। এই তে] দেখে আসছ ছেলেবেলা ধেকে। 


১৩২ 


নদীর শোতে কাজী সাহেব এই হিমালয় বয়েছেন পাক্কা এক ক্রোশ ! 

আমার বাব! 'প্রাচীনপন্থী ধর্মভীরু লোক ছিলেন । বেপর্দা রমণীর 
দিকে তাকাতেন না । এখন দেখা গেল, সে রমণী তারও দৃষ্টি আকর্ষণ 
করেছিল। “ও, তাই নাকি 1) বলে বারান্দা থেকে ঘরের ভিতরে চলে 
গেলেন । আমরা গুড়িগুড়ি বড়দার বৈঠকথানায় গিয়ে প্রথম এক চোট 
চাপা হাঁসিট। হেসে নিলুম- সকলের মুখে এ এককথা, “সমুচা তু ট্রপী 
জুতে। সহ কাজী মাহেৰ উঠলেন নদীর ওপারে-_-ওর বগলমে মনিপুরী 
ওরৎ-_-ইয়! লাশ ।। 

ইতিমধ্যে বাবা! আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন একখান! পোষ্টকার্ড 
_-কাজী সায়েব বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে এবং একটি মানুষের 
প্রাণরক্ষা করতে পেরেছেন বলে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখা । আমর 
পড়ে ভাকে পাঠিয়ে দিলুম | 

দিন ছুই পর সে কী তুল-কালাম কাণ্ড! প্রথমটাম্স় দেখলুম 
কাজীসাহেব উর্নাডো বেগে উঠছেন বাবার বারান্দায়__আার এই প্রথম 
দেখলুম, তার বগলে মসনবীর বোন্দা নেই, যদিও হাটে মাঠে ঘাঠে 
খেয়াপারে মসজিদে তাকে বোন্দাহীন অনস্থায় কেউ কথনে! দেখেনি । 
আর এই প্রথম শুনি তার সেই মুছুল স্বর আর নেই। নাক দিয়ে 
সিন্ধুদেশের ব্রাহ্মণী বলদের মত শ্বাম-নিশ্বাস প্রন্ধ্থুরত হচ্ছে, চাপ 
দাড়ি চিত্তিরবিত্তির ছড়িয়ে পড়েছে, চোখে মুখে হুগগ্া_:জিাং সা বললেও 
অতুযুক্তি হয় না। 

আর বার বার একই কথ। বলছেন, 'আপনিও) আপনিও!" 

আমর হাবা বনে খনে বাবার দিকে খনে কাজী-সাহেবের দিকে 
তাকাই । বাবাই বুঝিয়ে বললেন, “কাজী বলছেন, এ মনিপুরীকে " 
বাচাবার কোন মংলবই তার ছিল না, তিনি নাকি-_” 

কাজী মাহেব কাঁকয়ে উঠলেন, “আমাকে ধরেছে কোমরে জাবডে। 
তওবা, তওবা কী ঘেন্না? তিনি তারই স্মরণে যেন শিউরে উঠলেন । 
আমর। যে হাসি ঠেকাতে পেরেছিলুম সে নিতান্তই আল্লার মেহেরবানী: ।' 

কাজী-নাহেব বারবার বোঝাবার চেষ্টা করছেন, তিনি রুস্তম নন, 


১০৩ 


'সোহরাৰ নন, কারো প্রাণরক্ষা করে বীর পুরুষের খ্যাতি তিনি চান না, 
তিনি আপন প্রাণ নিয়েই তখন ব্যস্ত এ হ্শমন্‌ রমণীট। যদি ও বুকম 
তাকে জাবড়ে না ধরতো আরো কত কী। 

বাবা ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন, “চেষ্টা করলেই তো আপনি নিষ্কৃতি পেতে 
পারতেন) 

কাজী-সাহেবের চোখের তার তার তুকী টুপীর ফুন্নায় গিয়ে ঠেকেছে। 
এবারে ককৃককিয়ে বললেন, “হুজুর এ ওরতের লাশ তো৷ দেখেননি-_-ভাই 
বললেন ।।' 

নিতান্ত সত্যের অপলাপ হয় বলে বাবাকে আপত্তি জানাতে হল। 

আমি বললুম, 'যাকে আপনি ছু'মাইল বয়ে নিয়ে যেতে পারলেন-_ 

কাজী-সাহেৰ প্রায় কেঁদে উঠলেন, “ক বলে ছু'মাইল 1, আমি এ 
খবরের “কাগজওলাদের যদি একদিন পাই? হাত ছুটে তিনি মুষ্টিবন্ধ 
করলেন। ' “এক মাইল হয় ক না হয়। আমর! বললুম, “এক মাইলই 
সই, আধ মাইলও সই-_তাই কি কম? ফেঁচুগঞ্জের এ জলের ভোড়ে, 
মাঝ গাঙে 

কাজী সাহেব বললেন, মাঝগাডে তোড় কম--” 

মোদ্দাকথা, কাজী সাহেবের গোড়ার দিককার বিরক্তি এখন ঘোর 
ক্রোধে পরিণত হয়েছে । 'টেলিগ্রাম। চিঠি, গ্রামের ছোড়াদের 'বন্দে- 
মাতরম। “জিন্দাবাদ” চীৎকারে তার ম্থখ-শাস্তি গেছে । 'মসনবী সিকেয় 
উঠেছেন। তাকে আত্মত্যাগী, মৃত্যুভয়ে অকাতর পরম বীরপুরুষ বানিয়ে 
কতকগুলো! "হনুমান তাকে বাদর নাচাতে চায়। তিনি এ মর্মে একটি 
দেমাতি (৫917,97011)-প্রতিবাদ-_-লিখেছেন। সেইটে বাবাকে দেখিয়ে 
কাগজে পাঠাবেন এমন সময় বাবার কার্ড পৌছে তার হৃদয় বেদনা চরমে 
পৌছিয়ে দিয়েছে। 

প্রতিবাদ তিনি লিখেছিলেন অতিশয় “বিশুদ্ধ সংস্কৃতে-_বদিও 
অজ্ঞলোক সেটাকে বাঙলা মনে করতে পারে ১-- 

“এতদ্বার! সর্বসাধারণকে বিজ্ঞাত কৃত হইতেছে যে অধম শের মুহম্মদ 
খান কদাপি বীরর্ধভ নহে। আত্মরক্ষার্থেই সে শশব্যস্ত-_ইত্যাদি ইত্যাদি।” 


১৩৪ 


প্রতিবাদটি পড়তে পড়তে এত ছুঃখের ভিতরও কাজী সাহেবের মুখে 
ই প্রথম এক ছটাক হাসি ফুটলো । আমাদের দিকে তাকিয়ে শুধোলেন; 
ভাষাটা! কি রকম হয়েছে ? 

বড়দ।-___'অপূর্ব অপূর্ব 1) * 
কোরাস মেজদ।-_ শনবছ্চ, অনবদ্য !? 
আমি-_সাধুং সাধু !?” 

বাবা বললেন, 'পত্রিকাওলারা এটা ছাপাবে ন1 1, 

কাজী সাহেব আশ্চর্য হয়ে শুধোলেন, “হক্‌ কথার প্রতি তাদের কি “ 
কানোই মহববৎ নেই ? 

বাবা বললেন, “ওর! একট। জিনিন নিয়ে মেতেছে । যে বেলুন: 
)ডিয়েছে মেট। নিজেরাই ফুটো করতে যাবে কেন ? 

এমন সময় আমাদেন্ বাড়ির বুড়ী দাসী এসে বললে, মা বলে 
গাঠিয়েছেন, কাজী সাহেব যেন নেয়ে খেয়ে যান__-এবকম লোককে নাকি” 
[ইয়ে স্ুথ | 

ইয়াল্লাঃ বলে কারী সাহেব হু'হাতে মাথা চেপে তক্তপোষে ৰসে * 
[লেন ।, 

অজনদ! আমাদের ভিতর বিচক্ষণ সংসাত্রী লোক । সে বললে, “চাচা, 
ঘাপনারা ধীরস্থির ভাবে ওকে বোঝালেন না কেন, তিশি বত আপত্তি 
দানাবেন শ্রদ্ধাটা তত বেশী গড়াবে । তিনি চুপমেরে থাকলে গেরোট! 
সাপনার থেকেই খুলে যাবে |" 

আমি বললুম, 'বাৰা তো ওঁকে সেই কথাই বারবার বোঝাবার চেষ্ট; 
£রেছিলেন। কাজী সাহেবের আপত্তি, তা হলে তিনি যে একটি মহাপুরুষ 
'স “অপবাদ? তার থেকেই যাবে। 

তাঁসে যা-ই হোক, আমর। প্রতীক্ষা করে রইলুম; কাগজ প্রতিবাদ 
হাপায় কিনা। আমরা থাকি মহকুম। টাউনে, কাগজ বেরয় সদরে । 

বুধবার সকালে কাগজ আসবার কথা। মঙ্গলবার রাত দশটায় 
কাজী সাহেব পুনরায় তেড়ে উঠলেন বাবার বারান্দায় । তিনি আকছারই 
চাদ্দমাইল দূরের স্টেশনে বেড়াতে" যেতেন। সেখান থেকে কাগজ 


১০৫ 


দুআ ্রঠগল্র-৭ 


খান! সঙ্গে নিয়ে এসেছেন । আমাদের অনুমান ভুল, 'বিজয়শঙ্খ' কলাও 
করে কাজি সাহেবের দেমশাতি ছাপিয়েছে। 1কন্তব_ 

কাজী সাহেব চিল-্যাচানীতে ডুকরে উঠলেন, “দেখুন। কি সম্পাদকীয় 
লিখেছে । তারপর কাতর কণ্ে বাবাকে বললেন, "খান বাহাছুর সাহেব, 
আল্লা আমার সাক্ষী”_আমি জীবনে কখনো কারে। অমঙ্গল কামনা করিনি, 
তত এর। আমার পিছনে লেগেছে কেন? 

বড়দ। চেচিয়ে পড়লেন, 

“আমর। বাঙালী । বঙ্গ ভাসা আমাদের ভাষা । বঙ্গীয় সমাজ 
আমাদের সমাজ | মামাদের শিরায় শিরায় ধমণীতে ধমণীতে বাঙালী- 
রক্ত প্রবাহিত । ম! বঙ্গভারতী, তোমার বিজয়-শঙ্খ এই পতিভ জাতির 
পাপ-তাপ দূর করুক।' 

বুক এক বাকো চেঁচিয়ে বললে, চাচা, আপনার ম্রেমারিটা খাসা 1! 
আমি বললুম। 'মেমারি না কচু! “বিজয় শঙ্খের সম্পাদক ছু হণ্া অন্তর 
অন্তর এই ফরমূলা মোকী-বেমোকায় কোনো না কোনে! জাগায় ঢুকিয়ে 
দিত, তাই সড়গড় হয়ে গিয়েছিল। তা সে বাই হোক বঙ্গভারতী 
ফারতীতে কাজী সাহেবের কণামাত্র আপত্বি নেই-__-আপত্তি যেখানে 
সম্পাদক বলেছে, “ও হো হো কী অসাধারণ বিনয়ী পুরুষ! সম্পূর্ণ! 
অপরিচিত রূমণীর জন্য প্রাণ বিপর্জনে প্রস্তত মহাপুরুষের পক্ষেই এবন্বিধ 
বিনয় সম্ভবে। অপিচ এই ঘোরু কলিকালে অন্তপক্ষ হইলে আমরা 
হয়তো সন্দেহ প্রকাশ করিতাম, কিন্তু কাজী শের মুহম্মদ খানের সঙ্গে 
আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয়ের যোগাযোগ পূর্বাহেই একাধিকবার হইয়া 
গিয়াছে। 

বডদ1 এক 'এক লাইন পড়েন আর পুরনে। তানপুরোর কান মললে 
যে রকম সেউ। কাতও মাও করে ওঠে কাজী সাহেব তেমনি আর্তনাদ 
করে উঠেন। 

বডদ1 দরদী চিঠি হেনে পড়ে গেলেন, “ত্রিযাম। যামিনী প্রদীপ শিখা 
অরনধাণ রাখিয়া তান ঘষে পারশ্ঠের কবিশেখর মৌল'ন। জালাল উদ্দীন 
রূমীর পর্বত প্রমাণ বির1ট মসনবী গ্রন্থ অনুবাদ করিয়। বঙ্গভারতীর অঙ্গদে 


১৬৬ 


গুলে বিজয়মাল্য পরিধান করাইতেছেন তাহা কি আমাদের ন্যায় 
্বাচীন জনেরও অজ্ঞাত ?” 

কাজী সাহেব দাত কিডিমিডি খেয়ে বললেন) উন্মাদ, টন্মদ; বদ্ধ ' 
ন্মাদ | 

মেজদা! বললেন, “কাজী সাহেব, এ আপনার অন্যায় । অবিনাশ 
ক্রবতা এস্থলে ভত্র ব্রাহ্মণ সন্তানের কর্তব্য কর্ম করেছে-___কণামাত্র মিথ্যা 
[লেনি।' 

কাজী সাহেব মৃছ্ুক্ে বললেন, “না বিয়োতেই কানাইয়ের ম1 !' 

কিন্ত কাজী সাহেবের 'পুণ্যের' ভার পূর্ণ হল যখন দেখা “গল সবশেষে 
ম্পাদক অবিনাশ চক্রবতাঁ তর্ক-চুঞ সদাশয় সরকার তথা ছোটলাট 
নাছেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করতঃ দেশমাতৃকার হয়ে তাদের অন্থুরোধ জানাচ্ছেন 
কাজী সাহেবের এই বীরত্বের যেন যখোপযুক্ত সম্মান দেখানো হয়, এবং 
এই সম্পর্কে ভিন্ন তিন্ন দেশে স্বর্ণপদক দানের যে পদ্ধতি প্রচলিত 'আছে 
ভার উল্লেখ করেছেন । 

কাজী সাহেব ছন্নের মত ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ি মুখে হলেন । 

আমরা কিছুতেই তাকে ঠেকাতে পারুলুম ন1।' 

ঘণ্ট বললে, একেবারে ক্লাইমেক্‌সে পৌচেছে তখন। তারপর ? 

আমি বললুম, হ্াাা। তবে আমার কপাল ভালো? কাজী সাহেবের 
সে-ছুর্গতি' আমাকে স্বচক্ষে দেখতে হয়নি! ন্ডার কিছু দিন পরেই 
আমাকে ফের বিদেশ খেতে হল। তবে আমার ছোট বান আমাকে 
জানালে, যখন “বিজয়শঙ্খই” প্রথম খবর ছাপে যে সদাশয় সরকারের 
মৃবুদ্ধির উদয় হওয়াতে স্থির হয়েছে, কাজী সাহেবকে একটি গোল্ড মেডেল 
দেওয়া! হবে তখনাতনি বাবার কাছে 'এমে পরামর্শ চাইলেন, তিনি সেট। 
প্রত্যাখ্যান করবেন কি না, কিংব। লাটসাহেবকে-তারই স্বহস্তে মেডেল 
পরিয়ে দেবার কথা_-সব কথ। গোপনে চিঠি লিখে জানাবেন কি না_ 
কারণ সবাই নাক তাকে বলেছে, এসবের কোনৌ-কিছুট! করলেই 
লাটসাহেব বিগড়ে যেতে পারেন এবং তার চাকরী নিয়ে টানাটা ন লেগে 
যেতে পাবে । বাবা বলেছেন, ও'র উচ্চবাচ্য না করাই ডাঁচত।? 


১৩৭ 


দম নিয়ে বললুম, “কাজী সাহেবের আধিক অবস্থা ছিল শোচনীয় । 
শেষ পর্যস্ত সেই কারণেই বোধহয় তিনি মেডেল নিতে রাজী হয়েছিলেন । 
' চাকরী গেলে বীবীকে খাওয়াবেন কি? 
কিন্ত আমি কল্পনার চোখেও দৃশ্ঠটা দেখে শিউরে উঠি। 
'বিরাউ লভ1 | 'লেকচারের পরু লেকচার চলছে কাজী সাহেবের 
বীরত্বের গুণকীর্তন করে, অবিনাশ চক্রবতর্ণ তর্ক-চুঞ্চুর ন্বরচিত' বিশেষ 
গান গাওয়। হচ্ছে, কাজী সাহেবের গলা জিন্লাফের মত লম্বা হলেও অত 
মালার স্থান হয় না, ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে' গছ পন্যে হরেক রকম 
অভিনন্দন পড়। হচ্ছে, কাজী সাহেবের গায়ের লোক বিস্তর নৌকো ভাড়া 
করে এসে সভাস্থল গুলজার করে তুলেছে__-আর তার মধ্যিখানে কাজী 
সাহেব ঘেমে ভোল-_-ভাবছেন, আল্লার মালুম কি ভাবছেন, একী উৎকট 
সংকট, এ কী দুঃস্বপ্ন, এ কী বিভীষিকা ! 

বোন লিখেছিল, সেদিন সন্ধ্যায়ই শহরে খবর রটে, লাটসাহেবের 
এডিসি নাকি শুনেছে, সাহেব কাজী সাহেবের আচকানে মেডেলটি যখন 
“পিন করেন তখন নাকি সৃদ্কণ্ে ভাঙা হিন্তস্থানীতে বলেছিলেন, “কাজী, 
তোমার সাহসের সঙ্গে মিলিয়ে গড. তোমার দেহ দিয়েছেন । কোনোটারই 
অবহেলা করো না ।) 

সবনাশ ! 

কাজী সাহেবের শেষ ভরসাটুকুও গেল। তিনি মনে মনে আশা 
পোষণ করেছিলেন, মহামান্য সম্রাটের প্রতিনিধি, দেশের রাজ! লাটসাহেব 
অন্তত ধরে ফেলতে পারবেন যে তিনি হীরো নন।7 

জী সী এ 

রকফেলারগণ প্রথমটায় চুপ! তারপরু কলরব করে অনেকগুলে! 
প্রশ্ন শুধোলে। রকের বড়দা এ পাড়ার একটি মাত্র লোক যে পয়সা 
দিয়ে বই কিনে পড়ে। মুখ উপরের দিকে তুলে তারই গহ্বরে এক মুঠে। 
ওডদেশীয় গুণ ফেলে শুধালে, আর মসনবী না কি যেন_-তার কি হল ?' 

“জানিনে। তার অল্প কিছুদিন পরেই. বাব! মা গত হলেন। 
বোনেদের বিয়ে হয়ে গেল। দাদার1 এদিক ওদিক ট্রানসফার হয়ে গেল । 


১০৮ 


বাড়িতে তাল! পড়ল। তারপর পার্টিশেন। হয়ত পূব ন্নগুলায় 
বেরিয়েছে । সে-সব খবরতো৷ এখানে পৌছয় না। 

তবে একটা শেষ সুখবর বোন আমাকে দিয়েছিল । কাজী সাহেব 
গরীব বলে স্ত্রীকে এক দান! গয়ন। দিতে পারেন নি। সেই কুলোপান৷! 
'সোনার মেডেল পেয়ে বউয়ের মুখের খুশী দেখে কাজী সাহেবের মুখেও 
হাসি ফুটেছিল।? 

সঃ চু চু 

ছুপুর বেল একল। একলি পেয়ে টেটেনদি শুধোলো, “আচ্ছা চাচা; 
এর কতট। সত্যি আর কতটা--?? 

আমি বললুম, “দিদি, তাইতো। তোকে গোড়াতেই বলেছিলুমঃ 
অবিস্মরণীয় চরিত্র যখন লোকে আকে তখন কতট। সত্যি আর কতট) 
কলনা, কে বলতে পারে? 


॥ স্ব ॥ 


সমূচ1! হাজরা রোড হাওড়া প্র্যাটফর্মে সমুপস্থিত। অর্থাৎ হাজরা 
রোডস্থ আমাদের রককেলারগণ। অঞ্জনদা, মশাদা, ঘণ্ট মুকুলদি 
__ইস্তক পাঁচ বছরের গুড়গুড়ি । 

আলিঙ্গন, মস্তকান্রাণ ইত্যাদি শেষ হওয়ার পূর্বেই মশাদ। বলঙ্ে। ওঃ 
কী গরমটাই ন। পড়েছে । ফোকাস্‌ টিলে করে দিলে ।” 

মশাদার এ একটা গুণ। কোনে! নুতন টেকৃনিকাল কাজ আরস্ত 
করলে, তার প্রচলিত বুলিগুলে৷ অন্য জিনিসে চট কনে ট্রান্সফার করতে 
পারে। এই ৃর্দিনে সবাই যখন ফটোগ্রাফি প্রায় ছাড়ে ছাড়ে সেই সময় 
মশাদ! এ কর্মে মন দিয়েছে। 

ইতিমধ্যে আরকগ্ডিশন কোচের স্টুয়ার্ড, মেট, রেস্তোরা-কারের বাবুচ 
ইত্যাদি যাবতীয় চাকর-নফর, সরকারী ভাষায় ক্লাশ ফোর স্টাফ লাবি বেধে 
আমায় গার্ড অব অনার দিলে ! 


আমার চোখে মুখে নিশ্চয়ই ভ্রুকুটিকুটিল বিরক্তি ফুটে উঠেছিল । 

রক্‌ চুপ । প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরুতেই দেখি ঘণ্টু, হনহন করে পালাচ্ছে ' 
মুকুলদি হেঁকে শুধালে, “ব্যাপার কি? ঘণ্ট,দী পালাচ্ছো৷ কোথায় ? 

বললে “চাচা! ক্ষেপেছে। নইলে আযারকগ্ডিশনে আসার পর়সাই পায় 
কোথার, ভাবত কোচ ওকে সেলাম ঠুঁকবেই বা কেন? দেদার টিপ, 
দিয়েছে নির্থাত। এবারে চাচ। আমাদের কাছে টাকা ধার চাইবে |, 

রক বললে, 'সত্যি তো৷। কিন্তু ব্যাপারট1 কি ? 

আমি বিরস মুখে বললুম, “বাড়ি গিয়ে ।? 

চা ট। দেখেই জানটা। তর-জল হয়ে গেল। চ1 আমর! বড় একটা!। 
থাই নে! কিন্তু সামনে না থাকঙ্গে আমর! আপামী খুনে । (আমি 
“অসমিরা" বলিনি মনে থাকে যেন ) ওটা একট। সিম্বল । মা কালী 
নৈবেগ্য ছোঁন না, কিন্ত না দিলে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেন। 

দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললুম। “হালের বলদ বিক্রি করে রে, পালের গাই 
বিক্রি করে ।? 

সবাই শুধালে, “সে আবার কি? এর। শহুরে । “হালের বলদ? 
“পালের গাই? বলতে কি বুকের পাঁজর, জিগরের খুন জানে না? 

বললুম, “*াই দিয়ে আরকোচের টিকিট কেটেছি-_-তোর। কলকাতার 
একশ'তে হিরসিম খাচ্ছিল | আমি বখন দিল্লী ছাড়ি তখন সেখানে ১১৮ । 

পল্মায় যখন উজ্োন বাইতে হয় তখন পাল যদি বাতাস পায় ভা হলে 
দেখবি--আকছাবরই দেখবি--এক। একজন মাল্ল। মাঝ পদ্ম। দিয়ে যাচ্ছে 
তরতর করে। আর সেকী এফট. লেস. ব্যাপার । লোকটার ডান হাত 
মোলায়েমসে অতি আলগোছে হালের উপর বাখা-_যেন কোনে মহারাজ 
দামী সিংহাসনের মখমল-মোড়া হাতলের উপর হাত রেখে পোট্রেট পেন্টি 
করাচ্ছেন। আর বা হাত দিয়ে ধরেছে পালের দড়ি। যেন প্রেমিক 
অলস ভরে প্রিয়ার বিন্ুনিটি তুলে ধরেছেন। প্রিয়! পালের বুক ফুলিয়ে 
উড়ে চলেছেন উজানে । 

তখন বদি সে দেখে আরেক নৌকায় তিনজন মাল্ল! হাল বৈঠা মেরে 
মেরে নেয়ে-ভিজে কাই হয়ে যাচ্ছে, এক বিঘৎ এগ্তে পারছে না, পা্গ 


১৯১০ 


নেই বলে, তখন সে চিৎকার করে তাদের বলে, "হালের বলদ বিক্রয় কর; 
পালের গাই বেচে দে -বাঁকিটা আর বলে না সবাই জানে । তার মানে 
এ পয়সা দিযে পাল কেন ।? 

টেটেনদ্দি উপস্থিত অর্থাভাবে । এটা সেটা বেচছে। নবীন হদিশের 
আশায় শুধোলে, “আপনি কি বেচলেন ? ইঙ্গিতট! বড় রূঢ। 

“মনিং স্ুট, ইভনিং জ্াযাকেট-- 

বড়দা পিচভর। মুখ আকাশ পানে ছুলে বললে, ভালো করন নি। 
এই আমি কেদার-বদ্রী হয়ে এলুম। পথেই যত বাহার-_-দেবখত। দেখতে 
প্রমন কিছু না, কিন্তু যখন সাঝের ঝৌঁকে ইভনিং জ্যঃকেউটি পরেন তখন 
দেখায় লাল 1? 

বিগ্রহের ঈভশিং জ্যাকেট! ও? বুঝেছি। ঠাকুরকে যখন সন্ধ্যায় 
পি'দূর চন্দন দিয়ে শৃংগার/করানে। হয়। নেইটে বড়দার ভাষায় ঈভনিং 
জ্যাকেট পরা । বুঝতে মমর লেগেছে । দিল্লীতে তিন বছর থেকে থেকে 
আক্েল-বুদ্ধি ভোত। মেরে গিয়েছে । 

টেটেনাদ শুধলে, “আর গার্ড অব অনার পেলেন বুঝি সেই ঈভনিং 
জ্যাকেটের পর়পার মর্গানেটিক টিপস. দিয়ে ৮ টেন ইংরিজিতে এম-এ।' 
লাভিন শব্দের ইটের থান মাঝে। 

অজনদ1 বললে, "সে মধ দিন গেছে রে টেটেন, তুই জানিস নে। 
টিপস্‌ দিলে তোকে পাতির করলে কক্তেও পারে, কিন্ত না দিয়ে তুই 
যদি এম-াপ টেম-পি হবার ভাণ করতে পারিস অর্থাৎ ভি আই পি 
টিআই পি-- 

মশাদ। আনট্র। ডিমোক্রেট। ব।পা দিয়ে বললে, এই ভিআ:ই পি 
কথাটা প্রথম কে দাপহার করেছিল ক্ষানেন। চাচা; লোকটা নিশ্চয়ই 
জন্মদাস ছিল । ভি আই পিষদি 'কউথাকে তবে সে মুটে, জুতা- 
বুরশওলা-_-সরকারের এক? পয়সা নেয় না, সরক্তাক়ের গাড়ি মুফতে 
চড়ে না) 

আমি রললুম, “আমি টিপস দিনি। শোন। 

পালের বলদ বিক্রি করে তো আরকোচে চাপলুম। দিল্লী চিরতরে 


৯১১ 


ছেড়ে চলে যাচ্ছি বলে দিল্লীর খানদানী ইয়ারদোস্তরা গাড়িতে বিস্তর 
খাবার-দাবার তুলে দিলে । বিরয়্ানী, মুরগী মুসল্লম থেকে মিঠা টুক্ড়া 
মোরববা ইস্ভেক ! চারটে টিফিন কেরিয়ার ভর্তি। দুজন তো এলেন 
কানপুর অবধি । তারা আবার দোস্তী পাকাতে ওত্তাদ। কোচের প্রায় 
সবাই জড়ো! হল আমাদের কুপেতে | শুরু হল মুশাইরা, বয়েৎ-বাঁজি। 
তারপর নবাবী খানাপিনা । স্টুয়ার্ড সোডা সাপ্লাই করতে করতে কাহিল 
হয়ে গেল। 

রাত বারোটার সময় যখন যে যার কোঠে ফিরে গেছেন, আমি একা। 
তখন দেখি স্টয়ার্ড। পিছনে তারই দলের ছু'তিনজন। ভাবলুম্র 
লোকগুলো বিস্তর খেটেছে__এই বেলাই টিপস.উ। দিয়ে ি। কিন্তু তার 
পূর্বেই সে ডবল সেলাম কনে শুধালে। “হুজুর, 'আপ তো ডক্টর হৈ? 
গোয়ানীজ টোয়ানীজ হবে-_ডর্টরই বলেছিল । আমি না ভেবেই 
বললুম, “হ্যা 1” তথন বিস্তর কীচুমাচু হয়ে, এন্তের ঢোক গিলে, ঘাড়ের 
চুল ছিড়ে প্রায় ক্লীন শেভ করে বললে, “হুজুর যদি কিছু মনে ন 
করেন-_” 

আমি বললুম। “কী আপদ ! বলেই ফেলে! না !” 

বু কষ্টে ৰবোঝালে, তার মেটের ভয়ঙ্কর জ্বর, বেহদ্দ বেহুশ, এই যায 
কি তেই যায়। হুজুরের যদি দয় হয়, হুজুর মেহেরবান। 

প্রথমটায় আমি বুঝতে পারিনি । বললুম, “বট়ী আফসোস্‌ কী বাং 
কিন্তু আমি কি করবে ?” 

এবারে সে তার সবশরীর বাং মাছের মত মোচড়াতে আরুস্ত করলে 
যেন জ্বরট! তারই ! বললে, “আপনি তো৷ স্যর, ডক্টর 1” 

তথন আমার কানে জল গেল। বিরক্ত হয়ে বললুম। “আমি জ্বর 
সারাই কে বললে ?? 

লোকটা ভয় পেয়েছে । অথচ আপন কাজ উদ্ধার করতে চায় বনে 
মেলা তর্ক করে আমাকে চটাতেও চায় না। বললে, “এই তে রিজার্ভেশ 
কাড়ে লেখা রয়েছে, হুজুর 1” 

এ ছুনিয়ায় “আলী? নামট। বাঙল। দেশে “কেষ্টা' নামটার মতই বিরল। 


১১২ 


গুবলেট হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমার আপিস বার্থ রিজার্ভ করার সময় 
ডক্টুরটি জুড়ে দিয়েছিলেন। সেইটেই এখন কাল হল। 

আমি সবিনয় বললুম, “সে অন্ত ডাক্তার 1” 

বোধ হয় ভূল করলুম । কারণ এর পর দেখি স্টুয়ার্ডের সাঙ্গোপাঙ্গরা 
তার পিছন থেকে মাসিকপত্রের উপন্যাসের মত ক্রমশ প্রকাশ্য” হচ্ছে | 
সকলেরই হাত জোড় করা। হুবহু মোগল পেন্টিংয়ের দরবারের মত ! 
অবশ্য মুখের ভাব ;__আনামীর সনাক্তকরণ সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে। 
এইবারে সাক্ষীশাবুদ-দলিল-দস্তাবেজ আরস্ত হবে। 

আমি অনেক করে বোঝাবার চেষ্টা করলুম, আমি অন্য ডক্টর । তার! 
তর্ক করতে চাষ না কিন্তু জানতে চায়, তবে কিসের ? ডক্টুর অব 
ফিলপফি এদের বোঝায় কি প্রকারে ? শেষটায় বললুম। “দেমাগ সাফ . 
করনেক1 ডাকৃটর”-_“অর্থাৎ মগজ সাফ করার ডাক্তার ॥ শুনেছি, দর্শন 
অধায়ন করলে মস্তিষ্ক পরিফষার হয়, অবশ্য আমার: বিশ্বাস বিপরীত । 

রমা 'রোড থেকে গড়িয়াহাট পর্যস্ত তাবৎ হাজরা রোড এ-কথায় 
আনন্দে সায় দিলে । কথায় বলে “দশের মুখ খুদার তব্ল।', কিন্তু তৎসত্বেও 
মনে উল্লাস বোধ করলুম না। যাক্‌গে। 

“এই “দমাগ সাফ করাট।? গিলতে স্ট,যার্গোষ্ঠীর সময় লেগেছিল। 
শেষটায় স্বয়ং স্টুয়ার্ডই হালে পানি পেল। ভয় পেয়ে বললে, “না, হুজুর, 
মেটের মাথ। খারাপ নয় |? 

ওহরি! এরা ভেবেছে, আমি পাগলের ডাক্তার । 

টেটেনদি বললে, “সাইকায়াটিস্ট।; 

শামি বললুম কিচু । মেডসিন না! পড়েও এ কর্ম করা যায়। সেটা 
ও! বুঝলে তো আমি বেঁচে ফেতৃম। তা নয়। ওরা ফিসফিস করছে, 
আর সব মেলা ব্যামো সারানোর পর আমি পাগল সারাতে মন দিয়েছি 
-এী কর্ম সব চেয়ে কঠিন বলে! পাগল সারাতে পারে; আর জ্বর 
সারাতে পারে না! ভু"ঃ ! হাতী? বানান করতে পারে আর “পিপীলিকা 
পারে না_হাতী কত বিরাট আর পিপলিকা কত ছোট-_-এঁ 
গোছ যুক্তি। 


কিংবা বলতে পারো, ছোট বিপদ এড়াতে গিয়ে পডলুম বড় বিপদ্দে। 
সেই যে কোন্‌ ্তুবুদ্ধিমান বৃষ্টি এড়াবার জন্য ডুব দিয়েছিল কুরে ! 

তা সেযাকগে। ওরা আমাকে বিধান ডাক্তার, মানুষের ডাক্তার, 
পাগলের ডাক্তার কুকুরের ডাক্তার, যা-খুশি ভাবুক, আমার তাতে থোড়াই 
এসে যায় । 

কিন্তু এঁবিধান ডাক্তার নিয়েই লাগল গে।লমাল। ওরা ভেবেছে 
আমি 1বধানবাবুর চেয়েও বড় ডাক্তার । কিছুটা আমায় শুনিয়ে, কিছুটা 
নিজেদের ভিতর তাদের মধ্য যেন নিলাম ডাকাডাকি আরস্ত হয়ে 
গিয়েছে, আমার দক্ষিণা কত! চৌষটি না কত থেকে আরস্ত হয়েছিল 
শুনতে পাইান, কিন্ত আমার চোখের সামনেই, দেখ তে না দেখ, দশ বিশ 
হাজারেও গিয়ে পৌচেছে। আরু কত রকম যু1ক্তই না একে অন্যকে 
দেখাচ্ছে । আরকগ্ডিশন চড়ি, সে তে। ভাল-ভাত । কউ: বাঝ। প্যাটর! 
--সব তানের মুখস্থ । দামী দামী ডাক্তারির মালপত্র ওদের ভিতরে । 
স্ব বিলায়তী, জর্মনি, আরো কত কি! 

আমার চেহারা দেখে আমাকে উজবুক মনে হতে পারে? কিন্ত 
পাষণ্ডের মত চেহারা আমার নয়, সে-কথা1 আমার মা শামাকে বলেছে। 
তবে কেন এর ভাবছে, আমি একটা আস্ত কসাই, মোট। টাক। না পেলে 
বরঞ্চ একটা লোককে মরতে দেখব তবু কড়ে আড্লটি হুলব না। 

আমি বহু কষ্টে আত্ম-সম্বরণ করে বোঝাবার চেষ্টা করলুম, ামি 
ডাক্তারিত কিছুই জানিনে, খামখ! একটা লোককে কুচিকিৎসায় মারি 
কোন আক্কেলে? 

ওরা চুপ করে যেভাবে আমার দিকে তাকালে তাতে মনে হল আমি 
যেন একটি পয়লা নম্বরের গোড়মে। তবে গোড়পে শুধু একটিমাত্র 
গাধীকে খুন করেছিল, আমি করি গপ্ডায় গণ্ডায় | | 

আমিও চুপ। 

শেষটায় তার! শ্থ মন্থরে প। চালাতে আরম্ভ করলে । 

আমার মনে করুণার উদ্রেক হ'ল। আর এ করলুম ভুল । যুধিচিরের 
মত খুষ্ট কোন একটি পাপ করার ফলে যদি কখনো নরকদর্শনে আসেন 


১১৪ 


তবে তাকে এ একটি উপদেশ দেব, “মহাশয়, আপনি করুণ! করে এ করুণ। 
করার উপদেশটি দেবেন ন1 1; 

ওদের বললুম, “তা ওকে এলাহাবাদে নামিয়ে দাও না'”_মনে মনে 
বললুম, পঞ্সিতজীরও নিশ্চয়ই গণ্ডাকয়েক অনারারি ডক্টরেট আছে ' 

এক লম্ফে সবাই আবার আমার দোরের সামনে । এককণ্ঠে সবাই 
বললে, “এলাহাবাদ তো! পিছনে ফেলে এসেছি ।। 

তখন মনে মনে চিন্তা করলুম; হাওড়া পর্ষস্ত তা হলে তো। এর কোনে। 
গতি নেই। তখন আরে মনে পড়ল, বছর তিনেক পূর্বে আমার ফ্লু 
হওয়াতে এক লহ্ধদয় বন্ধু আমাকে এক শিশি ফু টেবলেট দিয়ে যান, 
আমি ভালো করেই জানতুম, ফ্রু ওষুধে সারে নাঃ তাই সে ওষুধ তেমনি 
পড়ে ছিল। দিল্লী ছাড়ার সময় আমার সময় ছিল না বলে চাকরকে, 
বলেছিলুমঃ ঘরের তাবৎ মাল যেন প্যাক করে দের। সেই কারণেই 
ছুনিয়ার যত আবর্জনায় ভণ্ভি ছু' গণ্ডা বাকৃসোপ্যাটরা ! ঘাটবে কে। 
খুঁজে পাবেন কোন হনুমান ? 

তারই ইঙ্গিত দিয়ে করলুম দুই নম্বরের তুল-_বযিও আসলে সেইটেই 
পয়লানস্বত্রী ভুল। সঙ্গে সঙ্গে আমার আটট। বাক্স করিভোরে সারি বেঁধে 
সাজানো হল--শামি বাধা দিতে না দিতেই । তখন নাচার হরে সেই 
শিশিটার বর্ণন! দিলুম । 

পুলিনবিহান্ী সেনের বাড়ি এক ভোরে সার্চ হয়েছিল। আমি সে 
রাত্রে তার সঙ্গে ছিলুম বলে স্বচক্ষে দেখেছি পুলিশ কি রকম চিরুনি চালায় 
টথব্রাশের উপর--তার থেকে এটম্‌ বম্‌ বেবোয় কিনা, সেই আশায়। 
মায় স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড এদের কাছ থেকে তালিম শিয়ে যেতে পারত কি 
করে সার্চ চালাতে হয়। 

আড্ডার দিকে তাকিয়ে বললুম; 'বল দেখি ভাইর সব, তিন বছরের 
প্রবাসে মানুষের কোন্‌ না দশ বিশটা ওষুধের শিশি জড় হয়। তারই 
এক-একট। বেরুয় আর তারা একে অন্তের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি 
হাসে । ভাবখানা।+-তবে না! বলেছিলেন চাদ, তিনি ডাক্তার নন। আর 
ইংরিজি পড়তে জানে না বলে লাইটার ফ্ুইডকে ভাবে ওষুধ) ফেন্সি গদের 


১১৫ 


শিশিকে ভাবে ওষুধ, সেণ্টের শিশিকে ভাবে ওষুধ--একমাত্র সসের 
শিশিকে ওষুধ ভাবে নি-_ রেস্তোরশাকারে কাজ করে বলে। 

ওষুধের শিশি তো! আর রাসবিহারী বোস নন যে জাপানে পালিয়ে 
যাবেন। ধরা পড়লেন । বমালন্ুদ্ধ গ্রেফতার--. 

অজন বললে, “এই “বমালন্ুদ্ধ' কথাট] কি ভূল নয়? “বৰ; মানেই তো 
সুদ্ধ/ ইংব্রেজিতে বাকে বলে “উইথ । উইথ মাল গ্রেফতার । আবার 
সুদ্ধ কেন! হয় হবে 'বমাল গ্রেফতার" না হয় হবে মালন্ুদ্ধ গ্রেফতার; । 
যেমন বলি বহাল তবিয়তে” আছ, বেহালম্ুদ্ধ তবিয়তে আছি? তো 
বলিনে । 

মশাদ! বললেন, 'রবিঠাকুর ব্যবহার করেছেন ।, 

অজনদ! চটে বললে, “তিনি তে। দক্ষিণ আমেরিকায় বসে কবিতার 
লিখলেন; আকাশে সপ্তষি উঠলো । দক্ষিণ আমেপ্রিকা থেকে কি সপ্তষি 
দেখা যায়? আরো কি যেন আছে? হ্্যা-“বেতসের বাশী' বেতস 
'মানে তো বেত। বেত দিয়ে বাশী হতে কখনে। দেখেছিস ?) 

টেটনদি অলঙ্কার শান্ত্র পড়েছে । বললে “যত সব বেরমিক ?? 

বড়দ। সহুপদেশ দিলেন; 'সে না৷ হয় পণ্ডিত মশাইকে পরে শুধনে! 
যাবে, কোনট। ঠিক। উপস্থিত তোদের বলে দিচ্ছি, রবিঠাকুরের 
সেন্টেনারি আসছে । এখন বছর ছুই এসব কথা বলেছিস কি পাড়ার 
ছেলেরা মারবে ।' 

মুকুলদি উঠে চলে যাচ্ছে, দেখে সবাই হস্তদস্ত হয়ে বললে বলুন, 
চাচা, তারপর কি হল ।১ মুকুলদিকে কে ন। সমীহ করে । ভাড়ারের চাৰি 
তার হাতে । 

আমি বললুম। “ওযুধটা বেরুলে পর আমি বললুমঃ “এরই ছুটি গুলি 
থাইয়ে দাও।” মনে মনে বললুম। “এতে তার ভালো-মন্দ কিস্ম্টি হবে 
না-_হাওড়া গিয়ে য। হবার তাই হবে।” 

নিশ্চিন্ত মনে দ্ুমুতে গেলুম | ভাবলুম, আপদ গেছে। এ করলুঃ 
আরেক ভূল। 

পরদিন সকালে বর্ধমানে চোখ মেলার সঙ্গে সঙ্গে দেখি আমার কৃপের 


১১৬ 


সামনে একপাল লোক একসারি কাপড়ে ঢাকা ট্রে নিয়ে হাজির । ভাই, 
তোর। যদি থাকতি-_রুটি-মাখন-মমলেট বাদ দে-- ফ্রাস্ফুর্টার সসেজ; 
মালাবারের টিনের চিংড়ি, ইস্তেক মুসলমানী কাবাব পর্বোটা 
আমার ভ্রকুটিকুটিল নয়ন তার! লক্ষ্যই করলে না। সমস্বরে ঠেঁচিয়ে 
বললে, 'সেরে গেছে, হুজুর, একদম সেরে গেছে ।; 
আমি বেবাক ভুলে গিয়েছিলুম । বললুম “কে ? 
সবাই প্রথমটায় থ মেরে পরে বললে, “এ যে মেট।' তারা যেভাবে 
তাকালে তাতে মনে হল ওরা যেন বলতে চায়) ডাক্তারগুলে কী বেদরদ? 
চামার-_ রুগীর কিহল না! হল থোড়াই পরোয়। করে__ইস্তেক কে রুশী) 
৷ সেও ভুলে যায়। 
স্টয়ার্ড সঙ্গে সঙ্গে বললে, 'সকালে উঠেই তিনখানা ভবল রুটি 
খেয়েছে । ছুপটচা। আমরা বারণ করিনি। আপনি তো রয়েছেন। 
আর ভাবন। কি।” 
আমি মুখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালুম ।' 
অজনট। পেটুক। বললে, “তা বেশ। ব্রেকফাস্টটা ভালে! করে 
খেয়ে নিলেই পারতেন !, 
আমি বললুম। “দেখ অজন, আস্ত একটা বুজরুক পেলি নাকি. 
আমাকে-_পেশাদার গুরু-মুশাঁদরা এ রকম ধাপ্পা মেরে খায়। আমাকে 
কি তাই ঠাওরালি ? মশাদা বললে, চাচাকে কখন ব্রেকফাস্ট খেতে 
দেখেছিস-_-সেইটে হল আসল কারণ | 
টেটেন বললে, “আপনি থামুন, চাচাকে আর চটাবেন না। বলুন, 
চাচা ।' 
আমি বললুম। ব্রেকফাস্ট খেলুম না দেখে ওরা ভড়কে গেল-_অবশ্ 
চা ছু? কাপ খেয়েছিলুম | ওর] নিঃশবে চলে গেল। 
হাওড়া পৌছবার পূর্বে চীফ স্টয়ার্ডকে ডেকে বললুম, “এই নাও 
চায়ের এক টাকা, আর তোমাদের টিপস চার টাকা ।” 
সট়ার্ড ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইল। তার পিছনে একট। অচেন। 
চেহারার লোক ভ্যাক করে কেঁদে ফেললে-__পরে জানলুম এ লোকটাই 


১৭ 


মেট, আমাকে সেলাম জানাতে এসেছিল-_তার পর ডুকরে ৰললে, 
আমরা গরীৰ আপনার ফীজ দিতে পারলুম না, আর আপনি উল্টে 
দিচ্ছেন বথশিশ.।” 

আম বিরক্ত হয়ে সব কটাকে বের করে দিয়ে কুপের দরজা বন্ধ করে 
দিলুম। তারপর তোর! তো। দেখলি আমাকে প্ল্যাটফর্মে গার্ড অব অনার 
দিলে ।? 

বলে গুম হয়ে বসে রূইলুম । 

ঘণ্টদা একটু মুরুবিব ঢঙে কথা কয়। বললে, “এতে আপনি অত 
চটছেন কেন? আপনার ওষুধেই সারুক আর নিজের থেকেই সারুক, 
আপনার মন খামখ! চঞ্চল করছেন কেন ?) 

আমি উম্মার সঙ্গে বললুম। তোদের মত আকাট নিরেট গবেট আমি 
ইহজন্মে, গুবজন্মে জম্মে-জন্মে কনে দেখিনি । আমি স্পষ্ট দেখতে পেলুম। 
ওদের নুখের উপর কৃতজ্ঞতা মাখ। ছিল বটে-_যার উপর হক্ক অবশ্য আমার 
নেই-__তার পিছনে 1ছল লেখ! সব । অর্থাৎ আমি গরীব দুঃখীর চিকিৎসা 
করিনে, সেটা এড়াবার জন্য মিথ্যে কথ বলতেও তৈত্রী-_-অথচ আমি যে 
হাত উপু করলেই ওদের পর্বত সেট৷ সপ্রমাণ হয়ে গেল। মোজ। বাংলায় 
নব, ক্যাডও বলতে পারিদ-_ 

আমার ক তখন পর্দার পর পর্দা চড়েই যাচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ 
দেখি জন! পাচেক লোক আমাদের বাড়ির নেমপ্লেট পড়ছে । লীভার 
সেই খ্যাট! স্ট়ার্ড! আমি আতকে উঠলুম | কিন্তু ঠিকানা পেল কি 
করে ? ওঃ ! লাগেজ গুলোর উপর নাম ঠিকান। সীাটা ছিল। অবশ্ঠ বডির 
নেম-প্রেটে আমার নাম নই | 

আমি বৈঠকখানায় গা ঢাকা দেবার পূর্বে বললুম। এ সব মালর। 
আসছে। ওদের একটু বুঝিয়ে দে না, ভাইর সব, চাচা-জানরা আমার, 
যে আমি ডাক্তার নই! তোদের কথা তো বিশ্বাস করবে ।, 

ও ৪ ১ 
'আড়াল থেকে অনিচ্ছায় নিয়লিখিত কথোপকথন কর্ণে প্রবেশ করল । 
“এট। ডাক্তার সাহেব অমুকের বাড়ি ? 


৯৯৮ 


অজনের-গল। £ হ্যা, হ্য। ।--এ ঢাউস বাড়ি আমার নয় । 

“নেমপ্লেটে নাম ন1 দেখে ভাবলুম, কি জানি-_- 

বাধ৷ দিয়ে মশার গল! £ “আরে নাম থাকলে কি আর রক্ষে ছিল। 
ছি'ড়ে ফেলতো ন! ছুনিরান্ন যত সব রুগী টুকরে। টুকরো! করে । 

একাধিক গদগদ কণ্ঠম্বর : “তা হুজুর আরকি বলবেন, আমরা কি 
জানিনে? এই মোতীর জ্বরটা বই পাজ।। একবার ধরলে দশদিনের 
কমে? 

অন্ত কট £ “বিশদিনের কমে ছাড়ে না। আর ভাক্তাক্স সায়েবের ছুটি 
গুলিতে ই__-৮ 

আবেক ক বোধহয় স্টুয়ার্ডের__“কিছু যদি না মনে করেন, ওর 
ফাজ কত ?) 

অঞ্জনের টেনে-টেনে বল! £ “তা তাত) দেড, ছুই 

হুশ? বাপ), 

হাজার হাজার। শ নগ |) 

নিশ্চুপ । 

মশার গলা £ “অবশ্য যখন বাইরে যান এ ষে, মাসখানেক আগে 
রামপুরের নবাবের ছেলে 'এসে তাকে জোর করে নিয়ে গেল--স্পেশাল 
ট্রেনে__তখন ত্রিশ হাজার না কত-_বল ন1 ঘণ্টুং তুই তো! সঙ্গে ছিলি__ 

সর চু ১৪ 


ভাবছি এ রুকৃটা ছাড়ব। 


॥ কর্নেল ॥ 


কুরফুস্টেন্ডাম্‌বালিন শহরের বুকের উপরকার যজ্ঞোপবীত বললে 
কিছুমাত্র বাড়িয়ে বল! হয় না । ওরকম নৈকষ্য-কুলীন রাস্ত। বালিনে কেন, 
ইয়োরোপেই কম পাওয়! যায় । চাচার মেহেরবানশীতে “হিন্দৃস্থান হৌস' 
যখন গুলজার তখন কিন্তু বালিনের বড় হরবস্থা ; ১৯১৪-১৮-এর শ্মশান 
ফেরত বালিন ১৯২৯-এও পৈতে উল্টো কাধে পরছে, এবং তাই গন্ীব 


১৯৯ 


ভারতীয়দের পক্ষেও সম্ভবপর হয়েছিল কুরফুস্টেন্ডামের গা হেঁসে 
উলাওস্টাসের উপর আপন রেস্তোর" “হিন্ুস্থান হৌস' পত্তন করার । 
বহু জর্মন অজর্ন “হন্দুস্থান হৌসে” আসত | জর্মনরা আসত নৃতনত্বের 
সন্ধানে- কলকাতার লোক যে রকম “চা ইনীজ? বা 'আমজদিয়ায়” খেতে যায়। 
ভারতীয়েরা নিয়ে আসত জর্গন, অজর্সন বান্ধবীদের-_মাছ-ভাত বা ডাল- 
রুটির স্বাদ বাৎলাবার জন্ত।, আর বুলগেরিয়ান, রুমানিয়ান, হাঙ্গেরিয়ানরা 
আমত জশমননদের সঙ্গে নিয়ে, তাদের কাছে সপ্রমাণ করার জন্য যে তাদের 
আপন আপন দেশের রান্না ভারতীয় রান্নার চেয়ে ভালো । কিন্তু ভারতীয় 
রান্না এমনি উচ্চশ্রেণীর সত্ভা যে তার সঙ্গে শুধু ভগবানের তুলন। করা 
যেতে পারে । ভগবানের অস্তিত্ব যে রকম প্রমাণ কর! যায় না, অপ্রমাণও 
কর! যায় না, ভারতীয় রান্নাও জর্মনদের কাছে ঠিক তেমনিতর প্রমাণ বা 
বাতিল কিছুই করা যায় না। কারণ ভারতীয় রান্নার বর্ণনাতে আছে £__ 
তিস্তিড়ি পলা লঙ্কা সঙ্গে সঘতনে 
উচ্ছে আর ইক্ষুগুড় করি বিড়ম্থিত 
অপূর্ব ব্যঞ্জন, মরি, রান্ধিয়া সুমতি 
প্র-পঞ্চ-ফোড়ন দিল মহ আড়ম্বরে । 
এবং সে গ্রান্তারী রান্ন। কেন, মামুলী রান্নায় সামান্থতম মশল1 দিলেও 
জর্মনর। সে.খাগ্চ গলাধঃকরণ করতে পারে না। আর মশল! না দিলে 
আমাদের ঝোল হয়ে যায় আইরিশ স্টুং ডাল হয় লেটিঙগ সুপ, তরকারি 
হয় বয়েল্ড ভেজ মাছভাজ। হয় ফ্রাইড ফিশ.। আমাদের চতুরর্ণ তখন 
শুধু বর্ণ নয়, রূস-গন্ধ-ন্যাদ সব কিছু হারিয়ে একই বিস্বাদের আসনে বসেন 
বলে চগ্ডালের মত হয়ে বান। কাজেই আমাদের রান্না জর্মনদের কাছে 
এখনে! ভগবানেরই ন্যায় দিদ্ধাসিদ্ধ কিছু নন। দাবাখেলায় এই অবস্থাকেই 
বলে চালমাত।! 
তবে হা, আমাদের ছানার সন্দেশ ছিল কাণ্টের কাটেগরিশে 
ইম্পেরাটিফের মত অলজ্ঘ্য ধর্ম। তার সামনে জর্মন অজর্মন সকলেই 
মাথা নিচু করতেন। ছানা-তত্বে অবাঙালীর অবদান অনায়াসে অবহেল৷ 
করা যেতে পারে । 


৯১০ 


£হিন্দুস্থান হোসে'র সবচেয়ে বড় আড়কাঠি ছিলেন চাচ।। হিগ্ডেনবুর্গের 
গৌোপের পরেই বালিনের সবচেয়ে পরিচিত বস্ত ছিল চাচার বেশ-_তার 
সঙ্গে 'ভূষা” শব্দ জুড়লে চাচার প্রতি অন্যায় করা হবে। মে বেশ ছিল 
সম্পূর্ণ বাহুল্যবঞ্জিত। ্‌ 

কারখানার চোডার মত গোলগাল পাতলুন, ' গলা-বন্ধ হাটু-জোকা 
কোট আন ভাব্রী-ভারী একজোড়া মিলিটারি বুট । লোকে সন্দেহ করত; 
তার কোটের তলায় কামিজ-কুর্তা নাকি নেই। তবে এ-কথা ঠিক কোট, 
পাতলুন, বুট ছাড়া এন্য কোনে। তৃতীয় আবরণ বা আভরণ তার শ্যামাঙ্গে' 
কেউ কখনে। বিরাজ করতে দেখেনি | বালিনের মত পাথর-কাটা শীতেও 
তিনি কথনে। হ্যাট, টুপি অভারকোট বা দস্তানা পরধ্ধেননি। খুব সম্ভব 
শীতের প্রকোপেহ তার মাথার ঘন বাববী চুল ”ঙল। হককে আসছিল কিন্তু 
চাচা সে সম্বন্ধে সম্পুর্ণ উদাসীন । 

সেই অপরূপ পাতলুন, গণ্ডারের চামড়ার মত পুরু গলাবন্ধ কোট, আর 
একমাথ বাবরী নিয়ে চাচা হঠাৎ থমকে দ্াড়াতেন কুরফুস্টে নুভামের 
ফুটপাতে । পেছনের দিকে মাথা ঠেলে, উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতেন 
উড়ন্ত মেঘের পানে । কেন, কে জানে? হয়ত বিদেশের অচেনা-অজান। 
দালান-কোঠা, বাাস্তা ঘাটের মাঝখানে একমাত্র আঞাশ আব মেঘই তাকে 
দেশের কথা স্মরণ কিরে দিত। দেশ ছেড়েছেন বহুকাল হল, কৰে 
ফিরবেন জিজ্ঞানা করলে হী; না? কিছু কবুল না করে কলকাতায় 
উড়িষ্যাবাপাদের মত শুধু বলতেন “ললাউষ্ক লিখন 

বাপিনের লোক শহরের মধ্যখানে দাড়িয়ে মেঘের দিকে তাকিপে 
কাব্যি করে না। ছ'মিনিট যেতে না৷ ঘেতেই চাচার চতুর্দিকে ভিড় জমে 
যেত। তার অদ্ভুত বেশ, বাবরী চুল, ঘনশ্যাম দেহরুচি আর বেপরোম। 
ভাব লক্ষ্য না করে থাকবার যো ছিল না। 

ফিসফিন শুনেই চাচার ঘুম ভাঙত | ভিড়ের দিকে তাকিয়ে “বাও? 
করে একটু মুছু হাপির মেহেরবানী দেখাতভেন। ভিড় তখন ফাক হয়ে 
রাস্তা করে দ্িত। চাচা আবার 'বাও' করে হিন্দুস্থান হৌদ' রওয়ানা 
দিতেন। “গুটেন মর্গেন? ( ন্ুপ্রভাত ) ধরনের কিছু বললে বা পরিচয় 


১২২১ 
সৈ-মু-আ- শ্রেষ্ঠগল্প_-৮ 


করবার চেষ্ট। দেখালে চাচা গলাবন্ধ ফোটের ভিতর হাত চালিয়ে তার 
একখান শ্চিজিটিং কার্ড বের করে এগিয়ে ধরে ফের "বাওঃ করতেন- বেন 
অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাদী নবাব কাউকে ডুয়েলে আহ্বান করছেন । সে- 
কার্ডে চাচার ঠিকানা থাকত “হিন্দুস্থান খৌসো'র । জর্মনরা চালাক; বুঝত, 
চাচা রাস্তার মাঝখানে নীরব কাব্য করেন বলে কথা বলতে চান না। 
কাজেই তার] চাচার আড্ডায় এসে উপস্থিত হত। 

মেঘ দেখবার জন্য 'ন্য জায়গ! এবং অন্য, কায়দা! থাকতে পারে কিন্তু 
£হিন্দৃস্থান হৌসে'র রান্নার খুশবাই ছাড়াবার জন্য এর চেয়ে ভালো! 
গ্যোবেলস আর কি হতে পাবে? 


শ্রীধর মুখুযো বলছিল, “সংস্কৃতের নূতন ছোকরা প্রফেসর এসেছে 
মু'নভাগিটিতে। গড়াচ্ছে গীতা । আজ সকালে প্রথম অধ্যায় পড়াবার 
সময় বলল, কুলক্ষয়-ফুলক্ষয় সব আবোল-তাবোল কথা | বর্ণদস্কর না হলে 
কোনে। জাতের উন্নতি হয় না তার থেকে আবার প্রমাণ করার চেষ্টা 
»বলে যে গীতার প্রথম অধ্যায়টা গুপ্তধুগে লেখ! | বর্ণসঙ্করের জুজু নাকি 
বৌদ্ধ ঘুগের পূরে ছিল না। 

চাচ1 বললেন, “কি করে বর্ণপস্কর হয়, আর তার ফল কি, সেটা প্রথম 
অধ্যারে বেশ ধাপে ধাপে বাংলানো হয়েছে না রে? বলতো, 
ধাপগচলে! কি? 

গ্রাধর খাবি খাচ্ছে দেখে আড্ডার পয়লা নম্বরের আড্ড'বাজ পুলিন 
সরকার বলল, কুলক্ষয় থেকে কুলধ্মনষ্ট, কুলধর্মনষ্ট থেকে অধর্ম, অধর্ম থেকে 
সত্রীলোকদের ভিতর নষ্টামি, নষ্টামি থেকে বর্ণপঞ্কর, বর্ণনস্কর হলে পিতৃপুরুষের 
পিগুলোপ-_” 

মুখুষ্যে বাধ! দিয়ে বলল, হা? হা" প্রফেসর বলছিল, “পিগ্তির পরোয়া 
করে কোন সুস্থবুদ্ধি্ন লোক” ?” 

বিয়ারের ভিতর থেকে ন্ুৃয্যি রায়ের গল! বুদ্ধ'দের মত বেরলো, 
“ছোকর] প্রফেদর ঠিক বলেছে। বর্ণঙ্কর ভালো দিনিস। মুখুষ্যে 
বামুনের ছেলে, এদিকে গীতার পয়লা পাঠ মুখস্ত নেই; সরকার কায়েতের 


১২২ 


লে, পুরো চেন্টা বাংলে দিলে | মুখুষ্যের উচিত সরকারের মেয়েকে 
য়ে করে কুলধর্ম বাচানে। |, 
_ চাচা বললেন, ঠিক বলেছ, রায়। তাহলে তুমি এক কাজ কর। 
চামার বিয়ারে একটু জল মিশিয়ে ওটাকে বর্ণসক্কর করে ফেলো ।? 

রায় ব্লীতিমত শকৃট্‌ হয়ে বললেন, “পানশাস্ত্রে এর চেয়ে বড় নাস্তিকতা 
[ার কিছুই হতে পারে না । বিয়ারে জল |) 

চাচা যুখুষ্যের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোদের নয়! প্রফেসরটা 
[শ্চয়ই ইছদি। ওর! বেমন প্রাণপণ চেষ্টা করে আপন জাতটাকে খাঁটি 
[খবার জন্য, ঠিক তেমনি আর পাঁচজনকে উপদেশ দেয় বর্ণসঙ্কর ডেকে 
[ানবার জন্য । ওদিকে খাটি জর্গন এ সম্বন্ধে উচ্চবাক্য করে না! একদম, 
টন্ত কাজের বেলায় না খেয়ে মরবে তবু বর্ণপঙ্কর হতে দেবে না? 

সরকার জিজ্ঞেস করল “এদেশেও নিরম্ব-উপবাস আছে নাকি? 


চাচা বললেন, 'আলবাৎ শোন । আমি এবিষয়ে ওয়াকীবহাল। 

পয়ল। বিশ্বযুদ্ধের পর হেথায় অবস্থা হয়েছিল “জর্সনির সর্বনাশ, বিদেশী 
ীধ মাস।১ ইনফ্লেশনের গ্যাসে ভন্তি জর্মন কারেন্সির বেতন তখন 
হেশতে গিয়ে পৌচেছে__বেহেশ তট। অবশ্যি বিদেশীদের জন্য, জর্সনর। 
চউ পাঁচহাজার। কেউ দশহাজারে বেলুন থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ দিচ্ছে। 
আ্বহত্য'ক্স খবর তখন শ্রার কোনো কাগক্জ ছাপাত না নাী-হৃদয় 
কনমিকসের কমডিটি এক “বার চকলেট দিয়ে একসার রগ কেনা যেত, 
[চাকায় “কার? কোট, পাঁচশ? টাকায় কুরফুস্টেন্-ডামে বাড়ি, 'একটাকায় 
যাটের কমপ্রীট ওয়ার্কস । 

আড্ডার সবাই যেন সর্বনাশী পৌষ মাসের কথা ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। 

চাচা বললেন, “দেই ঝড়ে তখনে। যে সব বাড়ি দড় হয়ে দাড়িয়ে 
'কতে পেরেছিল তাদের প্রত্যেকের ভিতরে ছিল বিদেশী পেয়িং-গেস্ট। 
-সব জর্মন-পরিবারে বিদেশীরা! পেরিং-গেস্ট হয়ে বসবাদ করছিল তাদের 
[য় সকলেই থেয়ে পরে গান বাচাতে পেরেছিল, কারণ যত নিলজ্জ, 
গুদ, সুবিধাবাদী, পৌষ-মাসীই হও না কেন তামাম মাসের ঘরভাডী। 
[ইখগার জন্য অন্ততঃ পঞ্।াশটি টাকা! ভে। দিতে হয়। বিদেশী টাকার 


০২৩ 


তখন এমনি গরমী যে সেই পঞ্চাশ টাকায় তোমাকে নিয়ে একট! 
পরিবারের কায়রেশে দিনগুজরান হয়ে যেত |) 

গৌসাই গুন গুন করে গান ধরলেন, দেখা! হইল না রে শ্যাম, তোমা 
সেই নত্তুন বয়সের কালে ।; 

চাচা বললেন, “কিন্ত একট দেশের ছুদিনে এক সের ধান দিয়ে পাঁ৷ 
সের চাল নিতে আমার বাধত। তাই যখন আমার বুড়ো ল্যাগুলেঘি 
একদিন হঠাৎ হার্টফেল করে মার গেল তথন আমাকে লুফে নেবার জন 
' পাড়ায় কাড়াকাড়ি পড়ে গেল। এমন সময় আমার বাড়তে একাঁদ' 
এসে হাজির ফ্রলাইন্‌ ক্রারা ফন্‌ ব্রাখেল ॥? 

আড্ড1 এক গলায় শুধাল “হুকি-টিমের কাপ্তান ? 

চচা বললেন, আমান জান-বীচানো-ওযর়ালী। বললেন, 'ক্লাইনা; 
ইডিয়ট ( হাবাগঙ্গারাম ), তুমি বদি অন্থাত্র কোখ?ও ন। গিয়ে আমার এব 
বন্ধুর বাড়িতে ওঠো তা হলে আমি বড় খুশী হই। প্রাশান ওবেস্টের 
(কর্নেলের ) বাড়ি, একটু সাবধানে চলতে হবে। এককালে খুব বড 
লোক ছিলেন, এখন উন্ঞজর টেগ.লিশেস্‌ ব্রট গিবউন্স হয়টে (316 &$ 
[1075 02 0841 42115 01520)1। অথচ এমশ দশ্তী যে পেয়িং-গেস্টের 
কথ। তোলা তে আমাকে কোট মার্শাল করতে চায় ! শেষটায় যখন বললুম 
যে তু'ম প্রাশান. কারো কাছ থেকে উচ্চাঙ্গের জর্মন শেখার জন্ত সুদূর 
ভারতবষ থেকে বালিন এসেছ তথন ভদ্রলোক মেঙ়্ায়েম হল। এখন, 
বুঝতে পারছ, কেন তোমাকে সাবধানে পা ফেলতে বললুম। তুমি 
ভাবটা দেখাবে যেন তার বাড়িতে উঠতে পেরে কৃতাথন্মন্ত হয়েছ ; তি 
যেকোন উপকার করছ সেটা যেন ধরতে ন। পারেন । তার বউ সম্বন্ধে 
কোনে ছুর্ভাবন! ক'রে! না) তিনি সব বোঝেন, জানেন ।। ৃ 

চাচা বললেন, প্রাশান অফিলারদের আমি চি্নকাল এড়িছে গিয়েছি 
দূর থেকে ব্যাটাদের ধোপছ্রস্ত ইন্ত্রিকরা স্টিফ ইডান্ফম আর স্টিফ 
ভাবসাৰ দেখে আমার সব সময় মনে হয়েছে এর। যেন হাসপাতালের 
এপ্রন-পরা সার্জেনদের দল। সার্জেনর। কাটে নিধিকার চিত্তে রোগীর 
পেট, এর। কাটে পরমানন্দে ফ্রান্সের গলা | 


১২৪ 


চাচা বললেন, কিন্তু ফন্‌ ব্রাথেলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল তার 
দীলতে আমি অনেক কিছুই করতে প্রস্তত ছিলুম। এবং মনে মনে 
চাবলুম বশীর ভাগ ভারতীম্ই বসবাস করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে, 
দখাই যাকন! খানদানীর। থাকে কি কায়দায় । 

ফন্‌ ব্রাখেল আমাকে নিয়ে যান নি। খবর দিয়ে আমি একাই 
একদিন সুউকেস নিয়ে কর্নেল ডুটেন্হফারের বাড়ি পৌছলুম | 

ট্যাক্সিওল! যে বাড়ির সামনে দাড়াল তার চেহারা আগের দেখা 
কলে ফন্‌ ব্রাখেলের প্রস্তাবে আমি রাজি হতুম কি ন! সন্দেহ। বাড়ি 
ত। নয় সে এন্ু রাজপ্রাসাদ । এ বাড়িতে তো অন্ততঃ শখানেক লোকের 
ান্তার কথা কিন্তু তাকিয়ে দেখি দোতলার মাত্র ছু'তিনখান। ঘরের জানাল 
খালা, খাদবাকি যেন দিল “মরে আটা! সামনে প্রকাণ্ড লন। পেরিয়ে 
গয়ে দরজার ঘণ্ট। বাজালুম । মিনিউ তিনেক পন্রে বখন ভাবছি আবার 
ণ্টা বাজাবে! কি ন! তখন দরজ। আস্তে আস্তে খুলে গেল। 

গহ্রজ্ঞান ষখন পানেব পিক গিলতেন তখন নাকি গলার চামড়ার 
ভতর দিয়ে তার লাল রঙ দেখা যেত। যে-রম্ণীকে দরক্ঞার সামনে 
াড়িয়ে থাকতে দেখলুম তান চামড়া, অঙগপ্রতঙ্গ মুখচ্ছনি দেখে মনে হল 
তনি যেন সকাল বেলাকার শিশির (দয়ে গডা। জর্মনিতে পান 
পাওয়া! যাষ না, কিন্তু আমার মনে হল ইনি পান থেলে নিশ্চয়ই পিকের 
৬ এ'র গলার চামড়ায় ছোপ লাগাবে | চুল যেন রেশমের সুতো, ঠোঁট 
খানি যেন প্রজাপতির পাখা, ভুরু যেন উড়ে-বাওয়। পাখি, সবস্ুদ্ধ 
মলিয়ে মনে সন্দেহ হয় ইশি দাড়িয়ে আছেন না হাওয়ায় ভাসছেন | 
প্রথম দিনেই যে এ-সৰ কিছু লক্ষ্য করেছিলুম তা নয়; কিন্তু গা যখন 
পছন পানে তাকাই তখন তার এ চেহারাই মনে পড়ে। 

ইংরিজিতে বোধহয় একেই বলে ডায়াফনাস্‌; 'আব্বস্ছ' বললে ঠিক 
নে ধর পড়ে ন।। . 

কতক্ষণ ধরে হাবার মত তাকিয়েছিলুম জানিনে, হঠাৎ শুনলুম “গুটেস 
গেঁন ( সুপ্রভাত ), আপনার আগমন শুভ হোক্‌। আমি ফ্রাউ (মিসেস )' 
টেন্হফার |, 


১২৫. 


ভাগ্যস ভারাঁ মালপত্র ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর হাতে আগেই সম 
দেওয়া! হয়ে গিয়েছিল তা না হলে মাল নিয়ে আমি বিপদে পড়তুঃ 
এ রকম অবস্থায় চাকর দাসী কেউ না কেট আসে কিন্তু কেউ যখন এ 
না তখন বুঝতে পারলুম ডুটেন্হফারদের ছুরবস্থা কতটা চরমে পৌঁচেছে। 

গ্রকাণ্ড প্রকাশ্ড ডজন খানেক হল পেরলুম-_কোথাও একর! 
“ফামিচার নেই, দোর জানালায় পর্দা পর্যন্ত নেই । দেয়ালের সারি সা 
হুক দেখে বুঝলুম; একালে নিশ্চয় বিস্তর ছবি ঝোলানো! ছল, মেবে 
অবস্থ। দেখে বুঝলুম এমেঝের উপর কখনো। কোনে জুতোর চাট পড়ে 
_ জন্মের প্রথম দিন থেকে এর সবাঙ্গ গালচেতে ঢাক ছিল। কস্কা 
থেকে পূর্ণাবয়ৰ মানুষের যতখানি ধারণ। করা যায় দেয়ালের হুকের সা 
ছাতের শেকলের গোছা, দরজাজানালার গায়েলাগানো পরদ 
ঝোলানোর ডাগ্ডা থেকে আমি নাচের ঘর, মজলিসখানা, বাজিঘরে 
ততখানি আন্দ।জ করলুম। 

শৃন্ত শ্মশান ভয়ঙ্কর, কিন্তু কঙ্কালের ব্যঞ্জন! বীভৎস । 

' এ-বাড়িতে থাকব কি করে? চুলোয় যাক প্রাশান জর্মন শেখ। ! 

আন্দাজে বুঝলুম যে আমার জন্য যে-ঘর বরাদ্দ কর! হয়েছে সে 
বাড়ির প্রায় ঠিক মাঝখানে | ফ্রাউ ডুটেন্হফার আমাকে সে ঘরে 
মাঝখানে দ্াড করিয়ে দিয়ে চলে গেলেন । 

বজরার মত খাট, কিন্তু ঘরখানাও বিলের মত। নৌকোয় চ' 
অভ্যাস না হওয়া! পর্যন্ত বিলের মাঝখানে নৌকোর ঘুমুতে যে-রব 
'শসহায় অসহায় ফাক ফাক। ঠেকে সে-খাটে শুয়ে আমারো সেই অব, 
হয়ে'ছল। 

হপুরে খাবার ঘরে গিয়ে দেখি বেন্কুয়েট টেবিলে তিনজনের জায়গ 
টেবিলের এক মাথায় কর্তা ; অন্য মাথায় গিক্সী, মাঝখানে আমি । এ 
অন্যকে কোনে জিনিস হাত বাড়িয়ে দেবার উপায় নেই বলে তিনজনে 
সামনেই আপন আপন নিমক-দান | মাস্টার্ড, সস মাথায় থাকুন, গো 
মরিচেরও সন্ধান নেই । বুঝলুম পাড় প্রাশানের বাঁড় বটে; আড়ম্ব 
হীনতায় এদের রানার সামনে আমাদের বালবিধবার হৃবিষ্যুয্সও লজ্জ 


১৯৬ 


ঘোমটা টানে । কিন্তু ওসব কথা থাক, এ রকম ধারা মশলার বিকদ্ধে 
জেহাদ আমি অন্য জায়গায়ও দেখেছি । 

ভেবেছিলুম বাড়ির কর্তাকে দেখতে পাব শৃর্ারের মত হোৎকা, 
টমাটোর মত লাল, অগ্রবের মত চেহারা, হ্বধসনের মত এই-মারি-কি- 
তেই-মারি অর্থাৎ সবন্ুদ্ধ জ'়য়ে মড়িয়ে প্রাশান বিভীষিকা, কিন্ত যা 
দেখলুম তাবু সঙ্গে তুলন। হয় তেমন কিছু ইয়োরোপে নেই । 

এ যেন নর্মদা-পারের সন্াসী বিলিতি কাপড় পরে পল্মাসনে না বসে 
চেয়ারে বসেছেন। ছেহের উত্তমার্ধ কিন্তু যোগাসনে_-শিররদ!ডা খাড়া, 
চেয়ারে হল;ন দেন নি। 

শীর্ণ দীর্ঘ দেহ, শুফ মুখ, আর .সই শুকনে! মুখ আরো! পাংশু করে 
দিয়েছে ছ'খানি বেগুনি ঠোট । কপাল থেকে নাক নেমে এসেছে নোজা, 
চশমার [ত্রজের জায়গায় এতটুক খাঁজ খায় নি আর গালের হাড় বেরিয়ে 
এসে চোখের কোটর ছুটোকে করে দিয়েছে গভীর গুহার মত। কিন্তুকী 
চোখ! আমার মনে হল উচু পাহাড় থেকে তাকিয়ে দেখছি নিচে, 
চতুর্দিকে পাথরে ঘেরা, নীল সন্সোবর । কী গভীর, কী তরল! দে-চোখে 
যেন এতটুকু লুকোনে। জি'নদ নেই । যত বড় খিশ্বাস্ত কথাই এ লোকট! 
বলুক না কেন, এর »চাখের দিকে 'তী'কয়ে সে কথা বিশ্বাস কার 
জো নেই। 

খেতে খেতে সমস্তক্ষণ আড়-নয়নে সেই ধ্যানমগ্ন চোখের (দকে) ই 
বিষ ঠোটের দিকে আর চিন্তাপী/ডত ললাটের দিকে বার বার ভাকিয়ে 
দেখছি! তখন চোখে পড়ল 'ঠাবর খাবার ধরন । চোয়াল নড়ছে ন। 
ঠোঁট নডছে ন' খাবার গেলার দময় গলায় সামান্যতম কম্পনের চিহ্ন 
নেই। 

পরনে প্রাশান অফসারদের যুনিফম তো নয়ই, মাথার চুলও কদম-ছাট 
নয়। বেক্ব্রশ করা চকৃচকে প্লাটিনামব্রড চুল। 

|কন্ত সবচেয়ে বৃহম্যধ্য় মনে হল এর বর । চল্লিশ, পঞ্চাশ, সত্তর 
হতেও বাধা নেই। বয়সের আন্দাজ করতে গিয়েই বুঝলুম নর্মদ1 পাদের 
সন্ম্যাসীর সঙ্গে এর আনল মিল ফোনখানে । 


১২৭ 


এত অল্প খেয়ে মানুষ বাঁচে কি করে, তাও আবার শীতের দেশে ? সুপ 
খেলেন না, পুডিং খেলেন না, খাবার মধ্যে খেলেন এক টুকরো! মাংদ-_ 
হামবাজারের মামুলি মটন-কটুলেটের সাইজ-_ছুেটো সেদ্ধ আলু; তিনখান! 
বাঁধাকপির পাতা আর এক স্লাইস রুটি। সঙ্গে ওয়াইন, বিয়ার, জল 
পর্যস্ত ন!। 
আহারে যত ন! বিরাগ তার চেয়েও তার বেশী বিরাগ দেখলুম 
বাক্যালাপে। নৃতন বাড়িতে উঠলে প্রথম লাঞ্চের সময় যে-সব গতামু- 
গতিক সম্বর্ধনা, হাসিঠাট্ট, গ্যাস সম্বন্ধে সতর্কতা, মি'ড়ির পিচ্ছিলতা সম্বন্ধে 
খবরদারি সে-সব তো কিছুই হল না মামি আশাও করিনি-_ 
আবহাওয়া সম্বন্ধে মন্তবা, ভাদুতবর্ষ সম্বন্ধে ভদ্রতাদুরস্ত কৌতুহল, 
এ সব কোনে! মন্তব্য ৰা প্রশ্নের দিক দিয়ে হের ওবের্টট (কর্নেল 
মহাশয়) গেলেন না! আমিও চুপ করে হিলুম,। কারণ এামি বয়সে 
সকলের ছোট । 
খাওয়ার শেষের দিকে যখন আমি প্রায় মনস্থির করে ফেলোছি যে, 
ডুটেন্হফারদের জিভে হয় ফোস্কা নয় বাত, তখন হের ওবেন্ট হঠাৎ 
পরিক্ষার ইংরিজিতে জিজ্ঞাস! করলেন, “সেক্সগীয়াকের কোন্‌ নাট্য আপনার 
সবচেয়ে ভালে। লাগে ? | 
“আমার পড়া ছিল কুল্পে একখানাই । নির্ভয়ে বললুম। হ্যামলেট ।। 
“গ্যোটে পড়েছেন ?' 
শামি বললুম। “অতি সল্প) 
“একসঙ্গে গ্যোটে পড়ব ?? 
আমি আনন্দের সঙ্গে, “জত্র ধন্যবাদ দিয়ে সম্মতি জানালুম। মনে 
মনে বললুম, “দেখাই যাক্‌ ন' প্রাশান রাজপুত কিরকম কালিদাস প্ড়ায়। 
হের ওবেস্টেরি চেহাব্াটি যদিও ভাবুকের মত, তবু কুলোপান! চক্কর হলেই 
তো! আর দ্াতে কালবিষ থাকে না। 
: ফ্রাউ.ডুটেন্হফার বললেন, ভদ্রলোক জর্নন বলতে পারেন 1; 
“ “ভাই নাকি ? ৰলে সেই যে ইংরিজি বলা বন্ধ করলেন তারপর আমি 
আর কথনে। তাকে ইংরিজি বলতে শুনি নি। 


১২৮৮ 


লাঞ্চ শেষ হতেই হের ওবেস্ট উঠে দাড়ালেন। জুতোর হিলে 
হিলে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম স্ত্রীকে, তারপর আমাকে “বাও? করে 
আপন ঘরের দিকে চলে গেলেন | বাপের বয়সী লোক, বল! নেই, কওয়। 
নেই হঠাৎ এরকম 'বাও' করে বসবে কি করে জানব বলো । আমি হস্তদত্ত 
হয়ে উঠে বার বার “বাও? করে তার খেসারতি দেবার চেষ্টা করলুম কিন্ত 
মনে মনে মাদামের সামনে বড লজ্জা পেলুম। পাছে তিনিও আবার 
কোনে! একটা নূতন এটিকেট চালান সেই ভয়ে--যদিও আমার কোনো 
তাড়া ছিল না-_-আমি ছ"মিনিট যেতে না যেতেই উঠে ফাড়ালুম, মাদামকে 
কোমবে হু'ভাজ হয়ে বাণ) করে নিজের ঘরের দিকে রওয়ান। 
হলুম__হিলে হিলে ক্লিকটা আর করলুম না, জুতোর হিল্‌ রবরের ছিল 
বলে। 

চারটের সম্য় কফি খেতে এসে দেখি হের ওবেস্টনেই | মাদাম 
বললেন, তিনি অপরাহে আর কিছু খান না। মনে মনে বলল, বাববা 
ইনি পওহারী বাবার কাছে পৌছে যাবার তালে আছেন। 

ডিনারে ওবের্ট খেলেন তিনখানা সেনউইজ. আর এক কাপ চাঁ_ 
তাও আব পাঁচজন জর্জনের মত--_বিনছুধে !) 

চাচা থামলেন। তারপর গুনগুন কৰে অনুষ্টপ ধরলেন, 

£এবমুক্কো হৃষিকেশ গুড়াকেশেন ভারত 1? 

তারপর বললেন, “আমি গুড়া ঃশ নই, আমি নিদ্রা জয় করিনি, 
নিদ্রাই আমাকে জয় করেছেন, অর্থাৎ আমি ইন্সমনিয়ায় কাতর । কাজেই 
সংযমী না হয়েও 'য। নিশা! সধভূতানাং? তার বেশীরভাগ আমি জেগে 
কাটাই। রাত তিনটের সময় শুতে যাবার আগে জানালার কাছে গয়ে 
দেখি কর্তার পড়ার ঘরে তখনো 'শালে' জ্বলছে ! 

দেরীতে উঠি। ব্রেকফাস্ট খেতে গিয়ে দেখি কর্তার খাওয়া! শেষ হয়ে 
গিয়েছে । লজ্জা পেলুম, কিন্তু সেটা পুষিয়ে নিলুম লোহার নালে নালে 
এমনি বম্‌শেল্‌ ক্লিক করে যে, মাদাম আতকে উঠলেন | মনে মনে বললুম। 
হিন্দুস্থানীকী তমিজ ভী দেখ লীজীয়ে 

ওবেস্টকে জিজ্ঞেস করলুম, “আপনি কী অনিদ্রায় ভোগেন ? বললেন, 


১২৯ 


না তো।' আমি কেন প্রশ্নটা শুধালুম সে সম্বন্ধে কোনো কৌতৃহল না 
দেখিয়ে শুধু স্মরণ করিয়ে দিলেন যে দশটায় গ্যোটেপাঠ। 

পূর্ণ এক বদর তিনি আমায় গ্যোটে পড়িয়েছিলেন, ছুটি শর্ত প্রথম 
দিনই আমার কাছ থেকে আদায় করে নিয়ে । তিনি কোন্ন পারিভোধিক 
নেখেন না, আর আমার পড়। তৈরী হোক আর না “হাক ক্লান কামাই 
দিতে পারব না। 

মিলিটারি কায়দায় লেখ! পড়া 'শখা কাকে বলে জানে? বুঝিয়ে 
বলছি। আগবা দেশকালপাত্রে বিশ্বাস করি; গুরুর দি শরীর অসুস্থ 
থাকে, ছাত্রের যাঁদ পিতৃশ্রাদ্ধ উপস্থিত হয়, পালা-পরবে য্দি কোথাও 
যেতে হয়, পাঠা পুস্তকের যদি অনটন হয়, শিক্ষক অথব৷ ছাত্রের যাঁদ পড়া। 
তৈরী না থাকে, গুবাঁর যদি ঘৃতলবনতৈলতগুলবস্ত্রহন্ধন সংক্রান্ত কোনে! 
বিশেষ প্রয়োজন হয়_-এবং তখনকার গম-বরাদ্দের ( রেশনিডের ) দিনে 
তার নিত্য নিত্য প্রয়োজন হত-_-তাহলে অনধ্যায় । কিন্ত প্রাশান 
মিলিটারি-মার্গ অঘটনঘটনপটিয়সী দৈবছুধিপাকে বিশ্বাস করে না; আমি 
বুকে কফ নিয়ে এক ঘণ্টা কেশেছি, ক্লাশ কামাই যায় নি, হিগডেনবুর্গ হের 
ওবেস্টকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, ক্লাদ কামাই যায় নি। একটি বৎসর 
একটান গ্যোটে, আবার গ্যোটে এবং পুনরূপি গ্যোটে। তান অর্ধেক 
পরিশ্রমে পাণি:ন কণ্স্থ হয়, সিকি মেহন্নতে ফিরদৌনীকে ঘায়েল কর! যায় । 

অথচ পড়ানোর কায়দাট। ন'সিকে ভটচায্যি। গ্যোটের খেই ধরে 
বাইমার, বাইমার থেকে ট্যুরিডেন্‌, ট্যারিঙেন্‌ থেকে পূর্ণ জর্মনির ইতিহাস; 
'গ্যোটের সঙ্গে বেটোফোনের দেখা হয়েছিল কার্পস্বাডে-_সেই খেই ধরে 
“ৰেটোফোনের সঙ্গীত, বাগনার তার পরিণতি, আমেরিকায় তার বিনাশ; 
গ্যোটে শেষ বয়সে সরকারি গেহাইমরাট খেতাৰ পেয়েছিলেন, সেই থেই 
ধরে জর্মনির তাবৎ থেতাব, তাবৎ মিলিটারি মেডেল, গণতন্ত্রে খেতাব তুলে 
দেওয়াট। ভালো না মন্দ মে সব বিচার, এক কথা জর্সন দৃষ্টিবিন্দু থেকে 
তামাম ইয়োকনোপের সংস্কৃতি-সভ্যতার সর্বাঙ্গ সুন্দর ইতিহাস। পূর্ণ এক 
বদর ধরে গোোটের গোম্পদে ইর়োরোপের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে 
গড়ে-ওঠ ইতিহাস-এঁতিহ্া বিশ্বিত হল। 


১৩০ 


আর এ সব কিছু ছাড়িয়ে যেত তার আবৃত্তি করার অদ্ভুত ইন্দ্রজজাল | 
সেইন্দ্রজালের মোহ বোধহয় আমার এখনো কাটেনি; আঁম এখনো! 
বিশ্বাস করি, মন্ত্র ষদি ঠিক ঠিক উচ্চারণ কর! যায়-_যে-শ্রদ্ধা, যে-অনুভূতি। 
যে নংজ্ঞ। নিয়ে ডুটেন্হফার গ্যোটে আবৃত্ত কর্তেন-_-তাহলে £প্দিত 
ফললাভ হবেই হবে। 

পূর্ণ 'এক বৎনর রেঞ্জ দুণ্ঘণ্টা করে এই গুণীর সাহচর্য পেলুম কিন্তু 
আশ্চর্য, তার নিজের জীবন 'ভথব। তার পরিবার সন্বন্ধে তিনি কখনো একটা! 
কথাও বলেন নি। কেন তিনি মালটা ছাড়লেন, লুডেনডফের 
আহ্বানে জর্মনঙ্ে নৃতন দল গড়।তে কেন তিনি সাড়া দিলেন শী (কাগজে 
এ সম্বন্ধে জল্পন। কল্পন। হত ), পেন্সন্‌ কেন তিনি ত্যাগ করলেন, ন! করে 
পারিবারিক তৈলাঙ্কণ তৈজসপত্র বাঁচানো কি অধিকতর কাম্য হত নাঃ 
এসব কথ; শদ দাও, একদিনের তরে ন' ঠাট্রাচ্ছলেও তাঁকে বলতে 
শুনিনি প্রথম যৌবনে তিনি "সায়! ছু'বার আড়াইবান্স প্রেমে পড়েছিলেন 
অথবা 'ছাত্রাধস্থায় মাতাল হয়ে 'লেম্পপোস্টকে জড়িয়ে রে "ভাই, 
ঞাদ্দিন কোথায় ছিলি? বলে কান্নাকাটি করেছিলেন কি ন1। 

পূর্ণ এক বৎসর ধরে এই লোকটির সাহচর্য পেয়েছি, তার সংযম দেখে 
মুগ্ধ হয়েছি__নদ ন। সিণরেট না, কফি না, বালিনের মেরুযুক্ত হিমে মুক্ত- 
বাতায়ন নিরিন্ধন গৃহে (ভ্রযামা-যামিনী বিগ্ভাচা, আত্মসম্মান রক্ষার্থে 
পিতৃপিতামহসঞ্চিত আশৈশব শ্রদ্ধ।বিজড়িত প্রিয়বন্তু অকাতরে 1বস্জন, 
আহারে বিরাগ, ভাষণে অকচি, দন্তহীন, দৈন্তে নীলক্, গুড়াকেশ_ _সৰ 
কিছু নিয়ে এ'র ব্যক্তিত্ব আমাকে এমনি অভিভূত করে ফেলেছিল যে» 
আমি নিজের অজানায় তাকে অনুকরণ করতে আরম্ত কব্পোছলুম । 
ডুটেন্হফারের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে যে দস্তানা, অভারকোট। টাই কলার 
ছাড়লুম, আছে তা! গ্রহণ করার প্রয়োজন 'বোধ কর্দি নে। কিন্ত কিসে 
আর কিসে তুলনা করছি! 

চাচা বলণেন। “শুধু একট। জিনিসে হের ওবেস্টের চিত্তগত আমি 
ধরতে পেরেছিলুম | আমাদের আলাপের দ্বিতীয় দিনে জিনিয়স সম্বন্ধে 
আলোচনা করতে গিয়ে জাতিভেদের কথ। ওঠে । আমি মুসলমান, তার 


১৩১ 


গর 


কৈশোরে হিন্দুহস্টেলে বেড়াতে গিয়ে ঢুক্ষতে পাই নি, জাতিভেদ সম্বন্ধে 
আমার অত্াধিক উৎফুল্ল হওয়ার কথা নয়। তার-ই প্রকাশ দিতে হের 
ওবেস্ট জাতিভেদের ইতিহাস, তার বিশ্লেষণ, বর্তমান পরিস্থিতি, ভিন্ন 
ভিন্ন দশে ভার ভিন্ন ভিন্ন রূপসন্বন্ধে এমন তথ্য এবং তত্বে ঠাসা 
কতক গুলো! থ। বললেন যে আমার উম্মার চোদ্দ আন তখনি উবে গেল। 
দেখলুম, শুধু যে তিনি মন্ুসংহিতার জর্মন অনুবাদ ভালে! করে পড়েছেন 
তা নয়, গৃহ ও শ্রোতন্ুত্রের তাবৎ আচার অনুষ্ঠান পুজ্ঘানথপুঙ্খরূপে অধ্যয়ন 
করেছেন-অবশ্য সংস্কৃতে নয়, হিলেত্রান্টের জর্মন অনুব্ঠুদে ' এসৰ 
আচার-অন্রষ্ঠানের উদ্দেশ্টা কি, বৈজ্ঞানিক পরশ পাথর দিয়ে বিচার করলে 
তার কতটা গ্রহণীপ্ন কতটা বর্জনীয়, বিজ্ঞান যেখানে নীরব সেখানে 
কিংকর্তন্য 'এসৰব তো বললেনই, এবং যে সব সমস্তায় তিনি স্বয়ং কিংকর্তব্য- 
বিযুঢ সে-সবগুলোও বিশেষ উৎসাহে আমার সামনে উপস্থিত করলেন । 

'চাথচ কি বিনয়ের সঙ্গে দিনের পর দিন এই কথাটি বোঝাতে চেষ্টা 
করেছেন্--প্রাশান কোৌলীন্ত যেন দস্তপ্রন্ত না হয়! প্রাশান কৌলীন্ত 
জগতে সর্বশ্রেঠ আসন দাবী করে না, তার দাবী শুধু এইটুকু যে তার 
বিশেষত্ব মাছে, সে-বিশেষত্টকুও যদি পৃথিবী স্বীকার না করে তাতেও 
আপত্তি নেই কিন 'ন্তুত পক্ষে পার্থকাটুকু যেন স্বীকার করে নেয়। হের 
ওবের্ট ত:তেই সন্তপষ্ট । তিনি সেইটুকুই বাচিয়ে রাখতে চান। তার দৃঢ় 
বিশ্বাল, সে-পার্থকোর জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে । 

এবং সেই পার্থক্টুকু বাচিয়ে রাখবার জন্তে দেখতে হবে রক্তসংমিশ্রণ 
যেন ন! হয়। 

নীটশের সুপারম্যান ? 

না,না। শুধু বড় হওয়াপ্ জন্য বড় হওয়। নয়, শুধু স্থপার' হওয়ার 
জন্য 'ম্থপার? হওয়া নয়। প্রাশান আদর্শ হবে ত্যাগের ভিতর দিয়ে; 
আত্মজয়ের ভিতর দিয়ে, ইয়োরোপীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ লেৰক 
হওয়ার। 

'এবং যদি দরকার হয়, তার জন্য সংগ্রাম পর্যন্ত কর। ! সেব। করার 


উপর ছেলেবেলায় ছু'হাত তাতে দাড়িয়ে বামুন পণ্ডিতকে শ্লেট দে খিয়েছি। 


১৩২ 


জন্য যদি দরকার হয় তবে যে-সব অজ্ঞ, মুখ; অন্ধ তার অন্তরায় হয় তাদের 
বিনাশ করা। 

আমার কাছে বড় আশ্চর্য ঠেকল | সেবার জন্য সংগ্রাম, বাঁচবার জন্য 
বিনাশ ? 

হের ওবেস্ট বলতেন, শ্রীকৃষ্ণ অজ্জনকে কেন ধুদ্ধ করতে বলেছিলেন ? 
সেইটে বার বার পড়তে হয়; বুঝতে হয় । ভুললে চলবে না, জীবনের 
সমস্ত চিন্তাধারা কর্মপদ্ধতি লোক-নেবায় যেন নিয়োজিত হয়।' 

আমি প্রথম দিনের আলোচনার পরেই বুঝতে পেরেছিলুম হের 
ওবে:স্ট'র সঙ্গে তর্ক করা আমার ক্ষমতার বহু, বু উধের্ব কিন্ত এই “দেবার 
জগ্ঠ সংগ্রাম" বাক্যটা আমার কাছে বড়ই আত্মঘাতী, পরূম্পরবিরোধী বলে 
মনে হল। রক্তসংমিশ্রণ ঠেকাবার জন্য প্রাণবিসর্জন, এও যেন আমার 
কাছে বড্ড বেশী বাড়াবাড়ি মনে হল। আমার কোন্‌ কোন্‌ জায়গায় 
বাধছে হের ওবেস্টের কাছে সেগুলোও অজান। ছিল না । 

লক্ষ্য করলুম, এর চরিত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বল্পভাষণে। 
কিন্তু স্বল্প হলে কি হয়ঃ শব্দের বাছাই, কল্পনা ব্যঞ্জনা, যুক্তির ধাপ এমনি 
নিরেট ঠাসবুন্থু নতে বক্তব্যগুলোকে ভরে রাখত যে যেখানে স্ুচাগ্র 
ঢোকাবার মত ক্ষমতা আমার ছিল না। এবং আরো! লক্ষ্য করলুম যে 
একমাত্র রক্তনংমি শ্রণের ব্যাপাপেই তিনি যেন ঈষৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। 

বিষয়টি যে তার জীবনের কত 'বরাট অংশ দখল করে বসে আছে 
সেটা বুঝতে পারলুম একদিন রাত প্রার ছটোর সময় বখন তিনি আমার" 
ঘরে এসে বললেন, “এত রাতে এলুমঃ কিছু মনে করবেন না) আমাদের 
আলোচনার সময় একটি কথা আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলুম, সেটি হচ্ছে, 
“সুখছুঃখ, জয়পরাজয়, লাভক্ষতি যিনি সমদৃষ্টিতে দেখতে পারেন, একমাত্র, 
তারই অ'পকারু সেবাঝ। ভার গ্রহণ ককার। সেখার অন্য সংগ্রাম করার ।” 

কোনে! উত্তরের অপেক্ষা না করে হিল-রিকের সঙ্গে 'বাও” করে 
বেঝিয়ে গেলেন । 

এত ব্বাত্রে এসে এইটুকু বলার এমন কি ভয়ঙ্কর প্রয়োজন ছিল ? 

হের ওবেস্টের দঙ্গে বেড়াতে গিয়েছি, বাড়ির লনে পাইচারি করেছি, 


১৩৩ 


পংস্দাম পেরিয়ে ছোট ছোট গ্রামে গিয়ে চাষাদের বাড়িতে খেয়েছি, 
পুরোনে। বইয়ের দোকানে প্রাচীন মানিক হাটাধাটি করেছি, অধিকাংশ 
সময় তিনি চুপ, আমিও চুপ | তাকে কথা বলাতে হলে প্রাশান এতিহোর 
প্রস্তাবনা করাই ছিল প্রশস্তমত পন্থা । একদিন শুধালুম, “ফ্রান্সের সঙ্গে 
আপনাদের বনে না কেন? 

হের ওবেন্ট বললেন, না বনাই ভালো । এ রকম ধ্বংসমুখ দেশ 
পৃধবীতে আগ ছটো নেই। প্যারিসের উন্মত্ত উচ্ছৃঙ্খল বিলাস দেখেছেন? 
কোন সুস্থ জাতির পক্ষে এরকম নির্লজ্জ কাগুজ্ঞানহীনত] সম্ভব ? 

আমি বললুম, “বালিনেও “কাবারে' আছে ।, 

হেব ওবেস্ট বললেন, 'বালিন জর্মন নয়, প্রাশার প্রতীক নয়, কিন্ত 
প্যাব্রিস ফ্রান্স এবং ফ্রান্স প্যারিস 1” 

আমি চুপ করে ভাবতে লাগলুম | হঠাৎ আমার মনে একট! প্রশ্ন 
জাগল। যে-সমস্তা। মানুষের মনকে অহরহ আন্দোলিত করে শেষ পরধ্ত 
সে-সমস্। নিজের জীবনে, নিজের পরিবারের জীবনে কতটা প্রতিক্রিয়ার 
স্থষ্টি করেছে তাই নিষে মানুষ ইচ্ছা-অনিচ্ছাকস একদিন না একদিন 
আলোচনা করে। হের ওবেস্টকে কখনো আলোচনার সে দিকটা 
মাড়াতে দেখিনি । 

ফ্রাউ ডুটেন্হফারকে আমি অধিকাংশ সময় ভারতবর্ষ সম্বন্ধে গল্পকাহিনী 
বলতুম । হের ওবেস্টের তুলনায় যদিও তার সঙ্গে দেখা! হত কম, তবু 
তার সঙ্গে হনতা হয়েছিল বেশী। একদিন তাঞ্জে জিজ্ঞাসা করলুম, “হের 
ওবেস্টের সঙ্গে নানা আলোচন। হয়, কিন্তু আমার মাঝে মাঝে ভয় হয়। 
না জেনে হয়ত আমি এমন বিষয়ের কথা পাড়ব যাতে তার আঘাত 
লাগতে পারে । আমার বিশ্বান তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন_-তাই 
এ-প্রশ্ন শুধালুম | 

ফ্রাউ বেস্ট এনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন । মুখের ভাৰ থেকে মনে 
হল তিনি মনে মনে বলি কি বলি না" করছেন। শেষটায় ক্ষীণ কণ্ঠে 
বললেন। “আমাদের পরিবারের কথা কখনে। পাড়বেন না । আমাদের 
যোল বছরের ছেলেটি ফ্রান্সের লড়াইয়ে গেছে, আমাদের মেয়ে_ 


১৩৪ 


কথার মাঝখানে ফ্রাউ ডুটেন্হফার হঠাৎ ছ'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে 
নিঃশব্দে ফুলে ফুলে কেঁদে উঠলেন । এই বেকুব গোমুর্খামির জন্য আমি 
মনে মনে নিজেকে খুব ছুতো-পেটা! করলুম । অতটা বুদ্ধ কিন্তু তখনো 
ছিপ যে এ সব অবস্থায় সাস্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলে বিপদ বাড়িয়ে তোলা 
হয় মাত্র। পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিরে এলুম। প্রাশানরা হয়ত 
তখনো হিল্‌ ক্রিক করে । 

বড় ছেলে মরে বাওয়াতে বয়স্ক চাষাকে একদম ভেঙে পড়তে 
দেখেছি । তার তখন হৃঃখ সে মরে গেলে তার খেত-খামার দেখবে কে? 
দভ্যতা কুল্টুরের পয়লা কাতারের শহরে তারি পুনরাবৃত্তি দেখলুম 
ডুটেন্হফার পরিবারে | এত এভিহা, এত সাধনা, এত ভবিষ্যতের স্বপ্ন 
সব এসে শেষে হবে এই ডুটেন্হফারে ? 

তাই কি এত কুচ্ছদাধন, রক্তসংমিশ্রণের বিরুদ্ধে এত তীব্র জঙ্কার? 
ষে বর্ষায় সফল বৃষ্টি হয় না সেই বর্ধাতেই কি দামিনীরু ধমক) বিদ্যুতের 
চমক বেশী? 

তাই হের ওবেস্টে র পড়াশুনোরও শেষ নেই। সত্য অসভ্য বর্বর 
বিদগ্ধ ছু'নয়ার তাবৎ জাতির নৃতত্ব, সমাজগঠন, ধর্মনীভি পড়েই যাচ্ছেন, 
পড়েই যাচ্ছেন । শীতের রাতে আগুন না জ্বালিয়ে ঘরের ভিতর ঘণ্টার পর 
ঘণ্টা পাইচারি। বসন্তে বেখেয়ালে বৃষ্টিতে জবজব হয়ে বাড়ি ফেরা, শ্রীম্মের 
সুদীর্ঘ দিবন বিদেশী মুসলমানকে প্রাশান ধর্মের মূল তত্বে ওকবহাল 
করার অন্তহীন প্রয়াস, হেমন্তের পাতাঝরার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে 
না জানি কে'ন্‌ নিষ্ষশ বৃক্ষের কথা ভেবে ভেবে চিত্তের লুকানো কোণে 
দীর্ঘনিঃশ্বাণ ত্যাগ । 

কিন্ত আমার সামনে তিনি কখনে! দীর্ঘগিংশ্বান ফেলেন নি। এসব 
আমার নিছক কল্পনাই হবে । 

এক বৎসর ঘ্বুরে এল। আমি ততদিন পুরো পাকা প্রাশান হয়ে 
গিয়েছি । চেয়ারে হেলান না দিয়ে বসি। স্থপে গোলমরিচের গন্ধ পেলে 
ঝাড়। পনেরো মিনিট হাচি, একটানা বারো ঘণ্ট। কাজ করতে পারি, তিন 
দিন ন। ঘুমুলেও চলে-_ধদিও কৃচ্ছুদাধনের ফলে আমার নিদ্রাকৃচ্ভুতা। তখন 


১৩৫ 


অনেকট। সেরে গির়েছে-_কাঠের পুতুলের মত খট খট করে হাটা রপ্ত 
হয়ে গিয়েছে, আব আমার জর্নন উচ্চারণ শুনে কে বলবে আমি ভাত- 
থেকে৷ নেটিব, কালা খাদমী। সঙ্গে সঙ্গে এ-বিশ্বাসও খানিকটা হল যে 
হের ওবেস্টেরি হৃদয় বলে যদি কোনে! রক্তমাংসে গড়া বস্ত থাকে তবে 
তার খানিকটে আমি জয় করতে পেরেছি । 

এমন সময় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে আমার জীবনের প্রাশানপর্বকে 
তার কুরুক্ষেত্রে পৌছিয়ে দিল। 

কলেজ থেকে ফিরেছি। দোবের গোড়ায় দেখি একটি যুবতী 
পেরেমবুলেটরের হ্যাণ্ডেলে হাত দিয়ে দাড়িয়ে দা!ড়য়ে অঝোরে কাদছে। 
চেহারাটি ভান সুন্দর, ভব হের ওবেস্টের মত । তিনিও সামনে দী়িয়ে। 
মুখে কণা নেই । আমিও দাড়ালুম, প্রাশান এটিকেট যদিও সে-অবস্থায় 
কাউকে দেখানে দাড়াতে কড়া বারণ করে, তবুও দি কেউ দীড়ায় তবে 
সেই প্রাশান এটিকেটেরই অলভ্ব্য আদেশ, হের ওবেস্ট' ভাকে মহিলাটির 
সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবেন। তিনি এটিকেট লঙ্ঘন করলেন, -সেই 
প্রথম আর সেহ শেষ । 

আম তখন মার প্রাশান না। আমার মুখোস খসে পড়েছে । আমি 
ফের কালা-আদমী হয়ে গিয়েছি । আরম নড়ব না । 

মেয়েটি কি বললে বুঝে পারলুম না। 

হেক্স ওবেস্ট বললেনঃ ততামাকে খাম একবার বলেছি, আমার সঙ্গে 
যোগন্ত্র স্থাপন। করার চেষ্টা করবে না। তাই আর বার, শেষবারের 
মত বলছি, তুমি যদি আবার এরকম চেষ্টা করো, তবে আমাকে বাধ্য হয়ে 
তোমার সন্ধানে বাইরে যেতে হবে।' 

আমি আর সেখানে দাড়ালুম না। ছুটে গেলুম ফ্রাউ ডুটেন্হফারের 
কাছে। বললুম, “আপনার মেয়ে দোরের ,গোড়ায় দাড়িয়ে। আপনার 
স্বামী তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন ।' 

তিনি পাথরের মতে! বসে রইলেন । আমি তাকে হাত ধরে তুলে 
সদর দরজার দিকে চললুম। করিভরে শুনি দরজ। বন্ধ হওয়ার শব্দ, দেখি; 
হের ওবেস্ট' ফিরে আসছেন । আমি তখন ফ্রাউ ডুটেন্হফারের হাত ছেড়ে 


১৩৬ 


দিয়ে ছুউলুম মেয়োডির শন্দনে | তাকে পেলুম বাড়ির সামনের রাস্তার | 
তখনে। কাদ্দছেন। তাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে এলুম তার ঠিকান। টুকে” 
নিয়ে এলুম । 

বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে দেখি টেবিলের উপর:আমার নামে - 
একখানা চিঠি । খু; শক্ত প্রাশান হাতে হের ওবেস্টর লেখা । আমার 
বুক কেঁপে উঠল । খুলে পভলুম ;__ 

'আপনার কর্তব্যবুদ্ধি আপনাকে যে-আদেশ দিয়েছিল আপনি তাই' 
পালন করেছেন । আমি তাতে আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু এর পর. 
আপনার সঙ্গে কোনো যোগস্থত্র থাকতে পারে না। 

আপনার বাড়ি পেতে কোনো কষ্ট হবে না জেনেই বৃথা সময় নষ্ট 
না করে আপনাকে আমার বক্তব্য জানালুম ।' 

হের ওবেস্টকে ততদিনে এতট। চিনতে পেরেছিলুম বে, তার হৃদয় 
থাক আব নাই থাক, তার প্রতিজ্ঞার নড়চড় হয় না। পরদিন সকাল 
বেলা ডুটেন্হফারদের বাড়ি ছাড়লুম। হের ওবেস্টর সঙ্গে দেখা করবার 
চেষ্টা করিনি । ফ্রাউ কপালে চুমে। খেয়ে আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন । : 

আড্ডা এতক্ষণ চুপ করে শুনে যাচ্ছিল। ঢকযেন জিজ্ঞেন করল-_ 
সকলের হয়ে-_“কিন্ত মেয়েটির দোষ কি ছিল? 

চাচা বললেন, হের ওবেস্টের গোর দিতে যাই তার প্রায় বংসর 
খানেক পরে। সেখানে শুনলুম তার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক' 
অধ্যাপককে বিয়ে করেছিলেন; এবং তিনি জাতে ফরাসী । 

মুখুষ্যের দিকে চেয়ে বললেন, “তোর অধ্যাপক কি ছিল রে? বর্ণনঙ্কর 
ফঙ্কর আবোল-তাবোল কথা? বর্ণন্করের প্রতি দরদ দেখিয়েছিলুম বলে 
হের ওবেস্টঁ তার জীবনের শেষ সঙ্গীকে অকাতরে অপাঙক্তেয় করলেন। 

এবং নিজে? অর্ধ-অনশনে তার মৃত্যু হয়! আমাকে না তাড়ালে 
হয়ত তিনি আব্ও বহুদিন বাঁচতেন। তিনি আর কোনো পেয়িং গেস্ট 
নিতে রাজী হন নি। একে নিরম্বু উপবাসে 'মৃত্যু বল! চলে না সত্যি, 
কিন্ত এরো৷ একটি পদবী থাক] উচিত । কি বলে! গৌসাই ? 

আড্ডার চ্যাংড়া সদস্ত গোলাম মৌল! বলল, “শেষ ট্রেন মিস করেছি ।; 


১৩৭ 
সৈ-মু-আ-- শ্রেষ্ঠগঞ্প-৯ 


চাচা বললেন, 'চ, প্রাশান কায়দায় পীচ মণ ভবলমার্চ কর! 
দেখিয়ে দি।' 


॥ নবাব-জাদা ॥ 
বিশ্বাস !? 
'জী' হুজুর ?, 
“কি হবে? 
“কী আর হবে ।? 


ছ বহর বয়স থেকে 'এই নবাব-বাড়ি দেখে আলছি। সকালবেল। 
বাবার হাত ধরে বেডাতে বেরতুম, নবাব-বাড়ির পুর দিক দিয়ে। বিরাট 
পুকুরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখতুম কী হচ্ছ, কাক-চক্ষু জল | এদেশে 
পুকুরমাত্রই পানা-ভরা, কিন্তু এ-পুকুরে কোথাও এভটুকুমাত্র কোনে 
ভেসে-বাওয়! শুকনে। পাতার চিহ্ন পধন্ত নেই। আর দেখতুম এ দৃরে। 
ওপারে, কার। যেন সানর্বাধানো৷ ঘাটে নাইছে, কথাবার্তা বলছে নিশ্চয়ই, 
কিন্ত এপারে কোনো শব্দ আমছে না । আর পাড়ে পাড়ে অসংখ্য জারুল 
গাছ স্বাঙ্গ বেগনি ফুল পরে নিয়ে ুলছে। 

সবনুদ্ধ সাতট। পুকুর ছিল নবাব-বাড়ি ঘিরে। পুবের পুকুরের পাড় 
হয়ে আমর! উত্তরের পুকুরে পৌছতুম। করে করে বাড়ি্ুদ্ধ সব কটা 
পুকুর পরিক্রম! করে আপন বাড়িতে বখন পৌছতুম তখন আমি রীতিমত 
ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। 

কিন্ত আমার কৌতৃহলের ক্লান্তি ছিল না। এ যে পুকুর পেরিয়ে দেখা 
যাচ্ছে বিরাট বিরাট চগ্তীমগণ্ডুপপার। খড়ের আটচালা, চারচালা, হৃচাল৷ 
ওখানে কি হচ্ছে? আমন থাকি ছোট বাড়িতে-_মাত্র চারখান। ঘর 
এবং তাদের সব ক'খানাই এদের একটা ঘরে ঢুকে যেতে পারে। 
আমাদের জীবন আর ওদের জীবনের ধরন যে এক হতে পারে না সে 
বিষয়ে আমার মনে একট|। আবছা-আবছা ধারণা ছিল। ছই পুকুরের 


১৩৮ 


[বঝখান দিয়ে চলে গেছে চওড়া! রাস্তা । শেষ হয়েছে বড় বৈঠকখানার 
মনে | সেখানে দাড়িয়ে এক ল্যাপ্ডো গাড়ি । ঘোড়। কাকরের রাস্তায় 
ঘপাঠ্কছে তার শব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি এখান থেকে । গাড়ির গা, 
ঘাড়ার গ। থেকে যেন সকালের রোদ ঠিকরে পড়ছে ; সেটা দেখতে পাচ্ছি 
ঘারে। স্পষ্ট । আর পিছনে দেখছি, আবছা-আবছ। বৈঠকখানার বারান্দায় 
ঢার সব হাটাহ্থীটি নড়াচড়া করছে । 

বাবাকে জিজ্ঞেদ করতুম। “এসব কি? এখানে থাকে কারা ? 

বাব! ছিলেন কট্টর | শুধু যে আপন ধর্মে অবিচল বিশ্বাস তাই নয়, 
গর মতে সংপারে মাত্র ছুটি রঙ। কালে! আর সাদা । মিশমিশে 
ঢালো মার ধবধবে সাদা । পাপ পাপ, পুণ্য পুণ্য! পাগী যতই বোঝাবার 
চছ। করুক না কেন, 'কোন্‌ নিদারুণ দায়ে পড়েসে এ কর্ম করেছে বাবার 
চানে মেটা প্রবেশ করতো না। ভালো মন্দয় মিলিয়ে মানুষ গড়া 
এট ট্িনি বিশ্বাস করতেন না। তার মনের এল্বামে কোনে। হাকটোন্‌ 
ঢবি ঢুকতে পারুতে। না। এসব অধশ্য আমি বড় হয়ে পরে বুঝতে 
পরেছিলুম | 

নবাব-বাড়ির বিলাস-ব্যসন; হয়তো! কা অনাচার পাপাচারের খবরও 
ঠার ক!নে গিয়ে পৌচেছিল। “পৌচেছিল? ইচ্ছে করেই বলছি, “প্রবেশ 
কবেনি? নিশ্চয়ই, কারণ কোনে। রকমের পাপাচারের কথা তার সামনে 
.কউ তুলতে সাহস পেত না, এবং যদ্দি বা মুরুবিবদের পাতল। কোন একজন 
একটুখানি কড়ুক্কিপনার কথা তুলতে চাইতেন, বাবা অমনি, "বাপ, ব্যম। 
হয়েছে" হয়েছে) বলে থামিয়ে দিয়ে অন্ত কথা পাড়তেন। 

কাজেই নবাব-বাড়ির ব্যাপারে আমার প্রশ্নের কোনো উত্বর আমি 
পাইনি । বাবার গল। থেকে যে একট! গ-র্-র্র্‌ জাতীয় শব্ধ তখন বেরুতো। 
ভার মানে আমি জানতুম__-এসব বাজে প্রশ্ন আমায় শুধোসনি। 

তাবু বছরখানেক পরে বাবা গেছেন মফঃম্বলে । আমি সেই শ্ুযোগে 
সোজা রওয়ানা দিয়েছি নবাব-বাড়ি পানে । রাস্তয় একা চলা অভ্যাস 
নেই, ভার উপর ছুই পুকুরের মাঝখানের পথের ছা'ধারের নূতন নূতন 
চুলের বাহার দেখে আমি তম্মর, এমন সময় 'ধর ধর, গেল গেল' চীংকার 


১৩৯ 


এবং চোখের ছা'হাত সামনে দেখতে পেলুম জুড়ি গাড়ির ছুই বিরাট ঘোড়া 
হঠাৎ থামাতে গিয়ে সামনের ছু' জোড়া পা আকাশের দিকে তুলে ধকার 
চেষ্টা করছে। তারপর আর জ্ঞান ছিল না। 

যখন চৈতন্য হল তখন প্রথমেই নাকে গেল গোলাপঞ্জলের মিটি 
মোলায়েম গন্ধ। চোখ মেলে দেখি, অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর মুখ 
মেয়েদের । খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবার বয়েস তখনো তামার হয়নি কিন্ত 
তবু লক্ষ্য করেছিলুম তাদের মুখে ভীতি আর কৌতৃহল। এরা অন্দরমহলের 
পর্দানশীন কিশোরী তরুণী। বাইরের অনাত্ীয় ছেলে কখনে। দেখেনি । 

আমার কাছে সে ঘর মায়াপুরী সদৃশ মনে হয়েছিল। কত ঝাড়লষ্ঠন, 
দেওয়ালগিরি, ফানুন, আমার পরিচিত মক্কা মদীনার ছবি--কিন্তু কী 
বিরাট বড়, আর কতো সুন্দর সোনালী চওড়। ফ্রেমে বাধা নীল মখমলের 
উপর সোনাদী হরফে লেখা হজরৎ বড় পীর মুঈন উদ্্‌-দীন চিশতীর নাম, 
আরো! কত কী। আর বিছানাটাই বা কী মজার ! একটু নড়তে গেলেই 
নীচের দিকে নেবে যায় । 

মেয়েগুলি যেন এক একটি পরী। তাদের বুড়ী মা-মাসীরাও যে 
বুড়ী পরী । তানাও কী সুন্দর ? উপরে টানাপাখা বেদম চলছে, তৎসত্বেও 
গোট। তিনেক মেয়ে হাওঙপাখ। দিযে অনবরত আমাকে পাখা করে যাচ্ছে 
আর আচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে । 

পিছনে দ্রাসীদের কলগগুরনের মাঝখানে শুনতে পেলুম,গীরের ছেলে" 
মুশীদের ব্যাটা? এই সব বলে আমার সম্বন্ধে আলোচন। হচ্ছিল। 

হঠাৎ এরা সব চলে গেল । ডাক্তার সেনগুপ্ত এসেছেন । 

আমার কিছুইহয়নি। হঠাৎ ৰিকটদর্শন জোড়া-ঘোড়৷ দেখে ভিরমি 
গিয়েছিলুম । আমার পরিচয় পেতে এদের কণামাত্র সময় লাগেনি! সঙ্গে 
সঙ্গে অন্দরমহলে পাঠিরে দেওয়া হয়েছিল । 

ডাক্তার বললেন, “কিছু হয়নি । আমি ওকে বাড়ি পৌছে দিচ্ছি।' 

বারান্দ। থেকে গলা শোন। গেল £ 'ল্যাণ্ডোয় করে নিয়ে যায় দ। যেন। 
হয়তে! এ গাড়ি দেখে পীরের ছেলে ভয় পাবে। পালকি-গাড়িতে করে। 
আর বাতাসার মাকে বল মঙ্গে যেতে । বাতাসের মার সঙ্গে অনেক 


১৪০ 


হালুয়া মোরববাও দেওয়। হয়েছিল। গাড়ির ভিতর লক্ষ্য করেছিলুম ছোট্ট 
দুন্দর একটি আয়না, আর দেয়ালের সঙ্গে লাগানো ফুলদানিতে কালো 
গোলাপ । মায়ের সঙ্গে ঘে ছ্যাকড়া-গাড়িতে করে মামাবাড়ি বাই এ তে 
সে-রকম নয় ! 


নবাব-বাড়ির সঙ্গে এই আমার প্রথম এবং শেষ পরিচয় । 
সঃ ক ১ 


বাব৷ ট্রান্সফার হওয়াতে মামা অন্য শহরে চলে গেলুম | 

তারপর এ শহরের কাজল নদী দিয়ে কত জলই বয়ে গিয়েছে! 
নদীর উপর লোহার পোল হয়েছে । দূরের রেলগাড়ি পচিশ বছর ধরে 
চলতে চলতে নদীর ওপারে এসে ইস্টিশেন বানিয়ে এপারেরও জলুম 
বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই গাড়ি ধরেই একদিন পৌছলুম আবার সেই 
শহরে । স্টেশনে আমার অফিসের হেডক্রার্ক, একাউনটেন্ট উপস্থিত । 
বললে, ভালো বাড়িই ভাড়। নেওয়৷ হয়েছে । সরকার এত ঘন ঘন আমায় 
বদলি করেছে যে, এখন আর ওপব খাবদে আমার কোনে। ওৎনুক্য বা 
কৌতৃহল নেই। 

একদা এ শহরের রাস্তার গ্রতিটি গর্ত আমার মুখস্থ ছিল। সাইকরের 
রভে বদলিয়ে বড়দ1 আমাকে নিয়ে শহরে চক্র লাগাতে।। প্রতি গর্তে 
খেতুম ঝাঁকুনি । আজ সে রাস্তাগুলো ফিটফাট । গাঁধীজী আসেন, জিন্না 
সাহেব আসেন-_লাটসায়েব আগেও আসতেন, এখন আসেন ঘনঘন। 

অনেক পাকা বাড়ি হয়েছে। ১৮৯৭-এর ভূমিকম্পে প্রায় সব পাক৷ 
বাড়ি ধুলিসাৎ হওয়াতে আমার “ছলেবেলা পর্বস্ত অতি অল্প লোকই পাকা 
বাড় বানাতে সাহস করতো! । এতদিনে নে স্মৃতিও ধুলিসাৎ হয়ে 
গিয়েছে । ইতিমধ্যে হেথা হোথা অনেকগুলে? কৃষ্ণচূড়ার গাছ শহরে এক 
নৃতন বাহারের ন্থষ্টি করেছে । হলে কি হয় ফরাসীতে বলে, “গু সা শীজ। 
পটু সে লা মেম্‌ শোজ--যতই সে বদলায় ততই তার চেহারা আগের 
মত দেখায় এখানকার পথের পাশের সবুজ আর কীাকরের রাস্তার 
লালে এমন ছটো। শেভ আছে যেগুলে। শহরের ছুরঙা জাতীয় নিশান । 
হাত দেয় কার সাধ্য! 


১৪১ 


তবু কেন জানিনে, এই চেনা-অচেনায় মেশানো। শহরের ছবি আমা; 
মনে কোনে! আনন্দ সঞ্চার করতে পারলে। না। চোখ ছুটে বৰ 
করলুম | 

ট্যাক্সি থামলো । আমি চোখ মেলে অবাক । 

সেই ছেলেবেলায় যে বাড়িতে আমরা থাকতুম, আমার আপিমে! 
লোক ঠিক সেই বাড়িটাই আমার জন্য ভাড়া নিয়েছে । তফাতের মণ 
শুধু এইটুকু যে দক্ষিণমুখে। টিনের ছাতওল! সেই আসল বড় ঘরটা আ 
নেই ; তার বদলে একথান। ছিমছাম দোতলা বিল্ডিং__সবুজ খড়খড়িওঃ 
জানাল! আর বাড়িটার রঙ ফিকে আসমানী | 

স্মৃতির গামছাট! কে যেন নিঙড়ে নিয়ে চার ফৌটা চোখের জল বে 
করে দিলে। 

আপিসের লোকজন বিচক্ষণ। আমাকে আমার পুরনো স্মৃতির হা 
ছেড়ে দিয়ে ব্দায় নিল। 

রাস্তার দিকে মুখ করে ডেকচেয়ারে শুয়ে তাকিয়ে আছি রাস্তা 
ওপারের সেই প্রাচীন দিনের আম জাম বাঁশ বেতে ঘের! বাড়িটা 
স্থপুরিগাছের ডগার দিকে, আর শুনছি ঘুঘুর সেই পুরনো! ডাক, “কে 
ঠাকুর, ওঠো; কেউ ঠাকুর, ওঠে। |) 

মিগারেট বের করতে গিয়ে প্রথমটায় হাত পকেটেই থমকে গিয়েছি 
_ হঠাৎ মনে পড়েছিল, মুরুববীদের কেউ যদি দেখে ফেলেন ! তখন ম্‌ 
পড়লে; হায়! এ শহরে আমার আর কেউ মুর্পববী নেই। কোথা 
ন। কার তোয়াক্কা না করে ভস্‌ ভস্‌ করে সগর্বে দিগারেট খেতে পাৰা 
আনন্দটা মন ভরে দেবে বীন্ু যেরকম প্রথম রেলগাড়িতে চড়ে সূ 
শ্বুর-ভাম্ুর কেউ নেই বলে পুলকিত হয়েছিল--আমার হল উল্টোটা 
দীর্ঘনশ্বাস ফেলে ভাবলুম, দীঘির-পাড় মহল্লার ওসমান চাচা মেঃ 
চোটপাট করতেন সত্য কিন্তু তার বাগানের লিচু খাওয়ার জন্ত খবরও € 
পাঠাতেন সেও তো সত্য। তার হাড়-কিপটে জাসাই বাগানেক্স তাৰ 
লিচু পাইকারকে বিক্রি করার ইলিত দিলে পর চাচা নাকি জামাইকে- 
আপন জামাইকে- _খড়ম নিয়ে তাড়া করেছিলেন । আজ চাচা যেখাে 


১৪২ 


সেখানে আল্ল! নিশ্চয়ই তার জন্যে মাইলকে মাইল জুড়ে লিচুবন তৈরি 
করে দিয়েছেন । 

সেই ছাতা ল্যাম্পট! আর নেই । সন্ধ্যে হতে না হতে বেয়ার। এসে 
ফটফট করে গোটা তিনেক বিজলি বাতি অলস অবহেলায় জ্বালিয়ে 
দিলে। মনে পড়লো, সেই প্রাচীন ছাতা ল্যাম্পটা প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের 
কাছে কী আদরটাই না পেত। 

গেটের কাছে দেখি ছুজন লোক আমার বারান্দার দিকে তাকিকে 
কিযেন আলোচনা করছে। শেষটায় দেখি সাহস সঞ্চয় করে ছজনাই 
কম্প।উপ্ডে ঢুকলো! । আমিও এগিয়ে গেলুম । চলার ধরন থেকেই বুঝতে 
পেরেছি এর! কার । 

আহমদ আলী সুন্দর চাপদাড়ি রেখেছে, আর বিধু চক্রবতী সেই 
প্রাচীন দিনের সাজে-_ধুতি-পাঞ্জাবি-উড্ভুনি। হাতে সেই রেলি ত্রাদার্পের 
সনাতন বাশের ভাটের ছাতা । 

আহমদ আলী এগিয়ে এসে বললে, “পরিচয় দিতে হবে নাকি? 
পাঠশালে পাশে বসতুম 1) 

আমি গম্ভীর হয়ে বললুম, “সে তে। হতে পারে না আহদ সাহেব; 
আমার পাশে এ রকম দাড়িওল। কেউ বসতে না)" 

বিধু অল্পেতেই হাসতো--সেই ছেলেবেলায়ও | আহমদ আলিকে 
বললে, “দেখলি ? কিরকম একখান মাল ছাড়লে । এবার বলবে? অন্ঠ 
পাশে ও রকম নেয়াপাতি ভুঁড়ি লিয়ে কেউ বসতে] না”, বলেহ তার 
নেয়াপাত ভুড়ি হঙ্গিয়ে ছুলিয়ে হাসি আর থামাতে চায় না। 

ছুজনাকে পরম সমাদরে বারান্দায় বসালুম। 

গড়গণ়ায় টান দিয়ে আহমদ আলী বললে; 'জানিস, বিধুঃ এ বারান্দার 
বসে গড়গড়ায় টান দিতে কি রকম যেন অস্বস্তি বোধ হয়। তবু ন। হয় 
মেরে কেটে ।সগারেটট। বোঝ যায় । বিপাকে ওটাকে পকেটে পুরে নাক 
টিপেও মারা 'যায়।) বিধু বললে; 'ন্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণও কুঞ্জ খুঁজতেন, 
কিংবা যেতেন গোপীলহ যমুনার অতল জলে-_-তার পর্যন্ত মুরুববীর ভয় 
ছিল। তারপর, রাধামাধব, “রাধামাধব” বলে বার ছত্তিন ছংকার ছাড়লে । 


১৪৩ 


আমি চোখ টিপতে আহমদ আলী বললে, “দেখ বিধে, বয়েস হয়েছে, 
এবারে ভগ্ডামি ছাড। কেই্ঠাকুর অনেক লীলাখেল। দেখিয়েছেন, কিন্তু 
এ ভগ্তামিটা করেননি ককৃথনে। 1; 

বিধু পাষণ্ড । আমাদের ধর্মকথায় কান দিলে না। 

পুরানো দিনের . অনেক কথাবার্তা হল। ওঠবার সময় বিধু কিঞ্চিৎ 
কিন্তু কিন্ত করে পকেট থেকে একটা বড় সাইজের পানের ডিবে বের করে 
বললে, 'রান্তিরে খাস। বউ দিয়েছে । সন্দেশ। তোর তো. 

চে সঃ গ 

পুরানো হলেও নৃতন বাড়ি। রাত্রে ভালো ঘুম হল না। কত 
রকম স্বপ্ন যে তালগোল পাকিয়ে আমাকে বিব্রত করে গেলো তাৰ ইয়ত্তা 
নেই। শুধু একটা স্বপ্ন দেখলুম খুব পরিষ্কার । এ বাড়িতে আমার একটি 
ছোট ভাই মাঝ বায়। স্বপ্নে দেখলুম, তাকে পাইক্রের রডে বসিয়ে বাড়ির 
লনে পাক খাচ্ছি আর সে খলথল করে হাসছে । 

সেই শেষ স্বপ্ন। ভোরেব্ আলে! তখন ফুটি ফুটি করছে। শীতকাল । 
র্যাপারটা জড়িয়ে বারান্দায় বসলুম। কে যায় এরাস্ত দিয়ে হনহন 
করে? বিধুনা? “আরে ও বিধুশেখর, ও চক্কোত্বী। থামই না) 

ব্রজনুন্দরীকে স্মরণ করতে করতে বিবু বারান্দায় উঠে বললে, “অবাক 
করলি। তুই না বেল! দশটার আগে কথনে। বিছান। ছাড়িসনে । জীবনে 
কখনো! ফজরের নামাজ পড়েছিস? তা ভাই, আমি চললুম। দেরি 
হয়ে গিয়েছে । আহমদ আলী বসে আছে। ওকে নিয়ে মণিং ওয়াকে 
যাই। চলনা। নানা! তোকে আর ড্রেস বদলাতে হবে না। রাস্তায় 
লোকজন নেই ।” 

আমি বললুম, “সেকি রে? বাবার সঙ্গে যখন ভোরে বেড়াতে 
বেরতুম তখন তো! আমাদের এই অজ মহল্লাতেই বুড়া-ছোড়ার 
গিসগিন করতে] 1” 

বিধু বললে, সে সব দিন গেছে । এখনকার লেটেস্ট ধিয়োরি হচ্ছে। 
্রাহ্গমুহুর্তে যে লক্ষমীছাড়। জড়নিদ্র। আসে সেইটেই নাকি সঞ্জীবনী নিদ্রা । 
ঘত সব হাড় আলসের দল!” 


১৪৪ 


ঘন কুয়াশা | লাল কাঁকর-ঢাল৷ এক ফালি আকার্বাকা সরু রাস্তা 
দিয়ে তিন জনায় চলেছি। রাস্তার ছু'দিকের থালে হয় কচুরিপানা, নয় 
ছনিয়ার বত লতাপাতা, কচুছেচু আর ঢে'কিশাকের মত মাধার্বাকনে। কি 
সব ফার্ন যার নাম দেওয়ার প্রয়োজন কেউ কখনো অনুভব করেনি । এক 
ইঞ্চি জায়গা নেই যেখানে কোনে! একটু সবুজ-কিছু গজায়নি। এই 
শীতকালেও। শিউড়ি বিউপুরের লোক কল্পনাও করতে পারবে না। 
ওদিকে আবার ওদের তাল, খেজুর, নারুকোল গাছ এখানে খুজে বের 
করতে হয়। বদলে রয়েছে, রাস্তার ছু'পাশে সুপুরির এভিনিউ । তাদের 
মাদা গায়ে ফৌট। ফৌটা হিম- যেন লেসে গাথা যুক্তোর কাজ। 

হঠাৎ ফাঁকার় বেরলুম। সঙ্গে সঙ্গে কোন্‌ মন্ত্রবলে যেন কুয়াশ। 
অন্তর্ধান করল । রোর্দ,রটা ষেন সন্ধ্যেবেলার কনে-দেখার আলোর মনিং 
এডিশন। বী দিকে নজর যেতে স্তম্ভিত হয়ে দাড়ালুম, এবং সেটা এমনই 
আচমকা ঘে আহমদ আলী বিধু চক্ষে! একসঙ্গে শুধলে “কি হল £ 

আমি নিম্পন্দ। নির্বাক । 

এই সেই নবাব-বাড়ি? 

পানায় পানায় ছয়লাপ হয়ে মব-কট। পুকুর এক হয়ে গিয়েছে । জারুল 
কৃষ্চুড়ার এভিনিউ কে যেন সমূলে উৎপাটন করে নিয়ে চলে গিয়েছে । 
এখন সেখানে যে আশসেওড়া, আকন্দের ঝোপঝাড় হয়েছে তার! যেন 
পুকুরগুলোর কচুরিপানার সঙ্গে বেমালুম মিশে গিয়ে একাকার হয়ে 
গিয়েছে । বাড়িঞচলোর দিকে চোখ যেতে দেখি, কতকগুলে! কাত, 
কতকগুলোর গোট। ছুই চাল উড়ে গিয়ে বেরিয়ে গেছে বাশের কাঠামোর 
পাঁজর, তার উপর বসে আছে সারি সারি পায়রা না ফিঙে ঠাহর করা গেল 
না, কোথাও বা বিশ্রী নোংর। জাম্ধরা কেরোসিনের টিন দিয়ে চালগুলো 
মেরামতি চেষ্ট। করা হয়েছে, একটা ঘরের উপরে কাত হয়ে পড়ে আছে 
ঝড়ে উপড়ে-পড়! একটা আস্ত গাছ--সেটা'সরাবার জন্য কারে! বোধ হয় 
প্রয়োজন বোধ হয়নি-_-আর এখানে সর্বত্র জমে আছে আবর্জনারভপ, 
ঝোপ-ঝাড়ে ভরতি তামাম বাড়িটা । এবং সবচেয়ে মমস্তদ মনে হল, 
আনাড়ি হাতের একটি আধমর। আধফালি উমাটে! খেত দেখে--এই দৈন্ত, 


১৪৫ 


অবহেলা, লক্ষ্্রীছাড়া পরিবেশের মধ্যে কে যেন অনিচ্ছায় অর্ধাবশ হস্তে 
আধখ্যাচড়া চেষ্টা দিয়েছে একমুঠে। খাছ্য সংস্থান করতে । এলোপাতাড়ি 
কঞ্চির বেড়ার মাঝখান দিয়ে সেখানে একটা ছাগল ঢুকছে। 

বিধু বললে, “কি রে, জ্যান্ত ভূত দেখলি নাকি? আমাদের দেখিয়ে 
দেনা । 

আমি ততক্ষণে বাকৃশক্তি ফিরে পেয়েছি । বললুম; “কিচ্ছু দেখছিস না? 

'না তো)” 

বুঝলুম নবাব-বাড়ির এ পরিবর্তন তো আর এক দিনে হয়নি বে এনা 
যার] পঁচিশ-ত্রিশ বৎসর ধরে এখানে বেড়াতে আসছে তারা লক্ষ্য করবে । 
তাই হেয়ালী বাদ দিয়ে সোজান্ুজি প্রশ্ন করলুম। িবাববাড়ির এ-অবস্থা 
হল কি করে?? 

আহমদ আলী যদিও ঘড়ি ঘাড় বিধুর মত ্যগ্টিকতার নাম স্মরণ 
করে না তবু দেখলুম ধর্মের প্রত শ্রদ্ধা হয়েছে তারই । বললে, আল্লা 
যাকে দিয়ে যা করান । কিন্তু ধনদৌলত যায় কি করে সেটা তুই বন্ 
বৎসর শহরে কাটিয়ে এসে আমাদের শুধোচ্ছিন ! সেখানে তে। শুনেছি, 
আজ রাজা কাল ফকীর। নিত্যি নিত্যি এবং গপ্ডায় গণ্ডায়। এখানে 
সব-কিছুই চলে ধীরে ধীরে, তাই ধনী হতে সময় লাগে, আর গরীব হতেও 
সময় লাগে ।? 

বিধু দেখলুম, একটু গম্ভীর হয়ে গিয়েছে । আমার মন তখনে। নবাৰ- 
বাড়িটার এ হতশ্রী ছবিটা গ্রহণ করতে পারছে নী । বিধু বললে; গল, 
এ টিলাটার উপরে । বাবু সেখানে চা পান করেন'-বাবু অর্থাৎ 
আহমদ আলী। 

টিলার উপর ছোট্ট একটি দেউল, কিন্তু বিগ্রহ নেই । কিংবা হয়তো 
চিতাভস্মের স্মৃতি-মন্দির | দেউলের কোলে একটি ছোট ছত্রী। তারি 
উপরে বসে আহম্মদ আলী ঝেল। থেকে চায়ের ফ্রাঙ্ক বের করলো । 
বিধুর জন্য লেবু। 

আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে আহমদ আলী বঙ্গলল. “ৰিধু 
বলুক। ওর মাবিশ্বাস বাড়ির মেয়ে ।' 


১৪৬ 


আমি বললুম। 'বিশ্বাসরা তো কায়েত হয়। 
রি বললে, 'হাতী হয়। বামুন হয়; কায়েত হর, নমশূক্র হয়) ডোম- 
ডাল ভা হয়। এই তে। খবর রাখিস হিন্দুদের । আর আমরা মরি তোদের 

খবর নিয়ে নিয়ে । ওদিকে আবার গলাগলি, ভাই ভাই ! যত সব!) 

আমি বললুম; কিন্তু পশ্চিম বাঙলায় যে আবার হিন্দুরা মুঘলমানদের 
কোনো-কিছু জানে না, ওদিকে মুসলমানরা মনোরথ দ্বিতীয় থেকে আরম্ত 
করে রটস্তী গুজে! পর্যন্ত ওকিবহাল। তা নে যাকগে।? 

বিধু বলাতে আবছা আবছা মনে পড়লো, তার মামার বংশের 
বিশ্বাসরা অনেক পুরুষ ধরে নবাৰ-বাড়ির নায়েব । 

বিধু কোথায় আরস্ত করবে, ঠিক যেন বুঝতে পারছিল ন1। শেষটাক্স 
বললে, "মা আর কি বলবে? জ্যাঠতুতে! ভাই, অথচ বরেসে প্রায় 
বাপের লমান। তছপরি গম্ভীর । তহ্পরি বছর পচিশ পূর্বে যখন পড়ত 
বিগডোতে আবস্ত করলে। সেই থেকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস, 
বৎসরের পর বৎসর বাড়ি ফেরেন দুপুর রাতে চোরের মত, বেরিয়ে 
যান ভোরবেলা চোরের মত। মামী নেই, ছেলেপুলে নেই হুনো 
দেবে কে? 

আমি শুধালুম: “আরস্ত হল কীকরে?। 

বিধু বললে 'মে আমি জানি । আমাদের দেশে তখনো ব্যান্ক কাকে 
ৰলে লোকে জানতো না। 

শ্বশুরবাড়ি যাবার পথে গোয়ালন্দ স্টীমারে কে নাকি নবাব সাঁয়েবকে 
বোঝালে; ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখলে সুদ দেয়। এমনিতে কেউ নবাৰ 
সায়েবকে লগ্রির কারবার করতে বললে তিনি নিশ্চয়ই তাকে হাণ্টার 
নিয়ে তাড়া করতেন, কিন্তু কোথায় কোন্‌ কলকাতায় ধরা-ছোয়ার বাইরে 
বেনাগালে কাগজ-কলমেই সব-কিছু হয়-_-ওতে আর আপত্তিকি? কিন্তু 
মামা আপত্তি করেছিল। 

বাঙ্ক শেখালে, শেয়ার কিনলে আরো বেশী লাভ। কিন্তু মাম! 
আপত্তি করেছিল । 

নবাব সায়েব শিখলেন, চায়ের বাগান মুনাফা করে ব্যাঙ্কের 


১৪৭ 


“ শেয়ারহোল্ডারকে তারই কিছুটা দেয়; অতএব করে! চায়ের বাগান | 
কিস্ত'মামা আপত্তি করেছিল। 

“মামার জীবন-দর্শন বড় সরল। জমিদারের ব্যাট। তুমি জমিদারি 
করবে। বিলাস কববে। সমঝে-বুঝে ব্যসনও করতে পারে। এবং তার 
পরও, যদিস্তাৎ, নিতান্তই কিছু বেঁচে যায় তবে তাই দিয়ে কিনবে নৃতন 
জমিদারি । কাছে-পিঠে হল ভালোই, দূর-দরাজে হলেও আপত্তি নেই। 
মামাকে খুশী করার জন্তই যেন নবাব সায়েব টাক দিয়ে তার ভাগ্নেকে 
পাঠালেন মালয় ন' বার্সীয় কোথায় যেন-_ওখানে সম্তায় বড় বড় মহল 
বিক্রি হচ্ছে। 

'এদিকে চা-বাগানে নবাব খেলেন মার ।$ 

আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, “সে কি ?? 

বিধু বললে, “একদম | কিন্তু তুই ঠিকই আশ্চর্য হয়েছি । নেটিভব! 
তখন সবে চায়ের কারবারে ঢুকেছে । ধুলোমুঠো৷ সোনামুঠো হচ্ছে, অথচ 
নবাব খেলেন মার | মামা নাকি বলেছিল, নবাবের ব্যাট। তুমি গিয়েছিলে 
দাড়ি-পাল্লা হাতে করে চ! ওজন করে মুদীর সঙ্গে পাল্লা দিতে-_-বোঝো 
ঠ্যালা । অবশ্য সামনাসামনি বলেনি_-বলেছিল আড়ালে । 

তারপর আরম্ভ হল নবাৰ পরিবারের পতন | চা-বাগানের দেন! 
শোধ করবার জন্য নবাব সায়েৰ ঢুকলেন টকা! বাজারে কলকাতার জুট 
আর বোস্বায়ের তুলো । ওদিকে নবাবের ভাগ্নে মার। যাওয়ার পর দেখা 
গেল বিরাট বিরাট জমিদারি সে কিনেছে বহু জায়গায় কিন্তু তার আপন 
নামে, নবাব সাহেবের নামে নয়। ভাগ্নের ছেলের সঙ্গে লাগলে 
মোকদ্দম। | | 

তখন আরম্ত হল জমিদারি বন্ধক দেবার পালা । ' বিরহামপূরের লক্ষ্মণ 
পাল তার জন্য তৈরী হয়েছিল। আসতে লাগল কীড়। কাড়া টাকা এক 
দোর দিয়ে, বেরিয়ে গেল তিনদোর দিয়ে-ফটক। মোকদ্দম1! আর 
কলকাতা-বিলাস। আগে নবাব সাহেবের একমাক্র শখ ছিল হরিণ 
শিকার। এখন যতই তার টাকার অনটন বাড়তে লাগলে। ততই চাপলো৷ 
ফুতিবাজির নেশা । এদিকে নিজে মগ্ঠ স্পর্শ করেন না. আবার শুনি 


১৪৮ 


কলকাতায় নাকি ইয়ার-বকৃসীদের এক সন্ধ্যায় দশ হাজার টাকার, 
মদ খাইয়েছিলেন। 'শৈম্পেন না কিযেন! কিজিনিসরে ওটা? তুই 
তো৷ কলকাতায় অনেক কাল ছিলি ।; 

আমি বললুম, 'দামী ফরাসী মদ। তবে শুনেছি, দ্রব্যগুণও আছে। 
বেছ'শকে ছু শে আনতে হলে নাকি ওর বাড়া জিনিস নেই ! 

আহমদ আলী তাচ্ছিল্যের সরে বললে, 'লাও! আমি তে! শুনেছি 
মদ খেয়ে হুশিয়ার বেহুশ হয়।? 

বিধু বৈষ্ণব । আদিরসের বেবাক বাৎ জানে! বললে; “প্রেমের 
যায় বুদ্ধমান | 

আমি বাধ! দিয়ে বললুম। "ওসব থাক | নবাধ-বাড়ির কথ 
বলে।। 

হ্যা, নবাব-বাড়ির কথাই সব কথার নুবাব। বিশেষ করে যুধিষ্টিরের 
সঙ্গে তার একটা আতস্তরিক মিল আছে। ওর রোক চাপাতে উনি 
এজমালি_ স্ত্ীটিকে পর্যন্ত খুইয়ে বসলেন । এ'র তাবৎ সম্পত্তি এ'রই 
এলাকার-_যদিও পুষ্ট পুষ্যে মহলটি ভরতি--এবং আর কিছু না হোক 
মেয়েটার তে। বিয়ে দিতে হবে । তবু সেই ক্ষয়-ক্ষতি, বিলাসব্যমন এবং 
সর্ধগ্রাসী সর্বনাশ থেকে তখন তাকে বাঁচায় কে? 

আহমদ আলী বললে, 

“এমন অনেক বন্ধু আছে দেয় রে তুলে আশা গাছে? 
ভালোবেসে নামাকস এসে এমন বন্ধু ক'জন আছে? 

বিধু বললে, “একদম খাঁটি কথা । আমাদের যুধিষ্টিরের মৌলামুরুববী 
তে! কাছে পঠেই ছিলেন, আর ভীগ্ম তো সভা স্থলে বসেই । কিন্তু তারাই 
কি ঠেকাতে পেরেছিলেন তখন তাকে ? 

ওদিকে তিনি 'হারলেন “ভাগ্নের বেটার সঙ্গে মোকদামায়। বিশ্বাস 
মাম! অবশ্য এটা একদন হতে পারে এই আশঙ্কায় কাগজ-পত্র ঠিকঠাক 
করে রেখেছিল, কিন্ত নবাব সাহেব মোকদ্দম। দিততে হলে যে এঁদক 
ওদিক একটুথাণি ইয়ে করতে হয়, অর্থা২ মামার কাগজপত্র 


১৪৯ 


মোতাবেক একটুখানি উনিশ-বিশ করতে হয়, তার সুবিধে নিতে রাজী 
হলেন না । 

খণে খণে নবাব-বাড়ি যেন চোখের সামনে টুকরে। টুকরে। হয়ে খসে 
পড়ে যেতে লাগলো! ৷ সে ছূর্দেবেত্র কাহিনী আমি কি করে ছুম্বপ্টা, ছুদিন 
ব। দু'মাসে তোকে বলবো-_-যেটা ঘটেছিল ঝাড়া, পঁচিশ বদর ধরে, দিনে 
দিনে পলে পলে? 

যে নবাব-বাড়িতে একদিন এত ঘড়। ঘড়া কলসীভর! ঘি মৌজুদ থাকতো, 
যে গায়ের থেকে আন! দাসী জলের বদলে ভূলে ঘি দিয়ে বদন! ভরে নিয়ে 
পিছন ফিরতে গিয়েছিল, সেখানে আরেক দিন আরম্ভ হল তেল; 
তারপর 'এমন দিনও এল যখন বাড়ির চতুর্দিকে জমে ওঠ! বন থেকে লতা- 
পাতা কচু-খেচু যোগাড় করে সেদ্ধ করে থাওয়।। একদিন এই নবাৰ- 
বাড়িতে শীতের গোড়ায় যখন গণ্ডায় গণ্ডায় সাটিনের লেপ তৈরী হত 
তখন তুলোর উপর ঢাল হ'ত কণ্টর কণ্টর আতর" 

আমি বাধ দিয়ে শুরগালুম। “কণ্টর কি রে 1) 

আহমদ আলী তাচ্ছিল্যের স্থুরে বললে, “শী ভাষা বেবাক ভূলে 
গিয়েছিস। কণ্টার মানে ডিকে্টার। চা-বাগিচার সায়েবরা প্রথম 
এদেশে আনে । 

বিধু বললে। শীতের রাতে শুতে শুতে সবাই শুকবেন সেই লেপের 
ভুরভূরে খুশবাই। শুধু সায়েব বিবির! না-_গোলাম, দয়ল।, নওল। পর্যন্ত। 
সেখানেই শেষটায় ছালার চট নিয়ে শুধু কাথার কাজ না, কেউ কেউ নাকি 
লজ্জা নিবারণও করেছে । 

'ণকমাত্র সাম্তনার কথা, ছূর্দশা চরমে পৌছবার পূর্বেই একটি মাত্র 
মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সেই শেষ ধার দিয়েছিল লক্ষণ পাল। সেই 
সঙ্গে সঙ্গে মামাও ঢেলে দিলেন_ ঢেলে দিলেন বল। তুল হয়, ছিটেফোটায় 
দিলেন তার হিস্তের পৈতৃক সম্পত্তি বেচে তিনি ঘা যোগাড় করতে 
পেরেছিলেন। বেশীরভাগ আগেই গিয়েছিল নবাবের ছোট ছোট হাওলাত 
শোধ করে বড় বড় খণ আনতে! 

পুষ্যির! চতুর্দিকে ছিটকে পড়লে। ৷ সামান্য হু'চারজন যাদের অগতির 


১৫০ 


গতি বলেও কোনো! গতি ছিল না, তার। ঠিক যেন বাস্তসাপের মতই বন- 
বাদাড়ে ভরতি বাড়ির আনাচে-কানাচে কাটাতো। দিনটা, রাতে বেরতো। 
তাদের ব্যাঙ ই'ছুর অর্থাৎ লতা কচুর জন্য । 

এমন সময়ে নবাবের মস্তকে বজাঘাত। মেয়ে আসছে বাপের 
বাড়িতে । বিয়ের পর এই প্রথম | সেতো সব জ্ঞানে ভার কী অবস্থা । 
সঙ্গে যে মেল লোকজন আসবে । তিন পুরুষের ভিতর ব্যাটাছেলে 
মেয়েছেলের মধ্যে ওই “তা সব চেয়ে বেশী মাত্রায় বুঝনমঝ নিয়ে 
জন্মেছিল। সে:এ কি করতে চললে1? 

তার দিন তিনেক আগে তোদের মস্জ্দিদে মসজিদে শবীনা খতমের 
পরব হয়ে গিয়েছে | নবাব-বাড়ির পয়সায় এ যে পাশের টিলার মসজিদ, 
সেখানে নবাব সাহেবকে কিছু পাঠাতে হয়। তার হাতে ভান আম্মাজান 
প্রথম মক্তব যাখার দিন বেঁধে দিয়েছিলেন 'একটি সোশার আশরফীর 
রক্ষাকবচ। কখনো সেটি হাত থেকে নাবেনি । সেইটি পাঠিয়ে দিলেন 
মসজিদে! 

এই 'প্রথম নবাব সায়েব নিজে বেরলেন ধারের সন্ধানে ; পায়ে হেঁটে। 

লক্ষ্মণ পাল পিছনের দরজা দিয়ে পালালো । 

মানুষ কি করে যে একদিন এমন অবস্থায় পৌছয় যে-দিন সে আর 
চার আন। পয়সা পর্ষস্ত যোগাড় করতে পাবে না সে আমি কখনো বুঝতে 
পান্িনি। ছেলেবেলায় মীইকেলের জীবনীতে পড়েছিলুম সেই নবাবের 
ছেলে ম!ইকেল--যিনি কিন! একদিন আস্ত সোনার মোহর দিয়ে সে যুগে 
চুল কাটাতেন--তিনি 'একদিন খয়রাতী হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে চার আনা 
পয়সা যোগাড় করতে পারেননি । তখন সেটা বিশ্বাস করিনি । আজ 
করি।' 

“বিশ্বাস !” 

“জী, হুজুর ?” 

“কি হবে ?? 

“কী আর হবে।” 


১৫০ 


সেই দিন সকালের গাড়িতে মেয়ের ষ্টেশনে পৌছাবার কথা । নবাৰ 
বিশ্বান কেউই সেখানে যাননি । 
সেই পায়রার ময়লায় ভরতি বৈঠকখানায় নবাব শুয়ে আছেন ভাঙা 
ইজিচেয়ারে | মাম! সামনে বারান্দায় হেলান দিয়ে মাটিতে বসে। 
“এমন সময় অতি নিঃশব্দে কে যেন ঘরে ঢুকলো | 
' মেয়ে । সবাঙ্গে দামী গয়না । কিন্তু একা। ব্রিকসায় করে এসেছে। 
কিন্তু এক] ।” 
বিধু দেখি চুপ করে গিয়ে, নবাব-বাড়ির দিকে পিছন ফিরে অন্যদিকে 
তাকিয়ে আছে। 
আমি শুধালুম, “এক মানে ?) 
বিধু বললে, “আমাদের ডিস্ট্রিকটের পয়ল। ষ্টেশনে ট্রেন পৌছতেই 
শ্বশুরবাড়ির লোকজন পাইক-বরকন্দাজদের নাকি নাববার হুকুম দিয়ে 
বলেছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার "বাপের বাড়িতে যায় এ-রেওয়াজ 
'নাকি তাদের পন্সিবারে নেই । মেয়ে যাবে ধুলো-পায়ে-_এক।। 
সেরাতে মেয়ে বাজার থেকে হাড়িকুড়ি এনে বাপকে রোধে 
খাইয়েছিল। ধনীর মেয়ে বেহুলা-ধনী যে রকম নারকোলের খোলে 
রান্না করে লক্ষমীন্দরকে হুপুর রাতে খেতে দিয়েছিল 1, 


॥ বিষের বিষ ॥ 


'আগা আহমদের প্রাণ অতিষ্ঠ । এক ফোটা মেয়ে তার বউ মালিক! 
থানমট।- ফু" দিলে উড়ে যাওয়ার কথা, কিন্ত সেই যে সাতসকাল ভোর 
বেলা থেকে ক্যাট্্ক্যাট আরম্ভ করে তার থেকে আগা আহমদের নিষ্কৃতি 
নেই। মিনষে” হাড়হাভাতে” ড্যাকর।'- হেন গাল নেই যেটা আগ। 
আহমদকে দিনে নিদেন পঞ্চাশ বার শুনতে হয় না। আর গয়না-গাটি 
নিয়ে গঞ্জনা-_সে তো নিত্যিকার রুটি পনীর | এবং সেই সামান্য রুটি 
পনীরটুকুও যদি ভালো করে আগা আহমদের সামনে ধরতো। তবুও না 
হয় লে সব-কিছু চাদপানা মুখ করে সরে নিত,কিন্তু সে রুটিও অধিকাংশ 


১৫২ 


দিন পোড়া; এবং পনীরের উপরে যে মনে পড়েছে সেটা চেঁচে দেবার 
গরজও বীবীজানের নেই ? আগা আহমদ দিন-মজুর ; খিদে পায় বড্ডই ।' 

ব্যাপার ট। চরমে পৌছল বিষ্লের বিশ বছর পর একদিন বখন আগা 
আহমদ কি একট। খুজতে গিয়ে আবিষ্কার করলো; মালিক। খানম নিজের 
খাবার জন্য লুকিয়ে রেখেছে মুরুমুরে রুটি ভেজা-ভেঞ্জ! কাবার, টনটনে 
(সেদ্ধ ডিম এবং তেলতেলে আচার। 

সে রাত্রে আগ! আহমদ খেল না। বউঝঞ্কার দিয়ে বলল, “ও আমার 
লবাৰ-পুতুর রে-_রুটি পনীর ওয়ার রোচে না। কোথায় পাৰ আমি কাবাব 
আগা। আমার আগাজানের জন্টে-_ 

সেই কাবাব আগ ! যা! বউ নিজে খেয়েছে ! " 

স্থির করলো, ওকে খুন করবে। নূতন করে তালাক দিয়ে লাভ 
নেই। অন্তত একশ? বার দেওয়! হয়ে গিয়েছে । মালিক খানম মুখ 
বেঁকিয়ে আজ কাজে চলে যায়। ওরা থাকে বনের পাশে পাড়া- 
প্রতিবেশীও কেউ নেই যে মালিক! খানমকে এসে বলবে) “তামার স্বামী 
যখন তোমাকে তালাক দিয়েছে তখন তার পর ওর সঙ্গে সহবাস 
ব্যভিচার । আর থাকলেই বাকিহত? কেউ কি আর সাহস করে 
আসত? আগা আহমদের মনে পড়ল গর্তপনেরো বছরের মধ্যে কেউ 
তাদের বাড়িতে আসেনি । 

শুয়ে শুয়ে সমস্ত রাত ধরে আগ। আহমদ প্ল্যান করলো; খুন করা বায় * 
কি প্রকারে । 

সকাল বেল! বনে গিয়ে খুঁড়লো গভীর একটা,গর্ত! তার উপর কঞ্চি. 
কাঠ ফেলে উপরটা সাজিয়ে দল লতা! পাতা দিয়ে । 

বিকেলেন্ন ঝৌকে বউকে বললে, "গা টা মাজ ম্যাজ করছে । একটু 
বেড়াতে যাবে ?) 

বউ তো৷ খল খল করে হাসলে টৌচ] দশটি মিনিট । তারপর ঠেঁচিয়ে 
উঠলো, “কোজ্জাবো, মা মিনষের পেরাণে আবার সোয়াগ জেগেছে ।, 

আগা আহমদ নাছোড়বান্দা । বহু মেহন্নৎ করে গা গতর পানি 
করে গর্ভট! তৈরী করেছে। 


১৫৩ 
সৈ-মু-আ-_শ্রেষ্টগল্প--১* 


বউ রাজী হুল। বেড়াতে নিয়ে গেল বনে। কৌশলে বউকে 
স্টিয়ার করে করে গর্তের কাছে নিয়ে গিয়ে দিলে এক মোৰম 'ধাৰা। 
তারপর ফের বাশ-কঞ্চি লতাপাতা সহযোগে গর্ভটি উত্তমরূপে ঢেকে দিয়ে 
আহমদ তার পীর-মুরশীদকে 'শুকৃরিয়!' জানাতে জানাতে : বাড়ি 
ফিরল। 

রান্না করতে গিয়ে বাড়িতে 'অনেক-কিছুই আবিষ্কৃত হল! হালুয়া! 
মোরববা। তিন রকমের আচার, ইস্ভেক উত্তম হরিণের মাংসের শুটকি। 
পরমানন্দে অনেকক্ষণ ধরে আমাদের আগ! রান্নাবান্না সেরে আহারা? 
সমাপন করলে । ক্যাটক্যাটানি ন! শুনে না শুনে আজ তার চোখে নি 
আসবে-_এ-কথাটা যত বার ভাবে ততই তার চিত্তাকাশে পুলকে। 
হিল্লোল জেগে ওঠে। 

পরদিন কিন্ত আগা আহমদের শরস্ত মনের এক কোণে কালো। মে, 
দেখ! দিল। হাজার ছোকৃ--তার বউতো। বটে। তাকে ওরকম ' মেতে 
ফেলাটা_? বিয়ের সময় হজরৎ মুহম্মদের নামে সে কি শপথ নেয় দি 
বে তাকে, আজীবন রক্ষণাবেক্ষণ করবে ? কিন্ত ওদিকে আবার সেই 
ছুশমন্টাকে ফের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আমতে তে মন চায় না। 

এ অবস্থায় আর পাচজন ঘা করে আগা আহমদ তাই করলে 
'যাকগে, ছাই, গিয়ে দেখেই আমি না, বেটী গর্তের ভিতর আছে ৭ 
রকম । সেই দেখে মনস্থির কর! যাবে । 


গর্ভের মুখের পাতা সরাতেই ভিতর থেকে পরিত্রাহি চিৎকার! 
“আল্লার ওয়াস্তে রম্থুলের ওয়াস্তে আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও |? কি 
কী আশ্চর্য! এতো মালিক খানমের গল! নয় । আরে। পাতা লরি 
ভালে। করে তাকিয়ে আগ আহমদ দেখে--বাপরে বাপ? এ্যাববড় 
কালে।নাগ, কুলোপনা-চকর-গেখরো। সাপ! সে তখনো চেঁচাচ্ছে 
'বাচাও, বাচাও, আমি তোমাকে হাজার টাক। দেব, লক্ষ টাকা দেব, আ? 
গুপুধনের সন্ধান জানি, আমি তোমাকে রাজ করে দেব।” 

সম্বিতে ফিরে আগ। আহমদের হাসিও পেল। সাপকে বললে 


১৫৪ 


তুমি তো কত লোকের প্রাণ নির্ভয়ে হরণ করো-_নিজের প্রাণটা দিতে 
অত ভয় কিসের ?' 

ঘেন্সার সঙ্গে সাপ বললে, 'ধ্যত্তর্ন তোর প্রাণ ! প্রাণ বাচাতে কে 
কাকে সাধছে! আমাকে বাঁচাও এই হৃশমন, শয়তানের হাত থেকে। 
এই রমণীর হাত থেকে । তারপর ডুকরে কেঁদে উঠে বললে, “মা 
গে! মা সমস্ত রাত কীক্যাটক্যাটই ন। করছে, কী “বকাটাই ন1 দিয়েছে। 
আমি ড্যাকরা, আমি মন্জা মিনষে হয়ে একটা অবলা হ্যা মবলাই 
বটে-_নারীকে কোনে। সাহাধ্য করছি নে, গর্ত থেকে বেরবার কোনো পথ 
খুঅছি নে, আমি একট! অপদার্থ, ষাঁড়ের গোবর । আমি- 

আগা আহমদ বললে? “তা ওকে একট! ছোবল দিয়ে খতম করে দিলে 
না কেন ? 

চিল ট্যাচানি ছেড়ে মাপ বললে, 'আমি ছোবল মারব ওকে! ওর 
গায়ে যা বিষ ত1 দিয়ে নাত লক্ষ কালনাগিনী তৈরী হতে পারে । ছোবল 
মারলে সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়তুম না? সারাতো কোন ওঝা? ওসব 
পাগলাম রাখো । আমাকে তুমি গর্ত থেকে তোলো । তোমাকে অনেক 
ধনদৌলত দেব। পশুপক্ষী সাপ-বিচ্ছর বাদশা সুলেমানের কসম 1) 

রূপকথ। নয় সত্য ঘটনা বলে দেখ! গেল মালিক খানমেরও 
অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে-_-এক রাত্রি সর্পের সঙ্গে সহবাস করার 
ফলে। কারণ এতক্ষণ ধরে একটিবারও স্বামীকে কোনো কড়া কথ! 
বলেনি। এটা একট! রেকর্ড, কারণ ফুলশয্যার রাত্রেও নাকি সে মাত্র 
ভিনটি মিনিট চুপ করে থেকেই ক্যাটক্যাটানি আরম্ত করে দিয়েছিল। 

মালিকা খানম মাথা নিচু করে বললে, “ওর। গুগুধনের সন্ধান জানে ।? 

আমাদের আগ। আহমদের টাকার লোন্ত ছিল মারাখ্ক। সাপকে 
স্থলেমানের ভিন কসম খাইয়ে গর্ত থেকে তুলে নিল। বউকেও তুলতে 
হল- সেও শুধন্ষে গেছে জানিয়ে অনেক কিনে কলম কেটেছিল। 

সাপ বললে, গুপ্তধন আছে ভত্তর মেরুতে--বন দূরের পথ । তার 
চেয়ে অনেক নহুজের প্থ তোমাকে বালে দিচ্ছি। শহর কোতয়ালের 
মেয়ের গল। জড়িয়ে ধরবো আমি । কেউ আমাকে ছাড়াবার জন্ঠ কাছে 


১৫৫ 


আনতে গেলেই মেয়েকে মারতে যাবো ছোবল । তুমি আস মাত্রই 
আমি সুড়ম্থড় কয়ে সরে পড়বো--তোমাকে দেবে বিস্তর এনাম, এস্তের 
ধন-দৌলত। কিন্তু খবঝদার। এ একবার । অতি লোভ করতে যেয়ো ন।। 
ভূতের মুখে রাম নাম ? 
সাপের বার! ভালে। কাম? 

শহরে এমনই তুল-কালাম কাণ্ড যে তিন দিন যেতে না যেতে সেই 
বনের প্রান্তে আগা! আহমদের কানে পর্যস্ত এসে পৌছল কোতয়াল- 
নন্দিনীর জীবন-মরণ সমস্যার কথা । তিন দিন ধরে তিনি অচৈতঙ্গ। 
গল! জড়িয়ে কাল-নাগ ফোঁস ফোঁস করছে। কোতয়াল লক্ষ টাৰা 
পুরস্কার ঘোষণ। করেছেন । তবু সাপুড়েরাও নাকি কাছে ঘেষছে না৷ 
বলছে উনি ম। মনসার বাপ। 

প্রথমটায় তো আগ! আহমদকে কেউ পাত্তাই দেয় না। আরে 
ওঝা -বগ্ভি হদ্দ হল? এখন ফাসঁ পড়ে আগা? কী বা বেশ) কী বা ছিরি! 

কোতয়ালের কানে, কিন্ত খবর গেল। 
বন থেকে এসেছে ওঝা 
পেটে এলেম বোঝ বোঝ! ! 
ছবি-চেহার। দেখে তিনিও বিশেষ ভরসা পেলেন না। কিন্তু তখন 

নি শ্মশান-চিকিৎসার জন্য তৈত্নী--মে চিকিৎসা ডোমই করুক, চাড়ালও 
| 
তাবপর য৷ হওয়ার কথা! ছিল তাই হল। “ওঝা? আগা আহমদ ঘরে 
ঢোকামাত্রই সেই কাল-নাগ কোথা দিয়ে বেরিয়ে গেল কেউ টেরটি পর্যন্ত 
পেল না। কোতয়াল নন্দিনী উঠে বসেছেন, তার যুখে হাসি ফুটেছে। 
ভীষণ দর্শন কোতয়াল সাহেবের চেহার! প্রপন্ন বদান্যতায় মোলায়েম হযে 
গিয়েছে । আগাকে লক্ষ টাকা তো দিলেনই, সঙ্গে সঙ্গে তাকে করে 
দিলেন তার বাড়ির পাশের বনের ফরেস্ট অফিসার । এইবার আগ 
ছুবেল। প্রাণ ভরে বাচ্চা হরিণের মাংস খেতে পারবে । 


7 


ঠো 


1 


স 


/উ/ 


আগা স্থখে আছে। সোনাদান! পরে মালিকা খানমও অন্য ভুবনে 


১৫৬ 


চরছেন-_ক্যাটক্যাট করে কে? তা ছাড়া এখন তার বিস্তর দাসী-বাদী। 
ওদের তম্বী-তম্বা করতে করতেই দিন কেটে যায়। কর্তাও বৈঠকখানায় 
ইয়ার-বক্সী নিয়ে । 

ওমা! এক মাস যেতে না যেতে খবর রটলো) উজীর সাহেবের 
মেয়ের গল। জড়িয়ে ধরেছে একট। সাপ । কোন সাপ ?_সেই সাপটাই 
হবে, আর কোন্টা ? 
এবারে দশ লাখ টাকার এনাম, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পাইক-বরকন্দাজ 
পেয়াদা-নফর ছুটেছে আগ! আহমদের বাড়ির দিকে; 

হাতের কাছে ওঝা! 
সহজ হল খোজা । 

কিন্ত আগা আহমদের বিলক্ষণ স্মরণে ছিল, কাল-নাগ খবরদার করে 
দিয়েছে, অতি লোভ ভালো না_-সাপ সরাতে একবারের বেশী না যায়। 
মে যতই অমত জানায়, ইয়ায়, বী ততই বলে, হুঙ্গুরের কী কপাল ! 
বাপ-মার আশীর্বাদ ন। থাকলে এমন ধারা কখনো হয়|! 

আগাকে জোর করে পাক্কীতে তুলে দেওয়! হল! 

এবারে সাপ জুলজুল করে তার দিকে তাকিয়ে বললে, “তামার খাই 
বড্ড বেড়েছে--না? তোমাকে না পইপই করে বারণ করেছিলুম? 
একবারের বেশী আসবে না। তবু যে এসেছ ? তা সে যাক্‌গে-_তুমি আমার 
উপকার করেছ বলে তোমাকে এবারের মত ছেড়ে দিলুম | কিন্তু এই 
শেষ বার। আর যদি আসো, তবে তোমাকে মারবো ছোবল | তিন 


মত্যি।' 


দশ লাখ টাক এবং তার সঙ্গে পাচ শ ঘোড়ার মসনব পেয়েও নওয়াব 
আগা আহমদের দিল-জান সাহারার মত শুকিয়ে গিয়েছে । মুখ দিয়ে 
জল নামে না, পেটে রুটি সয় না । কাল নাগ আবার কখন কোথায় কি 
করে বসে আর সে ছোবল খেয়ে মরে। স্থির করলো, ভিন্‌ দেশে 
পালাৰে। 

ঠিক সেই দিনই স্বয়ং কোতয়াল সাহেব এসে উপস্থিত। বিস্তর 


১৫৭ 


আদর-আপ্যায়ন, তস্তচম্বন-কষ্ঠালিঙ্গন । কোতয়াল সাহেব গদগদ কণ্ঠে 
বললেন, ' “ভাই নওয়াব সাহেব, তোমার কী কপাল! তামাম দেশের 
চোখের মণি, দিলের রোশনী রাজকুমারীর প্রাণ উদ্ধার করে তুম হয়ে 
যাবে দেশের মাথার মুকুট ! চলে! শিগগির ! দেই হারামজাদা কাল- 
নাগ এবার জড়িয়ে ধরেছে শাহাজাদীর গল] 1) 

নওয়াৰ আগ! আহমদ জড়িয়ে ধরলেন কোতয়ালের পা হাউহাউ 
করে কেঁদে নিবেদন করলে সে কোন্‌ ফাটা বাঁশের মধ্যিখানে পড়েছে। 

কোতয়ালদের হৃদয় মাখম দিয়ে গড়া থাকে না! ব্যাপারটা বুঝে 
নিতেই শহুর-দারোগাকে হুকুম দিলেন, চিড়িয়। বন্ধ করে৷ পিঞজরামে 1 

পান্ধিতে নওয়াব আগ! আহমদ । হু পাশের লোক তার জয়ধ্বনি 
জিন্দাবাদ করছে । এক ঝরোক। থেকে কোতয়ালনন্দিনী, অন্তঝরোকা। 
থেকে উজীর-জাদী তাঞ্জামের উপর পুষ্পমাল্য বর্ষণ করলেন। 

আগা আহমদ মুদ্রিত নয়নে মুশাঁদমৌলার নাম আর ইষ্টমন্ত্র জপছে। 

স্বয়ং বাদশ! তাকে হাতে ধরে রাজকুমারীর দোরের কাছে নিয়ে এলেন। 

আগা আহমদ ঘরে ঢুকে দরজা বদ্ধ করে দিল। 

কাল-নাগ হুঙ্কার দিয়ে উঠলো, “আবার এসেছিস; হতভাগা ? এবারে 
আর আমার কথার নড়চড় হবে না। তোর ছুই চোখে ছুই ছোবল মেরে 
ঢেলে দেব আমার কুল্পে বিষ | 

আগা আহমদ অতি বিনীত কে বললে, “আমি টাকার লোভে 
আসিনি । তুমি আমাকে অগ্ণতি দৌলত দিয়েছে! ! তুমি আমার 
অনেক উপকার করেছ, তাই তোমার একট! উপকার করতে এলুম | 
এদিক দিয়ে যাচ্ছিলুম, শুনলুম, তৃমি এখানে । ওদিকে সকালবেল। ৰীৰী 
মালিক। খানম আমাকে বলছিলেন তিনি রাজকন্যাকে সেলাম করতে 
আসছেন! বোধ হয় এক্ষুনি এসে পড়বেন । তুমি তে! ওকে চেনো-_ 
হে, ইে-_তাই ভাবলুম, তোমাকে খবরট। দিয়ে উপকারটাই না কেন করি 
_-তুমি আমার--- 

বাপরে, মারে" চিৎকার শোন। গেল । কোন্‌ দিক দিয়ে যে কাল-নাগ 
অদৃশ্য হল আগা আহমদ পর্যন্ত বুঝতে পারলো না। 


১৫৮ 


এরপর আগা আহম্মদ শাস্তিতেই জীবন যাপন করেছিল । 


গল্পটি নান! দেশে নান! ছলে, নান! রূপে প্রচলিত আছে। আমি 
শুনেছিলুম এক ইরানী সদাগরের কাছ থেকে, সরাইয়ের চারপাঈ-তে' 
শুয়ে শুয়ে। 

কাহিনী শেষ করে সদাগর শুধোলেন, 'গল্পটার “মরাল' (কি, বলে। তৌ।; 

আমি বললুম, “সে তো৷ সোজা | রমনী যে কী কী খাণ্ডারী হতে পারে 
তারই উদাহছরণ। এ-ছুনিয়ার নানা খষি নান। মুনি তো এই কীর্তনই 
গেয়ে গেছেন 

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার প্র সাগর বললেন, “তা তো বটেই। 
কিন্ত জানো, ইরানী গল্পে অনেক সময় ছটো করে 'মরাল' থাকে । এই 
যে-বুকম হাতীর ছুজোড়া দাত থাকে । একট। দেখাবার একট। চিবোবার । 
দেখাবার 'মরাল +ট1 তুমি ঠিকই দেখেছ । অন্ত “মরাল+-টউ| গভীর £-_খল যদ্দি 
বাধ্য হয়ে, কিংবা যে-কোন! কারণেই হোক; তোমার উপকার, করে তবে 
সে উপকার কদাচ গ্রহণ করবে না । কারণ খল তার পরই চেষ্টায়, লেগে” 
যাবে, তোমাকে ধনেপ্রাণে বিনাশ. করবার জন্য, যাতে করে তুমি সেই, 
উপকারটি উপভোগ ন!.করতে পারো । 

অবশ্য তোমার বাড়িতে যদ মালিক! খানমের মত বিষ থাকে " তৰে 
অন্ধ কথা৷ 

কিন্তু প্রশ্ন, ক'জনের আছে ও-রকম বউ ?) 


॥ চাচা কাহিনী ॥ 


বালিন শহরের উলাগু স্ট্রিটের উপর ১৯২৯ খ্রীষ্টাবে হিন্দুস্থান হৌস 
নামে একটি রেস্তোরা জন্ম নেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বাঙালীর যা স্বভাব, 
রেস্তোরাার এক কোণে একটি আড্ডা বসে যায়। আড্ডায় গৌসাই 
ছিলেন চাচা) বরিশালের খাজ। বাঙাল মুসলমান, আর চেলারা-_গোৌসাই। 
খুজে, সরকার, রায়, চ্যাংড়া গোলাম মৌল ইত্যাদি। 

রায় চুক চুক করে বিয়ার খাচ্ছিলেন আর গ্রাম-সম্পর্কে তার ভাগ্নে 


১৫৯ 


গোলাম মৌলা ভয়ে ভয়ে তার দিকে মিট মিট করে তাকাচ্ছিল, পাছে 
তিনি বানচাল হয়ে ধান। এ-মামলা চাচা রোজই দেখেন, কিছু বলেন 
না। আজ বললেন “অত ডরাচ্ছিস কেন? 

মৌল! লাজুক ছেলে । মাথা নিচু করে বললে, “ওটা খাবার কী 
প্রয়োজন? আপনি তো কখনও খান নি, এতদিন বালিনে থেকেও । 
মামুরই ব! কী দরকার ?' 

চাচা বললেন “ওর বাপ খেত, ঠাকুর্দা খেত, দাদামশাই খেত, মামার 
খায়) এদেশে না এসেও! ও হুল পাইকারী মাতাল, আর পাঁচটা 
হিন্দৃস্থানীর ম৩ পেঁচী মাতাল নয়। আর, আমি কখনও খাই নি তোকে 
কে বললে ? | 

আড্ডা একসঙ্গে বললে, “সে কী চাচা ? 

এমন ভাবে কোরাস গাইলে, মনে হল, বছরের পর বছর তার। ওই 
বাক্যগুলোই মোহড়া দিয়ে আলছে। 

ভান হাত গলাবন্ধ কোটের মধ্যিধান দিয়ে ঢুকিয়ে, ৰা হাতের তেলো! 
চিত করে চাচা বললেন, 'মদকে ইংরিজীতে বলে স্পিরিট, আর স্পিরিট 
মানে ভূত। অর্থাৎ মদে রয়েছে ভূত | সে-ভূত কখন কার ঘাড়ে চাপে 
তার কি কিছু ঠিক-ঠিকানা আছে? তবে ভাগ্যিস, ও-ভূত আমার ঘাড়ে 
মাত্র একদিনই চেপেছিল, একবারের তরে।' 

গল্পের সন্ধান পেয়ে আড্ডা খুশ । আসর জমিয়ে সবাই বললে, “ছাড়ুন 
চাচা |; 

রায় বললেন, “ভাগিনা, আরেকটা বিয়ার নিয়ে আয় ।” 

মৌল! অতি অনিচ্ছায় উঠে গেল। ওঠবার সময় বললে, “এই নিয়ে 
আঠারটা 1” 

রায় শুধালেন, “বাড়তি না কমতি? ফিরে এলে চাচা বললেন, 
কফ্রলাইন ফন্‌ ব্রাখেলকে চিনিস ? 

[লেডি-কিলার পুলিন সরকার বললে, “আহা কৈসন্‌. সুন্দন্রী, 
রূপসিনী ব্লন্দিনী, 
নরদিশি নন্দিনী |) 


১৬০ 


জ্ীধর মুখুজ্জে বললে, চোপ --%? 

চাচা বললেন 'ওর সঙ্গে প্রেম করতে যাস নি। চুমো খেতে হলে. 
তোকে উদৃখল সঙ্গে নিয়ে পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে ।? 

বিয়ারের ভূড়ভূড়ির মত রায়ের গল। শোনা গেল, “কিংবা মই ।' 

গোসাই বললেন, “কিংবা ছুই-ই। উদৃখলের উপর মই চাপিয়ে 

শ্রীধর বললে, “কী জ্বাল ! শাস্ত্র শ্রবণে এর। বাধ। দিচ্ছে কেন? চাচা, 
আপনি চালান ।” 

চাচা বললেন, “দেই ফন্‌ ত্রাখেল আমায় বড় স্নেহ করত, তোর 
জানিস! ভরগ্রাম্মকালে একদিন এসে বললে, ক্লাইনার ইডিয়ট ( হাবা- 
গঙ্গারাম ), এবারে আমার জন্মদিনে তোমাকে আমাদের সীঝের 
গায়ের বাড়িতে যেতে হবে। শহরে থেকে থেকে তুমি একদম পিল! 
মেরে গেছ, গায়ের রোদে রঙুটিকে ফের একটু বাদামির আমেজ 
লাগিয়ে আসবে। 

আমি বললুম। অর্থাৎ জুতোতে পালিশ লাগাতে বলছ। রোদ্দ,রে 
না বেরিয়ে বেরিয়ে কোনও গতিকে রঙটা একটু “ভদ্রস্থ* করে 
এনেছি, সেটাকে আবার নেটিভ মার্কা করব? কিন্তুভার চেয়েও বড় 
কথা, তুমি না হয় আমাকে সয়ে নিতে পার, কিন্তু তোমার বাড়ির 
লোক 1 তোমার বাবা, কাক।? 

'ব্রাখেল বললেন, ন। হয় একটু বাদর-নাচাই দেখালে ।” 

চাচা বললেন, “যেতেই হল। ব্রাখেল যা-সৰ উপকার করেছে 
তার বদলে আমি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পেও যেতে পারি ।' 

মৌল! চট কৰে একবার ডাইনে বায়ে তাকিয়ে নিলে। 

চাচা বললেন, 'অজ পাড়াগ! ইঞ্টিশান। প্যাসেঞ্জারে যেতে হল। 
গাড়ি থেকে নামতেই দেখি, স্বয়ং স্টেশনমাস্টার দেলাম ঠুকে সামনে 
হাজির। তার পিছনে ছোটবাবু। মালবাবু--অবশ্য গ্যাশের মত খালি 
গায়ে আলপাকার ওপন-ব্রেস্ট কোট পর! নয়, টিকিট বাবু। ছুচারজন 
ভামাশা-দেখনেওলা, পুরে। পার। প্রসেশন বললেই হয়। ওই অজ স্টেশনে 
আমিই বোধ হয় প্রথম ভারতীয় নামলুম। আর আমিই বোধ হয় শেষ। 


১৬১ 


“স্টেশনমাস্টার বললে, বাইরে গাড়ি তৈরি, এই দিকে আনতে আজ্ঞ। 
হোক । ৰ 

বুঝলুম; ফন ব্রাখেলের। শুধু বড়লোক নয়, বোধ হয় এ শঞ্চলের 
জমিদার । 

“বাইরে এসে দেথ এক প্রাচীন ফিটিং গাড়ি, কিন্ত বেশ শক্ত সমখ। 
কোচম্যান তার চেয়েও বুড়ো, পরনে মশিং স্ুট, মাথায় চোডার মত 
অপর হ্যাট, আর ইয়। হিগডেনবুগণ গোঁফ, 'এডওয়াডী দাড়ি, আর চোখ, 
ছুটো৷ এবং নাকের ডগাটি স্থাজ্জ রায়ের চোখের মত লাল 'জবাকুন্থম- 
সঙ্কাশং। 

“কী একট মন্ত্র পড়ে গেল, দাড়ি-গোফের ছাকনি [দয়ে যা বেল তার 
থেকে বুঝলুম, আমকে ফিউডাল পদ্ধতিতে অভিনন্দন জানানে। হচ্ছে। 
এ চাপানের কী ওতোর মন্ত্র গাইতে হয় ব্রাথেল আমাকে শি।খয়ে দেয় 
নি। কী আব করি) “বিলক্ষণ, বিলক্ষণ” বলে যেতে লাগলুম, আর মনে 
মনে ব্রাখেলকে প্রাণভরে অভিসম্পাত করলুম এসব বিপাকের জন্ত 
আমাকে কায়দা-কেতা শিখিয়ে দেয় নি বলে। 

'আমি গাড়িতে বসতেই কোচম্যান আমার হাটুর উপর একখান! 
ভারী কমল চাপিয়ে ছু দিকে গু'জে দিয়ে মিলিটারী কায়দায় গটগট করে 
কোচবাক্সে বলল । 'তারপর চাবুকট।! আকাশে তুলে সার্কাসের 
হণ্টারওয়াল। ফির়ারলেস্‌ নাদিয়ার মত ফটাফট করে মাঠের মধ্যিখান 
দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিলে । ইতিমধ্যে স্টেশনমাস্টারের ফুটফুটে মেয়েটি 
আমার*অটোগ্রাফ আর ন্যাপ, ছুইই তুলে নিয়েছে। | 

“মাঠের পর ঈষৎ খাড়াই, তারপর ঘন পাইন বন ; বন থেকে বেরুতেই 
সামনে উচু পাহাড় আর তার উপর যমদূতের মত দাড়িয়ে এক কাস্ল্‌। 
মহাভারতের শাস্তিপর্বে শরশব্যায় শুয়ে শুয়ে ভীম্মদেব মেল! ছূর্গের বয়ান 
করেছেন, এ-ছর্গ যেন সব কটা মিলিয়ে লাবড়িভর্তা । 

'আমি ভয় পেয়ে শুধালুম, ওই আকাশে চড়তে হবে? 

“কোচম্যান ঘাড় ফিরিয়ে গর্বের হানি হেসে বললে, ইয়াঃ মাইন হেন ! 
দেমাকের ঠ্যালায় তার গোৌঁফের ডগ। হটো৷ আরও আড়াই ইঞ্চি প্রমোশন 


১৬৭ 


পেয়ে গেল। তারপর ভরসা দিলে, এক মিনিটে পৌছে যাব স্যার । আমি 
মনে মনে মৌলা আলিকে স্মরণ করলুম । 

'এ কী বিদদ্ুটে ঘোড়া রে বাবা, এতক্ষণ সমান জমিতে চলছিল 
আমাদের দিশী টাটুর মত কদম আর দুলকি চাল মিশিয়ে, এখন চড়াই 
পেয়ে চলল লাম্বী চালে । রাস্তাটা অজগরের মত পাহাড়টাকে 
পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উপরে উঠে যেন কাস্ল্টার ফণ! মেলেছে; কিন্তু কণার 
কথ। থাক্‌, উপস্থিত প্রতি বাকে গাড়ি ষেন হ চাকার উপর ভর দিযে 
মোড় নিচ্ছে । 

হঠাৎ সামনে দেখি বিরাট খোল। গেট । কাকরের উপর দিয়ে গাড়ি 
এসে বেখানে দ্রাড়াল তার উপর থেকে গলা শুনে তাকিয়ে দেখি 
ভিলিকিনি থেকে__ 

মৌঙ। শুধাল, “ভিলিকিনি মানে ?? 

চাচা বললেন, "ও, ব্যালকনি, আমাদের দেশে বলে ভিলিকিনি- সেই 
ভিলিকিনি থেকে কন ব্রাখেল চেঁচিয়ে বলছে; যোহানেস, ওকে ও র ঘর 
দেখিয়ে দাও; গুস্টাফ টেবিল সাজাচ্ছে। 

“তারপর আমাকে বললে, ডিনারের পয়ল! ঘণ্টা এখুনি পড়বে, তুমি 
তৈরি হয়ে নাও ।? 

চাচা? বললেন, 'পরি তে! কারখানার চোঙার মত পাঙতলুন, আর 
গলাবন্ধ কোট কিন্তু একটা নেভি-ব্ু স্থট আমি প্রথম যৌবনে হিম্মৎ সিং 
এর পাল্লায় পড়ে করিয়েছিলুম; তার রূঙ তখন বাদামীতে গিয়ে দাড়িয়েছে, 
এর পর কোন্‌ রঙ নেবে যেন মনঃস্থির করতে না পেরে ন বযে ন তস্থে 
হয়ে আছে। হাত-মুখ ধুয়ে পেইটি পরে বেডরুমটার ফেন্সি জিনিসপত্র- 
গুলো তাকিয়ে দেখছি এমন সময় ব্রাথেল নক্‌ করে ঘরে ঢুকল। আমান 
দিকে তাকিয়ে বললে, এ কী? ডিনার জ্যাকেট পর নি? 

'আমি বিরক্ত হয়ে বললুম, ওদৰ আমার নেই, তুমি বেশ জান। 

“কন ব্রাখেল বললে, উহ, সেটি হচ্ছেনা; এ বাড়িতে এ-সৰ 
ব্যাপারে বাব! জ্যাঠা ছুজনাই জোর রিচুয়াল মানেন, বড্ড পিটপিটে | 
তোমাদের পুজোপাজ। নেমাজ-টেমাজের মত সসেজ থেকে মাস্টার্ড খসবার 


১৬৩ 


উপায় নেই। তারপর একটু ভেবে নিয়ে বললে? তা তুমি এক কাজ কর। 
মাদার কাবার্ডভতি ডিনার জ্যাকেট, শার্ট) বো-_তারই এক প্রস্থ পরে 
নাও। এটা তারই বেডরুম ; ওই কাবার্ডে সব-কিছু পাবে |, 

“আমি বললুম, তওবা ; তওবা ; তোমার দাদার জামা-কাপড় পরলে 
কোট মাটি পৌছে তোমার ডিনার গাউনের মত ট্রেল করবে। 

“বললে, না? না, নী । সবাই কি আমার মত দিক-ধেড়েঙ্গে! তুমি 
চটপট তৈরি হয়ে নাও, আমি চললুম । 

চাচা বললেন; “কী আর করি, খুললুম, কাবার্ড। কাতাবে কাতারে 
কোট পাতলুন ঝুলছে-_সগ্ প্রেস্ডও দেরাজ-ভতি শার্ট, কলার, বো, হীরে- 
বসানে। সোনার শ্লাভ-লিন্কস্, আরও কত কী! 

'মানিকগীরের মেহেরবানি বলতে হবে, জুতোটি পর্যন্ত ফিট করে গেল 
দস্তানার মত। | 

“তারপর চুল ব্রাশ করতে গিয়ে আমার. কেমন যেন মনে হল এ 
বেশের সঙ্গে মাথা মধ্যিথানে পি'খি জুতসই হবে না, ব্যাকব্রাশ করলেই 
মানাবে ভাল। আর আশ্চর্য, বিশ বছরের তর্কাক কর! চুল বিলকুল 
বেয়াড়ামি না করে এক লক্ষে তালুর উপর দিয়ে পিছনে ঘাড়ের উপর 
চেপে বসল, যেন আমি মায়ের গর্ভ থেকে ওই ঢঙের চুল নিয়েই জন্মেছি । 
আয়নাতে চেহারা দেখে মনে হল, ঠিক জংলীর মত তে! দেখাচ্ছে ন। 
তোরা অবিশ্ষি বিশ্বাস করবি নে।' 

চাচার ্াওট! ভক্ত গৌসাই বললে, “চাচা, এ আপনার একটা মস্ত 
দোষ; শুধু আত্মনিন্দা করেন। ওই যে আপনি মহাভারতের শাস্তিপবের 
কথা! বললেন সেইখানেই ভীম্মদেৰ যুধিষ্টিরকে আত্মনিন্দার প্রচণ্ড নিন্দা 
কনে গেছেন।; 

চাচ। খুশী হয়ে বললেন, “হে-হেঁ, তুই তো৷ বললি, কিন্তু ওই পুলিনট! 
ভাবে সে-ই শুধু লেডি-কিলিং লটবর । তা! সে কথা বাকগে, ঈভনিং ড্রেসে 
কাল। কে্ট সেজে আমি তো। শিস দিতে দিতে নামলুম নীচের তলায়--. 

পুলিন শুধালে, “স্যার, আপনাকে তো কখনও শিস দিতে শুনি নি, 
আপনি কি আদপেই শিস দিতে পারেন ?" 


১৬৪ 


চাচ। বললেন, 'ঠিক শুধিয়েছিস | আর সত্যি বলতে কী আমি নিজেই 
জানি নে, আমি শিস দিতে পারি কি না! তবে কী জানিস, 
হাফপ্যান্ট পরলে লাফ দিতে ইচ্ছে করে, জোববা পরলে পদ্মাসনে 
থাকবার ইচ্ছ। হয়, ঠিক তেমনি ঈভনিং ড্রেস পরলে কেমন যেন 
সীঝের কণ্টি-নষ্টি করবার জন্য মন উতল! হয়ে ওঠে, না হলে আমি শিস 
দিতে যাব কেন? শিপ কি দিয়েছিলুম আমি, শিস দিয়েছিল বকাটে 
্থটটা। তা সে কথ যাক। 

“ততক্ষণে ডিনারের শেষ ঘণ্টা পড়ে গিয়েছে। আন্দাজে আন্দাজে 
ড্ইং-রুম পেরিয়ে ঢুকলুম গিয়ে ব্যানকুয়েট-হুলে । ৰ 

“কাস্লের ব্যানকুয়েট হল্‌ আমাদের চণ্তীমণ্ডপ-সাইজ হবে তার আৰু 
বিচিত্র কী, 'এবং সিনেমার কৃপায় আজকাল প্রায় সকলেরই তার বিদ্দুটে 
ঢপ-ডং দেখ! হয়ে গিয়েছে; কিন্তু বাস্তবে দেখলুম, ঠিক সিনেমার সঙ্গে 
মিলল না । আমাদের দিশী সিনেমাতে চণ্ডীদাস পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে 
লাগাতে টিনের ছাত-ওল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন, যদিও বোতাম 
আর টিন এসেছে ইংরিজী আমলে | আর হলিউড যদি ব্যানকুয়েট-হল্‌ 
দেখায় অষ্টাদশ শতাব্দীর, তৰে আসবাবপত্র রাখে সপগুদশ শতাব্দীর, জাস্ট 
টুবী অন দি সেফসাইড। 

ফন ব্রাখেলদের কাস্ল্‌ কোন্‌ শতাব্দীর জানি নে কিন্তু হলে ঢুকেই 
লক্ষ্য করলুম, মান্ধাতার আমলের টেবিলে-চেয়ারের সঙ্গে সঙ্গে বিংশ 
শতাব্দীর সুখ-ন্থৃবিধার সরগ্রামও মিশে রয়েছে । তবে খাপ খেয়ে গিয়েছে 
_ দিব্যি, এদের রুচি আছে কোনও সন্দেহ নেই। এসব অবশ্য পরে। খেতে 
খেতে লক্ষ্য করেছিলুম । 

“টেবিলের এক প্রান্তে ক্লার। কন ব্রাখেল, অন্ত প্রান্তে যে ভদ্রলোক 
বসেছেন তাকে ঠিক ক্লারার বাপ রলে মনে হল না, অতথানি বয়স যেন 
ওর নয়। 

'প্রথম দর্শনে ছুঙ্গনেই কেমন যেন হকচকিয়ে গেলেন। বাপের হাত 
থেকে তো ন্যাপকিনেক্স আংটিটা ঠং করে টেবিলের উপর পড়ে গেল 
আমি আশ্চর্য হলুম না, ভদ্রলোক হয়তো! জীবনে এই প্রথম ইগ্ার 


১৬৫ 


( ভারতীয়) দেখছেন, কালো! ঈভনিং ড্রেসের ওপর কালো! চোরা-_ 
গৌসাইয়ের পদাবলীতে-_ ্‌ 
একালোর উপরে কালো ।৮ 

হুকচকিয়ে ঘাওয়। কিছুমাত্র বিচিত্র নয় কিন্তু ক্লারা কেমন যেন অন্ভুতভাবে 
তাকালে ঠিক বুঝতে পারলুম না। তবে কি বোস্টা ঠিক হেডিং মাফিক 
বাধা হয়নি। কই আমি তো একদম রেডিমেডের মত করে বেঁধেছি, 
এমন কি হ্যাল-ফ্যাশান মাফিক তিন ডিগ্রী ট্যার্চাও করে দিয়েছি | 
তবে কি ঈভনিং ড্রেস আর ব্যাকব্রাশ চুলে আমাকে ম্যাজিসিয়ানের মত 
দেখাচ্ছিল? 

সামলে নিয়ে ক্লারা ভদ্রল্পোককে বললে, পাপা, এই হচ্ছে আমার 
ইপ্ডিশার আফে। 

“মর্থাৎ। ভারতীয় বাদর । 

বাপও ততক্ষণে সামলে নিয়েছেন । মিষ্টি হেসে আমাকে অভ্যর্থন। 
জানিয়ে শেক-হযাণ্ড করলেন। ক্লারাকে বললেন, পংফুই__ছি:_-ও রকম 
বলতে নেই। ্‌ 

“আমি হঠাৎ কী করে বলে ফেললুম, 'আমি যদি বদর হই তবে ও 
জিরাফ। 

“বলেই মনে হল, তওবা তওব। প্রথম |দনেই ও-রকমধারা। জ্যাঠামে। 
করা উচিত হয় নি। 

'পিত। কিন্তু দেখলুম, মন্তব্যটা গুনে ভারি খুশ। বললেন ডাক্ষে_ 
ধন্যবাদ-_ক্রারাকে ঠিক শুনিয়ে দিয়েছ । আমরা তে৷ নাহদ পাই নে। 

পালিশ আয়নার মত টেবিল, স্চ্ছন্দে মুখ দেখ! যায়। তার উপর 
ওলন্দাজ লেসের গোল গোল হাল্ক। চাকতির উপর প্লেট পিরিচ 
সাজানো । বড প্লেটের ছ দিকে সারি বাধা অন্তত আটখানা ছুরি, 
আটখথান। কাটা), আধ ডজন নান! ঢঙের মদের গেলাস। সেরেছে!। এর 
কোন্‌ ফর্ক দিয়ে মুরগি খেতে হয়, কোন্টা দিয়ে রোস্ট আর কোন্টা 


দিয়েই ব। সাইড. ডিশ. ? 
'আসল-খাবার পূর্বের চাট-+“আর গ্য অভ.বে”র নাম দিয়েছি আমি 


১৬৬ 


চাট, তথন দেওয়। হয়ে গিয়েছে । খুধ্চার ছ পদ থেকে আমি তুলেছি 
মাত্র হু পদ, কিঞ্িং সসেজ আর ছুটি জলপাই, এমন সময় বাটলার ছু 
হাতে গোটা! চারেক বোতল নিয়ে এসে শুধাল। শেরি ? পোর্ট? ভেরমুট ? 
কিংবা উইন্কি সোডা ? 

“আমি এসব দ্রব্য সসম্ত্রমে এড়িয়ে চলি। কিন্তু হঠাৎ কী করে মুখ 
দিয়ে বেরিয়ে গেল, নো বিয়ার । 

বলেই জিভ কাটলুম। আমি কী বলতেকী বললুম। একে তো৷ 
আমি বিয়্াব্র জীবনে কখনও খাই নি, তার উপরে আম ভাল করেই জানি, 
বিয়ার চাষাড়ে ডিঙ্ক, ভদ্রলোকে বর্দি-বা খায় তবে গরমের দিনে, তেষ্টা 
মেটাবার জন্তে। অষ্টপদী ব্যান্কুয়েটে বিয়ার ! এযেন বিয়ের ভোজে 
কালিয়ার বদলে শুটকি তলৰ করা ! 

ক্লারা জানত, আমি মদ থাই নে, হয়তো বাপকে তাই আগের থেকে 
বলে রেখে আমার জন্তে মাফ চেয়ে রেখেছিল, তাই সে আমার দিকে 
অবাক হয়ে তাকালে । 

'বাটশ্লার কিন্তু কিছুমাত্র অপ্রতিভ না হয়ে এক ঢাউস বিয়ারের মগ 
নিয়ে এল, তার ভিতরে অনায়াসে ছু বোতল বিয়ারের জায়গ! হয় । 

যখন নিতান্তই এসে গিয়েছে তখন খেতে হয়। ভাবলুম। একটুখানি 
ঠোট ভেঙ্গাব মাত্র, কিন্তু তোমর! বিশ্বাস করবে না, খেতে গিয়ে টক ঢক্ 
করে প্রায় আধ মগ সাফ করে দিলুম ।' 

মৌল! এক বিঘত হাঁ করে বললে, “এক ধাকায় এক বোতল ? মামুও : 
তো! পারবে না । 

চাচা! বললেন, কেন শরম দিচ্ছিল, বাবা 1? ও-রকম ঈভ!নং ডেস পরে 
ব্যানকুয়েট-হলে বসলে তোর মামাও এক ঝটকায় ছু. পিপে বিয়ার 
গিলে ফেলত। বিয়ার কি আমি থেয়েছিলুম? খেয়েছিল ওই” 
শালার ড্রেন ।? 

গৌসাই মর্মাহত হয়ে বললে, “চাচা? ! 

চাচা বললেন “অপরাধ নিসনি গৌসাই, ভাষা! বাবদে আমি মাঝে 
মাঝে এটুথানি বে-এক্তেয়ার হয়ে যাই। জানিস তো৷ আমার জীবনের 


১৬৭ 


'আমার বেম্লার্দবি তখন চূড়া ছেড়ে আকাশে উঠে ঢলাঢলি আরম 
করে দিয়েছে! অবশ্ঠ তখনও ঠিক ঠাহর হয় নি, মালুম হয়েছিল অনেক 
পরে। 

গ্রামের একঘেয়ে জীবনের ঝান্থু খেলোয়াড়কে আমি হারাৰব এ আশা 
অবশ্যি আমি করি নি; কিন্ত খেলতে গিয়ে দেখলুম, খুব যে খারাপ খেলছি 
তা নয়, তবে আমার প্রত্যাশার চেয়ে ঢের ভাল। আব প্রতিবারেই 
আমি লীড পেয়ে যাচ্ছিলুম অতি খাসা, স্বপ্নের বিলিয়ার্ডেও মানুষ লীড 
পায় না। 

কাত কটা অবধি খেল্গ! চলেছিল বলতে পারব না। আমি তখন 
তিনটে বলের বদলে কখনও ছট1 কখনও নটা দেখছি, কিন্তু খেলে যাচ্ছি 
ঠিকই, খুব সম্ভব ভাল লীভের লাকে। 

হের ফন ব্রাখেল শেষটায় না বলে থাকতে পারলেন না, তোমার 
লাক বড় ভাল ।. 

“অত্যন্ত বেকন্তুর মন্তব্য। আমি কিন্তু চটে গিয়ে বেশ চড়া গলায় 
বললুম, লাক, না কচুর ডিম । নাচতে ন! জানলে শহর বাকা । আই 
লাইক গ্াট! 

ব্রাখেল কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন, আমি অষ্টমে উঠে আব্ও কড়। 
কথা শুনিয়ে দিলুম | ওদিকে দেখি মার্কার ব্যাটা মিউমিটিয়ে হাসছে 
আমি আরও চটে গিয়ে ছুঙ্কার দিলুম, তোমার মুলোর দোকান বদ্ধ কর, 
এখন রাত সাড়ে তেরোটায় কেউ মুলো কিনতে আসবে না। অথচ 
বেচারী বুড়ে। থুড়ে, সব কটা দাত জগন্নাথ দেবতাকে দিয়ে এসেছে । 

চীৎকার চেল্লাচেল্লির মধ্যিখানে হঠাৎ দেখি সামনে জ্যাঠামশাই, পরণে 
তখনও সেই পরিপাটি ইভিনিং ডেস। 

“আবার সেই নার্ভাস স্বরে বললেন, সরি সরি, তোমর। কিছু 
মনে কোর না, আমি শব্দ শুনে এলুম। তারপর বাপের দিকে 
তাকিয়ে বললেন, তুই বড় ঝগড়াটে, ভল্ফ গা নিত্য নিত্য এর সঙ্গে 
ঝগড়া করিস। তারপর মামার দিকে ফিরে বললেন, তার চেয়ে বরথ 
একটু তান খেললে হয় না? আমার ঘুম হচ্ছে না। 


১৭০ 


“আমি বললুম, ছু ছা"! 

“তাসের টেবিল এল । 

'আমি স্কাট খেলেছি বিলিয়ার্ডের চেয়েও কম। 

'জ্যাঠ। বললেন, কী স্টেক? 

“বাপ বললেন, নিত্যিকার । 

£ “নিত্যিকার” বলতে কী বোঝাল জানি নে। ওদিকে আমার 
পকেটে তো! ছু'চো ডিগবাজি খেলছে । জ্যাঠা হিসাব করে বললেন; 
হানস্‌ পসেরো মার্ক ভল্ফগাউ, হই । 

“আপনাত্ব থেকে আমার বা হাত কোটের ভিতরকার পকেটের দিকে 
রওনা হল। তখনই মনে পড়ল, এ কোট তো। ক্লারার দাদার । আমার 
মনিব্যাগ তে। পড়ে আছে আমার কোটে, উপরের তলায় । কিন্তু তারই 
সঙ্গে সঙ্গে হাত গিয়ে ঠেকল এক তাড়া করকরে নোটে | ঈশ্বর পরম 
দয়ালু, তাহার কৃপায় টাক! গজায়, এই টাক দিয়েই আজকের ফাড়। 
কাটাই, পরের কথ! পরে হবে। ক্লারাকে বুঝিয়ে বললে সে নিশ্চয়ই কিছু 
মনে করবে না। আর নিজের মনিব্যাগে ররেস্ত আছেই বাকী? দশ 
মার্ক হয় কি না-হয়। 

“এদিকে রেস্ত নেই, ওদিকে খেলার নেশাও চেপেছে। পরের বাজ্জিতে 
আবার হারলুম, এবার গেল আরো কুড়ি মার্ক, তারপর পঞ্চাশ, তারপর 
কত আর শামার হিপাব নেই । নোটের ভাড়া প্রায় শেষ হতে চলল । 
আমি যুধিষ্টির নই, অর্থাৎ কোন রমণীর উপর টুয়েটি পার্সেন্ট অধিকারও 
আমার নেই, না! হলে তখন সে রেস্তও ভাঙাতে হত, এমন সময় 
আস্তে আস্তে আমার ভাগ্য ফিরতে লাগল । দশ কুড়ি কমন্সে করে 
সব মার্ক.তোল! হয়ে গেল, তারপর প্রায় আরও শ ছুই মার্ক জিতে 
গেলুম । 

“ওদিকে মদ চলছে পাইকারী হিসেবে আর জ্যঠামশাই দেখি হারার 
সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশী নার্ভ হয়ে যাচ্ছেন। আমি তে! শেষটায় ন' 
থাকতে পেরে খলখল করে হেসে উঠলুম | কিছুতেই হাসি থামাতে পারি 
নে। গলা দিয়ে এক ঝলক বিয়ার বেন্িয়ে এল, কোন গতিকে সেট 


১৭১ 


রুমাল দিয়ে সামলানুম | কিন্ত হাসি আর থামাতে পারি নে! বুঝলুম, 
'এরেই কয় নেশা । 

'জ্যাঠামশাই নার্ভাস স্বরে বললেন, হেঁহেঁ, এটা যেন, কেমন যেন, 
হে-হে, তোমার লাকৃ-__হেঁ-হে--নইলে আমি খেলাতে-_ 

'আবার লাক! এক মুহুর্তে আমার হাসি থেমে গিয়ে হল বেজায় 
রাগ! বিলিয়ার্ডের বেলায়ও আমাকে শুনতে হয়েছিল ওই গডগ্ড্যাম 
লকের দোহাই । 

'উং হয়ে এক ঝটকায় টেধিলের তাস ছিটকে ফেলে বললুম, তার 
মানে? আপনার! আমাকে কী পেয়েছেন? ইউ আ্যাণ্ড ইয়োর ভ্যাম্‌ 
লাকৃ, ভ্াম। ভাম্‌-_ 

'বাপ জ্যাঠা কীবলে আমায় ঠাণ্ডা করতে চেয়েছিপেন আমার 
সেদিকে খেয়াল নেই । . কতক্ষণ চলেছিল তাও বলতে পারব না, আমার 
গল! পর্দার পর পর্দা চড়ে যাচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে ছুনিয়র যত কটু 
কাটব্য। 

«এমন সময় দেখি, ক্লারা । 

'কোথায় না আমি তখন হাশে ফিরব_আমি তখন সপ্তমে না? 
একেবারে সেঞ্চরির নেশার । শেষটায় বোধ হয়, “ছোটলোক” “মীন” 
এই সব অশ্রাবয শব্দও ব্যবহার করেছিলুম | 

' "ক্লারা আমার  কীধে হাত দিয়ে নিয়ে চলল দরজার দিকে । অনুনয় 
করে বললে, অত চটছ কেন, ও'দের সঙ্গে না৷ খেললেই হয়, ওরা ওই 
রকমই করে থাকেন । 

“বেরবার সময় পর্যন্ত শুনি ও'রা! বলছেন, সরি, সরি প্লীজ, লীগ! 
আমাদের দোষ হয়েছে ।? 

“তবু আমার রাগ পড়ে না।' 

চাচা কফিতে চুমুক দিলেন। রায় বললেন? ঢের ঢের মদ থেয়েছি 
ঢের ঢের মাতলামে। দেখেছি; কিন্তু এ-রকম বিদঘুটে নেশার কথ! কখনও 
শুনি নি।' 

চাচ। বললেন, যা বলেছ । তাই আমি রাগ ঝাড়তে ঝাড়তে গেলুম 


১৭ 


শাবার ঘরে! ঈভনিং কোট, পাতলুন খোলার সঙ্গে সঙ্গে মাথা কিন্তু 
যাগ্ডা হতে আরম্ভ করেছে, বিয়ারের মগও হাতের কাছে নেই। 

বালিশে মাথ! দিতে ন। দিতেই স্পষ্ট বুঝতে পারলুম; সমস্ত নন্ধ্যা আর 
[তভোর কী ছু'চোমিটাই ন। করেছি । ছি-ছি, ক্লারার বাপ-জ্যাঠামশায়ের 
মনে কী ইতরোমোই না করে গেলুম ঘণ্টার পর ঘন্টা ধরে। 

“আর এদেশে সবাই ভাবে ইপ্ডিয়ার লোক কতই না! বিনয়ী, কতই 
1 নম্র! 

যতই ভাবতে লাগলাম মাথা ততই গরম হতে লাগল । শেষটায় 
[নে হল, কাল সকালে আজ সকালে বলা ভাল, কারণ ভোরের আলে! 
চখন জানাল। দিয়ে ঢুকতে আরম্ভ করেছে, এদের আমি মুখ দেখাব কী 
চরে? জানি, মাতালকে মানুষ অনেকখানি মাফ করে দেয়, কিন্তু এ ষে 
একেবারে চামারের মাতলামো ! 

“তা হলে পালাই । 

“অতি ধীরে ধীরে কোন প্রকারের শব্দটি না করে স্ুটকেসটি ওইখানেই 
ফলে গাছের আড়ালে আড়ালে কাস্ল্‌ থেকে বেরিয়ে স্টেশন পানে দে 
চট । মাইলখানেক এসে ফিরে তাকালুম ; নাঃ কেউ পিছু নেয় নি। 

“চোরের মত গাড়িতে ঢুকে সোজা বালিন । 


মৌল বললে, “শুনলেন, মাম। ?) 

চাচা বললেন, “আরে, শোনই না শেষ অবধি 1 

“সেদিন সন্ধ্যেবেলায় তখন ঘরে বসে মাথায় হাত দিয়ে ভাবছি এমন 
ময় ঘরের দরজায় টোকা, আর সঙ্গে সঙ্গে ক্লারা। হায়, হায় আমি 
যাগুলেডিকে একদম বলতে ভুলে গিয়েছিলুম, সবাইকে যেন বলে, 
ধামি মরে গিয়েছি কিংবা পাগলা-গারদে বন্ধ হয়ে আছি কিংবা ওই 
রণের কিছু একট! । 

'শেষটায় মর মর হয়ে ক্লাবার কাছে মাতলামোর জন্য মাফ চাইলুম ! 

'ক্লার। বললে, অত লজ্জা পাচ্ছ কেন? ও তেো। মাতলামো ন', 


১৭৩ 


পাগলামো | কিংবা অন্ত কিছু, তুমি সব কিছু বুঝতে পার নি, আমরাও 
যে পেরেছি তা নয়। 

'তুমি যখন দাদার সু পরে ডিনারে এলে তখনই তোমার সঙ্গ 
কোথায় যেন দাদার সাদৃশ্য দেখে বাবা আর আমি ছুজনাই আশ্চর্য হয়ে 
গেলুম, বিশেষ করে ব্যাকব্রাশ কর! চুল আর একটুখানি ট্যারচা করে বীধ 
'ৰো দেখে। তারপর তুমি জোর গলায় চাইলে বিয়ার, দাদাও বিয়ার 
ভিন্ন অন্ত কোন মদ খেত না|; তুমি আরম্ভ করলে দাদারই মত বকতে, 
“লেখাপড়ার সময় কোথায়? আমি তে। করি হৈ-হৈ”-_আমি জানতুম 
একদম বাজে কথা; কিন্তু দাদ! হৈ-হৈ করত আর বলতেও কন্ুর করত ন1। 

শুধু তাই নয়। 'দাদাও ভিনারের পর বাবার সঙ্গে বিলিয়ার্ড খেলত 
এবং শেষটায় ছজনাতে ঝগড়া হত । জ্যাঠামশাই তখন নেমে এসে ওদের 
সঙ্গে তাস খেল। আরম্ত করতেন এবং আবার হত ঝগড়া । অথচ 
'ভিনজনাতে ভালবাসা ছিল অগাধ । 

“তোমাকে আর সব বলার দরকার নেই; তুমি যে ঘরে উঠেছিলে 
ওই ঘরেই একদিন দাদা আত্মহত্যা করে। 

“কিন্ত আসলে যে কারণে তোমার কাছে এলুম, তুমি মনে কষ্ট পেয়ে! 
না; 'বাবা জ্যাঠামশাই আমাকে বলতে পাঠিয়েছেন, তারা তোমার 
ব্যবহারে কিছুমাত্র আশ্চর্য কিংবা ছঃখিত হন নি? 


চাচা থামলেন। 
রায় বললেন, )'চাচা আপনি ঠিকই বলেছিলেন, শিস. দিয়েছিল 


স্ুটটাহে, বিয়ারও ও-ই থেয়েছিল।' 
চাচা বললেন, “হুক কথা । মদ মানে স্পিরিট, স্পিরিট মানে .ভূত 


তাই স্পিরিট স্পিরিট খেয়েছিল |, 
সমাঞ্জ